মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
আ ম জা দ হো সে ন

এক সিনেযোদ্ধার গল্প

দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের জীবন্ত এক কিংবদন্তি আমজাদ হোসেন। তিনি চলচ্চিত্র নিমার্তা হিসেবে জনপ্রিয় হলেও একাধারে লেখক, গীতিকার, অভিনেতা, প্রযোজক, উপস্থাপক এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। সত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। লেখালেখির মাধ্যমেই সাহিত্যের অঙ্গনে প্রবেশ। ছোটদের জন্যও তিনি লিখেছেন বহু গল্প, ছড়া এবং উপন্যাস। তিনি এক বহুমুখী প্রতিভার দীপশিখা। কীতির্মান এই মিডিয়া ব্যক্তিত্বের বহুমাত্রিক সৃজনসৃষ্টি আমাদের চলচ্চিত্র তথা শিল্প-সাহিত্যে রাখছে অনন্য ভ‚মিকা। লিখেছেন শেখ সামিরাহ
নতুনধারা
  ০৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
আমজাদ হোসেন

দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের জীবন্ত এক কিংবদন্তি আমজাদ হোসেন। তিনি চলচ্চিত্র নিমার্তা হিসেবে জনপ্রিয় হলেও একাধারে লেখক, গীতিকার, অভিনেতা, প্রযোজক, উপস্থাপক এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। সত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। লেখালেখির মাধ্যমেই সাহিত্যের অঙ্গনে প্রবেশ। ছোটদের জন্যও তিনি লিখেছেন বহু গল্প, ছড়া এবং উপন্যাস। তিনি এক বহুমুখী প্রতিভার দীপশিখা। কীতির্মান এই মিডিয়া ব্যক্তিত্বের বহুমাত্রিক সৃজনসৃষ্টি আমাদের চলচ্চিত্র তথা শিল্প-সাহিত্যে রাখছে অনন্য ভ‚মিকা।

বতর্মান চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেনÑ

নতুন নিমার্তা, নতুন নায়ক-নায়িকায় চলচ্চিত্র জগতটা যত ভরপুর হবে ততই ভালো। তবে যাদের মেধা আছে, তারাই টিকে থাকবে। তরুণদের মধ্য থেকে পরিচালকদের মেধা বের করে আনতে হবে।

ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমাদের তেমন কোনো চলচ্চিত্র নেই কেন?

বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের যাত্রাকালে ছবিতে ইতিহাস নিয়ে কাজ করার চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন জোরদার করাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই ছবি হয়েছে বেশি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত গল্প আমাদের নিজেদের জীবনেই আছে যে, সারাজীবন ছবি বানালেও শেষ হবে না। তবে ভাষা আন্দোলন নিয়ে ছবি নিমাের্ণর কথা আমাদের মাথায় আসলে আসেনি। ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমাদের কোনো চলচ্চিত্র নেই এটা লজ্জার ব্যাপার। সরকার আশা করি বিষয়টি বিবেচনা করবেন। আমার জোর দাবি থাকবে, জাতীয়ভাবে চলচ্চিত্রের জন্য যে অনুদান থাকে, তাতে ভাষা আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র বানানোর জন্য যেন কোটা নিধার্রণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যদি কোটা থাকে, শিশুতোষ ছবি নিয়ে যদি কোটা থাকে, তাহলে ভাষার জন্য কেন কোটা চাইতে হবে?

মুক্তিযুদ্ধের আগে আমাদের চলচ্চিত্রের পরিবেশ কেমন ছিল?

ভাষা আন্দোলনের পর শুরু হয় ’৬৯-এর আন্দোলন। আমরাও এখান থেকে আন্দোলন করেছি, আমাদের আন্দোলন ছিল চলচ্চিত্র দিয়ে। প্রতিদিন এফডিসিতে আলোচনা দেশের এখন কী অবস্থা, আমাদের কী করণীয়, এখান থেকেই গল্প শুরু আর গল্প থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতিদিনই আমরা আড্ডা দিতাম এফডিসির পরিচালক সমিতিতে। খান আতা আসত মগবাজার থেকে, জহির রায়হান মোহাম্মদপুর থেকে, আমি ট্রেনে চড়ে প্রতিদিন আসতাম নারায়ণগঞ্জ থেকে। এফডিসিতেই আড্ডা, সেখানেই ফিল্ম। সে একটা সময় ছিল। সুন্দর সময়।

চলচ্চিত্র দেখে শিখেছেন? নাকি অগ্রজদের কাছ থেকে শিখেছেন?

আমাদের গুরু ফতেহ লোহানী, মহিউদ্দিন, তাদের ছবি দেখে মনে হতো, ছবিগুলো সম্পূণর্ নয়। কেমন খাপছাড়া, মানে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ছিল না। তারা হয়তো পড়াশোনা করেছেন, কিন্তু ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা তাদের কম ছিল। ফলে আমাদের গড়ে উঠতে অনেক কষ্ট হয়েছে। আমি সিনেমা হলে ছবি দেখতে দেখতে বোঝার চেষ্টা করেছি, ক্লোজ-আপ জিনিসটা কী। এক কথায় বলতে গেলে এইভাবে চলচ্চিত্র বানানো শিখেছি ।

রাজনীতি নিয়ে ছবিও কম তৈরি হচ্ছে, এ বিষয় নিয়ে কিছু বলুন-

আমাদের সময়, অনেক পলিটিক্যাল ছবি নিমির্ত হয়েছে। সে ছবিগুলোতে রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল শিক্ষণীয়। যেমন জীবন থেকে নেয়া সম্পূণর্ রাজনৈতিক ছবি। এখন এটি একেবারেই নেই। সত্যি এটি দুঃখজনক।

এই প্রজন্মের ছবিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

আমাদের চিন্তাভাবনা যতদূর পযর্ন্ত বিস্তার ছিল, এখন চিন্তার দরজাগুলো আরও বেশি খুলে যাচ্ছে। আমাকে ছবি বানানো শিখিয়েছে অল্প কয়েকটা ছবি, সেগুলো কিন্তু দিলীপ কুমার, রাজ কাপুর কিংবা উত্তম কুমারের ছবি না, কয়েকটা ছবি একবার ঢাকায় এসেছিল, পূবর্ পাকিস্তানে এসেছিল, ওই যে মেঘে ঢাকা তারা, অপুর সংসার, মহানগর তো ভোরবেলায় গিয়ে টিকিট কেটে দেখেছি। আমার মনে আছে আমার গ্রামের বাড়ি থেকে দশ মাইল দূরে লাইব্রেরি থেকে হাসুলী বঁাকের উপকথা নিয়ে এসেছি, পড়েছি, আবার ফেরত দিয়ে এসেছি। দশ দশ বিশ মাইল হেঁটেছি একটা উপন্যাস পড়ার জন্য। এখন পড়াশোনাটা নাই। এটা একটা সমস্যা। কিন্তু যে খঁাচাটায় আমরা বদ্ধ ছিলাম, ওরা আসাতে সেই খঁাচার দরজা-জানালা খুলে গেছে। তবে একজন নিমার্তার জীবনের অভিজ্ঞতা অবশ্যই দরকার। জীবনের সঙ্গে যার যার অভিজ্ঞতা গুছিয়ে নিলেই হয়। আমার একটা কথা বলি, আমি তখন ঠিকাদারি করি, ছবি বানানো ছেড়ে দিয়েছি। ছেড়ে দিয়েছি মানে, বাংলার মুখ বলে প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ছবি করেছি, এডিট করে রেখে দিয়েছি, আমি নিজেও তার অন্যতম প্রডিউসার ছিলাম। এফডিসির সবাই বলছিল যে এরকম ছবিই হয় না।

সেকাল ও একালের ছবির বাজেট সমস্যা নিয়ে কিছু বলুন-

আমি যখন জানি যে আমার ছবিটা আর ১০টা ছবি থেকে আলাদা, আমার ফান্ড কম, তখন কিন্তু প্রডাকশন পযাের্য়ই ফান্ডকে ম্যানেজ করতে হবে। আমি বলছি মিতব্যয়ীতার কথা। মানে হলো অল্প ফান্ডের সবোর্চ্চ ব্যবহার। আমরা কিন্তু এভাবে টাকা সাশ্রয় করে ছবি বানিয়েছি। আর আমাদের সময় চলচ্চিত্রকে ভালোবেসেই মানুষ ছবি বানাত। কিন্তু এখন টাকা আছে নাম কামানোর জন্য ছবি বানায় প্রডিউসররা। ওই সব মানুষই আজ চলচ্চিত্রের ক্ষতির মূল কারণ।

সবের্শষ এ প্রজন্মের নিমার্তাদের নিয়ে কিছু বলুন-

এ বিষয়ে আমার কথা হচ্ছেÑ গানের জন্য যেমন সারগাম শিখতেই হবে, ঠিক তেমনি চলচ্চিত্রের জন্য স্ক্রিপ্টটাকে অনেক চিন্তাভাবন করে সাজাতে হয়। প্রতিটি দৃশ্য লেখার সময়, কোথায় কিসের প্রাধান্য থাকবে, সংলাপ নাকি মিউজিক, কোথায় ক্যামেরা গুরুত্বপূণর্ হয়ে উঠবে, এগুলো তো একজন পরিচালকের দিনরাত চিন্তার বিষয়। এটাই তার আহার, খাদ্য। এটা তাকে জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে জীবনানন্দ দাসের একটি কথা খুবই প্রযোজ্য। তা হচ্ছেÑ সবাই তো কবি নয়, কেউ কেউ কবি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<7120 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1