কথায় আছে মানুষ প্রতিভা নিয়ে জন্ম নেয় না। কিন্তু প্রতিটি মানুষের মাঝেই থাকে কিছু না কিছু প্রতিভা। তবে এই ব্যাপারটিকে কেউ প্রকাশ করতে পারেন, আবার কেউ পারেন না। আবার অনেকে নিজের ভুলেই ধ্বংস করে ফেলেন নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে?এই ভুলের কারণে সারাজীবন আফসোস করে কাটিয়ে দেয়। নিজের অজান্তেই নষ্ট করে দেয় সম্ভাবনা। কিন্তু সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সম্ভাবনাকে নষ্ট করেননি সালমা কিবরিয়া। শুধু নিজে একা প্রতিভা বিকাশ করছেন না, সঙ্গে তার একমাত্র ছেলে শাদমান মাহতাব কিবরিয়াকে নিয়ে এগিয়ে চলছে সংস্কৃতি কমর্কাÐ।
মা সালমা কিবরিয়া একজন সাহিত্যিক। তিনি গল্প, কবিতা, ছড়া, নাটক ও গান, প্রবন্ধ লিখছেন। শিশু সাহিত্যের প্রতি তার বিশেষ অনুরাগের ফলেই রূপকথা পড়তে ও লিখতে ভালোবাসেন। সালমা কিবরিয়ার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন সংগীতশিল্পী। তাই সব মিলিয়ে তাকে বলা যায় সালমা কিবরিয়া একজন বহুমুখী প্রতিভাবান গুণী মানুষ।
সালমা কিবরিয়ার জন্ম ঢাকায়। তার বাবার নাম শামসুল করিম চৌধুরী। মায়ের নাম বেগম হাফিজুন নেসা চৌধুরী। সালমা কিবরিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। পারিবারিক সাংস্কৃতি আবহাওয়া বেড়ে ওঠা সালমা ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যচচার্ করে আসছেন। সাহিত্য চচার্র ফলে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দশটি। বইগুলোর নাম হলোÑ ‘আমার পুতুলবাড়ি’ (২০১৩) ও ‘পরীদের মায়াবী স্বপ্ন’ (২০১৪), ‘রুপোর বঁাশি ও রাখাল ছেলে’ (২০১৫), এবং ‘রাজকুমারী চন্দ্রলেখা’ ও ‘দুষ্ট জাদুকার’ (২০১৫), ‘অহঙ্কারী রানি ও রাজকুমারী শ্রাবণী’, ‘মিষ্টিমণি ও পেটুক শেয়াল’, ‘রংধনু পরি ও জাদুকর’ (২০১৬), ‘বুদ্ধিমতী রুপালি ও গুপ্তধন’ (২০১৭), ‘ডাইনীর মায়া পরীতে রাজকুমারী’ (২০১৮), ‘স্বাধীনতার সুখ’ (২০১৮),। শিশুদের মনোজগতে বসবাসত কাল্পনিক শক্তিকে তিনি সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেন তার লেখায়। সালমা কিবরিয়ার লেখার উৎসষর্ ও পরিপক্কতা তাকে নিয়ে যাবে ঊধ্বর্ আসনে। শিশুদের মতোই সহজ সরল মালমা কিরবিয়া খুব সহজেই ছোটদের মন জয় করতে পারেন। তার আরও কয়েকটি রূপকথার গল্পের বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
গানের ভুবনে মা ছেলে ‘সুরের আকাশ’ ‘ওগো নিরুপমা’ নামে তার দুটো গানের অ্যালবাম বেরিয়েছে। এসব অ্যালবামে মা সন্তান একসঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন। মা-ছেলের ইউটিউবে ২৯টি গান রয়েছে। গানগুলো শুনতে (যঃঃঢ়ং://িি.িুড়ঁঃঁনব.পড়স/পযধহহবষ/টঈঢণতই৪ালঝউওংচতষড়ঝঋঙপঠভঅ) ক্লিক করলে শোনা যাবে। এ ছাড়াও তিনটি মৌলিক গানের মধ্যে দুটি গান একুশ আমাদের গবর্, একুশে আমাদের অহঙ্কার গান রয়েছে, এ ছাড়াও স¤প্রতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গান ‘আমার বাংলাদেশ তুমি দুবার্র দুজর্য়’ ইউটিউবে মুক্তি পেয়েছে। গানটির কথা লিখেছেন সালমা কিবরিয়া, সুর করেছেন- সৈয়দ আজাদ রহমান এবং সংগীত পরিচালনায় মুশফিক লিটু।
সালমা কিবরিয়া কাজের স্বীকৃতি জন্য পুরস্কার পেয়েছেন ল²ীপুর জেলা সাহিত্য সংসদ পুরস্কার-২০১৫। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে আবু হাসান শাহীন স্মৃতি শিশুসাহিত্য পুরস্কার-২০১৮। সালমা কিবরিয়া তার প্রতিভাচচার্ করে দেশের জন্য আরও ভালো কিছু উপহার দিতে চান।
সালমা কিবরিয়ার একমাত্র সন্তান শাদমান মাহতাব কিবরিয়া। তার লেখক নাম শাদমান কিবরিয়া। তিনি একজন লেখক ও সংগীতশিল্পী। তার বাবার নাম গোলাম কিবরিয়া। শাদমান কিরবিয়ার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। শাদমান বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বাংলার ঋতু, ইতিহাস, স্থাপত্য ঐতিহ্য নিয়ে ফিচার লেখার পাশাপাশি গান করে যাচ্ছে নিয়মিত।
শাদমান বতর্মানে ড্রেক্সেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘এ’ লেভেলে পড়ালেখা করছেন। সহপাঠী ও স্যারদের প্রিয় শাদমান। শাদমানের ২০১০ বইমেলায় ‘এক কিশোরের আত্মকথন নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ও ২০১৩ সালের বইমেলায়, ‘বাংলার রূপ প্রকৃতি’ ও ২০১৫ বইমেলায় ‘ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও আমাদের ঐতিহ্য’ এবং ‘বাংলার উৎসব ও ঐতিহ্য’ ২০১৮ বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে।
পুরস্কার হিসেবে শাদমান কিবরিয়া পেয়েছেন প্রতিভা প্রকাশ লেখক সম্মাননা ২০১১ এবং বাংলা আওয়াজ লেখক সম্মাননা, স্কুল থেকে লেখক সম্মাননা স্মারক ২০১৪, ২০০৭ চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় শিল্পাচাযর্ জয়নুল আবেদিন পুরস্কার। এ ছাড়া আযান-কিরাত প্রতিযোগিতায় পৃথক পৃথকভাবে দশ বার প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। শাদমানের সবচেয়ে গান গাওয়ার আগে গীতিকার ও সুরকারের নাম বলেন। তার আরও একটা অভ্যাস যে কোনো দিবস বা জন্মদিনের কথা একদিন আগে পরিচিতজনকে মনে করে দেন। তার স্বপ্ন সংস্কৃতিচচার্র মাধ্যমেই নতুন এক পরিশুদ্ধ বাংলাদেশ গড়বে।