শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাচই আমাকে নায়িকা বানিয়েছে

চিত্রনায়িকা অঞ্জনা। অভিনেত্রীর বাইরে আরও একটা পরিচয় আছে তার। অনেকে তাকে নৃত্যশিল্পী হিসেবেও চেনেন। চলচ্চিত্র জগতে আসার আগে তিনি একজন নামি নৃত্যশিল্পী ছিলেন। 'সেতু' সিনেমা দিয়ে অভিনয় শুরু করলেও তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র 'দসু্য বনহুর'। অভিনয় করেছেন প্রায় তিনশতাধিক চলচ্চিত্রে। 'পরিণীতা' চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। চলচ্চিত্রে তাকে দেখা না গেলেও এখনও নাচের তালে তালে মঞ্চ মাতান।
মাসুদুর রহমান
  ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
অঞ্জনা সুলতানা

তারার মেলা : ২৯ এপ্রিল বিশ্ব নৃত্য দিবস। দিনটি নিয়ে তেমন কোনো আয়োজন হয় না কেন?

অঞ্জনা : আমাদের সংস্কৃতির একটা গৌরবের ঐতিহ্য আছে। সেখানে নৃত্যশিল্পের গুরুত্ব অনেক। কিন্ত অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, নৃত্যকে গুরুত্বের চোখে দেখা হয় না। সংগীত দিবস, চলচ্চিত্র দিবসসহ সংস্কৃতির বিভিন্ন দিবস নিয়ে হৈচৈ হলেও অবহেলায় নীরবে কেটে যায় বিশ্ব নৃত্যদিবস। তাই বিশ্ব নৃত্য দিবসের কোনো সোরগোল নেই। তবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে এই দিবসটিকে গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রতি বছরই এ উপলক্ষে উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ জন্য শিল্পকলা একাডেমিকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ এর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীকে; যার উদ্যোগে এই আয়োজন হয়ে থাকে। শুধু নৃত্য উৎসবই নয়, শিল্পকলা একাডেমি সারা বছরই নৃত্য নিয়ে কাজ করে। দেশের একজন সিনিয়র নৃত্যশিল্পী হয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানাতে চাই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো এই শিল্পকেও যেন জাতীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়।

\হ

তারার মেলা : সরকারকে বিষয়টি জানাতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি?

অঞ্জনা: বিষয়টি নিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ করিনি। তবে নানাভাবে নৃত্যশিল্পকে নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। চেষ্টা চলছে জাতীয় স্বীকৃতি পেতে। দেশের প্রথিতযশা বরেণ্য নৃত্যশিল্পী মিনু হকের উদ্যোগে এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে। আমরা চাই, আগামী সংসদ অধিবেশনে বিষয়টি যেন উত্থাপন করা হয়। আমাদের বিশ্বাস শিল্প ও সংস্কৃতিবান্ধব বর্তমান সরকার নৃত্যশিল্পকে জাতীয় স্বীকৃতি দেবেন।

তারার মেলা : অনেকেই বলেন, নৃত্য অবহেলিত। কিন্তু কেন এই অবহেলা?

অঞ্জনা : নাচ হচ্ছে যে কোনো একটি অনুষ্ঠানের প্রাণ। কোনো অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করতে হলে নাচ অপিরহার্য। কিন্তু আয়োজকরা এর গুরুত্ব দেন না। দেশের প্রতিটি চ্যানেল অনেক নাটক-সিনেমা প্রচার করেন। গানের অনুষ্ঠানের শেষ নেই। কিন্তু নাচের অনুষ্ঠান নিয়েই যত অবহেলা। অসংখ্য অনুষ্ঠানের ফাঁকে মাত্র ১৫ মিনিটের নাচের অনুষ্ঠান করা কি সত্যিই অসম্ভব? চ্যানেল কর্তৃপক্ষ অযুহাত দেখান- নাচের অনুষ্ঠান চলে না, স্পন্সর পাওয়া যায় না। চ্যানেল কর্তৃপক্ষদের কেন যে নাচের প্রতি অনীহা তা আমার মাথায় আসে না। অথচ এটি একটি গুরুত্বপর্ণ শিল্প। পৃথিবীর আদিকাল থেকে গানের পাশাপাশি নাচ শব্দটি উচ্চারণ হয়ে আসলেও এর প্রতি অনেকের আগ্রহ নেই। গান নিয়ে অনেক কিছু হলেও নাচ নিয়ে তেমন কিছুই হয় না। এটা অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয়।

তারার মেলা : দর্শক নাচকে কতটা উপভোগ করে বলে আপনার মনে হয়?

অঞ্জনা : কোনো অনুষ্ঠানে দর্শকদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আপনারা নাচ না গান চান? দর্শক চিৎকার করে বলে উঠে নাচ চাই, নাচ। নাচের প্রতি মানুষের আলাদা আগ্রহ আছে। দর্শকরা মগ্ন হয়ে নাচ দেখেন, উপভোগ করেন এবং মুগ্ধ হন। কিন্তু আয়োজক কিংবা চ্যানেল কর্তৃপক্ষ নাচকে গুরুত্ব দেন না। অনেক ক্ষেত্রে নাচকে তাচ্ছিল্যও করা হয়। তবে আমাদের পাশের দেশ ভারতের চ্যানেলে নাচের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এগুলো বেশ সাড়াও পাচ্ছে। আমাদের দেশেও কিন্তু বিভিন্ন আয়োজনে নাচ দেখানো হয়। দর্শক না চাইলেতো এসব করা সম্ভব হতো না।

তারার মেলা : নাচ কি যথাযথভাবে প্রদর্শিত হয় ?

অঞ্জনা : সারা বছর নাচ অবহেলিত থাকলেও বিশেষ দিবসে নাচের কদর বাড়ে। এ সময় নাচের অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে বিভিন্ন চ্যানেল। খুব কষ্ট লাগে এসবের প্রায় অনুষ্ঠানে নাচের শিল্পীদের দেখা যায় না। মডেল-নায়িকাদের দিয়ে নাচ করানো হয়, যারা শুধু হাত-পা নাড়াতে পারেন। প্রকৃত নাচের শিল্পীদের দিয়ে নাচ পরিবেশন করা হয় না। নাচের মৌলিক মুদ্রা না জানা থাকলে কি নাচ হয়? নাচ আত্মস্থ করা একটি কঠিন বিষয়। সহজেই হয় না। এর জন্য অনুশীলন করতে হয়।

তারার মেলা : নাচের চর্চা কতটুকু শুদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করেন?

অঞ্জনা : অনেক ক্ষেত্রে এখন শুদ্ধ নাচের চর্চা কম হচ্ছে। এখনতো নাচের মধ্যে নানা কিছুর সংমিশ্রণ হয়ে গেছে। ফলে নাচের মৌলিকত্ব হ্রাস পাচ্ছে। যারা নাচ করছে তাদের মনে রাখতে হবে নাচের শাস্ত্রীয় জ্ঞান না থাকলে হবে না।

তারার মেলা : নৃত্যশিল্পী থেকে চিত্রনায়িকা হয়েছেন। সিনেমায় কি নাচের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে?

অঞ্জনা: গল্পানুসারে সিনেমায় গানের সঙ্গে নাচ ব্যবহার হয়। আগেও যেমন ছিল এখনও আছে। আমার অভিনীত সিনেমার নাচগুলো এখনো জনপ্রিয়। নাচের জন্যও নায়িকাদের অনুশীলন করতে হয়। সিনেমায় নাচের ব্যবহার মন্দ হচ্ছে না। প্রকৃত ধারার মধ্যেই আছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন সিনেমায় মর্ডান নাচের প্রচলন শুরু হয়েছে। নতুন কোরিওগ্রাফাররা ভালো করছে।

তারার মেলা: নৃত্যশিল্পে তরুণরা কতটা আগ্রহী?

অঞ্জনা: অনেক আগ্রহী। আগের তুলনায় অনেকেই নাচের প্রতি ঝুঁকছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা নাচের জন্য দেশের বাইরে গিয়েও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তারা ভালো করছে।

তারার মেলা : নাচরে প্রতি আপনার আগ্রহটা কিভাবে হয়?

অঞ্জনা : সেই ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হয়। আমার পরিবার ছিল সংস্কৃতিক মনা। বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা ছিলেন সংগীতশিল্পী। দুই/আড়াই বছর বয়সেই নাকি আমার হাত-পা ছুড়াছুড়িতে বাবা-মা নাচের লক্ষণ দেখতে পেতেন। নিজে নিজেই নাচতাম। ৫ বছর বয়স থেকে মঞ্চে নাচতাম। আমি ভারতে গিয়ে নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমার ওস্তাদরা এখন কেউ বেঁচে নেই। তারা সবাই বড় মাপের নৃত্যপ্রশিক্ষক ছিলেন। শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী হিসেবে তিন বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। উপমহাদেশের শ্রেষ্ট নৃত্যশিল্পীর পুরস্কার, বাচসাসসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছি।

তারার মেলা : নৃত্যশিল্পী না চিত্রনায়িকা কোন পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

অঞ্জনা : দুই পরিচয়েই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে নাচের কারণেই আমি চিত্রনায়িকা হতে পেরেছি। সেই সময় সারা দেশে আমার খুব নাম-ডাক ছিল। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ করতাম। নায়ক সোহেল রানা তখন ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার একটি অনুষ্ঠানে নাচ করেছিলাম। তিনি আমার নাচ দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। তিনি আমাকে সিনেমায় কাজের জন্য প্রস্তাব দেন। এরপর 'দসু্য বনহুর' চলচ্চিত্রে কাজ করি।

তারার মেলা: চলচ্চিত্রের চলমান সংকট নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

অঞ্জনা: চলচ্চিত্রের সোনালি সময় হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। এক সময় ১৪শ সিনেমা হল ছিল। এখন ২শ সিনেমা হলও চলে না। যমুনা বস্নক বাস্টার, স্টার সিনেপেস্নক্সের মতো সিনেমা হলে মুক্তি দিয়ে সেই ছবিকে ভালো বলা যাবে না। সারাদেশে যখন ছবি চলবে, দর্শক গ্রহণ করবে তখনই বলা যাবে ছবিটি ভালো হয়েছে। চলচ্চিত্রের সংকট নিরসনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

\হ

তারার মেলা: 'ফুলেশ্বরী' চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। অনেক দিন হয়ে গেলও এর কোনো খবর নেই কেন?

অঞ্জনা: চলচ্চিত্রের যে সময় যাচ্ছে তাতে ছবি নির্মাণের সাহস করছি না। পরিবেশ একটু ভালো হলে নির্মাণে হাত দিব। টাকা খরচ করে ছবি নির্মাণের পর যদি নূ্যনতম অর্থ পকেটে না আসে তবে কিভাবে ছবি নির্মাণ সম্ভব? আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে এর আগে অনেকগুলো ব্যবসা সফল ছবি নির্মিত হয়েছে। এবার যাত্রাপালার শিল্পীদের গল্প নিয়ে 'ফুলেশ্বরী' ছবিটি নতুন রূপে তরুণ প্রজন্মের কাছে আনতে চাই।

তারার মেলা: আপনার সময় কাটে কিভাবে?

অঞ্জনা: আমি এখনো নাচ করি। এটিএন বাংলায় ঈদের একটি অনুষ্ঠানে নাচ করব। আরও কয়েকটি চ্যানেলে কথা চলছে। মঞ্চ অনুষ্ঠান করছি। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকায় প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকতে হয়। টিভি টকশো, দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠান করতে হয়।

তারার মেলা : জাতীয় নির্বাচনের আগে আপনাকে রাজনীতিতে সক্রিয় দেখা গেছে?

অঞ্জনা : আমি অনেক আগে থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও আমি জীবনে কোনোদিন নমিনেশন তুলব না। দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাব। এবারে নমিনেশন পেপার তোলা নিয়ে যা ঘটেছে, তা সত্যিই ন্যক্কারজনক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46663 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1