বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

নাচের নামে যাচ্ছেতাই হচ্ছে সিনেমায়!

তারার মেলা রিপোর্ট
  ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
'বস-২' সিনেমার 'আলস্নাহ মেহেরবান' গানে নৃত্য পরিবেশন করছেন নুসরাত ফারিয়া

প্রায় ৬ দশক পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নাচের নিজস্ব স্বকীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে আশির দশক পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রে নাচের একটা যৌবন ছিল। সে সময় নাচকে চলচ্চিত্রের অংশ মনে করা হতো। শিল্প হিসেবেই তখনকার চলচ্চিত্রগুলোতে নাচের উপস্থিতি টের পাওয়া যেত। এমনকি চলচ্চিত্র নির্মাতারাও নৃত্যকে শিল্পের মর্যাদা দিতেন। সেসব এখন অতীত। বর্তমান চলচ্চিত্রগুলোতে নাচের অবস্থা অন্তঃসারশূন্য। বেশির ভাগ চলচ্চিত্রেই নায়ক-নায়িকাদের হাত-পা আর শরীর দোলানো মাত্র। কিছুতেই উন্নতির দেখা মিলছে না চলচ্চিত্র নাচের। বরং নাচকে ততটা গুরুত্ব না দিয়েই নির্মিত হচ্ছে সিনেমা।

চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের মতে, বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্রে যারা নাচের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের বেশিরভাগেরই নাচ সম্পর্কে যথাযত জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ নেই। ফলে চলচ্চিত্রের নাচ প্রতিনিয়ত প্রশ্নের মুখে পড়ছে। মানসম্মত কাজ পেতে হলে অভিজ্ঞদের দিয়ে কাজ করানো প্রয়োজন। অন্যথায় মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। এমনকি চলচ্চিত্রে নাচের জন্য যথেষ্ট বাজেটেরও অভাব আছে। চলচ্চিত্রের নাচকে যথাযথ করতে হলে নির্মাতাদের সচেতন হওয়া দরকার। একই সঙ্গে অভিনেতা অভিনেত্রীদের নাচের প্রশিক্ষণ, অনুশীলন এবং স্কুলিংয়ের দরকার রয়েছে বলে জানান চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকেই।

সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রগুলোর দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট ধরা পড়ে। এখনকার চলচ্চিত্রে নাচের মৌলিকত্ব নেই। কপি-পেস্ট চলছে শুধু। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের নাচকে নকল করা হচ্ছে। যোগ্যতার অভাবে কপি-পেস্ট করতে গিয়ে সেটাও ঠিক ঠাকমত হচ্ছে না। এক সময় গওহর জামিল, জি এম মান্নানদের মতো নৃত্যগুরুরা চলচ্চিত্রের নাচের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তখন সত্যিকারের নাচ পাওয়া যেত।

ফলে চলচ্চিত্রের নাচের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। যারা আছেন তারা কপি করা নাচের মাধ্যমে কেবল গস্নামার দেখাতে চান, মৌলিকত্ব নয়।

চলচ্চিত্রের চলমান নাচ নিয়ে এক হাজারেরও বেশি চলচ্চিত্রের নৃত্যপরিচালক আজিজ রেজা বলেন, 'চলচ্চিত্রে রূপালি পর্দায় শিল্পীরা গানের ছন্দে তাল মিলিয়ে নাচেন, সেই নাচ দেখে দর্শক মুগ্ধ হয়। এর নেপথ্যে থাকেন একজন কারিগর। যাকে আমরা নৃত্য পরিচালক বলি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে বর্তমানে অনেক নৃত্য পরিচালকই ঠিকভাবে নাচের মুদ্রা জানে না। আমার সময় ববিতা ম্যাডাম, রাজ্জাক ভাই এবং ওই সময়ের আরও কয়েকজন তারকারা যেভাবে একটি নাচের মুদ্রা তোলা জন্য চেষ্টা করতেন, এখনকার অভিনেতা-অভিনেত্রীর মধ্যে সেই ধরনের চেষ্টা নেই। তারা পরিশ্রম করতে চান না। ইচ্ছামতো নাচের মুদ্রা দেন। অনেক সময় নৃত্য পরিচালকের নির্দেশনাও মানেন না। যার কারণে দর্শক আগের মতো মজা পাই না। দেখতেও ভালো লাগে না। আগে নাচের মধ্যে কতগুলো ক্লোজ শট, মুদ্রার কোন অংশে ক্যামেরা ধরা হবে সব নৃত্য পরিচালকদের সঙ্গে বসে ঠিক করা হতো। নায়িকারা একটি নাচের মুদ্রা তুলতে দিনরাত পরিশ্রম করত। তারা অভিনয়ের পাশাপাশি নাচটাকেও চলচ্চিত্রের অংশ মনে করত। ফলে সেসময়ের চলচ্চিত্রের গানের সঙ্গে নাচ ও যুঁতসই থাকত।'

তিনি আরও বলেন, 'তবে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এককভাবে কাউকে দায়ী করা যায় না। এর দায়ভার সবার ওপরেই বর্তায়। নিজের মূল্যবোধের জায়গা থেকে বলতে গেলে, এখনকার চলচ্চিত্রের নাচ অনেকটা ঢিমে তালে চলছে। উলেস্নখ করার মতো কোনো জায়গা নেই। এ জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হলে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। শিল্পীকে শিল্পের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। শিল্প নির্দেশকদের কদর বাড়াতে হবে। বাজেট গুণতে হবে। স্কুলিং করতে হবে।'

অথচ আমাদের পাশের দেশের চলচ্চিত্রের নাচের দিকে তাকেলেই দেখা মিলে ভিন্ন দৃশ্যের। তাদের প্রত্যেকটি চলচ্চিত্রে নিত্যনতুন নাচের আবহ তৈরি করা হয়। একটির সঙ্গে অন্যটির মিল নেই। বলিউড অভিনেত্রী রেখা ওমরাহ জান ছবির জন্য ৬ মাস নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। দেবদাস চলচ্চিত্রের জন্য মাধুরী এক বছরের বেশি সময়ে নিয়েছেন নাচের তালিম।

কিন্তু আমাদের এখানে নেই সেসব। যে যার মতো হাত-পা ছুড়ে দিয়ে নেচে যাচ্ছে গানের তালে। এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার চিন্তাও নেই কারো। বরং মেলে দোষারোপের সংস্কৃতি। সব নৃত্য পরিচালকেরই অভিযোগ তাদের যথেষ্ট সময় দেয়া হয় না। শুরু থেকেই নাকি মৌলিক কাজের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46660 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1