বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অন্ধ হলে প্রলয় কি বন্ধ থাকে?

মনিরা মিতা
  ০১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অপরাধ নতুন কোনো ইতিহাস নয় মানব সমাজে। তবে দিন দিন বেড়েই চলছে অপরাধের এই মাত্রা। মানব সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বইছে আজ অপরাধের দূষিত জীবাণু যা ছারখার করে দিচ্ছে পরিবার, সমাজ তথা গোটা দেশটাকে। বিশেষ করে নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা ইদানীং মহামারি আকার ধারণ করেছে। নারী নির্যাতন মানবতার এক ভয়ঙ্কর নিগ্রহ। সামাজিক অধঃপতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এদেশে এখন অহরহ ঘটছে নারী ও শিশু নির্যাতন। প্রতিদিন নির্যাতিত হচ্ছে নারী শিশু কিন্তু এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ শোনা বা দেখা যাচ্ছে না। নির্যাতিত নারীরা সমাজের সাহায্য পাওয়ার বদলে অসতী বা খারাপ বলে ধিক্কার কুড়াচ্ছে আর অন্যদিকে নির্যাতনকারীরা আইনের বেড়াজাল ছিঁড়ে বের হয়ে পুনরায় অপরাধ করছে, বুক ফুলিয়ে সমাজে বিচরণ করছে।

সংগ্রামী একটি মেয়ের দৃঢ়পায়ে পথচলা থেমে যায় মাতাল ড্রাইভার অথবা হেল্পারের লোলুপ দৃষ্টিতে। বর্তমানে নারী শিক্ষার হার ৫০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। নারীর ক্ষমতায়নে সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম। পরিসংখ্যান তাল মিলিয়েই চলছে, তবুও গোলমেলে নারীর স্বাধীনতায়। স্বাধীনচেতা নারীদের স্বাধীনতার দ্বার রুদ্ধ করে দিচ্ছে যৌন হয়রানির ঘটনা। বর্তমান সময়ে নিজের যৌন লালসা পূরণের জন্য ধর্ষণকারীরা বেছে নিচ্ছেন সবচেয়ে সহজ শিকার শিশুদের। শতকরা ৭৫ ভাগ যৌগ হয়রানির ঘটনা ঘটে পরিবারের ঘনিষ্ঠজন, বন্ধু বা আত্মীয়দের মাধ্যমে। ৯ মাসের মেয়ে শিশুও নিরাপদ নয় এই সময়ে।

আপন চাচার দ্বারা নির্যাতনের শিকার এক দুধের শিশু এখনও মৃতু্যর সাথে পাঞ্জা লড়ছে হাসপাতালে। ৫০-৬০ বছর পেরিয়ে গেছে যে বৃদ্ধার জীবনে সেও রেহাই পায়নি ধর্ষক নামের জানোয়ারের হাত থেকে। শিশু থেকে বৃদ্ধা কোনো নারীই নিরাপদ নয় এ সমাজে। ডায়পার থেকে বোরখা কোনো পোশাকই নিরাপত্তা দিতে পারছে না নারীদের।শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের পরিসংখ্যান দিন দিন ভারীই হচ্ছে। চারপাশে আজকাল যা ঘটে তা খুবই ভীতিকর। কন্যা শিশুর জন্ম হওয়াই যেন এ সমাজের বড় পাপ। জন্ম থেকে মৃতু্য পর্যন্ত পুরো জীবনটাই যেন একটা উদ্বেগের।

পারিবারিক পরিবেশ, শিক্ষাক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র কোনো অঙ্গনেই নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা থেমে নেই। সময়ের সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে যৌন সহিংসতায় নিষ্ঠুরতা ও ভয়াবহতা।

জন্মের পর থেকে শিশু তার প্রতিটি কাজের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করে। সামাজিক অবকাঠামোর কারণে অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের বাইরেও অন্যদের ওপরও নির্ভর করতে হয় শিশুকে আর এই সুযোগটাকেই হাতিয়ার হিসেবে নেয় মানুষ রূপী জানোয়ারগুলো।

একটি ছোট বাচ্চাকে যৌন নির্যাতন- বিষয়টি বোঝানো খুব কঠিন, তবুও তাদের শেখাতে হবে কোন স্পর্শটা ভালো আর কোনটা খারাপ।

বাচ্চাদের ব্যাপারে বাবা-মাকেও সচেতন হতে হবে। বাচ্চারা যদি এইবিষয়ক কিছু কখনো বলে তবে বাবা-মাকে বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে কারণ বাচ্চারা যতরকম গল্প বানিয়ে বলুক না কেন এই বিষয়ে বানিয়ে কথা বলার ক্ষমতা রাখে না। সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট হবার ভয়ে পরিবারের সম্ভ্রম, কখনও ভবিষ্যৎ হয়রানির কথা চিন্তা করে অনেক সময় বিষয়গুলো অন্তরালেই থেকে যায় কিন্তু এতে করে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না, অন্যায়কারী এতে আরও প্রশ্রয় পেয়ে যাবে।

আমাদের দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে। আমরাও আজ অগ্রসর হচ্ছি তবে সব অগ্রগতি থেমে যাবে যদি নারীর উপর যৌন নির্যাতন বন্ধ না হয়।

উন্নয়নের অগ্রযাত্রার প্রদীপের আলোর নিচেই রয়েছে গভীর অন্ধকার। সেখানে নারীরা এখনও আলোর পথ খুঁজছেন। নারীকে মুক্তি দিতে হবে নির্যাতনের বেদনা-কষ্ট-গস্নানি থেকে।

অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ থাকে না, কাজেই চোখ তুলে তাকাতে হবে, ঘুরে দাঁড়াতে হবে সবাইকে, ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে প্রতিবাদে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<56044 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1