শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চির সবুজ ‘ম্যাডি’

তারার মেলা ডেস্ক
  ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
ম্যাডোনা লুইস সিক্কোনি

কেউ বলেন ‘ননি’, কেউ ‘ম্যাডি’, কেউবা আবার ডাকেন ‘মো’ নামে। কত নাম তার! আবার গোটা দুনিয়া তাকে বলে, ‘কুইন অব পপ’। হ্যঁা, বলা হচ্ছে ম্যাডোনার কথা। পুরো নাম ম্যাডোনা লুইস সিক্কোনি। কদিন আগে ‘বালাই ষাট’-এ পা দিলেন তিনি। কিন্তু তাকে দেখে কে বলবে ৬০ বছর বয়স হয়েছে তার! বরং বালাই নয়, ষাটেও তাকে ‘ষোড়শী’ উপাধি দিয়েছেন তার শুভাকাক্সিক্ষরা। আবেদনময়ী শারীরিক কাঠামো, আকষর্ণীয় এবং ফ্যাশন সচেতন ম্যাডোনা যেন দিন দিন আরও বেশি প্র্রাণবন্ত ও প্র্রাণোচ্ছ¡ল হয়ে উঠছেন। মঞ্চেও তিনি আগের মতোই উন্মাদনা ছড়াচ্ছেন প্র্রতিনিয়ত। বয়সকে তুচ্ছ প্র্রমাণ করে এখনো সুরের ইন্দ্রজালে হরণ করে নিচ্ছেন অজস্র তরুণ-তরুণীর মন।

চমকপ্রদ উপস্থিতি, বিতকির্ত মন্তব্য এবং নানান ঘটনা-রটনায় এখনো আলোচনা-সমালোচনার শীষের্ তিনি। এই তো কদিন আগেও ‘ইন্টারভিউ’ নামের একটি জনপ্রিয় ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে টপলেস পোজ দিয়ে এসেছেন শিরোনামে ম্যাডেনা। শরীরও যেন তার মনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। ক্লান্তি বা বিশ্রামের কোনো জায়গাই নেই সেখানে। শুধু ছবি পরিচালনা কিংবা বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক কাজেই নয়; চার সন্তানকে লালন-পালন করেও সংগীত দুনিয়ায় নিজের জায়গাটা ধরে রাখতে পেরেছেন ম্যাডোনা। আজও পপসংগীতের যে কোনো জরিপে পয়লা নম্বরে পাওয়া যাচ্ছে তাকে। তার লাইভ কনসাটর্ মানেই, দশর্কপূণর্ স্টেডিয়াম।

এতকিছুর পরও থেমে নেই তার নতুন অ্যালবামের প্র্রস্তুতি। পুরোদমে কাজ করছেন তার নতুন মিশন নিয়ে। ২০১৯ সালের শুরুর দিকেই আসছে তার নয়া অ্যালবাম। তবে অ্যালবামের নাম এখনো ঠিক হয়নি। এই অ্যালবামের মাধ্যমে প্র্রায় চার বছর পর কোনো একক অ্যালবাম বাজারে আসছে তার। দীঘর্ বিরতির পর নতুন অ্যালবাম দিয়ে ভক্তদের ভিন্ন স্বাদ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ম্যাডোনা বলেছেন, গান শুনে আমার ভক্তদের কখনো মনেই হবে নাÑ এটা ম্যাডোনার গান। নিজস্ব স্বকীয়তা থেকে বের হয়ে সফট এবং মেলোডি ধারার গান থাকছে তার এই অ্যালবামে। এ ছাড়া আরও কিছু চমক রয়েছে। যা তিনি আপাতত বলতে চাচ্ছেন না।

ম্যাডোনার সবের্শষ একক অ্যালবাম ‘রেবেল হাটর্’ প্র্রকাশ প্রায় ২০১৫ সালে। এই অ্যালবামটির গানগুলোও হই চই ফেলে দেয় শ্রোতামহলে। এই অ্যালবামের পর ব্যাক্তি জীবন নিয়ে কিছুটা ঝামেলায় পড়েন তিনি। গান কমিয়ে দিলেও মাঝখানে ‘হার-স্টোরি’ নামের একটি শটর্ ফিল্মে অভিনয় করেন তিনি। ২০১৭ সাল থেকে পতুর্গালের রাজধানী লিসবনে থাকতে শুরু করেন ম্যাডোনা। সম্প্রতি আফ্রিকার মালাউইয়ে শিশুদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল চালু করেছেন তিনি। গান অভিনয়ের পাশাপাশি নিয়মিত সমাজসেবামূলক কমর্কাÐে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে যাচ্ছেন তিনি।

ষাট বছরের মধ্যে ৩৫ বছরের ক্যারিয়ার তার। ১৯৮৩ সালে সংগীতজগতে আসেন ম্যাডোনা। ‘ম্যাডোনা’ নিজ নামেই প্র্রকাশ প্রায় তার প্র্রথম অ্যালবাম। শরুটাই যেন মহাকাব্যিক। অ্যালবামটি প্রকাশের পর সেই বছরই ১০টি কনসাটের্ অংশ নেন ম্যাডোনা। যা ছিল একজন তরুণ কণ্ঠশিল্পীর জন্য অবিশ্বাস্য ঘটনা। আর অ্যালবাম বিক্রি? ৩০০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়ে সেটিও রেকডর্ গড়ে। যে কোনো নারী কণ্ঠশিল্পীর জন্য এই পরিসংখ্যান একটি বিশ্ব রেকডর্ এবং তা গিনেস বুক অব ওয়াল্ডের্ও উঠেছে। আর এই রেকডর্ অন্য কোনো নারী সংগীতশিল্পীর এখনো নেই। এ ছাড়া আরো অনেক কারণ আছে যার জন্য ম্যাডোনাকে পপ সম্রজ্ঞী বলা হয়ে থাকে। ম্যাডোনার আছে ১২টি স্টুডিও অ্যালবাম। আশ্চযর্জনকভাবে এর সবগুলোই ছিল নাম্বার ওয়ান স্পটে। এই দম্ভ শুধু বিখ্যাত ব্যান্ড বিটলস এবং কণ্ঠশিল্পী এলভিস পিসলিই দেখাতে পেরেছেন। ১৯৯০ সালে প্রকাশ হয় ম্যাডোনার অ্যালবাম ‘ইমাকুলেট কালেকশন’। অ্যালবামটি টানা ৩৩৮ সপ্তাহ টপ চাটের্ ছিল। যার মধ্যে দুই মাস ছিল এক নম্বর অবস্থানে। ১৯৭৮ সালে নিউইয়কের্ যান ম্যাডোনা। নিতে থাকেন কোরিওগ্রাফির তালিম। এরপর গড়েন একের পর এক ইতিহাস। ২টি গোল্ডেন গেøাবসহ পেয়েছেন মোট ২৭টি পুরস্কার। মনোনয়ন পেয়েছেন অগণিত।

১৯৫৮ সালের ১৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের বে সিটিতে জন্ম ম্যাডোনার। বাবা ইতালিয়ান ও মা ফ্রেঞ্চ-কানাডীয়। মা ম্যাডোনা লুইসের অকাল মৃত্যু বদলে দিয়েছিল ম্যাডোনার জীবন। মাকে হারানো পর তিনি স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে নিউইয়কের্ সংগীত ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। ২১ বছর বয়সে গড়ে তুলেন ব্রেফাস্ট ক্লাব। এরপর ব্রেকফাস্ট ক্লাব ছেড়ে এমি ক্লাবে যোগ দেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে ম্যাডোনা তার কালো চুলকে লালচে করে নিয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, বিখ্যাত অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোর দেখাদেখি এ কাজ করেছিলেন তিনি। তবে তখনো তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেননি।

গানের পরেই ম্যাডোনার প্রিয় বিষয় হচ্ছে নৃত্য। শুধু গান শুনতেই নয়, কনসাটের্ দশর্করা ম্যাডোনার নৃত্য ক্যারিশমা দেখতেও ভিড় করেন। অভিনয়ের প্রতিও ম্যাডোনার আকষর্ণ রয়েছে। তাই ১৯৮৫ সালে ‘সাংহাই সারপ্রাইজ’ ছবিতে সাবেক স্বামী শন পেনের সঙ্গে অভিনয় করেন। কে জানত, এর চার বছর পরই তাদের সংসার ভেঙে যাবে! ম্যাডোনা এ প্রযর্ন্ত তিনবার বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। সবের্শষ তিনি গাই রিচিকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। ম্যাডোনা নব্বইয়ের দশকে এসে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত করে তোলেন। তা ছাড়া তিনি ‘ইন বেড উইথ ম্যাডোনা’ শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রটি নিমার্ণ করে নিমার্তাও বনে যান।

ম্যাডোনা যে শুধু একজন গায়িকা, তা কিন্তু নয়; প্রতিনিয়তই তিনি তার কাজের ক্ষেত্র বাড়িয়ে চলছেন। তিনি একাধিক গ্র্যামি অ্যাওয়াডর্সহ বহু আন্তজাির্তক পুস্কারও লাভ করেছেন। ম্যাডোনার রকমারি পোশাক, আকষর্ণীয় গয়না ও নতুন ফ্যাশনের পাশাপাশি পারফরম্যান্স বৈচিত্র্যেও পপ দুনিয়ায় ঝড় তুলেছেন। বিয়ে বিচ্ছেদ, পুনবির্বাহ, বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে রাতযাপন, নগ্ন পোজসহ নানা বিতকের্ জড়িয়ে প্রায়ই তিনি সংবাদ শিরোনাম হচ্ছেন। কিন্তু শত বিতকর্ সত্তে¡ও কণ্ঠ ও সৌন্দযর্গুণে ম্যাডোনা সবার কাছে পপসম্রাজ্ঞী হিসেবেই পূজিত হয়ে আসছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22495 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1