বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ধ্রম্নবতারা হয়েই জ্বলবেন আইয়ুব বাচ্চু

গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, গিটারবাদক, গায়ক- সব মিলিয়েই যেন আইয়ুব বাচ্চু। তিনি মঞ্চে উঠলেই অন্যরকম এক উন্মাদনা বিরাজ করত ভক্তমহলে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ ছোঁয়া। দেখতে দেখতে এই গিটার জাদুকরের প্রস্থানের এক বছর কেটে গেল। আগামীকাল ১৮ অক্টোবর তার প্রথম মৃতু্যবার্ষিকী। এ উপলক্ষে নানা আয়োজন চলছে সংগীতাঙ্গনে। তারার মেলাও পিছিয়ে নেই। আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই সাজানো হলো আজকের তারার মেলার প্রধান প্রতিবেদন।
জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
আইয়ুব বাচ্চু

'যখন চলে যাব, দূরে বহুদূরে, পৃথিবীর ওই প্রান্তে। আসব না ফিরে আর হয়ে ধ্রম্নবতারা...।' কিংবা 'এই রূপালি গিটার ফেলে একদিন চলে যাব দূরে...' নিজের গাওয়া গানকে সত্যে পরিণত করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা সংগীত জগতের রকস্টার আইয়ুব বাচ্চু। কিন্তু কোটি ভক্ত আর গানপ্রিয় শ্রোতাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাননি এই গিটার জাদুকর। গানে গানে সংগীত পিপাসুদের মনে আজীবন বেঁচে থাকবেন তিনি। সংগীতের আকাশেও যুগ যুগ ধরে ধ্রম্নবতারা হয়েই জ্বলে থাকবেন বহুমুখী প্রতিভার এই তারকা। গুণী মানুষরা এমনই হয়। মরেও তারা জীবিত থাকেন নিজের কর্মের মাধ্যমে।

সংগীত বোদ্ধারা বলেন, আইয়ুব বাচ্চু গান না গেয়ে যদি শুধু গিটার বাজাতেন, তাও মনে হয় বিশ্বের অন্যতম প্রতিভাবান গিটারিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন। আইয়ুব বাচ্চুকে গিটার বাজাতে দেখে বাংলাদেশসহ নানা দেশের কত মানুষ গিটার শিখতে চেয়েছেন কিংবা শিখেছেন তার হিসেব কেউ কোনোদিন জানবে না। গিটার হাতে মাথায় ক্যাপ পরা আইয়ুব বাচ্চু যখন মঞ্চে সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করতেন, তখন কী এক অনবদ্য আকর্ষণীয় আবহ সৃষ্টি হতো চারপাশে সেটি কেবল তার কনসার্ট দেখার সৌভাগ্য অর্জনকারীরাই বলতে পারবে।

পলস্নীগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, গণসংগীত, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া ইত্যাদি নানা কিসিমের মধ্যে বাংলা ব্যান্ড সংগীত বিশেষ স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছে। পশ্চিমা পপ মিউজিকের ধাঁচে বাংলায় ব্যান্ড সংগীতের জন্মদাতাদের একজন আমাদের প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু। পশ্চিমা পপ মিউজিকের অনিবার্য অগ্রযাত্রাকে যারা নিজের ভাষা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, স্বপ্ন, অনুভূতির শক্তিকে সজীব রেখে স্বাগত জানিয়েছেন তাদের অগ্রভাগে আজীবন ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন তিনি। একই সঙ্গে বাঙালি, আবার একই সঙ্গে যেন আন্তর্জাতিক। গ্রাম আর শহরের জীবনের টানাপড়েনের মিশেলে সৃষ্ট বাংলাদেশের নাগরিক জীবনের কষ্ট, অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা, অভিমান, বিরহ, হাহাকার, স্বপ্ন, শহুরে বাউলিয়াপনাকে ব্যান্ডের তালে তালে যে কয়জন বাঙালি ব্যান্ড স্টার পপ মিউজিকের স্বাতন্ত্র বজায় রেখে সাফল্যের সঙ্গে তুলে ধরতে পেরেছেন, সর্বকালের ইতিহাসে আইয়ুব বাচ্চু তাদের শীর্ষে থাকবেন, এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

প্রেম, বিরহ, দেশ, মাটি, মা, ইহকাল, পরকালসহ সব বিষয় নিয়েই গান গাইতে দেখা গেছে তাকে। তবে জীবনের শেষ সময়ে এসে গান এবং অডিওবাজার নিয়ে হতাশ ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। মৃতু্যর কিছুদিন আগে অনেকটা ক্ষোভ আর অভিমান প্রকাশ করে আইয়ুব বাচ্চু বলেছিলেন, 'অডিওবাজার এখন মৃতপ্রায়। তাই লাভ তো দূরে থাক, বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাওয়ার আশা করা যায় না। অডিও পাইরেসি তো আছেই, আরো যোগ হয়েছে নতুন অ্যালবাম বেরুনোর সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেটে আপলোড করে দেয়ার প্রবণতা। তাহলে পয়সা খরচ করে অ্যালবাম কেনার কী দরকার! কাজেই এখন অ্যালবামের বাণিজ্যিক সাফল্য নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। আমি মনে করি, যার যার জায়গায় থেকে একটু সচেতন হলেই এ অবস্থা থেকে অনেকটা পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। অডিও একটি শিল্প। আর এই শিল্পের ওপর ভিত্তি করে কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে। আমি মনে করি, প্রথমে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে ঠিক হতে হবে এবং শিল্পীদের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে।'

মৃতু্যর দুদিন আগে ফেসবুকে নিজের ওয়ালে হতাশা প্রকাশ করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছিলেন, 'যদি মন বিষণ্ন হয়, সত্যিই ভালো থাকার কথা নয়, যদি সারাক্ষণ হৃদয়জুড়ে রক্তক্ষরণ হয়। ভালো থাকার কথা নয়, যদি শিল্পী হতে চাওয়াটা কষ্টের হয়! ভালো থাকার কথা নয়, শিল্পী হয়ে বেঁচে থাকাটা যদি সম্মানের না হয়। আসলেই পৃথিবীতে শিল্পীরা ঝাঁকে ঝাঁকে জন্মায় না! বারবার আসে না, যারাই আসে, মানুষকে ভালোবাসে, নিজেকে উজাড় করে। সবশেষে যে কটাদিন বেঁচে থাকার বেঁচে থেকে, হঠাৎ করে চলে যায় অভিমান বুকে বেঁধে। শিল্পী কোনো মিল-ফ্যাক্টরিতে বানানো যায় না।'

তবে বেশ কয়েকটি স্বপ্ন পূরণ না করেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু। চট্টগ্রামের জন্য কিছু করার কথা উলেস্নখ করে আইয়ুব বাচ্চু বলেছিলেন, 'আমি চট্টগ্রামের সন্তান, চট্টগ্রামের জন্য আমি কিছু করে যেতে চাই। আমি সারাজীবন গাইতে পারব না। কিন্তু আমি চাই চট্টগ্রাম থেকে আমার মতো আরও কেউ শিল্পী তৈরি হোক। চট্টগ্রামের উদীয়মান শিল্পীদের জন্য আমি একটা পস্নাটফর্ম তৈরি করে দিয়ে যেতে চাই।

বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীতের জন্য আমার একটি মিউজিক্যাল একাডেমি করার ইচ্ছা আছে। সেখানে ছেলেমেয়েরা গান শিখে দেশের সংগীতাঙ্গনকে উজ্জ্বল করবে। আমি স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশের গান একদিন সারাবিশ্বে সমাদৃত হবে। সংগীতাঙ্গনে দেশের সুনাম বয়ে আনবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71387 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1