বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবারই হোক কন্যা শিশুর নিরাপদ আবাস

নতুনধারা
  ২০ মে ২০১৯, ০০:০০

রুমানা নাওয়ার

একটা ফুটফুটে কন্যাশিশু ঘরময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আহা ভাবতেই একটা সুখ দোলা দেয় মনে। মার্কেটে গেলে মেয়েবাবুদের কাপড়গুলোতে চোখ আটকে যেত। এত সুন্দর আর কিউট প্রতিটি পোশাক। ভাবতাম একটা মেয়েবাবু থাকলে কাপড়গুলো কিনতে পারতাম। পরাতে পারতাম ইচ্ছে মতোন। স্বয়ং আলস্নাহতায়ালা ঘরে মেয়ে থাকাকে রহমতস্বরূপ বলে দিয়েছেন। যে ঘরে পরপর তিনটা কন্যাশিশু জন্ম নেয় আলস্নাহতায়ালা রহমতের দরোজা খুলে দেন তার ঘরে। সে কন্যাশিশুটি নিরাপদে আছে কিনা তার শিশুকাল শঙ্কামুক্ত কিনা আমরা কজনেই জানি? আমরা পরিবারের বড়রা কতটুকু খোঁজখবর রাখি এ বিষয়টায়? ঘরের ছোট্ট মেয়ে শিশুটা ঘরেরই আপন কোনো ব্যক্তির দ্বারা বাজে ব্যবহারের শিকার হচ্ছে দিনের পর দিন। তাকে কোলে নিয়ে আদরের ছলে বাজে স্পর্শ দেয়া মানুষটাকে দেখলে সে ভয়ে কুঁকড়ে যায়। কিন্তু শেয়ার করতে পারে না কারও সঙ্গে। শেয়ার করার বলার মতো কিছু খুঁজে পায় না ছোট্ট শিশুটি। কিন্তু তার সঙ্গে যা করা হচ্ছে এটা যে খারাপ কিছু এটা সে বুঝতে পারে ঠিকই।

আপনার ঘরের মানুষ নিরাপদ কিনা আপনি নজর রাখুন। প্রতিনিয়ত চোখে চোখে রাখুন নিজের কন্যাকে। অথবা কর্মজীবী হলে মেয়েকে এমন কারও কাছে রাখুন যাকে বিশ্বাস করেন। আপনার কাছে যেমন নিরাপদ তেমনি কাউকে বেছে নিন। মা, বোন এদের কাছে রাখুন শিশু কন্যাকে। কখনো এর বাইরে কাউকে বাচ্চাকে দেখভালের দায়িত্ব দেবেন না। পুরুষ লোক তো কখনোই না। সে যত কাছের আর আপন হোক। এদের ওপর বিশ্বাস করে আপনার কন্যার ভবিষ্যৎ জীবনটা দুর্বিসহ করে তুলবেন না। দিনের পর দিন ছোট্ট শিশু কন্যাটা মানসিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না। আমাদের সমাজব্যবস্থাটাই এমন। এখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চারদিকে। ঘরে বাইরে সবখানে। আপন মানুষ দ্বারা আপনার বুকের মানিকটা ক্ষয়ে যাচ্ছে জেনেও আপনাকে নির্বিকার থাকতে হবে। বড়জোর কথা না বলা তাকে অ্যাভয়েড করতে পারবেন। এর বাইরে আর কি কিছু করার আছে করতে পেরেছে কেউ আজ পর্যন্ত।

দুই আড়াই বছরের ছোট্ট টয়া। অনেক সুন্দর। ফুটফুটে একটা দেবশিশু যেন। রাতের বেলা ঘুমুনোর সময় কান্না করে। কিছুই বুঝতে পারে না মা। পরদিনও একই ঘটনা। তৃতীয় দিন রহস্য উন্মোচিত হয়। টয়ার এক বয়সী কাজিন কোলে করে আদর করতে করতে ছাদে নিয়ে যায়। এবং ওখানে কিসব করে ছোট্ট টয়ার সঙ্গে। টয়ার মা চিৎকার চেঁচামেচি কান্নাকাটি করে। তার ফুলের মতো বাচ্চাটার এ অবস্থা দেখে। এরপর মেয়েকে চোখে চোখে রাখতো সর্বক্ষণ টয়ার মা। কখনো ভাবতেই পারেননি এত ছোট্ট বেবিটার ওপর কারও লোলুপ দৃষ্টি পড়বে। আগে থেকে সচেতন হলে জানলে এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে হতো না ছোট্ট টয়াকে। জানুক না জানুক, কম-বেশি সব কন্যাশিশুই যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে নিজের গৃহে, পরিবারের আপন কাউকে দিয়ে। কাজেই সচেতন হোন সবাই। না হয় এর খেসারত আমাকে আপনাকেই দিতে হবে। দায়িত্বে অবহেলার খেসারত, তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে না পারার খেসারত।

বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ১৫ ভাগ কন্যাশিশু। আর বাংলাদেশে মোট জনসংখার ১০ ভাগ। দেশে নারী ও শিশু অধিকার সুরক্ষায় বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ ও অগ্রগতি রয়েছে। কিন্তু এখনো কন্যাশিশুদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিনিয়তই কন্যাশিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দেশে প্রচলিত কুসংস্কার, সামাজিক অসচেতনতা, অশিক্ষা, ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব প্রভৃতি কারণে ছেলেশিশুদের তুলনায় কন্যাশিশুরা নানা দিক দিয়ে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে নিম্নবিত্ত কোথাও নিরাপদে নেই কন্যাশিশুরা। একটি কন্যাশিশু তার পরিবারের ভেতরেই প্রথম আপত্তিকর স্পর্শ, আচরণ, যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।

শিশুরা, বিশেষ করে কন্যাশিশুরা বড়দের বাজে স্পর্শ ও আদর বুঝতে পারে। কিন্তু তারা অভিভাবকদের কাছে তা বলে না বা বলতে পারে না। পরিবারের ভেতরেই প্রথম একটি কন্যাশিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়। এমনকি তার এত কাছের ও বিশ্বাসের মানুষের দ্বারা সে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ, স্পর্শ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। সেই কথা সে কারও কাছে মুখ ফুটে বলতেও পারে না। এমনকি বন্ধুদের কাছেও বলতে সংকোচবোধ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুর মা বা তার অভিভাবকরা ধারণাই করতে পারেন না যে পরিবারের কোনো সদস্যটি এরকম ঘৃণ্য কাজটি করছে।

দেশে নারী ও শিশু অধিকার সুরক্ষায় বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং অগ্রগতি রয়েছে। কিন্তু এখনো কন্যাশিশুদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিনিয়তই কোথাও না কোথাও কন্যাশিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দেশে প্রচলিত কুসংস্কার, সামাজিক অসচেতনতা, অশিক্ষা, পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব প্রভৃতি কারণে ছেলেশিশুদের তুলনায় কন্যাশিশুরা নানা দিক দিয়ে বৈষম্যপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। দেশে কন্যাশিশুর সংখ্যা ২ কোটি ৯১ লাখ ৮১ হাজার। উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে নিম্নবিত্ত কোথাও নিরাপদে নেই কন্যাশিশুরা। একটি কন্যাশিশু তার পরিবারের ভেতরেই প্রথম হয়রানি ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।

এজন্য সামাজিক জাগরণ জরুরি। কন্যাশিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে মানসিকতার পরিবর্তনের পাশাপাশি ইতিবাচক জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50168 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1