বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টেইলর সুইফট পাশ্চাত্য সংগীতের রানি

অবাক ব্যাপারই বলা চলে। অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো ঘটনা। মাত্র ২৯ বছর বয়সেই সব বড় বড় পুরস্কারগুলো নিজের ঝুলিতে তুলে নেন তিনি। সংগীত অঙ্গনে মাত্র কয়েক বছর ধরে আগমন ঘটেছে তার। অথচ এরই মধ্যে আকাশ ছেঁায়া খ্যাতি আর কোটি কোটি ভক্তের ভালোবাসা অজর্ন করে ফেলেছেন।
নিলুফা ইয়াসমিন
  ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
টেইলর সুইফট

বলা হচ্ছে, টেইলর সুইফটের কথা। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার টেইলর যতটা কমনীয়, ঠিক ততটাই দুরন্ত। ৯ মাস বয়সে তার মা তাকে ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকে ঘোড়ার প্রতি যেন আলাদা টান তৈরি হয়ে যায় তার। ছোটবেলায় ‘জিঞ্জার’ নামে তার একটা টাট্টু ঘোড়াও ছিল। ঘোড়দৌড় এখন তার প্রধান শখ। বেশ কিছু ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীও হয়েছেন টেইলর।

ক্রমশ যেন ভারী হয়ে যাচ্ছে কোটি সংগীতপ্রেমীর হৃদয়ের রানি টেইলরের অজের্নর ঝুলি। প্রাপ্তির তালিকায় রয়েছে ১০টি গ্র্যামি অ্যাওয়াডর্, ২৩টি বিলবোডর্ মিউজিক অ্যাওয়াডর্, ১১টি কান্ট্রি মিউজিক অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়াডর্, ৮টি একাডেমি অব কান্ট্রি মিউজিক অ্যাওয়াডর্, ১৯টি আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়াডর্, ১টি ব্রিট অ্যাওয়াডর্ এবং ১টি এমি অ্যাওয়াডর্সহ আরও অনেক পুরস্কার ও পুরস্কারের মনোনয়ন। ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী গ্র্যামি বিজেতা শিল্পীও টেইলর সুইফট।

গত বছর প্রকাশিত সুইফটের সবের্শষ অ্যালবামটির সাফল্যের রেশ যেন এখনও রয়ে গেছে তার। ‘১৯৮৯’ নামের এই অ্যালবামটি ক্রমেই যেন নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে। অ্যালবামটি প্রকাশের পরপরই এটি ইউএস বিলবোডর্ টু হান্ড্রেড অ্যালবামস চাটের্র শীষর্স্থান দখল করেছে । এক সপ্তাহে এর প্রায় ১৩ লাখ কপি (১.২৮৭ মিলিয়ন) বিক্রি হয়েছে। এ অ্যালবামের মাধ্যমে সুইফট এক যুগ আগের রেকডর্ ভেঙে দিয়েছেন। ২০০২ সালে প্রকাশিত এমিনেমের ‘দ্য এমিনেমশা’ প্রকাশের দ্বিতীয় সপ্তাহে ১৩ (১.৩২২ মিলিয়ন) লাখ বিক্রি হয়েছিল।

এর আগে ২০১৫ সালের ‘ব্যাঙ্ক স্পেস’ শিরোনামের গানটি দিয়ে বিলবোডের্ন শীষর্ স্থান দখল করেন। এর পর পরই ‘স্টাইল’ ও ‘বেড বøাডে’র মতো একাধিক জনপ্রিয় গান উপহার দেন। এর মধ্যে ‘বেড বøাড’ ১৬ সপ্তাহে বিলবোডের্র টপচাটের্ অবস্থান করে। এ ছাড়া ২০১৩-১৪ সালে আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়াডের্র আসরে সেরা শিল্পীর পুরস্কারসহ মোট চারটি পুরস্কার পেয়েছেন মাকির্ন এই সংগীতশিল্পী ও গীতিকার। ভক্তদের ভোটে একাধিকবার আটির্স্ট অব দ্য ইয়ার নিবাির্চত হয়েছেন মিষ্টি চেহারার এই শিল্পী। এ ছাড়া ২০১৩ সালে ফেবারিট ফিমেল আটির্স্ট (পপ/রক) এবং ফেবারিট অ্যালবাম (কান্ট্রি) বিভাগেও পুরস্কার পেয়েছেন টেইলর। তিনি আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়াডর্স আসরের সবচেয়ে গুরুত্বপূণর্ পুরস্কার ‘আটির্স্ট অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পেয়েছেন তিন-তিনবার। আর এতটা জনপ্রিয়তার কারণেই মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও মাদাম তুসোয় দুটি মোমের মূতির্ প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

সমাজ সেবাতেও আট-দশজন তরুণ তারকার চেয়ে ঢের এগিয়ে রয়েছেন টেইলর সুইফট। সম্প্রতি ক্যান্সার আক্রান্ত এক কিশোরের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার ডলার সহায়তা করেছেন। আইডেন নামের ওই শিশুটির বয়স ১৩ মাস। আইডেন টেইলর সুইফটের বিভিন্ন সফরের সঙ্গী নৃত্যশিল্পী কিম টোশি ডেভিডসনের ভাইপো। এ ছাড়া আমেরিকার ন্যাশভিল এলাকায় শিশুদের জন্য কান্ট্রি মিউজিক শেখার একটি স্কুল খুলেছেন টেইলর সুইফট। ৪০ লাখ ডলারের ওই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘টেইলর সুইফট এডুকেশন সেন্টার’। এ মিউজিক স্কুলটি ‘কান্ট্রি মিউজিক হল অব ফেইম অ্যান্ড মিউজিয়ামে’র একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে ।

টেইলর সুইফট বলেন, আমি এই গানের স্কুলটি শিশুদের সংস্কৃতিমনা হিসেবে গড়ে তুলতে তৈরি করেছি। এখানে তারা একসঙ্গে তিনটি ভিন্ন ধরনের গান শিখছে। এতে শিশুদের জন্য একটি বিশেষ গ্যালারি রয়েছে। এর মাধ্যমে তারা সংগীত চচার্র পাশাপাশি গান লেখা ও সুর করার বিষয়েও জ্ঞান লাভ করতে পারবে। ভবিষতেও আমি আরও এ ধরনের শিশু কল্যাণমূলক সংস্থা গড়ে তুলতে চাই।’

টেইলর অ্যালিসন সুইফট ১৯৮৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর আমেরিকার পেনসিলভ্যানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা কাটে উয়ামিসিংয়ের খুব কাছেই তার পারিবারিক ক্রিসমাস ট্রি ফামের্। বাবা স্কট কিংসলে সুইফট ও মা আন্দ্রিয়া ফিনলের আদরের মেয়ে টেইলরের ওপর তার নানি অপেরা শিল্পী মেজরি ফিনলের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। তার নাম ‘টেইলর’ রাখা হয় প্রখ্যাত আমেরিকান শিল্পী, গীতিকার ও গিটারিস্ট জেমস টেইলরের নামানুসারে। কান্ট্রি মিউজিক দিয়েই টেইলরের সংগীত সাধনা শুরু। কান্ট্রি মিউজিক হলো আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে উদ্ভূত এক ধরনের জনপ্রিয় সংগীত; যাতে নাচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোনো লোকগাথা বা গল্প বণির্ত হয়। বঁাশি, ব্যাঞ্জো, গিটার ও বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার হয় এতে।

১০ বছর বয়স থেকেই টেইলর সুইফট স্থানীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করতেন। লে অ্যান রাইমসের ‘বিগ ডিল’ গেয়ে একটি লোকাল ট্যালেন্ট প্রতিযোগিতা জিতে নেন তিনি। ১২ বছর বয়সেই তিনি গিটারের তারের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। একই সময়ে গান লিখতেও শুরু করেন ছোট্ট টেইলর।

একদিন প্রখ্যাত বø বাডর্ ক্যাফেতে গান পরিবেশন করার সময় স্কট ব্রচেটার নজর কাড়েন টেইলর। স্কট তখন সদ্য ‘বিগ মেশিন লেবেল’ নামে একটি রেকডির্ং গ্রæপ গড়ে তুলেছেন। তার নতুন রেকডির্ং গ্রæপে প্রথম শিল্পী হিসেবে তিনি টেইলরকে সাইন করান। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ইন্ডাস্ট্রিতে টেইলরের যাত্রা শুরু।

২০০৬-এর অক্টোবরে বের হয় ‘টেইলর সুইফট’ নামে টেইলরের প্রথম অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি বিলবোডের্ ৫ম স্থান দখল করে নেয় আর এর গানগুলো ১৫৭ সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে। অদ্ভুত এক সারল্য আছে তার গানে। টিনএজারদের মধ্যে সাড়া জাগাতে তাই বেগ পেতে হয়নি টেইলরের। ‘আওয়ার সঙ’ গানটির মাধ্যমে টেইলর প্রথম কোনো স্থান দখল করা কান্ট্রি সঙের সবচেয়ে কমবয়সী গায়িকা ও গীতিকার হিসেবে পরিচিত হন।

২০০৮-এ আসে তার ‘ফিয়ারলেস’। কান্ট্রি মিউজিকের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক অ্যাওয়াডর্ অজর্ন করা অ্যালবাম এটি। একই সঙ্গে আমেরিকা, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডের মিউজিক চাটের্ প্রথম স্থান দখল করে নেয় এটি। এই অ্যালবামের ‘লাভ স্টোরি’ টেইলরের ১ম স্থান দখলকারী একক বা সিঙ্গেল হয় অস্ট্রেলিয়ায়। কানাডায় ১ম স্থানে আসে একই অ্যালবামের ‘টুডে ওয়াজ এ ফেইরি টেইল’। টেইলরের ৩য় অ্যালবাম ‘স্পিক নাও’ আসে ২০১০-এ। এটিও প্রকাশিত হওয়ার পরপরই আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডে চাটের্র ১ম স্থান দখল করে।

টেইলর একজন অসাধারণ অভিনেত্রীও। ২০০৯-এ ‘হানা মন্টানা’ ছবিতে টেইলর অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০১০ সালে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ মুভিতে জেসিকা অ্যালবা, অ্যানি হ্যাথওয়ে, ব্র্যাডলি কুপারের পাশাপাশি টেইলরও অভিনয় করেন। তবে একান্ত শখের বসেই অভিনয় করেন তিনি। গান নিয়েই তার সব চিন্তাভাবনা এবং ধ্যানধারণা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<21397 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1