শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের কোচিং অবৈধ

হাইকোটের্র রায়
যাযাদি রিপোটর্
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:১২

সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য অবৈধ বলে রায় দিয়েছে হাইকোটর্। সে সঙ্গে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২কে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই নীতিমালার বাইরে গিয়ে সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কেউ শিক্ষাথীের্দর পড়াতে পারবেন না। কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালাসহ শিক্ষকদের করা কয়েকটি রিটের ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার এ রায় দিয়েছেন হাইকোটের্র বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ। দুনীির্ত দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, অ্যামিকাস কিউরিসহ সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে হাইকোটর্ সরকারি স্কুলে কোচিং বাণিজ্য ‘অবৈধ’ বলে রায় দিয়েছেন। ‘ফলে দুদক এই বাণিজ্য নিয়ে অনুসন্ধান করেছিল, সেটাকে বৈধ বলে আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে, পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের নীতিমালা ২০১২ কে বৈধ বলেছে।’ তিনি বলেন, কোচিং বাণিজ্য বলতে বোঝানো হয়েছে, স্কুল বা কলেজ চলাকালে শিক্ষকরা অথের্র বিনিময়ে শিক্ষাথীের্দর পড়ানোর মতো কোন ধরনের কমর্কাÐ করতে পারবেন না। ‘তবে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের কোচিং নিয়ে দুদক যে তদন্ত করেছে, সেটাকে হাইকোটর্ এখতিয়ার বহিভূর্ত বলেছে। যেহেতু সেটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই সরকারি কমর্চারীদের জন্য নীতিমালা তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।’ ‘তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং করাতে হলে তাদের নিজস্ব পরিচালনা বোডর্ থেকে অনুমতি নিয়ে এবং আদালতের পযের্বক্ষণ অনুসরণ করতে হবে।’ শিক্ষকদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এ রায়ে অবাক হলেও তিনি বলেছেন, রায়ের পুরো কপি দেখে তারা পরবতীর্ পদক্ষেপ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। মামলার ইতিবৃত্ত : কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে স্বপ্রণোদিত হয়ে দুনীির্ত দমন কমিশন-২০১৭ সালে একটি তদন্ত করে। তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছর ঢাকার মতিঝিল সরকারি বালক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে কারণ দশাের্নার নোটিশ দেয় কতৃর্পক্ষ। এরপর ওই নোটিশ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২ বিষয়ে শিক্ষকরা রিট করেন। আদালত গত বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি ওই নোটিশের কাযর্কারিতা চার মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি রুল জারি করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করে। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। একজন রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসাবে মতামত দিয়েছেন সাবেক দুই অ্যাটনির্ জেনারেল হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামাল। আরও দুনীির্তর দিকে নজর রায়ের সময় দুনীির্ত কমিশনের জন্য আরো কয়েকটি পযের্বক্ষণ দিয়েছে আদালত। দুনীির্ত দমন কমিশন ইদানীং বেশকিছু সরকারি হাসপাতাল ও স্কুলে অভিযান চালিয়েছে। অভিযান বের হয়ে এসেছে চিকিৎসক এবং শিক্ষকদের একটি বড় অংশ কমর্স্থলে অনুপস্থিত থাকেন। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ স্বয়ং চট্টগ্রামের কয়েকটি স্কুলে অভিযান চালিয়েছেন। দুদকের এই অভিযানের পর বেশকিছু হাসপাতালের চিত্র পাল্টানোর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। স্কুলেও অনুপস্থিত শিক্ষকরাও তাদের ‘অভ্যাস’ পাল্টাচ্ছেন। হাইকোটর্ বেঞ্চ অবশ্য মনে করে, এসব অভিযানের আগে দুদকের বড় দুনীির্তবাজদের বিরুদ্ধে কাযর্কর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আদালত বলেন, ‘যেখানে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, সেখানে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলে যাচ্ছেন কি যাচ্ছেন না তা নিয়ে দুদক ব্যস্ত। দুদক দুনীির্তবাজ রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না জানিয়ে আদালত বলেন, ছোট দুনীির্তর আগে বড় বড় দুনীির্তর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। গত এক দশক ধরে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ও ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা অথর্ বের করে আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার বেশ কয়েকটি তদন্ত করছে দুদক। কিন্তু বিশেষ করে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা। ফারমাসর্ ব্যাংক কেলেঙ্কারির পঁাচটি মামলাও তদন্ত শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি। এ নিয়ে সমালোচনাও আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে