শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যে ইতিহাস বিজয়ের

একাত্তরে এ দেশের নারীদের ওপর নির্যাতনের নৃশংসতা ও ব্যাপকতা এ পর্যন্ত বিশ্বে সংগঠিত সব নির্যাতনের শীর্ষে। পাক হানাদারদের দল বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করার যে নীল নকশা করেছিল তারই অংশ ছিল এই নির্যাতন। এছাড়াও একাত্তরে জন্ম নেয়া যুদ্ধশিশুরা আজ কোথায় কে আছে, কেমন আছে, কেউ তার খোঁজ নিতে যাইনি। অথচ যুদ্ধশিশুরাও তো আমাদের স্বাধীনতার চিহ্ন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন। যুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশে অনেক যুদ্ধশিশুকে বিভিন্ন বিদেশি এবং সংস্থা দত্তক নিয়ে বিদেশ চলে গেছে। যুদ্ধ পরবর্তীতে যারা দেশে জন্ম নিয়েছে, তাদেরও লোকলজ্জার ভয়ে আড়াল করে রাখা হয়েছে। সুতরাং 'যুদ্ধশিশু' বিষয়ে অন্ধকারে রয়ে গেছে জাতি।
মনিরা মিতা
  ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

শোষণ আর বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা পেতে সোচ্চার বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে ২৫ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানি হায়নার দল ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এই বাংলায়। ছিন্ন-ভিন্ন করে দিয়েছিল বাংলা মায়ের কোল। পাক হায়নার দল নিরীহ বাঙালিদের দাবিয়ে রাখতে বেছে নিয়েছিল দুটি অস্ত্র গণহত্যা এবং নারী নির্যাতন।

একাত্তরে এ দেশের নারীদের ওপর নির্যাতনের নৃশংসতা ও ব্যাপকতা এ পর্যন্ত বিশ্বে সংগঠিত সব নির্যাতনের শীর্ষে। পাক হানাদারদের দল বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করার যে নীল নকশা করেছিল তারই অংশ ছিল এই নির্যাতন।

এই নির্যাতন কোনো তাৎক্ষণিক বা সৈনিকদের জৈবিক চাহিদার বিষয় ছিল না, বরং ছিল বাঙালিদের প্রতি প্রচন্ড বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার প্রতিচ্ছবি। দানবীয় হিংসার অমানবিক ছাপ রেখেছে কাপুরুষের দল বাংলার নারীদের ওপর।

পাক ক্যাম্পগুলোতে আটকে নারীদের ওপর অত্যাচার যে লোমহর্ষকর বর্ণনা প্রত্যক্ষদর্শীরা দিয়েছেন তা কেবল জানোয়ারই করতে পারে, কোনো মানুষের সঙ্গে কোনো মানুষ করতে পারে না।

নয় মাসের নির্যাতনের স্বীকার বাংলার নারীদের দুঃসহ যন্ত্রণার আরেক অধ্যায় গর্ভধারণ। প্রায় ৩ লাখ নারী শিকার হন এই বর্বর নির্যাতনের। আর সেই সঙ্গে যুক্ত হলো 'যুদ্ধ শিশু' নামটার।

নয় মাসের অত্যাচার অনেক নির্যাতিত নারীই গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলেন, তবে তাদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। অনেকে লোকচক্ষুর আড়ালে পাড়ি দিয়েছিল ভারতে বা অন্য কোথাও। অনেক শিশু জন্ম নিয়েছিল দাইয়ের হাতে যার কোনো রেকর্ড নেই। ফলে যুদ্ধশিশুর সংখ্যা কত ছিল তার সঠিক কোনো হিসাব নেই। অনুমান ও ধারণার ওপর নির্ভর করতে হয় যুদ্ধশিশুর সংখ্যা কত জানতে। সামান্য কিছু দলিলপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সরকারি এবং বেসরকারি সংগঠনের আর কিছু কিছু বিদেশি মিশন এবং মিশনারি সংখ্যাগুলোর কাছে। সরকারি এক হিসাবে জন্মগ্রহণকারী শিশুর সংখ্যা বলা হয়েছে তিন লাখ।

যুদ্ধ চলাকালে এসব নারীকে রক্ষা করতে না পারা ছিল জাতির জন্য এক অসহায় যন্ত্রণার। আমরা আজ পর্যন্ত জানি না, এসব অভাগী মায়েদের গর্ভে কতজন জন্ম দিয়েছিল যুদ্ধশিশু। আমাদের উচিত ছিল প্রতিটি যুদ্ধ শিশুকে প্রতিটি নির্যাতিত মাকে সসম্মানে প্রতিষ্ঠিত করা। উচিত ছিল স্বাধীন দেশে তাদের জন্য স্বাধীনতা এনে দেওয়া কিন্তু আমরা তা পারিনি। আমরা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের ক্ষতচিহ্নগুলোকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছি।

যুদ্ধ শিশুরা আজ কোথায় কে আছে, কেমন আছে, কেউ তার খোঁজ নিতে যাইনি। অথচ যুদ্ধশিশুরাও তো আমাদের স্বাধীনতার চিহ্ন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন।

যুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশে অনেক যুদ্ধশিশুকে বিভিন্ন বিদেশি এবং সংস্থা দত্তক নিয়ে বিদেশ চলে গেছে।

যুদ্ধ পরবর্তীতে যারা দেশে জন্ম নিয়েছে, তাদেরও লোকলজ্জার ভয়ে আড়াল করে রাখা হয়েছে। সুতরাং 'যুদ্ধ শিশু' বিষয়ে অন্ধকারে রয়ে গেছে জাতি। এত বছরেও বীরাঙ্গনা ওইসব মায়েদের সমাজে সসম্মানে পুনর্বাসিত করার প্রচেষ্টাটি আর এগোয়নি। এ জঘন্য অপরাধেরও কোনো বিচার হয়নি। এই নরপশুদের দেওয়া হয়নি কোনো শাস্তি। মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক অপরাধীরা পার পেয়ে গেছে। পাকিস্তানি যুদ্ধ অপরাধীরা অবলীলায় তাদের দেশে ফিরে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78786 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1