করোনার দিন-রাত্রি...
করোনার কারণে সময় এখনো 'অস্থির'। লকডাউন তুলে নেওয়া হলেও ঘরবন্দি সময় কাটছে অনেকের। বিষিয়ে উঠলেও এই জীবনকেই মেনে নিতে হচ্ছে। এই দুর্বিষহ সময় পার করতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হচ্ছে নানা কাজে। আবদ্ধ জীবনে কীভাবে সময় কাটছে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল কণ্ঠশিল্পী সালমার কাছে। তিনি বলেন, 'অনাকাঙ্ক্ষিত একটা সময় কাটছে আমাদের। করোনার প্রকোপে দীর্ঘদিন ধরে বাসাতেই আছি। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছি না। রান্না করা, ঘর গোছানো থেকে শুরু করে ঘরের যাবতীয় কাজ করছি। টেলিভিশন দেখা, কাছের লোকদের খবরাখবর রাখা, এছাড়া গানের কাজও করছি।'
নতুন গানের খবর...
থমকে যাওয়া সময়ে শোবিজাঙ্গনের অনেকে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। বিশেষ করে গানের শিল্পীরা নতুন কিছু সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। সালমাও একাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। নতুন গান নিয়ে তিনি বলেন, 'এই বন্দি সময়ে অনেক শিল্পীর মতো আমিও কিছু গান করেছি। এর মধ্যে গত ২৫ জুন 'শ্যাম পিরিতি' গানটি প্রকাশিত হয়েছে। গানটি নিয়ে ভালো সাড়া পাচ্ছি। এছাড়া সাউন্টেকের ব্যানারে রিজভি আহমেদের কথা ও আহমেদ হুমায়ুনের সুরে 'আমারে কাছে টানিয়া' এবং শাহ আব্দুল করিমের একটি গান করেছি।'
ঈদের প্রস্তুতি...
বছরজুড়ে সালমার ব্যস্ততা থাকে গান রেকর্ডিং, স্টেজ শো এবং বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠান নিয়ে। অথচ ঈদের মতো বড় উৎসবে ভক্তদের মাঝে কোনো গান উপহার দিতে পারেননি তিনি। গেল রোজার ঈদে এই কণ্ঠশিল্পীর নতুন কোনো গান প্রকাশ না হলেও আসন্ন কোরবানির ঈদে গান থাকছে বলে জানান তিনি। সালমা বলেন, 'শাহ আব্দুল করিমের গানটি কোরবানির ঈদে সালমা মিউজিকের ব্যানারে প্রকাশিত হবে। গানটির ভিডিও করা হয়েছে। এ গানে আমার সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন চৌধুরী কামাল। অন্য গান দুটিও ঈদে প্রকাশ পেতে পারে। এছাড়া ঈদের আরও কিছু গানে কণ্ঠ দেওয়ার কথা আছে। প্রস্তাব এলেও ব্যাটে-বলে না মিলায় ঈদের টিভি অনুষ্ঠানের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত হয়নি।
অসহায়দের পাশে...
করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন অনেকে। শোবিজাঙ্গনের কোনো কোনো তারকাকেও দেখা গেছে। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য গড়ে তোলা সংগীতশিল্পী সালমার 'সাফিয়া ফাউন্ডেশন' করোনাভাইরাসে অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করেছে সালমার এই সংগঠনটি। কোরবানির ঈদের আগে নতুন কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে সালমা বলেন, 'আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। আমরা যখন অসহায়দের জন্য কিছু করেছিলাম সেই সময়ের চেয়ে এখন অনেকটা ভালো। এখনতো অনেক কিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। মানুষ কাজকর্মে যোগ দিয়েছেন। যদিও অনেকের অবস্থা ভালো নয়। তবে কোরবানির আগে অসহায়দের জন্য কিছু করা হবে কি না, তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখনো তো অনেক সময় বাকি আছে।'
কখনো কাউকে বলা হয়নি
'মানবসেবাই পরম ধর্ম' উক্তিতে বিশ্বাসী হয়ে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে। ইতিহাসে তারা মহামানব হয়ে আছেন। মানবসেবায় সালমার উদ্যোগে 'সাফিয়া ফাউন্ডেশন ফর এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের কার্যক্রম শুরু হয় গত বছর অক্টোবর থেকে। স্বামী এডভোকেট সানা উলস্নাহ নুর সাগরের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের একটি প্রাথমিক স্কুলে তিন শতাধিক শিশুকে শিক্ষা উপকরণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে ফাউন্ডেশনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে লালনকন্যাখ্যাত এই কণ্ঠশিল্পী বলেন, 'মানুষ আমার গান ভালোবেসেছে, তাইতো আমি আজকে সালমা হয়েছি। দেখুন আমি শিল্পী জীবনের প্রথম থেকেই মানুষের জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা করেছি। এমনও হয়েছে, ৩-৪ লাখ টাকা খরচ করে অসহায় মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। অনেক ঘটনাই রয়েছে- যা কোনোদিন বলিনি কাউকে।
অন্য এক সালমা...
সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই বদলায়। অনেক কিছুরই আত্মপ্রকাশ হয়। মানবসেবায় সালমার উদ্যোগকে অনেকেই নানাভাবে বিচার করছেন। তাহলে কি সংগীত তারকা সালমা নিজেকে বদলে ফেলেছেন? এ নিয়ে সালমা বলেন, 'আমি বদলাইনি, আমি এমনই ছিলাম। আপনারা হয়তো আমাকে নতুনভাবে দেখার সুযোগ পেলেন- যা এতদিন আমি প্রকাশ করতে চাইনি।'
কনসার্টে নেই সালমার সুর...
করোনার কারণে দীর্ঘ সময় থমকে ছিল পুরো দেশ। এখনো কাটেনি 'অস্থিরতা'। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য 'সীমিত' পরিসরে সব খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জনসমাগম ঘটে এমন আয়োজনে এখনো সরকারের অনুমতি মেলেনি। যার ফলে স্থবির হয়ে আছে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেক আয়োজন। শুটিং শুরু হলেও সম্ভব হচ্ছে না গানের কনসার্টের। সারা বছর স্টেজ নিয়ে সালমার ব্যস্ততা গেলেও এখন নেই। এ নিয়ে সালমা বলেন, 'অনেক কিছু সচল হলেও এখন কনসার্ট করা সম্ভব নয়। প্রতিদিনই কিন্তু মৃতু্য ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেছে। এই অবস্থায় কিভাবে কনসার্ট কিংবা করপোরেট প্রোগ্রাম করা সম্ভব? এটা অন্যায় হবে। কোনো শিল্পীই এটা চাইবে না। আমিও না। আলস্নাহ বাঁচিয়ে রাখলে কনসার্ট করা যাবে।'