শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অসহায় মানুষের পাশে

আবুল বাশার মিরাজ
  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়েছেন, নারীদের বিনা পয়সায় সেলাই মেশিন দেন। করেছেন কমিউনিটি ক্লিনিক। বলছি ইশরাত করিম ইভের কথা। ছোটবেলা থেকে মানুষকে সাহায্য করার অন্যরকম একটি বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে জন্ম নিল। যে কারো পাশে দাঁড়াতেন তিনি। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী থাকার সময় একদিনের কথা এখনো স্মৃতিতে ভাসে তার। এক লোক তাদের বাসায় ভিক্ষা নিতে এসেছেন। তাকে ভিক্ষে দেয়ার পর কথা বলে এত খারাপ লাগলো যে, ডাইনিং রুমে এসে খেতে বসালেন। মা-মেয়ের এই কান্ড দেখে হতবাক। এরপর এইচএসসি পাস করে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে, 'ডি' ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় তিনি ৪০তম হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল পরিবেশে এসে নিজেকে আরো ছড়িয়ে দিলেন তিনি। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে স্বেছাসেবী সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা শুরু করলেন। জাতিসংঘ ও ইউনিসেফের প্রকল্পে কাজ করেছেন। মাঠপর্যায়ে গবেষণা করতে দেশের প্রত্যন্ত জেলাতেও গিয়েছেন তিনি। দেখেছেন, এ দেশের মানুষ হতদরিদ্র, তারা জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলোই পূরণ করতে হিমশিম খান। সেই থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছেটি জেগে উঠলো। এর মাঝে এমবিএ পাস করলেন তিনি। অসাধারণ মেধাবী ছাত্রীটি ২০১৪ সালে বৃত্তি নিয়ে চলে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে তিনি সোশ্যাল বিজনেস বা 'সামাজিক ব্যবসা' নিয়ে মাস্টার্স করেছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি অবসরে পার্ট টাইম চাকরি করেছেন বিশ্বখ্যাত দাতব্য সংস্থা 'বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে'। পরবর্তী সময়ে এখানেই বেশ কিছু দামি চাকরির সুযোগ আসে। কিন্তু দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে ২০১৫ মাস্টার্স শেষ করেই বাংলাদেশে চলে এলেন ইভ।

দেশে এসেই গড়ে তুললেন 'আমাল ফাউন্ডেশন'। সংগঠনটি প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ ও শহরের গরিব, অসহায় মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষাগত উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগে-দুর্ভোগে কাজ করে থাকে। বস্তির কিশোরী-তরুণীদের শেখালেন মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব, তাদের যৌন নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সামাজিক-মানসিক কাউন্সিলিং করিয়েছেন। চরের মেয়েদের স্বাবলম্বী করে তোলার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ রোধ ও যৌতুকের অভিশাপকে চিরতরে মুছে দিতে চায় আমাল ফাউন্ডেশন। আস্তে আস্তে সারাদেশে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে ছড়িয়ে দিতে চান ইভ।

তার সংগঠনটি জাতীয় সংকটে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ায়। ২০১৭ সালের নভেম্বরে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিগুলোতে তারা ত্রাণ বিলিয়েছেন। তাদের আরেকটি উদ্যোগ হলো আদর্শ গ্রাম নির্মাণ মানুষকে দিয়েছেন শস্যবীজ, সোলার বাতি। তাদের এই কাজের সময়গুলোতে ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ দেয়া হয়েছে। এই বছর থেকে যশোর সদরের পুলেরহাট ইউনিয়নের আভা লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে তারা 'ডাক্তারবাড়ী' নামের স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প চালু করেছেন। তাতে স্বল্প খরচে মানুষের চিকিৎসা দেয়া হয়। শনপচা চরে তাদের একটি স্কুল আছে। এটিই শনপচার একমাত্র স্কুল। আইপিডিসি ফিন্যান্স লিমিটেড ও আমাল ফাউন্ডেশন স্কুলটি বানিয়েছে, চালাচ্ছে। স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা বিনা পয়সায় বই, খাতা, কলম পায়। স্কুলের মতো ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তারা চরের একমাত্র কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করেছেন। সপ্তাহে দুবার বাইরে থেকে ডাক্তার এসে বসেন। রোগীদের ফ্রি ওষুধ দেন। নারীদের নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য বিষয়ে জানাতে একজন নারী প্রশিক্ষকও আছেন।

নিজের ও প্রতিষ্ঠানের এই কাজগুলোর সুবাদে ইভ ইয়ুথ আইকন-২০১৮, ওয়াইএসএসই সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড, জিটিএ গেস্নাবাল অ্যাওয়ার্ড, যে কোনো ক্যাটালিস্ট ফেলোশিপ প্রভৃতি পুরস্কার পেয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<66865 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1