বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নারী স্বাধীনতা নারী মুক্তি

নতুনধারা
  ২৭ মে ২০১৯, ০০:০০

তাসমিমা হামিদ

সমাজ ও রাষ্ট্রই আসলে নারীর শত্রম্ন। নারীমুক্তির আন্দোলন আসলে এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন। এ ক্ষেত্রে সংস্কার, নতুন আইন প্রণয়ন, আইনের প্রয়োগ, অনেক কিছুর কথাই ভাবা হয়। এদের উপযোগিতা অবশ্যই আছে। কিন্তু সংস্কারের মধ্য দিয়ে এ ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করা যাবে না। নির্মম হলেও সত্য, সংস্কার ব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে। আমরা অবশ্যই সংস্কার চাইব; কিন্তু এ সত্যকে ভুললে চলবে না, বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বদলাতে না পারলে নারীমুক্তি অসম্ভব। আন্দোলনের লক্ষ্যও তাই গোটা ব্যবস্থা পরিবর্তনের। এ ব্যবস্থা পরিবর্তনের স্বপ্ন আমরা দীর্ঘকাল দেখেছি, এখনো দেখছি। কিন্তু ব্যবস্থা বদলায়নি। অন্যায় ও অমানবিক এই ব্যবস্থার প্রকোপে বাংলাদেশের সব মানুষ আজ অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত ও হতাশায় আক্রান্ত। এ ব্যবস্থা বদলানোর কাজ কেবল মেয়েদের নয়, নারী-পুরুষ সবারই। নারীমুক্তি আন্দোলনকে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন হিসেবে দেখতে হবে। না দেখলে তা দূরদর্শী হবে না এবং লক্ষ্য অর্জনের দিকেও এগোতে পারবে না। আবারও বলি, সমাজ পরিবর্তনের দায়িত্ব নারী-পুরুষ সবারই এবং আন্দোলন ছাড়া পরিবর্তন সাধনের অন্য কোনো উপায় নেই। যে কোনো আন্দোলনেরই সাফল্য নির্ভর করে শত্রম্নকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করার ওপর। নারীমুক্তি আন্দোলনের ক্ষেত্রেও পুঁজিবাদী সমাজ ও রাষ্ট্রকে মূল শত্রম্ন হিসেবে চিহ্নিত করতে আমরা যেন ভুল না করি।

অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হলেই নারী স্বাধীনতা অর্জন করবে। নারী স্বাধীনতার আরেকটি অপরিহার্য শর্ত হলো শিক্ষা। কিন্তু আমরা অনেকেই তো দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী। কিন্তু আমরা কি মানুষ হতে পেরেছি? অর্থনৈতিক সচ্ছলতাও তো আমাদের মানুষের মতো করে পথ চলতে সহায়তা করতে পারছে না। আমার আশপাশ, পরিবেশ, সমাজ সবাই তো আমাকে মেয়ে মানুষই বানিয়ে রাখল। এই পুরুষতান্ত্রিক পুঁজিবাদী সমাজ এক অদৃশ্য শিকল পরিয়ে আমাকে, আমাদের নির্দিষ্ট একটি বৃত্তের মধ্যে ঘোরাচ্ছে। লেখাপড়া শিখি বা না শিখি, সংসার করি বা না করি, রাজনীতি করি বা না করি, এই বৃত্তের শিকলে আমাদের জীবনযাপন করতে হবে। এ সমাজব্যবস্থা টিকিয়ে রাখে যে কায়েমি স্বার্থ; সেই আমার মুক্তির অন্তরায়, বিকাশের অন্তরায়। শোষক শ্রেণি রাষ্ট্র, রাজনীতি, ধর্ম, প্রচারমাধ্যম, পরিবার- সব ক্ষেত্রকেই তার রক্ষাকবচে পরিণত করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান আমাকে সাজাতে চায় তাদের অনুগত আজ্ঞাবহরূপে। একজন নারীর স্বাধীনচেতা মনোভাব এই সমাজ, সমাজের মানুষ কোনোভাবেই মেনে নেয় না। সমাজ চায় নারী হবে তার আজ্ঞাবহ। তার রূপে রূপায়িত। এই সমাজে নারী এক ধরনের স্বাধীনতা পায়, সে স্বাধীনতা হলো ভোগের। হয় সে নিজেকে ভোগ্যপণ্যে পরিণত করবে অথবা পণ্য ভোগ করবে- দামি শাড়ি, দামি গহনা, বাড়ি-গাড়ি-ফ্ল্যাট, মোবাইল ইত্যাদি। আর এসব পণ্য কেনার ক্ষমতা অর্জনই যেন জীবনের লক্ষ্য। সমাজ আমাদের যে স্বাধীনতা দেয়, তার মাধ্যমে সে এক পণ্য দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<51263 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1