মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
জোকার

মুখে হাসি চোখে জল

নতুনধারা
  ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
জোকার চরিত্রে জোয়াকিন ফিনিক্স

রায়হান রহমান

অন্তরটা পুড়ে গেলেও মুখে তার রাজ্যের হাসি। পুরো দিনটা চাকরির পেছনে ছুটলেও রাত কাটে স্ট্যান্ড-আপ কমেডির মঞ্চে। দাঙ্গায় আহত অবস্থায় কপালের রক্ত মুখে লাগিয়ে দিব্যি মানুষ হাসাতে পারা চরিত্রটির নাম আর্থার ফ্লেক। এ চরিত্রটিকে পর্দায় প্রাণবন্ত করে তোলেছেন অভিনেতা জোয়াকিন ফিনিক্স। আর ফ্লেক হচ্ছে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বিশ্বব্যাপী আলোচিত 'জোকার' ছবির মূল চরিত্র। মুক্তির আগেই বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জেতা এ ছবিটি নিয়ে সিনেমাপ্রেমীদের ছিল চোখে পড়ার মতো উন্মাদনা। যদিও মুক্তির পর ভাটার টান লেগেছে এ উন্মাদনায়। দক্ষিণ এশিয়ার দর্শকদের কাছে ছবিটি প্রশংসা কুড়ালেও নেতিবাচক সাড়া পেয়েছে পশ্চিমা বিশ্বে। দ্যা গার্ডিয়ান ও নিউইয়র্ক টাইমসের মতো গণমাধ্যমের শিরোনামে মিলেছে 'বছরের সবচেয়ে হতাশাজনক সিনেমা'র খেতাব। তবুও জোকার দর্শকদের ক্ষণে ক্ষণে হাসিয়েছে- কাঁদিয়েছে।

এবার প্রবেশ করা যাক 'জোকার' ছবির হৃৎপিন্ডে। ছবিটির পুরো গল্পই আঁকা হয়েছে আটের দশকের আবহে। গল্পটাও সেই আমলের। শুরুটা হয়েছে গথাম শহরের আগুন জ্বলা দিয়ে। অর্থাৎ দাঙ্গা লেগেছে পুরো শহরে। এতে দেখা যায়, পুলিশের গাড়ির উপর দাঁড়িয়ে আহত আর্থার ফ্লেক (জোকার) দুলছে আশ্চর্য এক নাচের ভঙ্গিমায়। মুখের রক্ত মেখে নিচ্ছেন নিজের ঠোঁটে। মূলত টড ফিলিপসের হাত ধরে সেলুলয়েডে এসেছে 'ব্যাটম্যান ব্যাডি' জোকার। ডি সি স্ট্যান্ড অ্যালোন সিরিজের এটিই প্রথম ছবি। তাই শুরুটা করেছেন জোকারি দিয়ে। এ ছবির গল্প লিখেছেন টড ফিলিপস আর স্কট সিলভার। ছবির শুরুর দিকে দেখা যায়, গথাম শহরের ঝাড়ুদাররা ধর্মঘট ডেকেছে। সারা শহরে ময়লার স্তূপ। ময়লার স্তূপে স্তূপে ছেয়ে থাকা শহরজুড়ে হাজার হাজার ইঁদুরের আনাগোনা। তবে শহরজুড়ে এই আবর্জনার স্তূপ যতটা আক্ষরিক ততটাই আবার রূপক হিসেবে দেখিয়েছেন পরিচালক টড। সেটা বুঝতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি দর্শককে। কারণ যে শহর জুড়ে ইমার্জেন্সি চলে, যেখানে মানুষ দিনরাত চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে, সেই শহরে আর্থার ফ্লেক একজন পার্টি বয়। যিনি মানুষের দুঃখকে সাময়িক দূর করার জন্য নিয়মিত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যদিও ভেতরটা তার বিষাদে ভরা। জোকার ছবিটি বর্তমান সমাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। এক স্বপ্নবাজ পুরুষ বাধ্য হয়ে জোকার হওয়ার করুণ কাহিনী বিলাপ করা হয়েছে ছবিটির প্রতিটি পরতে পরতে। যেখানে মাখানো রয়েছে ফ্লেকের আর্তনাদ মেশানো হাসি। সে হাসি প্রাণখোলা হাসি নয়। এ হাসি হৃদয় নিংড়ানো দুঃখের হাসি। ছবি শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও এ হাসির রেশ থেকে যায় শিরশিরানির মতো। বিমূর্তে এ বিষয় খুব সহজেও অনুমেয় হয় যখন ফ্লেক সাতটা ব্যথানাশক টেবলয়েড খাওয়ার পরেও বলে, 'আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু ফিল ব্যাড এনিমোর'। অকপটে পরিচালক বুঝিয়ে দিয়েছেন ফ্লেক এ সমাজে ভালো থাকার কোনো রসদই খুঁজে পাচ্ছেন না। এক সময় জোকারের ছোট একটি চাকরিও চলে যায় নানাবিধ কারণে। এরপরও দেয়ালে লেখা 'নেভার ফরগেট টু লাফ' এর ফরগেট টু অংশটুকু কালো কালি দিয়ে ঢেকে দিতে দিতে হেসে ফেলেন তিনি। এমনকি ট্রেনে তিনজন পুরুষ যখন একজন মহিলাকে উত্ত্যক্ত করে, তখনও ফ্লেক হাসে। মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে দর্শককে জোকস বলার আগেই জোরে জোরে চিৎকার করে হাসতে থাকে ফ্লেক নামধারী জোকার চরিত্রটি। একাই হাসে সে। আর কেউ হাসে না। কারণ পরিচালক এই ছবিতে আর্থার ফ্লেককে একজন 'প্যাথলজিক্যাল লাফটার' রোগী হিসেবে দেখিয়েছেন। যিনি সখ করে হাসেন না; হাসাটাই তার পেশা।

এক বাক্যে মানতে হবে, জোয়াকিন ফিনিক্স তার ফ্লেক চরিত্রটি দিয়ে নিজেকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। প্রতিটি সংলাপ ও শারীরিক ভঙ্গিমায় তিনি যে আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন তা সত্যিই অসাধারণ। অমায়িক। সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যমে ফিনিক্স বলেছেন, 'জোকার চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য তার শরীর থেকে প্রায় ২৬ কেজি ওজন কমাতে হয়েছে। চোখে বিষাদ নিয়ে এমন হাসি, ফিনিক্স ছাড়া সত্যিই অসম্ভব বিষয় ছিল।' প্রসঙ্গত, জোয়াকিন ছাড়া এই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে হিলদুর গুয়ানাদতিরের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, যার রেশ হল থেকে বেরিয়েও থেকে যাবে। আর টক শো হোস্ট মারে ফ্র্যাঙ্কলিনের চরিত্রে রবার্ট ডি নিরোকে যথাযথ ব্যবহার করেছেন পরিচালক। পরিচালক টড ফিলিপস জোকার চরিত্রকে বিচার করার চেষ্টা করেননি। বরং কঠিন এক বাস্তবতা দেখাতে চেয়েছেন। এটিই এ সিনেমার সবচেয়ে বড় সার্থকতা।

বিশ্বব্যাপী মুক্তিপ্রাপ্ত জোকার সিনেমাটি মাত্র দুদিনেই ভারতে আয় করেছে ১০ কোটি টাকা।

\হএ ছাড়াও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ সিনেমাটি নিয়ে চলছে তুমুল উন্মাদনা।

সেই সঙ্গে হুড়হুড় করে বাড়ছে বক্স অফিস কালেকশন। তবে রেকর্ডসংখ্যক আয় না

করলেও এ ছবি থেকে মধ্যম মানের বাণিজ্য আশা করছেন চলচ্চিত্রবোদ্ধরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<70393 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1