ফারজানা ইয়াসমিন লোপা। বেশ পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কমপস্নায়েন্সের দিক থেকে প্রতিষ্ঠানের প্রায় সবকিছুই যথেষ্ট উন্নতমানের। মানসম্মত টয়লেটও আছে। মুশকিলটা হয়েছে সেটি মাসিকবান্ধব নয়। প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব কর্মকর্তার কাছেই 'মাসিকবান্ধব টয়লেট' শব্দটাই যেন অপরিচিত। শুধু লোপাই নয়, রাজধানী ও এর বাইরে বেশ কয়েকজন কর্মজীবী নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের দু'একজন বাদে বাকি সব প্রতিষ্ঠানেই একই অবস্থা। সেগুলোতে মাসিকবান্ধব টয়লেট নেই। বিষয়টি এমন নয় যে, অর্থের অভাবে বা অর্থ খরচের ভয়ে সেগুলোতে মাসিকবান্ধব টয়লেট নেই তা নয়, বরং সচেতনতার অভাবটাই বেশি পাওয়া গেছে। আইসিডিডিআরবির গবেষণা কর্মকর্তা মাহবুব-উল আলমের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৩% টয়লেটে ঢাকনাসহ ঝুড়ি আছে, যেটি মাসিকবান্ধব টয়লেটের অন্যতম বড় একটি শর্ত।
ওয়াটার এইড, আইসিডিডিআরবি, পিএসইউ-এর অন্য একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে- ১৯% হাসপাতালে ডাক্তারদের টয়লেট নেই এবং ২৭% হাসপাতালে নার্সদের টয়লেট নেই, যেগুলোও আছে তাও মাসিকবান্ধব না আর ১% এ কোনো টয়লেটই নেই। বাংলাদেশের কর্মজীবী নারীদের বৃহৎ অংশের প্রায় সবাই মাসিক নামক প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক বিষয়টির মুখোমুখি হন এবং স্বাভাবিকভাবে সেটি প্রতি মাসেই। প্রায় ৯৭ শতাংশ টয়লেট মাসিকবান্ধব না হওয়ায় তাদের নিয়মিত বিব্রত এবং অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই চিত্র আরো মারাত্মক আকার হয়ে দাঁড়িয়েছে শিল্পকারখানার স্বল্প শিক্ষিতদের মধ্যে।
এমন একটি চিত্র ফুটে ওঠে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজিন বেজলাইনের একটি সার্ভেতে। সেখানে বলা হয়, গড়ে ১২ বছর বয়সে মেয়েদের প্রথম মাসিক হয়। তাদের মধ্যে মাত্র মাসিক শুরুর আগে মাত্র ৩৬% মাসিক সম্পর্কে জানে। সে ক্ষেত্রে নারী আত্মীয়রাই সবেচেয় বড় উৎস জানার ক্ষেত্রে। মাত্র ১০ শতাংশ ডিসপোজাল প্যাড ব্যবহার করে। যেখানে ৮৬% ব্যবহার করে পুরাতন কাপড়। এদের বেশিরভাগই মাসিক চলাকালে স্বাভাবিক কাজ করা থেকে বিরত থাকে বা করতে আগ্রহী হয় না। সিমাভি, টিএনও, বিএনপিএস, ডর্প এবং নেদারল্যান্ড সরকারের সহায়তায় মেয়েদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনতামূলক কাজ করছে রেড অরেঞ্জ মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন্স। কর্মজীবী নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও এর করণীয় কী হতে পারে? এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম রেড অরেঞ্জ মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন্সের হেড অব প্রোগ্রামস নকীব রাজীব আহমেদের কাছে। তিনি বলেন, দেখা যায় একজন কর্মজীবী নারী মাসিকের সময় প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটির আবেদন করতে গেলে মাসিক কথাটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। প্রথমত লজ্জা ও জড়তার মোড়ক থেকে বেরিয়ে এসে মাসিক নিয়ে কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণাসহ যাবতীয় কথা বলার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, দ্বিতীয়ত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সহায়তার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ এবং সে লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ। মাসিকবান্ধব ব্যবস্থাপনার উপকরণগুলো সহজলভ্যতার বিষয়েও আমাদের দৃষ্টি দেয়া উচিত।
উলেস্নখ্য, মাসিক সময়ে কিংবা অনিয়মিত মাসিক হওয়ার আশঙ্কা থাকলে, বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে কিংবা সবসময়ই ব্যাগে মাসিকের সময় ব্যবহার করা হয়, এরকম প্রয়োজনীয় জিনিসসহ, পরিষ্কার কাপড়, তুলা বা প্যাড, হিটিং প্যাডস, আরামদায়ক কাপড়, পস্ন্যাস্টিক ব্যাগ, টিসু্য, হ্যান্ড সেনিটিজার ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে হবে। তার চেয়েও যেটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে সব জড়তা ভেঙে সচেতন হওয়ার।