বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে প্রযুক্তি নিভর্রশীলতা

আরিয়ান বান্নাহ রিফাত
  ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
ই-কমাসের্র লেনদেনে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার বেশি ছবি : ইন্টারনেট

বাড়ছে স্মাটের্ফান, ট্যাবলেট, ল্যাপটপসহ নানাবিধ প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহার। শুধু বড়রাই নয়, শিশুরাও অহরহ ব্যবহার করছে এসব পণ্য। গেমিং ছাড়াও এসব পণ্য শিশু থেকে বড় সবার পড়ালেখাসহ নানাবিধ কাজে লাগছে। প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারে কমে শিশুদের সামাজিক দক্ষতা।

তবে এসব পণ্য ব্যবহারের কারণে শিশুরা মুখোমুখি যোগাযোগে সময় কম দেয়ায় তাদের সামাজিক দক্ষতা কমে যাচ্ছে বলে এক গবেষণায় দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোনির্য়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মনোবিজ্ঞানী।

ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ‘ইমোটিকনস’ ব্যবহার করা হয় তা আমাদের মুখোমুখি যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুব কমই উপস্থাপন করতে পারে বলেও জানান তারা। আর প্রযুক্তিপণ্যে এগুলো বেশি ব্যবহৃত হওয়ায় শিশুরা অন্যের মুখভঙ্গিসহ অনেক অভিব্যক্তি বুঝতে সমস্যায় পড়ে।

ব্যস্ত এ জীবনে আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সঙ্গী কোনটি বলতে পারেন? এখনকার দিনে এর উত্তর হবেÑ ‘সেলফোন’। ভাবলেও অবাক লাগে, আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে যখন এ মোবাইলের চল ছিল না, তখন আমরা সবাই কী দিব্যি জীবনযাপন করতাম, কোনো সমস্যাই ছিল না! কিন্তু যখন এ প্রযুক্তি একবার হাতে এসে ধরা দিয়েছে তখন আমরা তাতে এতই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, এখন এ মোবাইল ছাড়া আমাদের এক দিনও চলে না। কারো হয়তো এক ঘণ্টাও চলে না। আর এ অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটি যদিও সবার ঘরে ঘরে আছে, কিন্তু চাইলেও অনেকে মনের মতো সেট কিনতে পারেন না।

এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি স্মাটের্ফান ছাড়াও রয়েছে স্বল্প দামের চৌকস মোবাইল সেট। অনেকেরই হয়তো দামে মিললেও দেখা যায় হ্যান্ডসেট পছন্দ হয় না। অথবা দেখা যায়, সেটটি পছন্দ হয়, তার সঙ্গে দামের রয়েছে আকাশ-পাতাল তফাত। টিনএজারদের তো আরো সমস্যা। এক হ্যান্ডসেটের মধ্যে তাদের চাই রাজ্যের সুযোগ-সুবিধা। বন্ধুর সেটে হয়তো কোনো ফিচার দেখল, তারও ঠিক তেমনই একটা চাই। কিন্তু দেখা যায় কিনতে গেলেই আর ব্যাটে-বলে মেলে না। আর দোকানে কিনতে গেলে হরেক রকমের মোবাইলের মধ্যে খুঁজে পাওয়াটা কিছুটা দুষ্করই বটে। তাই আগে থেকে একটু ধারণা নিয়ে মোবাইল ফোন সেট কিনতে গেলে দাম নিয়েও সমস্যা হয় না আর খুব বেশি খেঁাজারও দরকার পড়ে না। এখন তো চালু হয়েছে স্মাটের্ফানের যুগ। সবার হাতে হাতে স্মাটের্ফান। বেশির ভাগ স্মাটের্ফানেরই দাম কিছুটা বেশি। কিন্তু দাম বেশি বলে কি আর শখ বাধা মানে? আর তাই মোবাইল কোম্পানিগুলোও ক্রেতার চাহিদা বুঝে বের করেছে কম দামি সেট। চাইলেই একটু খুঁজে কিনতে পারেন নকিয়া, এইচটিসি, স্যামসাং, সিম্ফনি, ওয়ালটন, সনি এরিকসনের মতো বিভিন্ন ভালো ব্র্যান্ডের মোবাইল হ্যান্ডসেট। নিজের পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন স্মাটের্ফান। আর যদি পছন্দ করেন কিছুটা স্রোতের বিপরীতে থাকতে, তাহলে বেছে নিতে পারেন আপনার নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী সেট।

তাদের এ গবেষণার ফলাফল ‘কম্পিউটার ইন সোশ্যাল বিহ্যাভিওর’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

মনোবিজ্ঞানীরা এ গবেষণায় দক্ষিণ ক্যালিফোনির্য়ার একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ১০৫ জন শিক্ষাথীর্র আচরণ পযের্বক্ষণ করেন।

গবেষণার জন্য শিক্ষাথীের্দর দুটি দলে ভাগ করা হয়। তাদের একদলকে কোনো ধরনের প্রযুক্তিপণ্য ছাড়া পঁাচ দিন একটি শিশুসদনে রাখা হয়। এ সময় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ দিলেও টেলিভিশন দেখা এবং স্মাটের্ফান, ট্যাবলেটসহ এ ধরনের কোনো পণ্য ব্যবহার করেতে দেননি গবেষকরা।

অন্য শিশুরা এ সময় তাদের পরিবারের সঙ্গেই থাকে এবং আগের মতোই নানা ধরনের প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহার করে।

পঁাচ দিন পর গবেষকরা দুই দলের সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতা পযের্বক্ষণ করেন। ফলাফলে দেখা যায়, যে দলটি প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহার থেকে বিরত ছিল তারা অন্যদের তুলনায় মানুষের মুখভঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরনের অবাচনিক যোগাযোগ অভিব্যক্তি বেশি বুঝতে পারছে।

গবেষক দলের অন্যতম ক্যালিফোনির্য়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্যাট্রিসিয়া গ্রিনফিল্ড বলেন, অনেক মানুষ এসব ডিজিটাল পণ্যের সুবিধাটুকুই শুধু দেখে, কিন্তু এসবের নেতিবাচক দিকটি তারা খেয়াল করে না। এসব পণ্যের অনেক নেতিকবাচক দিকের একটি হলো এগুলো ব্যবহারের ফলে শিশুদের অন্যের আবেগ বুঝতে পারার দক্ষতা কমে যায়।

বিশ্বে ই-শপিংয়ে সবচেয়ে এগিয়ে দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়া। এখানে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার অন্য অঞ্চলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ই-কমাসের্র পরিধিও। ই-কমাসর্ বিজ্ঞাপনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ক্রিশেওর তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ার ই-কমাসর্ লেনদেনের ২৭ শতাংশ হয় মোবাইল ডিভাইসে। আর এ হার সময়ের সঙ্গে বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী এক বছরের ১৬ হাজার কোটি ডলারের ১৪০ কোটি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ক্রিশেও। প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ায় ই-কমাসের্র লেনদেনে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহারের হার স্পেন ও ইতালির সমান। যুক্তরাষ্ট্রে এর হার কিছুটা বেশি। ই-কমাসর্ ও মোবাইল ডিভাইসের মধ্যে সম্পকের্র গভীরতা বোঝাতে বেশকিছু তথ্য তুলে ধরেছে ক্রিশেও। প্রতিবেদনে জানানো হয়, মোবাইল ডিভাইস সাপোটর্ করে এ ধরনের ই-কমাসর্ সাইটের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বাড়ছে। ফলে মোবাইল ডিভাইসেই মানুষ এখন কেনাকাটায় প্রয়োজনীয় যে কোনো সাইটের সন্ধান পাচ্ছে। আরো জানানো হয়, ডেস্কটপের চেয়ে মোবাইল ডিভাইসেই ই-কমাসের্র লেনদেন বেশি হচ্ছে। ফ্যাশন, লাক্সারি ও ভ্রমণসংক্রান্ত পণ্যই ই-কমাসের্ বেশি কেনাকাটা হচ্ছে বলে জানানো হয়। দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ায় ই-কমাসর্ খাতে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার বৃদ্ধি নিয়ে ক্রিশেওর দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়া বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়োকো সাইতো বলেন, ই-কমাসর্ খাতে পুরো বিশ্বে দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ার অগ্রগতি সবচেয়ে বেশি। এর পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে মোবাইল ডিভাইস। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল বাজারগুলোয় এ প্রবণতা অধিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব বাজারে মোবাইল ডিভাইসকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। নতুন গ্রাহকরা ডেস্কটপ কেনার আগে মোবাইল ডিভাইস কিনছেন। এতে আগামীতে ই-কমাসর্ লেনদেনে এসব ডিভাইসের ব্যবহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ছে। সাইতো আরো বলেন, উন্নয়নশীল বা উন্নত বাজার সবর্ত্রই মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে বিশ্বব্যাপী ই-কমাসের্র প্রসারে এটি গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা রাখছে এবং রাখবে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মোবাইলবান্ধব ই-কমাসর্ সেবা চালুর দিকে মনোনিবেশ বাড়ানো উচিত। এরই মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ ই-কমাসর্ প্রতিষ্ঠান তাদের মোবাইল সংস্করণ চালু করেছে। শুধু ই-কমাসর্ নয়, অনলাইনের অনেক সেবাই এখন মোবাইলভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। আগামীতে হয়তো এমন সময় আসবে যখন ইন্টারনেটের সমাথর্ক হিসেবে মোবাইল ডিভাইসের নামটি ব্যবহৃত হবে। পৃথকভাবে বিবেচনা করতে গেলে দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ার মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় ই-কমাসর্ খাতে লেনদেনে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহৃত হয় ৩১ শতাংশ ক্ষেত্রে। তাইওয়ানে এ হার ৩১ ও সিঙ্গাপুরে ২৯ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ই-কমাসর্ লেনদেনে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়েই বাড়ছে দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ায় ডিভাইসের এ ধরনের ব্যবহার। ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ ই-কমাসের্ মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারের এ হার ৪০ শতাংশে দঁাড়াবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<29388 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1