শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিক ও ভোট

মাহমুদুল হক আনসারী ঢাকা
  ১৪ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৪ জুলাই ২০১৮, ১৮:১১

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে স্বাধীন হয়েছে। এদেশের মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। গণতান্ত্রিক পরিবেশ রাজনীতি পরিচালিত হোক সেটায় কামনা করে। গণতন্ত্রে ধারাবাহিকতা হলো ভোটাধিকার। নিবার্চনের মাধ্যমে ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে চায় জনগণ। এদেশে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পযর্ন্ত ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি মনোনয়ন করা চালু হয়েছে। ইউপি থেকে জাতীয় সংসদ পযর্ন্ত নিদির্ষ্ট সময়ে নিবার্চন হয়ে আসছে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর হতে অদ্যবধি নিবন্ধিত অনিবন্ধিত দুই শতের অধিক রাজনৈতিক দলের নাম শোনা যায়। মুষ্টিমেয় কয়েকটি দল ছাড়া অন্যসব রাজনৈতিক দলের তেমন কমর্কাÐ দৃশ্যমান নয়। অনেক দলের জেলা উপজেলায় ঠিকানাও খুঁজে পাওয়া যায় না। নিবার্চন আসলে তখন ওই ধরনের রাজনৈতিক দলের তৎপরতা দেখতে পাওয়া যায়। নাম সবর্স্ব রাজনৈতিক দল ও নেতাদের নিবার্চন নিয়ে দৌড়জোড় ও কথাবাতার্ শুনতে পাওয়া যায়। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে কথা বলার অধিকার দল নাগরিক সকলেরই আছে। তবে অধিকার আছে বলে গণতন্ত্র আর ভোটের নামে লাগামহীন কথাবাতার্ বলাও জনগণ ভালোভাবে দেখে না। রাজনীতি করা এটা নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তবে রাজনীতি হওয়া চায় দেশ ও জনগণের কল্যাণে। আর যারা দেশ জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করবে ভোটে তাদের সমথর্ন দেয়া দরকার। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ভোটাধিকার প্রয়োগ একটি কঠিন ব্যাপার। স্বাধীনতার পর হতে নাগরিকের ভোটাধিকার নিয়ে যারাই বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় ছিলেন সকলেই কম বেশী ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জনগণের ভোটাধিকার খবর্ করেছে। এ সংস্কৃতি এখনো অব্যাহতভাবে চলছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষমতার বাইরে থাকলে ভোট ও ভোটের অধিকার নিয়ে ছড়া ছড়া বক্তব্য রাখা হয়। আর কোনো প্রকারে একবার ক্ষমতার ওই চেয়ারের নাগাল পেলেই জনগণের ভোটাধিকারের অধিকার বেমালুম ভুলে যান। নানা ছলচাতুরী আর কৌশল ব্যবহার করে নাগরিকের ভোটাধিকার খবর্ করা হয়। যেহেতু ক্ষমতায় তারাই থাকে, ফলে ক্ষমতার সমস্ত শক্তি নিজের পক্ষে ব্যবহার করে আবার ক্ষমতায় বসার সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করা হয়। এতে করে জনগণ একদিকে অন্যায় জুলুম ব্যাভিচার ও দুনীির্তর প্রতিবাদ করতে পারে না। ক্ষমতার দাপটে দুনীির্তর শিষের্ পৌছেও সেক্ষেত্রে জনগণ এক ধরনের বোবা হয়ে যায়। কারণ গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলের নিয়ম। এ শৃংখলা যখন ভঙ্গ হয় তখন জনগণ শক্তিহীন হয়ে পড়ে। দুনীির্তবাজ ক্ষমতাসীন সরকার জগৎদল পাথরের মতো জনগণের উপর চেপে বসে। দুঃখজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার পর কোনো সরকারই স্থানীয় ও জাতীয় নিবার্চনে নিরাপদ ভোটাধিকারের অধিকার ভোটারদের দিতে পারে নি। ভোট সঠিকভাবে প্রয়োগের জন্য সুস্থভাবে নিবার্চন ও ভোট সম্পন্ন করার জন্য একটি স্বাধীন নিবার্চন কমিশন দেশে বিদ্যমান আছে। নিবার্চন কমিশনের সমস্ত ক্ষমতা থাকলেও এক্ষেত্রে এ সংস্থাও মনে হয় যেনো সঠিকভাবে আইন প্রয়োগে ব্যাথর্ হয়। সমস্ত নিবার্চনে অসংখ্য অনিয়ম দুনীির্ত কালো টাকার ছড়াছড়ি এব্ং জোরপূবর্ক জাল ভোটের মাধ্যমে প্রাথীর্ নিবাির্চত করা হয়। এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ সংবাদ মামলা নিবার্চন অফিসে করা হলেও বেশীরভাগ অভিযোগের কোনো সুরাহা হয় নি। বাংলাদেশের ভোটধিকার এবং নিবার্চনের চিত্র হলো জোর যার ভোট তার। যিনি যেখানে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে, কালো টাকা ছিড়িয়ে দিতে পেরেছে, জালভোট বজর্ন করতে পেরেছে তিনিই বিজয়ী হয়েছেন। সতরাং বাংলাদেশের ভোটারগণ সচেতন হলেও তারা তাদের অধিকার সম্পকের্ অধিক সচেতন বলে আমার মনে হয় না। কোনো কোনো এলাকায় রাতের আধাঁরে টাকার বিনিময়ে ভোট বেচা বিক্রি হতে শোনা যায়। যারা অথের্র বিনিময়ে ভোট বিক্রি করে অসৎ অযোগ্য লোকদের ভোট দেয় তাদের জন্য কীসের ভোটাধিকার? জনগণকে এ অধিকার সম্পকের্ আরো সচেতন আরো সজাগ আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। যেহেতু ভোটের মাধ্যমে এদেশের ক্ষমতার পালাবদল হয়, সে দেশে অবশ্যই নিবার্চন কমিশন এবং নিবার্চন সম্পূণর্ভাবে দল নিরপেক্ষ হওয়া চায়। যার যার খুশিমতো ভোট প্রদান নিবার্চনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। ভোটধিকার কথা আর কাগজে রাখলে হবে না। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমত ক্ষমতাসীন সরকারকে নিরপেক্ষ হতে হবে। নিবার্চন কমিশনকে তার আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিবার্চনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হবে। এ দায়িত্ব নিবার্চন কমিশনের। বলতে হয় বতর্মানে যে নিবার্চন কমিশনে মাধ্যমে নিবার্চন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং হবে আদৌ কী এ কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখাতে পারছে? যদি জোর আর জবরদস্তির ভোট হয় সেখানে ভোটাধিকারের কোনো গুরুত্ব থাকে না। নামের ভোটাধিকার নাগরিকের প্রতি একটি বাক্য ছাড়া আর কিছুই না। এ জাতীয় ভোট ও নিবার্চন দিয়ে দেশ ও জনগণের কোনো কল্যাণ দেখছি না। নিবার্চনে নিরপেক্ষ ভোটের প্রয়োগ না হলে সেখানে ভোটাধিকারের কোনো ক্ষমতা থাকে না। ভোটাধিকার বাস্তবায়ন করতে হলে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভোটারের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রাখতে হবে। তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি রাজনৈতিক দলের প্রচÐ বিশ্বাস ও বাস্তবায়ন থাকতে হবে। কথা আর কাজে রাজনীতির মধ্যে মিল থাকতে হবে। ক্ষমতায় থাকা আর না থাকার মধ্যে বক্তব্যের গরমিল রাখা যাবে না। গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার অপরিবতর্নীয় শব্দ। ক্ষমতাকে অঁাকড়ে রাখার জন্য এসব অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা অমাজর্নীয় অপরাধ। তাই নিবার্চন হোক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে। সমস্ত দুনীির্ত কালো টাকার থাবা থেকে ভোটাধিকার নিরাপদ হোক। নিবার্চন কমিশন সম্পূণর্ভাবে দল নিরপেক্ষ নিবার্চন উপহার দিতে পারলেই জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে