মনিরা মিতা
কালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরও একটি বছর। পুরনো বছরের হাত ধরেই আসে নতুন বছর। স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ২০২০ সাল। সেদিন চলে গেছে, সেদিন আর ফিরে আসবে না। তাই নতুন বছরের নতুন স্বপ্ন নিয়ে শুরু হোক নতুন জীবন। পুরনো দিনের ভুল ত্রম্নটি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যমে পথ চলতে হবে।
হাতছানি দিয়ে ডাকছে নতুন সকালের সোনালি সূর্য, সে নতুন দিনের আহ্বান করছে। বার্তা পাঠাচ্ছে সময়ের সঙ্গে পালস্না দিয়ে পথ চলতে। নতুন বছরে পা রেখেছি আমরা। এগিয়ে চলছে দিন।
পুরুষের পাশাপাশি অবদান রাখছে নারীরাও। তবুও নারীরা বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার। নিজের উন্নয়ন আর অগ্রগতির স্বাক্ষর রাখতে নারীদের পোহাতে হয় নানা কাঠ-খড়।
নারীরা পরিবার, সমাজ তথা দেশের বোঝা হয়ে থাকতে চায় না, তারা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে বাঁচতে চায়। কর্মক্ষেত্রে নারীরা সমমর্মিতা আর সহযোগিতা চায়। একজন নারী কখনো মা, কখনো বোন, কখনো মেয়ে আবার কখনো স্ত্রী। তাই নারীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করলেই কেবল আমাদের সমাজ, দেশ তথা জাতির পরিবর্তন সম্ভব।
বিগত বছরে আমাদের যেমন অনেক প্রাপ্তি আছে তেমনি অনেক ব্যর্থতাও রয়েছে। বিগত বছরে কর্মক্ষেত্র, পরিবার, সমাজসহ সব জায়গায় নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। যেন নারীরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। পরিবারেও তারা ভালো অবস্থানে থাকে তাও কিন্তু নয়। মা, বোন কিংবা বউ যে অবস্থানই হোক না কেন, পরিবারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের মতামতের গুরুত্ব নেই।
পরিবর্তন চাই এ অবস্থার। নতুন বছর হোক নারী-পুরুষের বৈষম্যমুক্ত। এতে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
নারী হাতের পুতুল নয় সে মানুষ। তাই নারীকে কেবল মেয়ে মানুষ নয় মানুষ ভাবতে হবে।
একটা নতুন বছর মানে কেবল একটা নতুন তারিখ, একটা নতুন সাল, একটা নতুন ক্যালেন্ডার নয় বরং নতুন করে পথ চলার স্বপ্ন।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথ চলার প্রত্যয়ে পুরনো বছর হারিয়ে যায় কালের গর্ভে। সেই সঙ্গে স্মৃতির চাদরে ডায়েরির পাতায় বন্ধি হয় আরেকটি বছর। কমে আয়ু, ফুরায় সময়। তাই সময়কে কাজে লাগাতে হবে। আরও পরিশ্রমী ও উদ্যমী হয়ে নারীকে পথ চলতে হবে। জীবন গঠনের স্বপ্ন নিয়ে পেরুতে হবে বহু আলপথ। অন্ধকার ফুঁড়ে যেমনি নতুন সূর্য উঠে আলোয় ভাসিয়ে দেয় পুরো পৃথিবী ঠিক তেমনি ঘুমিয়ে থাকা নারীদেরও জাগতে হবে। নারীর জীবন যেন একই বৃত্তে- বৃত্তবন্দি না হয়। সেই সুদূর শৈশব থেকেই নারী একই বৃত্তের চক্রে ঘুরে ফিরছে। নতুন বছরে নারী সেই চক্র ভেদ করে বের হয়ে আসুক। নারীদের সময়ের সঙ্গে গতিশীল হতে হবে। তাই তাদের শিক্ষার পাশাপাশি প্রশিক্ষণও নিতে হবে।
নারীর কর্মক্ষেত্রে পরিসর ও বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। নারীকে এগিয়ে যেতে হবে যেন সে কারও ওপর ভরসা না করে থাকে। নতুন বছরের শুভ সূচনা মুছে দিক পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নারীর ওপর নির্যাতন। নতুনের যাত্রা সবার মন থেকে মুছে দিক রাগ-অভিমান আর জরাজীর্ণতা।
নারীর প্রতি সুবিচার করতে বদলাতে হবে মন-মানসিকতা। ঘরে-বাইরে নিশ্চিত করতে হবে নারীর নিরাপত্তা। নারীর কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। বর্তমানে নারীরা শুধু ঘরেই সামলায় না বরং কর্মক্ষেত্রেও নারী তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলছে প্রতিনিয়ত।
নতুন বছরে পুরুষের পাশাপাশি নিজেদের মেলে ধরার জন্য সবক্ষেত্রে নারীকে আরও পরিশ্রমী ও সাহসী হতে হবে। নতুন বছরে নারীদের দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলতে হবে। তাহলেই নতুন সূর্য নারীদের জন্য নিয়ে আসবে আনন্দের আগমনী বার্তা।
মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো যেমন পাপ তেমনি নিজের ওপর আস্থা হারানো আত্মঘাতী। নারীকে আত্মঘাতী নয় বরং আত্মপ্রত্যয়ী হতে হবে। মনকে দৃঢ় করে সামনে চলবে নারী, মুখে বলবে- 'হাতের মুঠোয় হাজার বছর, সামনে এগিয়ে চলবই।'