শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পৃথিবীতে নারী

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সর্বক্ষেত্রে নারীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষণীয়। অতীতের তুলনায় আজকের নারীরা অনেক বেশি ক্যারিয়ার সচেতন। কিন্তু অনুতাপের বিষয় হলো- নারীরা ঘরের গন্ডি পেরিয়ে বাইরের পৃথিবীর আলো-বাতাসে নিজেকে মেলে ধরলেও, চ্যালেঞ্জিং পেশাতে নারীর অংশগ্রহণ প্রত্যাশা অনুযায়ী কম। প্রযুক্তি শিক্ষায় নারী-পুরুষ উভয়েরই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ খুব জরুরি। সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ আমাদের দেশকে সফলতার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে দিতে পারে।
নতুনধারা
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মাসুমা রুমা

বর্তমান পৃথিবী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পৃথিবী। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় প্রযুক্তি শিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনে প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সর্বক্ষেত্রে নারীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষণীয়। অতীতের তুলনায় আজকের নারীরা অনেক বেশি ক্যারিয়ার সচেতন। কিন্তু অনুতাপের বিষয় হলো- নারীরা ঘরের গন্ডি পেরিয়ে বাইরের পৃথিবীর আলো-বাতাসে নিজেকে মেলে ধরলেও, চ্যালেঞ্জিং পেশাতে নারীর অংশগ্রহণ প্রত্যাশা অনুযায়ী কম। এর পেছনে বহুবিধ কারণ থাকতে পারে। যেমন- শৈশব থেকে নারীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বলরূপে তুলে ধরা হয়। যদিও অনেক নারীরই ইতোমধ্যে সমাজের এই প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছেন। নারীদের দুর্বলরূপে তুলে ধরার পেছনে পুরুষ সমাজের অবদান যতটুকু, তার চেয়েও বেশি অবদান নারীসমাজের। পরিবারের নারী সদস্যদের মানসকিতা লক্ষ্য করলে বিষয়টি খুব সহজেই অনুধাবন করা যায়। একজন মানুষ হিসেবে জীবনে ভালো কিছু করার জন্য নিজের ওপর যে আত্মবিশ্বাসটুকু থাকা জরুরি, প্রায় নারীই শৈশব থেকে সেই আত্মবিশ্বাসটুকু নিজের ভেতর লালন করার ধারাবাহিক পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠেন না। ফলে সেসব নারীর স্বপ্ন দেখার পরিধি ছোট হয়ে আসে। সমস্যার মুখোমুখি হতে তাদের অনেকেই ভয় পেয়ে যান। এ ক্ষেত্রে তারা শিক্ষকতা, ব্যাংক কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মীর মতো সহজ পেশাগুলোকে বেছে নিতেই নিরাপদবোধ করেন।

বর্তমানে প্রযুক্তি বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ আমাদের অনেকটাই আশাবাদী করে তুলেছে। যেমন- মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংস্থার একটি প্রকল্পের নাম 'জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ'। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য দেশের শিক্ষিত নারীদের তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে কর্মসংস্থান এবং যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষিত নারীকে কম্পিউটারবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান ও আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জনে সহায়তা করা। মূলত প্রযুক্তি শিক্ষায় নারী-পুরুষ উভয়েরই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ খুব জরুরি। সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ আমাদের দেশকে সফলতার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে দিতে পারে। আধুনিক এই পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে একথা অস্বীকার করার কোনো পথ খোলা নেই যে, নারীরা যোগ্য নয়। বরং নারীদের অযোগ্য করে রাখার জন্য এখনো যে নানা ধরনের অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে সেই বিষয়কে মোটেও অস্বীকার করা যায় না। এক নারীর সফলতার গল্প হাজারও নারীকে সফলতার পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারে নারীর মনে তৈরি হওয়া দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দেয়াল। নারীরা নির্দ্বিধায় কর্মক্ষেত্রে নিজেদের প্রকৃত যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখার সাহস অর্জন করতে পারে।

শুধু যে কর্মক্ষেত্রে সফলতার জন্যই প্রযুক্তি শিক্ষার প্রয়োজন এমনটা নয়; বরং সন্তানদের সুষ্ঠুভাবে বেড়ে তোলার জন্য, তাদের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গড়ে তোলার জন্য মায়েদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানার্জন খুব জরুরি। কেননা শৈশবের সময়টুকু শিশুর মানসিক বিকাশের সময়। আর এই সময়টুকু শিশু তার মায়ের সংস্পর্শেই কাটায়। সুতরাং একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত শিক্ষা অর্জন এবং প্রযক্তিগত পেশা নির্বাচন নারীর জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারীর জন্য প্রযুক্তি শিক্ষার গুরুত্বের বিষয়টি আমরা যত দ্রম্নত অনুধাবন করতে পারব, দেশ ও দশের জন্য বিষয়টি ততই মঙ্গলজনক হয়ে উঠবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<67617 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1