বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যস্ত মায়ের দৈনন্দিন রুটিন

শুধু পড়ার বই-ই না, ওকে কাছে নিয়ে ওর বয়স উপযোগী গল্পের বই পড়ে শোনাতে হবে। এতে বড় হয়ে বাচ্চার বই পড়ার মতো ভালো অভ্যাস তৈরি হবে। ছুটির দিনগুলোতে নিজের যত্ন নিতে হবে। নিজেকে সুন্দর রাখতে চেষ্টা করতে হবে। তাতে মনও ভালো থাকবে। মাসের এক থেকে দুইটা ছুটির দিন বাচ্চাদের বাইরে কোথাও অর্থাৎ পার্কে, চিড়িয়াখানায় অথবা কোনো আত্মীয়স্বজনের বাসায় বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। এতে বাচ্চাদের মন প্রফুলস্ন থাকবে। নিজেদেরও একঘেয়েমি কাটবে।
নতুনধারা
  ১৯ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

তানজিনা আল মিজান

আমি একজন 'মা'। কর্মজীবী মা। আমার কর্মক্ষেত্র আমাকে দিয়েছে স্বাধীনতা, সচ্ছলতা আরো দিয়েছে নিজের একটা পরিচয়- যা আমাকে স্বাবলম্বী করার সঙ্গে সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই সাহসী করে তোলে। আরো করে আত্মতৃপ্ত; যখন দেখি আমার সন্তান তার 'কর্মজীবী মা'কে নিয়ে গর্ববোধ করে। কিন্তু মাঝে মাঝেই নিজেকে অপরাধী মনে হয় আমার সন্তানদের কাছে- কারণ আমার এই কর্মক্ষেত্রে দেয়া সময়গুলো আমার আর আমার বাচ্চাদের নিজস্ব সময় থেকে কেড়ে নেয়া। যখন বাসায় ফিরে ওদের শত শত প্রশ্ন, আবদার, বানিয়ে বলা গল্প এমন অনেক কিছুই শুনি, সেই সঙ্গে ওদের মনের চাপা অভিযোগ- যা বাড়িতে অনুপস্থিতির জন্য তৈরি, সেটা বুঝতেও আমার সময় লাগে না। ঠিক তখই নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয়। একজন শিক্ষিত নারী হিসেবে আমার চাকরি- যা আমাকে স্বাবলম্বী করেছে, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি, একজন মা হিসেবে বাচ্চাদের অফুরন্ত সময় দেয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ- যা সঠিকভাবে না দিতে পেরে আমি সন্তানদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ও অসহায়-

তবে কোনো কিছুকেই পিছনে ফেলে নয়। কর্মক্ষেত্রকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে তেমনি পরিবারকেও। মনে রাখতে হবে 'আজিকার শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ'। কাজেই ওদের আর্দশ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব তো আমাদেরই। ঠিক যেমন- আমাকে তৈরি করার পিছনে আমার বাবা-মা'র অবদান সবচেয়ে বেশি।

প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগেই ঠিক করে নিতে হবে ঐদিনের প্রতি বেলার খাবার মেনু। বিশেষ করে বাচ্চারা কখন কি খাবে, তাকে টিফিনে কি দিতে হবে। গৃহপরিচারিকা যদি থাকেন তাকে ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে। বাচ্চার স্কুুল ছুটির সময় ড্রাইভারকে অথবা বাসায় ফোন করেও নিশ্চিৎ হতে হবে যে, সে ফিরেছে কি না এবং সেই সঙ্গেই ওকে খাওয়ানোর ব্যাপারেও মনে করিয়ে দিতে হবে। অফিস থেকে ফিরে বাচ্চাদের যতটুকু পারা যায় কোয়ালিটি টাইম দিতে হবে। নিজের অনুপুস্থিতির কষ্টটাকে মুছে দিতে হবে ওর স্কুুলের নানা ধরনের গল্প শুনে, সেই ফাঁকে স্কুলে টিচার কি পড়িয়েছে সেটাও শুনতে হবে। কোথাও ব্যথা পেয়েছে কি না, বাসার টিফিন না খেয়ে বাইরের খাবার খেলো কি না এগুলোও গল্পের ছলে শুনে নিলে ভালো। অবশ্যই প্রতিদিন রুটিন করে বাচ্চাদের পড়াতে বসাতে হবে। তাহলে প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন তৈরি করার অভ্যাস তৈরি হবে। নিজের অপরাধী বোধ থেকেও বেরিয়ে আসা যাবে। গান, ছবি আঁকা এসব দিকে যদি ঝোঁক থাকে তবে আমাদের অফিসে থাকার সময়টায় যেন সেগুলোর চর্চা করে। সেটা বাচ্চাদেরও বুঝিয়ে দিতে হবে। এতে করে ওর চর্চাও হবে আবার আমাদের অনুপস্থিতির সময়টাও ওর ভালো কাজে কাটবে।

শুধু পড়ার বই-ই না, ওকে কাছে নিয়ে ওর বয়স উপযোগী গল্পের বই পড়ে শোনাতে হবে। এতে বড় হয়ে বাচ্চার বই পড়ার মতো ভালো অভ্যাস তৈরি হবে। ছুটির দিনগুলোতে নিজের যত্ন নিতে হবে। নিজেকে সুন্দর রাখতে চেষ্টা করতে হবে। তাতে মনও ভালো থাকবে। মাসের এক থেকে দুইটা ছুটির দিন বাচ্চাদের বাইরে কোথাও অর্থাৎ পার্কে, চিড়িয়াখানায় অথবা কোনো আত্মীয়স্বজনদের বাসায় বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। এতে বাচ্চাদের মন প্রফুলস্ন থাকবে। নিজেদেরও একঘেয়েমি কাটবে।

এই কাজগুলো করা যে অনেক কঠিন তা কিন্তু নয়। একটু রুটিন করে গুছিয়ে চলা আর একটু বাড়তি উদ্যোগই যথেষ্ট। এতে করে আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাব এবং এক জন মা হিসেবেও থাকবে না কোনো অপরাধ বোধ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62868 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1