শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মা আমার মা

নতুনধারা
  ১৩ মে ২০১৯, ০০:০০

ডা. তানজিনা আল্‌-মিজান

''মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জানো ভাই

ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই''।

এই লাইন দুটির মধ্যেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর সত্য কথাটি অন্তর্নিহিত।

\হমেয়েরা জন্মগতভাবেই কোমল, সুন্দর আর ভালোবাসার সমাহার। মেয়েদের সৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্তা যেন সব ভালো দিকগুলোকে ঢেলে দিয়েছেন। এই নারীরা যখন ডাক্তার, সেবিকা, শিক্ষিকা রূপে আমাদের সামনে আসেন, তখনই আমরা তাদের গুণাবলি বুঝতে পারি। আর এই নারী যখন একজন 'মা' তখন তিনি কি রূপে ধরণীতে আসেন তা বলার উপযুক্ত ভাষাও মনে হয় নেই।

একজন নারী পূর্ণতা পায় মাতৃত্বে। কিন্তু এই পূর্ণতা প্রাপ্তি কোনো সহজ ব্যাপার নয়। যেদিন থেকে একজন নারী বুঝতে পারেন যে, তিনি মা হতে চলেছেন ঠিক সেদিন থেকেই যেন সেই আমৃতু্য দায়িত্বের যাত্রা শুরু। একটি সন্তানকে তিলতিল করে বড় করে তুলতে মাকে যে শ্রম দিতে হয় তা সব শ্রমের ঊর্ধ্বে।

আমি যখন আমার সন্তানকে লালন-পালন করি ঠিক তখনই বুঝতে পারি আমার মা আমার জন্য কি করেছেন। এই ডিজিটাল যুগে যেখানে একটি ডায়পারেই পুরো রাত পাড় হয়ে যায়, সেখানে আমাদের মা কতবার যে রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন শুধু তার ছোট্ট সন্তানটি যেন ভিজা কাঁথায় না শুয়ে থাকে, এটা ভেবে তার কোনো হিসাব নেই। আবার খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সন্তানের খাবার দেয়া, তার সব কিছু পরিষ্কার করা এবং সেই সঙ্গে পরিবারের কাজ ঠিক মতো করাও কিন্তু মায়েরই দায়িত্ব ছিল।

বিশ্বাস হচ্ছে বন্ধুত্বের প্রথম ও প্রধান খুঁটি। একটু চিন্তা করলেই আমরা দেখব মায়ের থেকে বড় বন্ধু কি আর কেউ হতে পারে? না। কখনোই না। মা'ই একমাত্র মানুষ, যিনি আমার সুখে সবচেয়ে সুখী হয়তো, আমার চেয়েও বেশি।

-যিনি আমার কষ্টে সবচেয়ে আহত।

-যিনি আমার উন্নতিতে প্রাণবন্ত।

-যিনি আমার মোঙ্গল কামনায় সদা জাগ্রত।

এই যে মা, আমরা তাকে সন্তান হিসেবে কতটুকু সমাদর করি এটা কিন্তু অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে। যে মা আমাকে নয়টি মাস তার গর্ভে ধারণ করেছেন, তার বুকের দুধ পান করাইছেন, আমার জন্য রাত্রি জেগেছেন। সবাই যখন বিকেল বেলা ঘুমিয়ে এই মা'ই তখন না খেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আমার স্কুল ফেরার অপেক্ষায়। সেই মাকে আমার সশ্রদ্ধ সালাম। আমার জীবনের সব উজাড় করা ভালোবাসা তার জন্য।

যখন বাইরে কাজে যাই দোয়া পড়ে মাথায় হাতটি রাখেন, চিবুক ধরে আদর স্নেহ করেন কিন্তু পৃথিবীর অন্য কেউ না। শুধু একজন, তিনি হচ্ছেন 'মা'। আমি যখন মা হচ্ছি তখনও আমার পাশে আমার মা। সবাই যখন সদ্যজাত শিশুটিকে নিয়ে ব্যস্ত তখনও কিন্তু আমাকে নিয়ে ব্যস্ত আমার মা। প্রকৃতপক্ষে একজন মায়ের গুরুত্ব একটি পরিবারে অপরিসীম। মা'ই তো পরিবারের প্রাণ। মায়ের ওপরেই নির্ভর করে সেই পরিবারের সন্তানদের, এক কথায় পুরো পরিবারের শিক্ষা, সংস্কৃতি, আদব-কায়দা। অর্থাৎ মা'ই হচ্ছেন সন্তানদের একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠার পাথেয়। তাইতো নেপোলিয়ান বলেছিলেন, ''আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব''।

পৃথিবীতে সব কালি শেষ হয়ে যাবে হয়তো এত কাগজও খুঁজে পাওয়া যাবে না এই মায়ের কথা বলতে গেলে। একটি গান মনে পড়ে গেল-

''মায়ের দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম

\হপাদুকা বানাইলেও শোধ হবে না দরদী''

হঁ্যা, মায়ের ঋণ হয়তো কখনই শোধ করা যাবে না, কিন্তু আমরা যদি তার প্রতি সন্তান হিসেবে যে দায়িত্ব সেগুলোকে ঠিকমত পালন করি, তার মনে যেন কখনও কষ্ট না দেই তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও আমরা সন্তান হিসেবে এগিয়ে থাকব।

এই মা যখন বৃদ্ধ অবস্থায় তখন যেন তাকে কেউ বোঝা মনে না করি। যে মায়ের আদেশেই একদিন বাড়িতে সব কিছু হতো, আজ বৃদ্ধ অবস্থায় তার একটু গল্প বলা, দেরি করে সময় নিয়ে কথা বলাকে আমরা বিরক্তি হিসেবে না নিই। ঈদে বা পূজার বাজার করতে গিয়ে মায়ের শাড়িটা যেন বাজেটের তলায় না পড়ে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় অবশ্যই তার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। মায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাবারও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ একজন তো আরেক জনের পরিপূরক। তাদের অভিজ্ঞতার মূল্য, আমাদের জীবনে তাদের গুরুত্ব এগুলোকে মাথায় রেখেই তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের প্রয়োজন মেটাতে হবে। কেননা, একদিন তারা তাদের প্রয়োজনগুলোকে অগ্রাহ্য করে আমাদের প্রয়োজন মিটিয়েছেন। আর্থ-সামাজিক অবস্থা যেমনই হোক, সন্তান সংখ্যা যতজনই হোক না কেন মা-বাবা কিন্তু কখনই সন্তানকে বোঝা মনে করেন না। কাজেই এই মা-বাবা যখন বৃদ্ধ অবস্থায় তখন কখনই তাদের বোঝা মনে করা যাবে না। তাদের বয়সজনিত বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ হতে পারে সেগুলোকে দরদ দিয়ে খেয়াল করতে হবে। বড় ধরনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সব ভাইবোন মিলে মা-বাবার চিকিৎসা করাতে হবে। তারা যদি সঙ্গে থাকেন তাহলে তাদের সময় কাটানোর জন্য গল্পের বই, একটু আলাদা করে নিজেদের মতো সময় কাটানোর জায়গা করে দিতে হবে। কোথাও বেড়াতে গেলে তাদের কেউ সঙ্গে নিতে হবে। তা না হলে তারা একাকীত্বে ভুগতে পারেন।

আর তারা যদি দূরে থাকেন তাহলে প্রতিদিন অন্তত রুটিন করে একটিবার তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে হবে। তাদের কোনো কিছুর প্রয়োজন আছে কিনা, শরীর সুস্থ আছে কিনা বিশেষ করে ওষুধগুলো সঠিক নিয়মে খাচ্ছেন কি না এগুলো জানতে হবে। বাৎসরিক উৎসবগুলো মা-বাবার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করতে হবে। মা-বাবা পৃথিবীতে আছেন বলেই হয়তো পৃথিবীটা আজও নিরাপদ আছে। আজ আমরা আমাদের মা-বাবার সঙ্গে যেমন আচরণ করব আমাদের সন্তানও কিন্তু তাই শিখবে।

কাজেই অতীতের সুন্দর স্মৃতিগুলোকে অমলিন রাখতে ও ভবিষ্যৎকে আলোকিত করতে আমরা অবশ্যই আমাদের জন্মদাত্রী 'মা'কে সেই সঙ্গে বাবাকেও ভালোবাসব। আর বৃদ্ধাশ্রম শব্দটিকে শুধু মন থেকেই নয় সব ডিকশনারি থেকেও মুছে ফেলব। তাহলেই আমাদের এই পৃথিবীটা ভালোবাসা নামক মোড়কে আবৃত থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<49155 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1