শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ন্যানো টেকনোলজির বদৌলতে

ছবি ঘোষ
  ০৯ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

ন্যানো টেকনোলজির বদৌলতে বিজ্ঞান এখন এমন সব উদ্ভাবন মানুষকে উপহার দিচ্ছে তা ভবিষ্যৎ জ্ঞানের পরিধিকে যে গভীরতর পর্যায়ে নিয়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ন্যানোটেকের মাধ্যমে আবিষ্কৃত ওয়্যারট্যাপ সে রকমই একটি আবিষ্কার।

আমরা জানি জীবের অন্যতম কেন্দ্রীয় সংগঠন হচ্ছে কোষ। কোষের খবর যত ভালো জানা সম্ভব হবে আমরা তত জীবকে ভালোভাবে বুঝতে পারব। এ বোঝাটা বা জ্ঞান শুধু জীব সম্পর্কে জানতেই আমাদের সাহায্য করবে তা নয়। পাশাপাশি নানা ধরনের সমস্যা মানে জীবের জটিল রোগগুলো থেকে দেবে আমাদের সমাধানের পথ। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা ন্যানো 'ওয়্যারট্যাপ' নামে ক্ষুদ্র ট্রানজিস্টর তৈরি করেছেন তা আসলে বিজ্ঞানের বদৌলতে সুন্দর ভবিষ্যতেরই আরেক নাম। সম্প্রতি বিজ্ঞান পত্রিকা ন্যাচারের মাধ্যমে জানা গেছে যে বিজ্ঞানীরা ন্যানো 'ওয়্যারট্যাপ' নিয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। গবেষকদের মাধ্যমে আগেই জানা গেছে, এ ন্যানো 'ওয়্যারট্যাপ' জীবিত কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ এবং রিয়েল টাইমে কোষের কার্যক্রম মনিটর করতে পারে। কোষের বায়োলজিক্যাল ফাংশনগুলো 'শুনতে' পারে এ ওয়্যারট্যাপ।

গবেষকদের সূত্রে ন্যাচার সংবাদমাধ্যমটি আরো জানিয়েছে, গবেষকরা সিলিকন ন্যানোওয়্যারস ব্যবহার করে হেয়ারপিন আকৃতির ট্রানজিস্টর তৈরি করেছেন। এ ট্রানজিস্টর নাকি ভাইরাসের চেয়েও আকারে ক্ষুদ্র। এ ট্রানজিস্টরটি কোষের মধ্যে মুক্তভাবেই ভেসে বেড়াতে পারবে এবং কোষের কাজকর্মের বিষয়টি মনিটর করবে।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ন্যানোসায়েন্টিস্ট চার্লস লেইবার জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র এ ডিভাইসটি কোনোভাবেই ক্ষতিকর নয়। কারণ এ ট্রানজিস্টরের তারগুলো সেল মেমব্রেন দিয়ে ঢেকে রাখা থাকে। এর ফলে কোষের সঙ্গে সহজেই প্রাকৃতিকভাবে মিশে যায় এ ডিভাইসটি। গবেষকদের বরাতে জানা গেছে, এ পদ্ধতি ব্যবহারে কোষের কার্যক্রম জানতে সুচাকৃতির কোনো কিছু শরীরের ভেতর প্রবেশ করাতে হবে না। আর কোষের কোনো ক্ষতিও হবে না। বিভিন্ন টক্সিন এবং ড্রাগের ফলে কোষের প্রতিক্রিয়াও জানা যাবে এ ডিভাইসটি ব্যবহারে।

অর্থাৎ জীবদেহের গঠন ও কাজের একক কোষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে এ বিশেষ ধরনের ন্যানো প্রযুক্তির কল্যাণে। ওয়ারট্যাপের মেমোরিতে থাকা তথ্য বা ওয়ারট্যাপ থেকে ধারণকৃত তথ্যকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটারে কোষের একটি ভার্চুয়াল পরিবেশ তৈরি সম্ভব হবে।

এভাবে কোষীয় পর্যায়ে জীবদেহকে দেখতে পারার বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে আরো সহজতর করবে। কোষের কার্যক্রমের ব্যাঘাতের কারণেই জীবদেহের মারাত্মক সব রোগ হয়ে থাকে। তাই কোষের কার্যক্রমের অস্বাভাবিকতা আবিষ্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ ন্যানো ওয়ারট্যাপ।

পাশাপাশি অনেক কল্পবিজ্ঞানী লেখক এবং ভিডিও গেম নির্মাতা প্রযুক্তিটির বেশ প্রশংসা করেছেন। তারা বলছেন শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক ভিডিওচিত্র ও গেমস নির্মাণে এ প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো যাবে।

ন্যানো ওয়ারট্যাপের সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে কম্পিউটারের মাধ্যমে কোষের একটি ভার্চুয়াল ফিল্ম তৈরি করতে আগ্রহী। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ ভার্চুয়াল ফিল্ম বিনোদনের মাধ্যমে কোষীয় কার্যক্রম বুঝতে সহায়ক হবে। তারা আরো জানান, এ ন্যানো ওয়ারট্যাপ প্রযুক্তির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে এ প্রযুক্তির ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলতে গেলে একেবারেই নেই। পাশাপাশি এটি ভবিষ্যতে বাইরে থেকে রিমোটের মাধ্যমে কোষের মধ্যে ভ্রমণ করতে পারবে। অনেকটা এ রকম যে মহাকাশে মহাকাশযানের মতো শরীরের মধ্যে ন্যানো ওয়ারট্যাপ ভ্রমণ করবে। এ ভ্রমণ কোষের বাইরে থেকে কোষের ত্রম্নটি সমাধানেও কাজে লাগানো যাবে। তবে একটি বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো ভাবনার মধ্যে রয়েছেন। সেটি হচ্ছে সাইটোপস্নাজমে এ ন্যানো ওয়ারট্যাপ ভ্রমণ করতে পারলেও নিউক্লিয়াসের মধ্যে নিউক্লিওপস্নাজমে এটি কিরূপ ভ্রমণ করতে পারবে তা দেখার বিষয়। কারণ কোষের অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গা হচ্ছে নিউক্লিওপস্নাজম।

এভাবে ন্যানো ওয়ারট্যাপ জীববৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী অর্জন। এ অর্জনকে মানুষের কল্যাণে লাগানোই হচ্ছে মানব জাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<40044 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1