শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আলোর জগতে বিজ্ঞানীরা

সময়ের আপেক্ষিকতা নিয়ে পুরো পৃথিবী একসময় যেভাবে অবাক হয়েছে এর চেয়ে গুরুত্বপূণর্ বিষয় ছিল কিছু মানুষ তাদের সময় থেকে এগিয়ে থাকা বা কিছু ব্যতিক্রম কল্পনায় মহাবিশ্বকে তার চলে আসা নিয়মে বেঁধে ফেলা। আমাদের সফলতা এখানেই
ইরফান মিশু
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

গতিশীল আলোর ভর একেবারে শূন্য নয়। তবে এ কথাটা অনেকেই মানতে চান না। কিন্তু গতিশীল আলোর ভর শূূূূূূূূূূূূূূন্য নয় বলেই, আইনস্টাইনের ফটো তড়িৎক্রিয়া সত্য। গতিশীল ফোটনের ভর না থাকলে এর ভরবেগ থাকত না। আর ভরবেগ আছে বলেই ফটো তড়িৎক্রিয়া প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছিল। বলাই বাহুল্য আইনস্টাইন নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন এ ফটো তড়িৎক্রিয়ার জন্য।

আলোর কণা, মানে ফোটনের জীবনকাল কত? এ ব্যাপারে আমরা খুব বেশি মাথা ঘামাই না। আলোর কণা ভরই বা কত? সে কথাও ভাবি না কখনো।

একটা কথা কমববেশি আমরা সবাই জানি, ফোটনের স্থির ভর শূন্য। স্থির ভর শূন্য বলেই আইনস্টাইনে ভর-শক্তি সমীকরণ সত্য।

ভর শূন্য নয় বলেই আলোর কণা ধমর্ মেনে নেয়া হয়। ভর আছে বলে, আলোর কণা ফোটনকে বস্তু হিসবেও ভাবা যায়। অন্যদিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে, ফোটন একই সঙ্গে কণা ও তরঙ্গের মতো আচরণ করে। তাই ফোটনকে শক্তি বললেও ভুল হবে না।

আইস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটি বলে, কোনো বস্তুর বেগ আলোর বেগের চেয়ে বেশি হতে পারে না। আলোর বেগ অপরবতর্নীয়। কখনো কম বা বেশি হবে না।

কিন্তু ইদানীং জামাির্নর একদল পদাথির্বদ বলছেন, আলোর স্থির ভর একেবারে শূন্য নয়। কোনো কোনো ফোটনের কিছুটা স্থির ভর আছে। তাই যদি হয়, তাহলে সেসব ফোটনের বেগ কখনো আলোর বেগের সমান হতে পারে না। হলে থিওরি অব রিলেটিভিটি অনুযায়ী ওইসব ফোটনের ভর অসীম হবে। এ সমস্যা এড়াতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, সামান্য স্থিরভরযুক্ত এসব ফোটনের বেগ আলোর ধ্রæব অবস্থার বেগের তুলনায় কিছুটা কম হবে। বিজ্ঞানীদের মতে ওইসব ফোটন কণার স্থির ভর ১০^Ñ৫৪ কেজি।

এতদিন মনে করা হতো, আলোর ফোটন জীবনকাল অসীম। কিন্তু যেসব ফোটনের কিছুটা স্থির ভর আছে, তাদের একটা নিদির্ষ্ট জীবনকালও থাকবে। বিজ্ঞানীরা এসব ফোটনের জীবনকাল নিণর্য় করতে সক্ষম হয়েছেন বলেও দাবি করছে।

গতিশীল ফোটনের নিজস্ব প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে এর জীবনকাল ৩ বছর। কিন্তু আমাদের মহাবিশ্বের প্রসঙ্গ কাঠামের সাপেক্ষে আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটি অনুযায়ী সেই জীবনকাল দঁাড়াবে ১০^১৮ বিলিয়ন বছরে!

সামান্য স্থির ভরযুক্ত এসব ফোটন আরো কিছু আলোক কণা বিকিরণ করতে পারে। কোন কোন কণা? বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেগুলো হতে পারে নিউট্রোনো ও এন্টি-নিউট্রোনোর জোড়া। আবার এমন কিছু কণা হতে পারে, যেগুলো আমাদের স্ট্যান্ডাডর্ কণা-বিজ্ঞানের বাইরের কোনো অজানা কণা।

বিগ ব্যাং তথ্যানুযায়ী ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে আমাদের মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। অনেক মহাজাগতিক বিকিরণের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যেগুলোর বয়স মহাবিশ্বের বয়সের কাছাকাছি। জামাির্নর প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের গবেষক জুলিয়ান হিকের মতে, সবচেয়ে পুরনো যেসব আলোর কণা আমরা দেখতে পেয়েছি, সেগুলোর কিছু কিছু হয়তো সামান্য স্থির ভরের। তাদের জীবনকাল সীমিত হতে পারে। সেগুলো বড়জোর মহাবিশ্বের কাছাকাছি বয়সের হতে পারে। কিন্তু তাদের জীবনকাল (১০^১৮ বছর) এর তুলনায় মহাবিশ্বের বয়স তো কিছুই নয়।

আধুনিক বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানীরা আমাদের একটা নকশা এঁকে দিয়েছেন। তবে সে নকশা যে সব সময়ই অপরিবতির্ত থাকবে তা নয়। বিজ্ঞানের বয়স যত বাড়বে ঠিক তখন সে নিজেই হেসে ফেলবে তার ফেলে আসা কাজগুলো ভেবে। আমরা ঠিক বিজ্ঞানের কোন পযাের্য় আছি বলা যাচ্ছে না, তবে আমরা মহাকাশের নকশা একটু হলেও অঁাকতে শিখেছি। আধুনিক জ্যোতিবির্দ্যা আমাদের অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দিয়েছে কিন্তু আমাদের অভিযান তাই বলে থেমে নেই।

বিজ্ঞান যেমন আমাদের প্যারাল্যাল লাইফের ধারণা দিয়েছে, তেমনি গবেষকদের পাটির্ক্যালের টেলিপোরটেশনের সফলতা আমাদের টাইম মেশিনের স্বপ্ন নয়, বাস্তবতার এক রূপ দেখিয়েছে। তবে অতীতে ভ্রমণ অসম্ভব বলে মনে করলেও, ভবিষ্যৎ ভ্রমণের আশা থেকেই যাচ্ছে।

সময়ের আপেক্ষিকতা নিয়ে পুরো পৃথিবী একসময় যেভাবে অবাক হয়েছে এর চেয়ে গুরুত্বপূণর্ বিষয় ছিল কিছু মানুষের তাদের সময় থেকে এগিয়ে থাকা বা কিছু ব্যতিক্রম কল্পনায় মহাবিশ্বকে তার চলে আসা নিয়মে বেঁধে ফেলা। আমাদের সফলতা এখানেই।

কিছু দিন আগে প্রকাশিত একটা গবেষণার ফলাফল দিয়ে শেষ করতে চাই। আমরা যদি মনে করি প্রতিনিয়ত বধর্মান মহাবিশ্ব অনেক স্তরে স্তরে সাজানো। আমাদের হিসাবের বাইরে এই গ্যালাক্সি আর ছায়াপথে শুধু আমাদের দৃষ্টি থেমে নেই।

গোবরের পোকার রাতে চলাচল নিভর্র করে এই মিল্কিওয়ে দেখেই। কী অদ্ভুত আমাদের পরিবেশটা। আমরা সবাই একে-অন্যের সঙ্গে একই সুতায় কোনো না কোনোভাবে বঁাধা পড়ি। বিবতের্নর সঙ্গে আমরা খাপ খাইয়ে নিজেদের বঁাচিয়ে রাখছি, ঠিক আজো পৃথিবীতে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির প্রয়োগের অভাবে এই শতাব্দীতেও আদি যুগের মতো অনেকে বেঁচে আছে। সেখানে নেই কম্পিউটার বা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আলোচনা। সেখানে আজো দিন শেষে লণ্ঠন জ্বেলে অন্ধকার দূর হয়।

এই নকশার মধ্যে আমাদের স্থানটা কোথায় দেখতে পারলে অনেক ভালো লাগত, কিন্তু প্রকৃতি তার ব্যাসিক ডিজাইনটা আমাদের মধ্যে বঁাচিয়ে রেখেছে সব সময়ই! আমরা চোখ খুলে সুবিশাল আকাশে তাকাই আর ভাবতে চেষ্টা করি ঠিক একটা নীল আকাশ, যেখানে কল্পনার কোনো শেষ নেই.. যেমন নেই এই মহাকাশের গভীর রাতে সুবিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত অবাক হই। এখানে বয়সের কোনো ভেদাভেদ নেই, মহাকাশে লুকিয়ে থাকা রহস্য সবাইকে একইভাবে টানতে থাকে।

খুব বেশি নয়, হাজার বছর আগেও আমাদের জীবন অনেক বেশি নিভর্র করত এরই ওপর। আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে যেভাবে অনেকেই নিজের হারানো প্রিয়জনকে খুঁজে বেড়াত, কেউ তৈরি করত দেয়ালপঞ্জিকা, কেউ মহাসমুদ্রে চলার পথ বের করতে ব্যস্ত ছিল আর কেউ করত ভবিষ্যদ্বাণী।

এসব এখন প্রযুক্তির ছেঁায়ায় অনেকাংশে পরিবতর্ন হয়েছে। যদি এই সুবিশাল নকশার একটা বোধগম্য ধারণার কাঠামো তৈরি করা যায় তাহলে কেমন হবে?

বতর্মান সময়ের সবচেয়ে অবাক করা আবিষ্কারের একটি ন্যানোটেকনোলজি। যদি নতুন কোনো মহাবিশ্ব দেখার ইচ্ছা হয় তবে ন্যানোটেক রিসাচর্ ল্যাবে নিদ্বির্ধায় যাওয়া যেতে পারে। আমরা স্বাভাবিক দৃশ্যমান আলোয় যা কোনো দিন চিন্তাও করতে পারি না, সেই না-দেখা জাগতের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বসবাস করে আসছি।

এই না-দেখা জগতে আমাদের অনেক অজানা প্রশ্নের জবাব লুকিয়ে ছিল, অনেক কিছু ছিল অজানা। কিন্তু আমাদের এই বিশাল মহাকাশে কেউ কি নেই যারা ঠিক এমনিভাবে আমাদের অনেককাল না-দেখে আছে? আমরা ঠিক এতটাই ক্ষুদ্র যে ন্যানোল্যাবে খুঁজে পাওয়া নতুনদের খাতায় আমাদের নাম লেখা হতে পারে। তাহলে এলিয়েনদের নিয়ে আমাদের বৈজ্ঞানিক সব কল্পকাহিনী কি সত্যিকারেই ভিত্তিহীন? হিসাব করে দেখা যাবে, ন্যানো লেভেলের ওইসব প্রাণীর কাছে আমরা এখন ঠিক এলিয়েনদের মতোই আবিভার্ব ঘটাচ্ছি।

মহাকাশের একটা নকশা যদি আসলেই তৈরি করা যেত তাহলে আমাদের হয়তো খুঁজে পাওয়া যেত সেই নকশার খুব ছোট এক বিন্দুতে। প্রাণীদের মাঝখানে মানুষের পাথর্ক্য এখানেই। মানুষের অভিযান এখন মঙ্গল গ্রহে নতুন আবাসস্থল তৈরি করা। খুব বেশি নয়, ২০২৩ সালের একটা স্কিম তৈরি হয়ে গেছে। তখন কেউ হয়তো বলবে, ‘আমার জন্ম মঙ্গলে’।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12440 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1