বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর সেবামূলক কাজে ব্যয়িত সময়ের মূল্যায়ন

সকালের নাশতা বানানো, কাপড় ধোয়া, সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, বৃদ্ধ শ্বশুরের সেবা করা, সন্তানকে পড়ানোসহ সব কাজই তিনি করছেন। এই কাজগুলোই যদি গৃহকর্মী, গৃহ শিক্ষক অথবা নার্সকে দিয়ে করানো হতো, তাহলে কত টাকা দিতে হতো? এমন প্রশ্নে নিশ্চিত ঘাবড়ে যাবেন স্বামী! ঘটনার আকস্মিকতায় বাকরুদ্ধ হয়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। আর সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এমন একটি ঘটনা নাড়া দিয়েছে পুরো বিশ্বকে।
নতুনধারা
  ০১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অর্থনীতিতে স্নাতক। ভালো চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। তবে বিয়ের পর সংসারের কথা চিন্তা করে চাকরি, নিজের ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে সংসারে মনোযোগী হয়েছিলেন এক আর্জেন্টাইন নারী। সন্তান জন্ম দিয়েছেন, তাদের প্রতিপালন করাসহ হাজারটা সাংসারিক ঝামেলা সামলেছেন। অথচ ত্রিশ বছর পর খালিহাতে স্বামীর ঘর থেকে তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। সংসারযাত্রার এক পর্যায়ে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর নিজের জীবন চালাতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন। ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞায় তাদের কারো নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে স্ত্রীর নাম শুধুমাত্র এমএল দ্বারা বোঝানো হয়েছে। জীবন সায়াহ্নে এসে এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন স্ত্রী। কারণ স্বামী বেশ সচ্ছল। তিনি বিয়ের পর থেকে স্বামীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন।

এই দম্পত্তির জীবনের ঘটনা যেন বিশ্বের অনেক দম্পতির প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশে তো বটেই, এমনকি উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এই চিত্র বিরল নয়। তাই প্রশ্ন উঠেছে- নারী কেন তার এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি পাবে না? তাই আর্জেন্টিনার এক আদালতের বিচারক এমএলের স্বামীকে বৃদ্ধ স্ত্রীর ত্রিশ বছরের সাংসারিক শ্রমের মূল্য হিসেবে আট মিলিয়ন পেসো, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারক ভিক্টোরিয়া ফামারায়ে লিখেছেন, স্বামী এবং স্ত্রী একই সংসারের দুই সেবক। উভয়ে সাংসারিক সচ্ছলতার জন্য উদয়-অস্ত খেটে চলে। সাধারণত পুরুষ বাইরে থেকে অর্থ উপার্জন করে সংসারে অবদান রাখে। আর নারী রান্না থেকে শুরু করে সন্তান জন্মদান, প্রতিপালন, টুকিটকি হাজারটা কাজের দ্বারা সংসারে অবদান রাখে। তবে পুরুষের কাজকে অর্থ মূল্য দ্বারা পরিমাপ করা হলেও নারীর কাজকে সেভাবে পরিমাপ করা হয় না। বৃদ্ধ এমএল জীবনসায়াহ্নে আর্থিক জটিলতায় পড়েছেন। অথচ ভালো চাকরি করার সুযোগ তার ছিল। তা না করে তিনি গোটা জীবন সংসারের পেছনে উৎসর্গ করেছেন। তাই তাকে এই অর্থ দেয়া হোক। যেন তিনি বাকি জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারেন। আর্জেন্টিনার নারীবাদী ও আইনজীবী সংগঠনগুলো দ্রম্নত এই ঐতিহাসিক রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। লুসিয়া মার্টেলট নামের এক আইনজীবী বলেন, এটা মহৎ একটি রায়। কারণ নারীর সাংসারিক কাজকে আমরা কাজ মনে করি না। অথচ আর ১০টা দাপ্তরিক কাজের মতো এখানেও দক্ষতা যোগ্যতা সবই লাগে।

বিভিন্ন গবেষণায় গৃহে নারীর সেবামূলক কাজে ব্যয়িত সময়ের নানান হিসাব এখন প্রকাশ্য। তবে নারীর এই কাজের অর্থনৈতিক বা সামাজিক স্বীকৃতি নেই। গবেষক, অর্থনীতিবিদ এবং নারী নেত্রীরা মনে করছেন, জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) বাইরে একটি 'স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট' করে নারীর গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের হিসাব করার সময় এসেছে। এতে ঘরে ও বাইরে কাজের চাপ সামলানোর পরও নারীকে যে ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়, তা কমবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, সামাজিক সচেতনতা তৈরি করে পুরুষের অংশগ্রহণ বাড়ানোও জরুরি।

চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, দেশে নারীরা পুরুষের তুলনায় সাড়ে তিন গুণ বেশি মজুরিবিহীন কাজ করেন। নারী দিনে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা মজুরিবিহীন কাজ করেন আর পুরুষ করে নাগাড়ে এক ঘণ্টা। বিবিএসের সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ ও বলছে, ২০১৭ সালের শেষে সারাদেশে ৭২ লাখ নারী-পুরুষ মজুরিবিহীন কাজ করতেন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৫৪ লাখ। আর ১৮ লাখ পুরুষ এমন কাজ করেন।

নারীর গৃহস্থালির সেবামূলক কাজকে জিডিপির অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে অনেকদিন থেকেই। তবে কোন পদ্ধতিতে জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা নিয়ে মত ভেদ আছে। কিছু কিছু দেশ নারীর গৃহস্থালির কাজকে মূলজিডিপির বাইরে আলাদা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করছে। এ হিসাব রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। এ ছাড়া গৃহস্থালির কাজগুলোকে কীভাবে সহজ করা যায়, তা নিয়েও ভাবা উচিত। নন্দিনী ডেস্ক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<56042 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1