শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমার চেতনা আমার বর্ণমালা

ফেব্রম্নয়ারি মাসে পুরো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিপণন ও ঐতিহ্য বিকাশে দেশীয় ফ্যাশন হাউস ও প্রতিষ্ঠানগুলো একুশের বিষয়বস্তু নির্ভর আমাদের চেতনা জাগানিয়া পোশাক-আশাক ও ফ্যাশন সামগ্রী তৈরি করে যাচ্ছেন। মূলত আমাদের জাতীয় চেতনায় পুনঃপুনঃ বিকাশের তাগিদে। যা বিগত বছরগুলোয় সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও মিডিয়ার সহযোগিতায় দিন দিন সমৃদ্ধতর হচ্ছে।
সাবরিনা জেরিন
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

একুশের চেতনার ধারা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির বুকে যে সুপ্রবাহের সৃষ্টি করেছে সাম্প্রতিককালে একুশের চেতনার ছোঁয়া লেগেছে দেশের ফ্যাশন ট্রেন্ডেও। বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে পোশাক একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। যে অনুষঙ্গের গহীনে এখন চলছে দেশীয় মোটিফে করা আধুনিক বোধের প্রকাশ। বিভিন্ন উৎসবের পাশাপাশি নগরবাসী একুশের চেতনাউৎকীর্ণ পোশাকের প্রতিও তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন প্রদানের মধ্যদিয়ে শহীদ দিবসের মর্মগাঁথাকে প্রতি বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে শরীরে জড়িয়ে নেন গভীর ভালোবাসায়। দেশীয় ফেব্রিকে তৈরি একুশের পোশাক আউটলেট থেকে সংগ্রহের উদ্যোগ শুরু হয় ফেব্রম্নয়ারির গোড়া থেকে। ঢাকার প্রায় শতাধিক খ্যাতনামা ফ্যাশন হাউস নাগরিক জীবনের পরম এই অনুষঙ্গকে অত্যন্ত নান্দনিকরূপে উপস্থাপনের লক্ষ্যে গ্রহণ করে বিপুল আয়োজন। এই আয়োজনে থাকে পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, শাড়ি, থ্রিপিস, টি-শার্ট, পট, শোপিস, টিপট, মগসহ নানা দ্রব্য।

একুশে ফেব্রম্নয়ারি বাঙালি জাতির এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। তাই তো ফেব্রম্নয়ারি আজ ভাষার মাস হিসেবে সমগ্র বিশ্বের কাছে পরিচিত। এই মাসে একুশের চেতনায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হয় সমগ্র জাতি ও ভাষাপ্রেমীরা। বাংলাদেশে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের যে ধারাবাহিকতার পুনর্বিন্যাস, পুনর্নির্মাণ এবং অনুশীলন ইত্যাদি প্রক্রিয়ার চলমানতা রয়েছে, সেই প্রেক্ষিতে ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের পটভূমি প্রতি দিন প্রতি মাসে প্রতি বছর ক্রমেই আলোকিত হয়ে উঠছে। লক্ষণীয় যে, এই ফেব্রম্নয়ারি মাসে পুরো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিপণন ও ঐতিহ্য বিকাশে দেশীয় ফ্যাশন হাউস ও প্রতিষ্ঠানগুলো একুশের বিষয়বস্তু নির্ভর আমাদের চেতনা জাগানিয়া পোশাক-আশাক ও ফ্যাশন সামগ্রী তৈরি করে যাচ্ছেন। মূলত আমাদের জাতীয় চেতনায় পুনঃপুনঃ বিকাশের তাগিদে। যা বিগত বছরগুলোয় জনসাধারণের পৃষ্ঠপোষকতায় ও মিডিয়ার সহযোগিতায় দিন দিন সমৃদ্ধতর হচ্ছে। সাদা এবং কালো রঙের সমন্বয়ে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহের ক্ষেত্রেও থাকে ক্রেতাদের একটি বিয়োগাত্মক দিনের স্মরণগাথা। তাই বিয়োগ-ব্যথার বেদনার্ত রং কালোই মূলত সবক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়ে থাকে। পোশাকে ও অন্যান্য সামগ্রীতে বর্ণমালা, শহীদ মিনার, একুশের পঙ্‌ক্তিমালা, শহীদদের প্রতিকৃতিও থাকে বিভিন্ন সামগ্রীর অবয়বজুড়ে। এ ছাড়া থাকে বাঙালির চেতনাবাহী বিবিধ বিষয়; যা আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগের স্মৃতিকে চোখের সামনে ফুটিয়ে তোলে। ভাষার প্রতি বাঙালির যে টান যে মমত্ববোধ। এই টান ও মমত্ববোধ যেমন উৎকীর্ণ হয় লেখায়, লেখায় এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনে, তেমনি ফ্যাশনের ভুবনেও একুশের মর্মার্থকে শ্রদ্ধার সঙ্গে ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস থাকে প্রতি বছর। ভাষার মাস যখন বছর ঘুরে আবেগতাড়িত বাঙালির প্রাঙ্গণে এসে ছায়া ফেলে। ঠিক তার সঙ্গে এসে পাশে দাঁড়ায় ঋতুরাজ বসন্ত। একদিকে শোকার্ত অতীতের শোকগাথার গল্পবুননের গুণগুলো বুকের স্পন্দনে তির তির করে কাঁপতে থাকে। একইভাবে রঙিন বসন্তের ফাগুন হাওয়ার দোলায়ও দুলে ওঠে বাঙালির হৃদয়। অনুভূতিতে জেগে ওঠে এক অন্যরকম আবেশ। একদিকে একুশের আবেগমথিত প্রহরের করুণ সুরেলা আবহ রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারির প্রাণাবেগকে করে তোলে বিধৃত আর বেদনাপস্নুত। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, চিত্রকলা, ফ্যাশন তথা শিল্পের প্রতিটি শাখায় রয়েছে একুশে ফেব্রম্নয়ারির দারুণ প্রভাব। যে প্রভাবের স্পর্শে আলোকিত হয়ে উঠেছে বাংলা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটকসহ নানা অঙ্গন। সর্বোপরি প্রতি বছর বাংলা একাডেমি আয়োজন করে ১ ফেব্রম্নয়ারি থেকে মাসব্যাপী বইমেলার। যে বইমেলা আজ বাঙালির প্রাণের মেলারূপে প্রতিটি বাঙালির মনে জায়গা করে নিয়েছে। পাশাপাশি একুশের চেতনাকে ধারণ করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও চলে নানা আয়োজন।

একুশের চেতনার ধারা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির বুকে যে সুপ্রবাহের সৃষ্টি করেছে সাম্প্রতিককালে একুশের চেতনার ছোঁয়া লেগেছে দেশের ফ্যাশন ট্রেন্ডেও। বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে পোশাক একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। যে অনুষঙ্গের গহীনে এখন চলছে দেশীয় মোটিফে করা আধুনিকবোধের প্রকাশ। বিভিন্ন উৎসবের পাশাপাশি নগরবাসীরা একুশের চেতনাদীপ্ত হয়ে পোশাকের প্রতিও তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন প্রদানের মধ্যদিয়ে শহীদ দিবসের মর্মগাথাকে প্রতি বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে শরীরে জড়িয়ে নেন গভীর ভালোবাসায়। দেশীয় ফেব্রিকে তৈরি একুশের পোশাক বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের আউটলেট থেকে সংগ্রহের উদ্যোগ শুরু হয় ফেব্রম্নয়ারির গোড়া থেকে। রাজধানীর শতাধিক ফ্যাশন হাউস নাগরিক জীবনের পরম এই অনুষঙ্গকে অত্যন্ত নান্দনিকরূপে উপস্থাপনের লক্ষ্যে গ্রহণ করে বিপুল আয়োজন। এই আয়োজনে থাকে পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, শাড়ি, থ্রিপিস, টি-শার্ট, পট, শোপিস, টিপট, মগসহ নানা সামগ্রী। বর্তমানের বয়ানে একুশের চেতনা ফুটিয়ে তোলার এক শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে নানা গল্পের পটভূমি হয়ে থাকা টি-শার্ট। টি-শার্টের ছোট্ট এক চিলতে জমিনে যে কত আবেগ আর অনুভূতি এক হয়ে মিশে যেতে পারে তা যেন সময়ের প্রতিটি পরতে পরতে একটু একটু করে উন্মোচিত হচ্ছে আমাদের সামনে। আর তাই একুশের চেতনাকে ধারণ করে থাকা টি-শার্টগুলোয় যেমন দেখা মেলে চিরাচরিত বর্ণমালার সুনিপুণ কোনো বিন্যাস, তেমনি এই সীমিত ক্যানভাসেই অপরিসীম আবেদন নিয়ে উঠে আসে দেশের প্রতি ভালোবাসার নানা গল্প। একটা সময় ছিল যখন, ফাল্গুন আর একুশের আয়োজনে মেয়েদের প্রথম পছন্দ ছিল শাড়ি। শাড়ির প্রতি সেই পক্ষপাত হয়তো এই সময়ের মেয়েদের মধ্যেও কমবেশি বিদ্যমান। আজ সাদা-কালো কিংবা নীলের পটভূমিতে একুশের বর্ণমালাকে ধারণ করা মেয়েদের শাড়িতে সুতির প্রাধান্যই বেশি। একুশের অন্যান্য যে অনুষঙ্গ যোগ হতে পারে পরিধেয়র সঙ্গে তার মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় মেয়েদের মাথা আর গলায় গাঁদা ফুলের সাজের কথা।

একদিকে একুশের শহীদ বেদিতে গাঁদা কিংবা গোলাপের শ্রদ্ধার্ঘ্য আর অন্যদিকে একুশের চেতনায় শামিল হওয়া কোনো তরুণীর মাথায় শোভা পাওয়া গাঁদার মালা যেন একুশের ছন্দটাকেই নিয়ে আসে সবার মধ্যে। আবার মাথায় বাংলাদেশের পতাকার রঙের কোনো ফেট্টি বা হাতে লাল-সবুজের কোনো ব্রেসলেটও আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় ভিন্ন এক অনুভূতির সঙ্গে। সেই সঙ্গে ছোট-বড় সবার গালে রং-তুলির ছোঁয়ায় জন্ম নেয়া বর্ণমালা আর একুশের মিনারও যেন সবাইকে মনে করিয়ে দেয়- শহীদের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি কথা। এ যেন মনে করিয়ে দেয়া- দিনটি শোককে শক্তিতে পরিণত করে ভাষার জন্য ভালোবাসা প্রকাশের দিন। আসছে একুশে ফেব্রম্নয়ারি সবার হদয়ে চেতনার গল্পে বর্ণমালার গল্প বুনুক। শুভেচ্ছা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<88692 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1