শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষা ও জিনের সম্পকর্

শামীমা জান্নাত
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ভাষার সঙ্গে দুটো জিন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এরা হচ্ছে ফক্সপি-১ ও ফক্সপি-২। জিন দুটি আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন জামাির্নর বিজ্ঞানী উলফগ্যাং এনাডর্। এনাডের্র মতে এ ধরনের জিনের সংখ্যা ১০০০টি পযর্ন্ত হতে পারে। সম্প্রতি জামাির্নর বিজ্ঞানীরা প্রায় ১০০টি ভাষা সম্পকির্ত জিন আবিষ্কার করে এনাডের্র ধারণাকে জোরালো করে তুলেছেন।

ভাষা শেখার আগে মানুষ ইশারায় কথা বলত। আদিম মানুষের টিকে থাকার ক্ষেত্রে ভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা রেখেছিল। তাই বিবতের্নর ধারায় মানুষের ব্রেনে ভাষা শিখে নেয়ার জন্য একটি গোছানো নিউর‌্যাল সাকির্ট রয়েছে। এ সাকিের্ট অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত ভাষাবিষয়ক নিউর‌্যাল কোডগুলো নিমির্ত হতে থাকে। নিউর‌্যাল কোডগুলো নিউরনগুলোর জেনেটিক কোডের ওপর বেশ নিভর্রশীল। কেননা নিউর‌্যাল কোড তৈরি হয় জেনেটিক কোড সক্রিয়করণ বা জিন সক্রিয়করণ আর নিষ্ক্রিয়করণের মধ্য দিয়ে। আরো একটি বিষয় উল্লেখ করতে হবেÑ নতুন নিউর‌্যাল কোড তৈরি হয় পুরনো নিউর‌্যাল সাকিের্ট মডিফিকেশনের মাধ্যমে। এ নিউর‌্যাল কোড, জেনেটিক কোড, নিউর‌্যাল সাকির্ট এসব বিষয় প্রতিটি ভাষায় কমন বলে ভাষাবিজ্ঞানী নোয়াম চমস্কি, স্টিভেন পিঙ্কার প্রমুখ ভাষা শেখার ক্ষেত্রে ‘সবর্জনীন’-এর কথা বলেছেন।

ভাষা ছাড়া আমাদের সৃজনশীল জগৎ, সাংস্কৃতিক জগৎ বলতে গেলে অসহায়। আমাদের সচেতন মন যেন ভাষার মাধ্যমেই কাযর্কর।

ভাষাকে নৃতাত্তি¡ক, মনোবৈজ্ঞানিক, দাশির্নক, স্নায়ু জীববৈজ্ঞানিক নানা রকম দিক থেকে উপলব্ধি করা যায়। এ রকম বৈচিত্র্যময় অধ্যয়ন ভাষার গভীরতাও বেশ বাড়ায়।

যদি আমরা ভাষার জীববৈজ্ঞানিক ভিত্তি জানার উদ্দেশে অগ্রসর হই তাহলে যে বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে তা কী কী? আমাদের নোয়াম চমস্কি আর স্টিফেন পিঙ্কারের ধারণাকে সমন্বিতভাবে অধ্যয়ন করতে হবে। আমাদের আরো জানতে হবে বি এফ স্কিনার ও তার সমধারার চিন্তাবিদরা কী বলেছিলেন। কীভাবে স্কিনার ও চমস্কির চিন্তাভাবনা পরস্পর থেকে পৃথক, তাও একেবারে কম গুরুত্বপূণর্ নয়।

আধুনিক ধারায় যদি আসি তাহলে বলতে হয়, মস্তিষ্কের কিছু এলাকা রয়েছে, যেগুলো স্মৃতিকে সমন্বিত করতে পারে। ভাষা সে রকম একটি অঞ্চল। এটি মস্তিষ্কের বাম ও ডান উভয় পাশে বিরাজমান। বাম পাশ ভাষা সমন্বয়ের পর অথর্, ধ্বনি, গঠন তৈরি করে। আর ডান পাশ অন্য মানুষের তরে ভাষা ব্যক্ত করতে সাহায্য করে। এ ব্যক্ত করার জায়গাটা বেশ গুরুত্বপূণর্। টানটান পরিস্থিতিতে একটি কথা বলব কি বলব না? ভাষায় আবেগ থাকবে কি থাকবে না? থাকলে কী মাত্রায় থাকবে? ইত্যাদি বিষয়ে হিসাব-নিকাশ এ অংশে হয়। এ কাজগুলো ডান ভাষাগত অঞ্চল প্যারেইটাল কটেের্ক্সর সাহায্যে করে থাকে। কারণ যে কোনো বিষয়ের গুরুত্ব হিসাব-নিকাশ করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ মস্তিষ্কের এ অংশে হয়ে থাকে।

প্রতিটি ইন্দ্রিয়ের সচেতনভাবে সৃষ্টি হওয়া স্মৃতিগুলো মেডিয়াল টেম্পোরাল লোবে জমা হয়। এ স্মৃতিগুলোকে মেডিয়াল টেম্পোরাল লোবের সমন্বয়ের চেয়েও বেশি পরিসরে সমন্বয় করার জন্য মস্তিষ্কে বেশ কিছু অঞ্চল বিকশিত হয়েছে। ভাষা অঞ্চল তাদের মধ্যে একটি।

ভাষা নিয়ে কাজ করে ও এ বিষয়ে লিখে যিনি বতর্মানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় তিনি হলেন স্টিফেন পিঙ্কার। আমাদের মস্তিষ্কে উচ্চতর মানসিক প্রক্রিয়া হিসেবে চিন্তন, পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ চেতনাবোধ, মনোযোগ, স্মৃতি ও শিক্ষাসহ নানা রকম প্রক্রিয়া রয়েছে। স্টিফেন পিঙ্কার, নোয়াম চমস্কি প্রভৃতি ভাষাবিজ্ঞানী মানুষের ভাষা উপলব্ধি ও তার ব্যবহারের ক্ষমতাকে উচ্চতর মানসিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করেছেন। উচ্চতর মানসিক প্রক্রিয়াগুলোকে একটি শব্দের মাধ্যমে বোঝানো হয়ে থাকে। শব্দটি হচ্ছে কগনিশন।

ভাষাসহ সব ধরনের কগনিশন প্রক্রিয়া স্মৃতি ও শিক্ষার মাধ্যমে উপস্থাপন করা যেতে পারে। আসলে আমাদের মানসিক প্রক্রিয়ার একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে স্মৃতি ও শিক্ষা। সে হিসেবে কগনিশনের কেন্দ্রীয় জায়গা হচ্ছে স্মৃতি ও শিক্ষা। আমাদের আজকের মনোযোগ হচ্ছে ভাষাগত কগনিশনের নিয়মকানুন ব্যাখ্যায় স্মৃতি ও শিক্ষার ভ‚মিকা। আরেকটি গুরুত্বপূণর্ বিষয় হচ্ছে জীবের বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক জিন। জিন মানুষের মানসিক প্রক্রিয়ার মূল সুর। জিন ও সিন্যাপসের কথোপকথনের মধ্যে নিহিত আছে যাবতীয় মানসিক প্রক্রিয়ার বীজ।

স্টিফেন পিঙ্কার ভাষাকে দেখেছেন একটি হোমোজিনিয়াস অ্যাসোসিয়েটিভ স্মৃতিব্যবস্থার ফলাফল হিসেবে অথবা বিকল্পভাবে, জিনগতভাবে নিধাির্রত হিসাব মডিউলের একটি সেট যার ভেতরে নিয়মগুলো প্রতীকগত উপস্থাপনা ম্যানিপুলেট করে। এই যে হোমোজিনিয়াস অ্যাসোসিয়েটিভ স্মৃতিব্যবস্থা এবং জিনগতভাবে নিধাির্রত হিসাব মডিউল নামক দুটো তত্ত¡, তা স্টিফেন পিঙ্কার তার ‘দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্সটিঙ্কট’ ও ‘ওয়াডর্স অ্যান্ড রুলস’ গ্রন্থদ্বয়ে বিস্তারিতভাবে বণর্না করেছেন। এখানে ইংরেজি ভাষার বিশেষ একটি নিয়মকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে বিষয়টিকে বোঝানো হচ্ছে।

মানুষের মস্তিষ্কে রয়েছে সচেতন ও অবচেতন স্মৃতি। এ সচেতন আর অবচেতন স্মৃতিকে কাজে লাগিয়েই মানুষ নতুন কিছু শিখে থাকে। আসলে সচেতন স্মৃতিকে অবচেতন স্মৃতির একটি অংশ বিবেচনা করা যেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12442 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1