শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিয়ের সানাই বাজল

বিয়ের ষোলো আনা পূর্ণ করতে বিয়ে-অনুষঙ্গের ব্যবহার যুগ-যুগান্তরের। এ ছাড়া বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে এবং কনের বাড়ি থেকে বরের বাড়িতে বিয়ের উপকরণ পাঠানোটা রীতিমতো একটা উৎসবের পর্যায়ে। তাই তো বিয়ে-পূর্ব অনুষঙ্গের কেনাকাটার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ...
তাহমিনা সানি
  ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বিয়ের ষোলো আনা পূর্ণ করতে বিয়ে-অনুষঙ্গের ব্যবহার যুগ-যুগান্তরের। এ ছাড়া বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে এবং কনের বাড়ি থেকে বরের বাড়িতে বিয়ের উপকরণ পাঠানোটা রীতিমতো একটা উৎসবের পর্যায়ে। তাই তো বিয়ে-পূর্ব অনুষঙ্গের কেনাকাটার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি রাজধানীর বিয়ের বাজার ঘুরে দেখা যায়, শহরটির বিভিন্ন মার্কেট ও ফ্যাশন হাউসসহ বেশকিছু দোকানে বিয়ের উপকরণের মেলা বসেছে। এগুলোর মধ্যে এলিফ্যান্ট রোডে রয়েছে ৩০টিরও বেশি দোকান। আর হিন্দুদের বিয়ের জন্য শাঁখারিপট্টির প্রায় পুরোটাজুড়ে রয়েছে অগণিত দোকান। এ ছাড়া বিয়ের অনুষঙ্গ পাইকারি কেনার জন্য ঢাকার চকবাজারে রয়েছে বেশকিছু দোকান। আর আধুনিক প্রচার হিসেবে বিয়ে উৎসব বা বিয়ে মেলা তো আছেই।

বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় উপকরণ

বিয়ের উপকরণ হিসেবে বিয়ের লিস্টের প্রথমেই থাকে বিভিন্ন আকারের লাগেজ। সহজে কেনাকাটা করতে এই লাগেজ আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। প্রেসিডেন্ট, ডেসি মিলানসহ অসংখ্য ব্র্যান্ডের লাগেজ বাজারে পাওয়া যায়। এরমধ্যে আপনার পছন্দের লাগেজটি প্রথমেই সংগ্রহ করে নিন। ব্র্যান্ডেড লাগেজগুলোর দাম শুরু হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে। তবে আকারভেদে এর দাম হতে পারে ৯ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। চাইলে নন-ব্র্যান্ডেড লাগেজ কিনতে পারেন। লাগেজের দাম শুরু হবে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে। এরপর প্রয়োজন বরের শেরওয়ানি। বিভিন্ন মানের শেরওয়ানির দাম পড়বে ৪ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বরের শেরওয়ানির সঙ্গে পায়জামার দাম পড়বে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। বরের শেরওয়ানির জৌলুস আরও ফুটিয়ে তুলতে প্রয়োজন পড়ে ওড়নার। এর দাম ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর পাগড়ির দাম পড়বে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বিয়ের উপকরণ বিক্রেতা মেহজাবিন তামান্না বলেন, বিয়েতে আরও কিছু উপকরণের প্রয়োজন রয়েছে, যা প্রতিটি বিয়ের আয়োজনকে পরিপূর্ণ করে তুলবে। এর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বরের নাগরা জুতা। এর দাম পড়বে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া বিয়ের ডালা, কুলা, বাটি/প্রদীপ, রাখি ইত্যাদির দাম পড়বে ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। বিয়ের উপটান, সোন্দা, চন্দন, চন্দন তেল, সোহাগপুরী ইত্যাদির দাম পড়বে ৩৫০ থেকে ৯৫০ টাকার মধ্যে। কনের জন্য আলতা ৩০ থেকে ৬০ টাকা, মেহেদি ৪০ থেকে ১২০ টাকা, পাটি ১৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, হলুদ তোয়ালে ১২০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। বিয়ের অনুষঙ্গের মধ্যে আরও রয়েছে আফসান, রুমাল, পালকি ও ঝুড়ি। এগুলোর দাম পড়বে ১০০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া মাছডালা ২৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, টুথপিক ২০ থেকে ৫০ টাকা, তাজা গোলাপ ফুল প্রতি পিস ৫ থেকে ১০ টাকা, সাদা ফুল প্রতি পিস ৪ থেকে ৬ টাকা, রজনীগন্ধা প্রতি স্টিক ৫ থেকে ১০ টাকা।

কনের শাড়ি

বিয়েতে কনের জন্য লাল, সাদা, নীল, মেরুন, ভারী কাজের শিফন, জামদানি, বেনারসি বা জর্জেট শাড়ি থাকতে পারে। শাড়ির মধ্যে কমলা বা সবুজ রঙের শাড়িও রাখতে পারেন। বিয়ের শাড়ির সঙ্গে অতিরিক্ত দুটি সুতি বা হাফ সিল্কের শাড়ি রাখতে হয়। স্বর্ণের গহনার পাশাপাশি শাড়ির সঙ্গে অ্যান্টিক লুক বিভিন্ন পাথরের তৈরি নেকলেস বা কানের দুলও দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে কনের বিয়ের বেনারসি, শিফন, জর্জেট ও জলপাই রঙের শাড়িসহ বিয়ের সব শাড়ির দাম পড়বে ৬ হাজার থেকে ৭০ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর জুতার দাম পড়বে ১ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। শাড়ির পাশাপাশি বিয়ের পোশাকে লেহেঙ্গা বেশ জনপ্রিয়। পাশ্চাত্যের অনুসরণে গাউনও যোগ হচ্ছে বিয়ের লিস্টে। পিছিয়ে নেই উপমহাদেশের জনপ্রিয় পোশাক সালোয়ার-কামিজ। বৈচিত্র্য আনতে কখনো কামিজের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হচ্ছে লেহেঙ্গা। লেহেঙ্গা কামিজ বলে পরিচিত এই পোশাকটি এখন হালের ট্রেন্ড। লং কামিজের সঙ্গে লেহেঙ্গার নিচের ঘের দেয়া ঘাগড়া জুড়ে দিয়ে বানানো হয় এই নতুন পোশাক। বাঙালি বিয়ের নতুন পোশাক গাউন। তবে ঠিক পাশ্চাত্যের গাউনের মতো নয়। গাউনের মধ্যেই দেশীয় লুক দেয়া হয়। দেখতে অনেকটা লেহেঙ্গার মতোই দেখায়। সঙ্গের ওড়নাটা ডিজাইন করা হয় বেশ যত্ন নিয়ে। এই ওড়নায় ফুটে ওঠে উৎসব-আভিজাত্য। জর্জেট, সিল্ক, শিফন, কাতান, জামদানিসহ উৎসব-উপযোগী ফেব্রিকস ব্যবহার হচ্ছে এসব বিয়ের পোশাকে। জারদৌসি আর কারচুপির কাজ জনপ্রিয়। লেইস, চুমকি, বিডস, মেটাল, স্টোন আর মুক্তার নকশা বিয়ের দু্যতি ছড়ায়। ডিজাইনার লেহেঙ্গা, কামিজ, আনারকলি পাবেন ৩০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে। বাজেট বেশি থাকলে খ্যাতিমান ডিজাইনারদের সিগনেচার কালেকশনও কিনতে পারেন। খরচ হবে দুই লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা।

কনের পোশাক যা-ই হোক, বিয়েতে ওড়না থাকা চাই-ই চাই। একসময় লাল ওড়না ব্যবহার করা হলেও ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের কল্যাণে পোশাকের সঙ্গে ওড়নায় লেগেছে বদলের হাওয়া। নকশিকাঁথার সেলাই, রংতুলির ছোঁয়ায় ওড়না এখন কনের আভিজাত্যকেই তুলে ধরে। মসলিন, টিসু্য, অরগান্ডা সিল্ক, পিওর সিল্কের ওড়নাই বেশি প্রচলিত। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে ডিজাইন হচ্ছে ওড়না। মেরুন, ফিরোজা, সোনালি, নীল, অফহোয়াইট, ক্রিম, সবুজ, ম্যাজেন্টা, গোলাপিসহ পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সব রংই থাকছে বিয়ের ওড়নায়। বিয়ের ওড়নার দাম শুরু ৩০০০ থেকে। বাজারে ১০০০০ থেকে ১৫০০০ টাকার বিয়ের ওড়নাও পাবেন।

জুতা

বিয়ের অনুষ্ঠানে সাজসজ্জা ও পোশাকের পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ে যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হয়। আর তা হলো জুতা। বর-কনে উভয়ের জুতা হতে হবে অনুষ্ঠানের উপযোগী। অনেক জুতা আছে যা খুব কষ্ট করে পরতে হয়। বিয়েতে এমন জুতা পরিহার করাই উত্তম। এতে সহজেই পায়ে দাগ পড়ে যেতে পারে। কনে শাড়ি বা লেহেঙ্গার সঙ্গে উঁচু হিল পরতে পারে। ফ্ল্যাট স্যান্ডেল শাড়ির সঙ্গে মানানসই হবে না। আর বরের জন্য বিয়েতে পাঞ্জাবির সঙ্গে নাগরা মানানসই হতে পারে। বৌভাতে সু্যট-প্যান্টের সঙ্গে মানানসই জুতা। এ ক্ষেত্রে জুতার রং সু্যট-প্যান্টের বিপরীত রং হলে ভালো হয়। তবে যাই পরা হোক না কেন, খেয়াল রাখতে হবে তা যেন আরামদায়ক হয়।

শেরওয়ানি

বরের শেরওয়ানি দেশি কাতান, মটকা, তসর, অ্যান্ডি, মসলিন, ধুপিয়ান কাপড়েই তৈরি হচ্ছে। ইদানীং শেরওয়ানিগুলো তৈরি হচ্ছে, যেন বিয়ে ছাড়াও অন্য কোনো অনুষ্ঠানের সময় পরা যায়। জমকালো ভাব ছেড়ে ক্যাজুয়াল ঢঙের চাহিদা বাড়ছে। লম্বা শেরওয়ানি তো সব সময়ই জনপ্রিয় ছিল, এখন সেমি লং শেরওয়ানিও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রঙের ক্ষেত্রেও এসেছে দেখার মতো পরিবর্তন। মেরুন বা হালকা সোনালির সঙ্গে নীল, বেগুনি, সবুজ এমনকি কালো রঙের শেরওয়ানি নজর কেড়ে নিচ্ছে। বরেরা চেষ্টা করছেন কনের শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে শেরওয়ানি পরার।

থিমভিত্তিক সাজের চল এখন। তাই বিয়ের পোশাক পরিকল্পনার আগে একটা থিম ঠিক করে নিতে পারেন। তার সঙ্গে মিলিয়ে নিন শাড়ি, গয়না ও অন্য অনুষঙ্গ। আকদ থেকে শুরু করে হলুদ, বিয়ে আর বৌভাত- একেক দিন একেক থিম। রং আর সাজ-পোশাকে থাকবে সামঞ্জস্য। যেমন হলুদের থিম হতে পারে ফুল। পছন্দের একটা ফুলের থিম নির্বাচন করুন। সে অনুযায়ী বাকি সব কিছু ঠিক করুন। বিয়ের দিনের জন্য বেছে নিন চিরায়ত লাল শাড়ি। বেনারসি, কাতান শাড়ি, দেশীয় সাজ-গহনায় ফুটিয়ে তুলুন ঐতিহ্যবাহী বিয়ের লুক। বৌভাত হোক আধুনিক থিমে। জর্জেট বা সিল্কের শাড়ি। আনুষঙ্গিক সব কিছু সে হিসেবেই। আর প্রতিটি দিনের সাজ-পোশাকের সঙ্গে অনুষ্ঠানের সব কিছুতেই থাকবে নির্দিষ্ট রঙের ছোঁয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84909 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1