শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়েছে নারীর কাজের পরিধি

তিথি জোবায়ের
  ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার এক ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল পরিবারের সদস্য মিনুরা। তার স্বামীর নাম মানিক ও পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। কৃষিনির্ভর এ পরিবারটির আয়ের উৎস তিন বিঘা বর্গা জমি। এ ছাড়া বাড়ির পাশে তাদের নিজস্ব একটি ডোবা আছে। ডোবাটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকত। দীর্ঘদিন থেকেই নিজের পরিবারের জন্য মিনুরার কিছু করার ইচ্ছা ছিল। মিনুরার আগ্রহ ও ইচ্ছায় একটি এনজিওর সহযোগিতা ও পরামর্শে ডোবায় কার্পজাতীয় মাছের ২ কেজি ধানী পোনা ছেড়ে দেয়। মিনুরার প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় দেড় মাস পোনা পালন করে আঙ্গুলী পোনা তৈরি করে। দেড় মাস পর এ পোনা বিক্রি করে সে ৫ হাজার টাকা লাভ করে। ২ কেজি ধানী পোনার বাজারমূল্য ছিল ৮০০ টাকা। খাবার বাবদ খরচ হয়েছে ২০০ টাকা। এনজিওর সহযোগিতায় বিনামূল্যে ধানী পোনা ও মাছের খাবার না পেলেও তার লাভ হতো ৪ হাজার টাকা। শুধু মিনুরা নয়- এখন শহরের মতো গ্রামীণ নারীরাও নানা ধরনের উপার্জনের প্রতি ঝুঁকেছে।

নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কারণে তাদের সামাজিক ও পারিবারিক গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে পরিবারের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা কমেছে। গ্রামের নারীরা বাড়ির নিকটবর্তী পুকুর, ধানক্ষেত ও বড় পুকুরে খাঁচায় অনায়াসেই মাছচাষ করছে।

কয়েক বছর ধরে নারী শুধু গার্মেন্ট সেক্টর নয়- কৃষি খাত, সূচিশিল্প, মৎস্যচাষ ও চিংড়ি রপ্তানির কাজেও তাদের সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলে, শহরের চেয়ে গ্রামে নারী কর্মজীবীর সংখ্যা বেশি। নিজ পরিবারেও ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর শ্রম পুরুষের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) ২০১৫-১৬ সালের পরিসংখ্যানে জানা যায়, বিভাগীয় পর্যায়ে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুরের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। রংপুরে এ হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। গ্রামে জনশক্তিতে যুক্ত নারীদের শতকরা ৬০ ভাগ-ই শ্রম দিচ্ছে কৃষিতে। আর শহরে গার্মেন্টে। বু্যরো আরও জানায়, সবশেষে ২০১৫-২০১৭ সালে গ্রামে নারীর কাজের হার বেড়েছে। গ্রামে শতকরা ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রমজীবী হিসেবে রয়েছে। শহরে কমে হয়েছে ৩১ শতাংশ।

এদিকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) জানায়, পোশাকশিল্পে নারীশ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল শতকরা ৬৪ ভাগ এখন তা কমে ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৯৯৫-৯৬ সালে শ্রমে নারীর অবস্থান ছিল শহরে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, গ্রামে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৩ সাল পর্যন্ত শহরে এ হার বেশি ছিল।

গাজীপুরের গাছা গ্রামের মেয়ে সামিনা। তার বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়সে। এখন বয়স ২৬ বছর। বিয়ের পর থেকেই সে দিনে ১৭ ঘণ্টা কাজ করে। তার পরিবারের সদস্যসংখ্যা সাতজন। এ সাতজনের খাওয়া-দাওয়াসহ সেবা, সবকিছুর দায়িত্ব তার ওপরে। সামিনা আরও জানায়, ভোর ৫টায় ফজরের আজানের পর থেকেই তার দিন শুরু হয়। শেষ হয় রাত ১০টায়। রান্নাবান্না, পশুপালন, পরিবারের সদস্যদের খাওয়ানো, দুই শিশুসন্তানকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসা ও বিকালে আনা সব রকমের কাজ তার করতে হয়। সামিনা উঠোনে শাক-সবজিও লাগায়। তার লাগানো মরিচ দিয়েই সংসারের প্রয়োজন মেটে। এ ছাড়া বেগুন, শাক তো রয়েছেই।

অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, গ্রামে কাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়া অবশ্যই ইতিবাচক। তা নারীর ক্ষমতায়নে প্রভাব ফেলবে।

সাভারের ষোলমাসী গ্রামের হাফিজা বেগমের তিনটি গরু। ৪০ বছর বয়সী হাফিজা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরুগুলো কিনেছে। এদিকে মহিলা অধিদপ্তর ও বিভিন্ন আয়বর্ধক কর্মসূচি যেমন সেলাই মেশিন ক্রয়, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, মৎস্য চাষ, নার্সারি ইত্যাদি বিষয়ে ঋণ দেয়। মহিলা অধিদপ্তরের ৬৪টি জেলার ৪৭৩টি উপজেলায় ক্ষুদ্র কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন সংস্থা জানায়, ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষুদ্র ঋণগ্রহণকারী হচ্ছেন নারী। ঋণের ক্ষেত্রে ফসল উৎপাদনে, পশুর খামার ও হাঁস-মুরগি পালনে টাকা ব্যয় করেন। খামারে যুক্ত আছেন ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ফসল উৎপাদনে ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ। খুলনায় রপ্তানিমুখী চিংড়ি খাতেও নারীশ্রমিকের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<74754 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1