শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন সংগ্রামে জয়ী নূরজাহান

এম আর মাসুদ
  ১৫ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

ঋণের সামান্য পুঁজিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায় জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়েছেন নূরজাহান বেগম। হয়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। ঋণের পনের হাজার টাকা নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু করা নূরজাহান বেগম এখন প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালিক। পূরণ হতে চলেছে নিজের জমিতে স্বপ্নের নিবাস। বানাচ্ছেন পাকা দালান। নূরজাহান বেগম যশোরের ঝিকরগাছার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সড়কের রেলগেট এলাকার একজন চা দোকানি। সে উপজেলার কীর্তিপুর গ্রামের ভূমিহীন মৃত সোহবার হোসেনের মেয়ে।

২৩ বছর আগে ভাগ্য বিড়ম্বিত নূরজাহান বেগমের বিয়ে হয় পাবনার আতাউর রহমানের সঙ্গে। ইটের ভাটায় কাজ করতে এসে সে তাকে বিয়ে করে। একপর্যায় জানা যায়, আতাউরের আরো দুইটি স্ত্রী আছে। তৎক্ষণে নূরজাহানের কোলে এক ছেলে ও দুই মেয়ে জন্ম নেয়। তখন নূরজাহান কখনো বাবার চায়ের দোকানে, কখনো ক্ষেত-খামারে ও বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ শুরু করেন। ৮ বছর পর স্বামী আতাউর তাকে ফেলে চলে যায়। তিন অবুজ সন্তান নিয়ে দিশেহারা নূরজাহান শেষমেষ মায়ের দেয়া ছাগলটি পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সড়কের রেলগেট এলাকায় একটি কাঠের দোকান কিনে তাতে চা বিক্রি শুরু করেন। থাকতেন রেললাইনের পাশে সরকারি জায়গায়। কিন্তু পুঁজি না থাকায় ব্যবসা ভালো হতো না। ব্যবসা বাড়াতে নূরজাহান যোগ দেন বাংলাদেশ পলস্নী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) মহিলা সমিতিতে। বাংলাদেশ পলস্নী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) তাকে প্রথমে ঋণ দেন ১৫ হাজার টাকা। সে টাকায় নূরজাহান চা বিক্রির পাশাপাশি বেশকিছু মালামালও তুলে পসরা নিয়ে শুরু করেন জীবন সংগ্রামের নতুন ইনিংস। তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। গত বছর বাংলাদেশ পলস্নী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) উপজেলা কার্যালয় তাকে এক লাখ টাকা উদ্যোক্তা ঋণ দিয়েছে। এর আগে তাকে ৫ বার ক্ষুদ্র ঋণ দিয়েছিল বোর্ডটি। দুই বছর আগে নূরজাহান একই এলাকার কীর্তিপুর মৌজায় সাড়ে ৬ শতক জমি কিনে তিন কামরার ছাদের দালান দিয়েছেন। জমি কেনাসহ তাতে তার মোট খরচ হয়েছে ১২-১৩ লাখ টাকা। তার বড় ছেলে নূরনবী বিএ অনার্স পড়ে, বড় মেয়ে আরিফা খাতুন সরকারি এমএল মডেল হাইস্কুলের দশম শ্রেণিতে কারিগরি বিভাগে পড়ে। রোল নং ১। ছোট মেয়েটি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদিন ভোর ৫টায় দোকান খুলে তা বন্ধ করেন রাত ১১টায়। নূরজাহান জানান, প্রতিদিন দোকানে ৩-৪ হাজার টাকা বেচাকেনা হয়। মেয়ে দুইটি স্কুল থেকে এসে তার কাছে থাকে। ছেলেটি লেখাপড়ার পাশাপাশি ইজিবাইক চালায়। উপজেলা পলস্নী উন্নয়ন কর্মকর্তা বিএম কামরুজ্জামান জানান, শুধু নূরজাহান বেগম নয়, ভাগ্যবঞ্চিত এসব নারীদের স্বাবলম্বী করতে বাংলাদেশ পলস্নী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) কাজ করে যাচ্ছে। নূরজাহান বেগম সংগ্রামী, নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমি বলেও তিনি দাবি করেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায় দারিদ্র্যজয়ী নূরজাহান বেগম এখন এলাকায় একটি দৃষ্টান্ত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<58274 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1