শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
বেড়ানো

জিন পাহাড়ের পথে

সৌদিয়ানদের কাছে এই জিন পাহাড় নিয়ে নানা মিথ চালু রয়েছে। জানি না কতটুকু সত্যমিথ্যা। তবে জায়গাটা অসাধারণ...
মো. জাভেদ হাকিম
  ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর ইউটিউবে যখন সৌদি আরবের জিন পাহাড়ের সংবাদ ও ভিডিও দেখতাম তখনি মনের ভিতর তা স্বচক্ষে দেখার প্রচÐ আগ্রহ জাগত। অনেক সময় বিড়বিড় করে বলেই ফেলতাম ইস যদি যেতে পারতাম। এই ইস শব্দটাই কাযর্কর হলো। পবিত্র হজে যাওয়ার সুযোগ এলো। আল্লাহর রহমতে গেলামও। ঠিকঠাক মতো হজ পালন হলো। এবার তো ঘুরবাজ মন উথাল-পাথাল। এবাদতের পাশাপাশি প্রতিদিনই মক্কার আশপাশ ঘুরে বেড়াই। সুন্নত ভেবে ঘোরাঘুরিটাও নেক আমলের শামিল। মক্কায় কয়েকদিন থাকার পর এবার এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, মোয়াল্লেম সাহেব মক্কার কাযর্ক্রম শেষে আমাদের পবিত্র মদিনা নিয়ে গেলেন। এখানে থাকা হবে নয় দিন। হজ সঙ্গীদের সঙ্গে জুটি বঁাধলাম। একদিন ফজর নামাজ পড়েই মাইক্রোতে চড়ে ছুটলাম সেই কাক্সিক্ষত জিন পাহাড়। গাড়িচালক হলেন এক এরাবিয়ান। গাড়ি চলছে ঐতিহাসিক ওহুদ পাহাড়ের পাশঘেঁষে। পুরো মদিনা শহরটাকে ঘিরে রেখেছে এই ওহুদ পাহাড়। শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে জিন পাহাড়ের অবস্থান। মদিনার উত্তর-পশ্চিমে ওয়াদি-ই-আল বায়দা নামক পাহাড়ঘেরা এক উপত্যকা আছে। যাকে আমার মতো সাধারণ পযর্টকরা জিনের পাহাড় হিসেবেই চিনি। মূলত এর নাম ওয়াদি আল জিন। কাছাকাছি যেতেই চোখে ধরা দিল নানান আকৃতির বৃক্ষহীন ন্যাড়া পাহাড়। এর চ‚ড়াগুলোও অদ্ভুদ আকৃতির। দুঃখের বিষয় চালক না বোঝে ইংলিশ না বোঝে হিন্দি। ফলে সে যা বলছে তা যেমন আমরা বুঝি না, আমারও কি জানার আগ্রহ সেটাও সে বোঝে না। ফলে এক মহা ক্যাচালে পড়েছিলাম। বহু ঘাম ঝরিয়ে বোঝানোর পর সে গাড়ির ব্রেক ও ক্লাস থেকে পা তুলল। এবার গাড়ি নিউটলে আপন গতিতেই প্রায় ১২০ কিলোমিটার পযর্ন্ত স্পিডে ছুটল। আনন্দে চোখে-মুখে ঝিলিক এলেও তা পরক্ষণেই মিলিয়ে যায়। গাড়ি থেকে নেমে ঘুরতে চাইলাম কিন্তু সেই সুযোগ আর পেলাম না। ইশারা-ইঙ্গিতে বেশি অনুনয়-বিনয় করায় লোকটির চেহারায় বাংলাদেশের লোকাল বাস চালকদের ভাব দেখতে পেলাম। কি আর করা, সেদিনের মতো আফসোস নিয়েই ফিরতে হলো। ইচ্ছেমতো ঘুরতে না পারায় রুমে এসে বেশ অস্বস্তি হলো। আমি হলাম ভ্রমণ কাঙ্গাল। দেশ কিংবা বিদেশ যেখানেই হোক না কেন, মনের মধ্যে না দেখার আফসোস পুষতে রাজি না। খেঁাজ লাগাই বাঙালি বা ইন্ডিয়ান ড্রাইভারের। পরদিন আবার যাব। এদিক-সেদিক খবরাখবর নিতেই মোবাইল নাম্বার পেয়ে যাই বাংলাদেশি এক চালকের। সেলফোনে কন্টাক্ট হয়। পরদিন ফজরের পরই চলে আসে সে। নবোদ্যমে আবারও ছুটে চলা। আলাপচারিতার কল্যাণে জানা হয় চালকের বাড়িঘরের ঠিকানা। এ যেন একেবারে সোনায় সোহাগা। ঢাকার কাজলা এলাকার ছেলে, বেশ আন্তরিক। গাড়ি চলছে আর নানান ঐতিহাসিক জায়গার বণর্না দিচ্ছেন। মাঝেমধ্যে নিজ থেকেই ব্রেক করে নামার সুযোগ দিচ্ছেন। আজকে মনে হলো ভিন্ন কোনো পথে ওয়াদি-আল বায়দা মানে জিনের পাহাড়ে যাচ্ছি। কাছাকাছি যেতেই শিওর হলাম। হ্যঁা ভিন্ন সড়কেই এসেছি। পথের মাঝ বরাবর বিশাল গেট। ফটকটি খোলা থাকায় চালক আনন্দচিত্তে জানালো আপনাদের ভাগ্য ভালো। কারণ জানতেই বললেন, এখানে বেশ বড় এক দুঘর্টনার পর থেকেই গেট লাগানো হয়েছে। বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। তাহলে তো ভাগ্য বেশ সুপ্রসন্নই বলতে হয়। গাড়ি থামল। নামার পর খেয়াল করলাম পিচ ঢালা

সড়কটি ঢালু। এবার চালক নিজ থেকেই পানি ভরা একটি বোতল আমার হাতে দিয়ে বললেন, এখানে বোতলটি রাখেন। কথা অনুযায়ী রাখলাম। আশ্চযর্ বোতল ঢালুর বিপরীতে গড়িয়ে যেতে লাগল। পানি ঢাললাম, তাও বিপরীতেই গেল। সে এক বিস্ময়কর ব্যাপার। গাড়ি নিউটলে রাখার পরেও ঢালুর উল্টো দিকেই চলল। সেই মুহ‚তের্ আমার মনের ভিতর যে আনন্দের ঢেউ খেলল তা এখানে লিখে প্রকাশ করতে পারব না। ওয়াদি আল জিন পাহাড় সম্পকের্ মানুষের প্রথম ধারণা আসে ২০০৯-১০ সালে। সৌদি সরকার এখানে একটি সড়ক তৈরির পরিকল্পনা করে। যথাসময়ে কাজও শুরু হয়। কিন্তু সমস্যা বঁাধে, রাস্তা নিমাের্ণর জন্য রাখা যন্ত্র ও পিচ ঢালাই করার বড় বড় রোলার গাড়িগুলো আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠতে থাকে। একটা সময় গাড়ি সয়ংক্রিয় ভাবে মদিনা শহরের দিকে চলতে শুরু করে। এই দেখে শ্রমিকরা প্রচÐ ভয় পেয়ে নিমার্ণ কাজ ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফলে সড়কটি মাত্র ৩৫-৪০ কিলোমিটার কাজ হওয়ার পর নিমার্ণ বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্বের মধ্যে অন্যতম আকষর্ণীয় ও অদ্ভুদ পথ হলো এই ওয়াদি-আল জিন পাহাড়ের বুক চিরে যাওয়া সড়কটি। সৌদি সরকার বেশ কিছুকাল জনসাধারণের যাতায়াত নিষিদ্ধ রাখার পর গেল কয়েক বছর হলো, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পযর্ন্ত দশর্নাথীের্দর প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। সৌদিয়ানদের কাছে এই জিন পাহাড় নিয়ে নানান মিথ চালু রয়েছে। জানি না কতটুকু সত্য মিথ্যা। তবে জায়গাটা অসাধারণ। এর আশপাশের পাহাড়গুলো অধিকাংশই কালো রঙের। দেশি চালক পাওয়ায়, সময়ের ছাড়ও পেলাম বেশ। সেই সুযোগে ইচ্ছেমতো ঘুরে দেখলাম। ওয়াদি আল জিন পাহাড় ঘোরা শেষে ছুটলাম খেজুর বাগান। সেই গল্প আগামী কোনো সংখ্যায় হবে ইনশাআল্লাহ।

ভ্রমণ তথ্য: ফজর পরেই যাবেন। তা না হলে প্রচÐ তাপমাত্রায় অস্থির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মসজিদে নববীর সামনে থেকে মাইক্রোতে শেয়ারিংয়ে যেতে পারবেন। তবে রিজাভর্ নিয়ে গেলে সুবিধা বেশি। গাড়িচালক যেন বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্তানের হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। গাড়ি রিজাভর্ নিলে অবশ্যই ওহুদ পাহাড় থেকেও ঘুরে আসবেন। তাতে অন্য আরেকদিন যাওয়ার খরচটা সাশ্রয় হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32906 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1