শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিরর নিউরন ও চিন্তন প্রক্রিয়া

ছবি ঘোষ
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মানুষ চিন্তা করে প্রিফ্রন্টাল অঞ্চলে। এ অঞ্চলে চিন্তার উপাদান হিসেবে স্নায়ুগুলো যে দুটি তথ্য উপাদান বেশি মাত্রায় পাঠায়, তা হচ্ছে দৃশ্য এবং ভাষা। তাই আমাদের চিন্তায় দৃশ্য ও ভাষার ব্যবহার বেশি। প্রিফ্রন্টাল কটেের্ক্সর অভ্যন্তরীণ উপস্থাপনা চিন্তা এবং তার প্রয়োজনীয় একটি অংশ আমরা শব্দ করে অন্যের তরে ছেড়ে দিই।

ভাষাসহ সব ধরনের কগনিশন প্রক্রিয়া স্মৃতি ও শিক্ষার মাধ্যমে উপস্থাপন করা যেতে পারে । আসলে আমাদের মানসিক প্রক্রিয়ার একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে স্মৃতি ও শিক্ষা। সে হিসেবে কগনিশনের কেন্দ্রীয় জায়গা হচ্ছে স্মৃতি ও শিক্ষা। আমাদের আজকের মনোযোগ হচ্ছে ভাষাগত কগনিশনের নিয়মকানুন ব্যাখ্যায় স্মৃতি ও শিক্ষার ভ‚মিকা। আরেকটি গুরুত্বপূণর্ বিষয় হচ্ছে জীবের বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক জিন। জিন মানুষের মানসিক প্রক্রিয়ার মূল সুর। জিন ও সিন্যাপসের কথোপকথনের মধ্যে নিহিত আছে যাবতীয় মানসিক প্রক্রিয়ার বীজ।

স্টিফেন পিঙ্কার ভাষাকে দেখেছেন একটি হোমোজিনিয়াস অ্যাসোসিয়েটিভ স্মৃতিব্যবস্থার ফল হিসেবে অথবা বিকল্পভাবে, জিনগতভাবে নিধাির্রত হিসাব মডিউলের একটি সেট যার ভেতরে নিয়মগুলো প্রতীকগত উপস্থাপনা ম্যানিপুলেট করে। এই যে হোমোজিনিয়াস অ্যাসোসিয়েটিভ স্মৃতিব্যবস্থা এবং জিনগতভাবে নিধাির্রত হিসাব মডিউল নামক দুটো তত্ত¡ তা স্টিফেন পিঙ্কার তার দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্সটিঙ্কট, ওয়াডর্স অ্যান্ড রুলস গ্রন্থদ্বয়ে বিস্তারিতভাবে বণর্না করেছেন।

মস্তিষ্কের কোন অঞ্চল ভাষা ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত তা গত শতাব্দীর শুরুর দিকে বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। ভাষা উপলব্ধি ও তা প্রকাশের সঙ্গে জড়িত অঞ্চলকে চিহ্নিত করে নাম দেয়া হয়েছিল ওয়ারনিকের এলাকা এবং ব্রোকার এলাকা। এ শতাব্দীর সূচনালগ্নে ভাষাবিজ্ঞানীরা ভাষা অঞ্চলের সঙ্গে আরো দুটি বিষয় যোগ করেছেন। এর একটি হচ্ছে মিরর নিউরন, অন্যটি প্রিফ্রন্টাল কটের্ক্স।

আমরা অন্যের ভাষা শুনে বুঝে ফেলি তখনই যখন মিরর নিউরনে বিম্ব পড়ে। মিরর নিউরন এ বিম্বকে প্রিফ্রন্টাল কটেের্ক্স পাঠায়। প্রিফ্রন্টাল কটেের্ক্স যদি উপযুক্ত মেমোরি সেল থাকে, তাহলে ভাষাটা আমরা বুঝব। আর যদি তা না থাকে, তাহলে আমরা বুঝব না। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হচ্ছে প্রিফ্রন্টাল কটের্ক্স হচ্ছে আমাদের চিন্তন অঞ্চল, বোধ বা উপলব্ধির অঞ্চল। এ অঞ্চলে মেমোরি সেল তৈরি হয় না। বরং মস্তিষ্কের মেমোরি সেল তৈরি হয় যেসব অঞ্চলে সেসব অঞ্চল থেকে প্রয়োজন অনুসারে মেমোরি সেল প্রতিনিধি স্নায়ুতে আসে। তবে এ জন্য আগে মেমোরি সেল তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয়।

আমাদের ভাষা অঞ্চলে রয়েছে ভাষাগত স্মৃতি তৈরির জন্য বেশ কিছু স্নায়ুকোষ বা নিউরন। এ নিউরনগুলো মেমোরি সেলে পরিণত হয় পরিবেশ আর মনোযোগের সাহচযের্। মেমোরি সেল গঠনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রথম যে মেমোরি সেলগুলো তৈরি হয়, সেগুলো পরবতীর্ মেমোরি সেল তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করে। তাই প্রথম যে ভাষার মেমোরি সেল তৈরি হয়, সেই মেমোরি সেলগুলো নতুন ভাষা শিখতে গেলে সেখানে প্রভাব বিস্তার করে। এ জন্য প্রথম ভাষা শেখা হলে তা নতুন একটি ভাষা শিখতে গেলে সেখানে সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। ভাষা শেখার বয়স শৈশব। শৈশবে মানুষ মূলত সময়ের ওপর নিভর্রশীল থাকে এবং তার সান্নিধ্যে থাকে বিধায় মাতৃভাষা সাধারণত মানুষের প্রথম ভাষা হয়ে থাকে।

ভাষা শেখার আগে মানুষ ইশারায় কথা বলত। আদিম মানুষের টিকে থাকার ক্ষেত্রে ভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা রেখেছিল। তাই বিবতের্নর ধারায় মানুষের ব্রেনে ভাষা শিখে নেয়ার জন্য একটি গোছানো নিউর‌্যাল সাকির্ট রয়েছে। এ নিউর‌্যাল সাকিের্ট অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত ভাষাবিষয়ক নিউর‌্যাল কোডগুলো নিমির্ত হতে থাকে। নিউর‌্যাল কোডগুলো নিউরনগুলোর জেনেটিক কোডের ওপর বেশ নিভর্রশীল। কেননা নিউর‌্যাল কোড তৈরি হয় জেনেটিক কোড সক্রিয়করণ বা জিন সক্রিয়করণ আর নিষ্ক্রিয়করণের মধ্য দিয়ে। আরো একটি বিষয় উল্লেখ করতে হবে, নতুন নিউর‌্যাল কোড তৈরি হয়, পুরনো নিউর‌্যাল সাকিের্ট মডিফিকেশনের মাধ্যমে। এ নিউর‌্যাল কোড, জেনেটিক কোড, নিউর‌্যাল সাকির্ট এসব বিষয় প্রতিটি ভাষায় কমন বলে ভাষাবিজ্ঞানী নোয়াম চমস্কি, স্টিভেন পিঙ্কার প্রমুখ ভাষা শেখার ক্ষেত্রে ‘সবর্জনীন’-এর কথা বলেছেন।

মানুষের ভাষা জন্মগত ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নিভর্র করে বিভিন্ন আবেগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। অথার্ৎ ভাষা আবেগীয় অঞ্চলের স্নায়ুগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<34831 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1