শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন অধ্যায়ে নাম লেখালেন হৈমন্তী সরকার

হাসনা হেনা
  ২৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
হৈমন্তী সরকার

বাংলাদেশকে বিশ্ববাসী দেখছে অপার সম্ভাবনার দেশ হিসেবে। যেখানে কৃষিশিল্প, শিক্ষার পাশাপাশি নারী সমাজের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। নারীর এই অগ্রগতিতে শিক্ষা একটি বড় উপাদান হিসেবে কাজ করছে। শিক্ষা জাতি গঠনের শুধু মূল স্তম্ভই নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করার মহান নিদের্শক। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসার পথ দেখালেন। সেই আলোয় আলোকিত হলো নারী সমাজ। আজ নারী বিভিন্ন কমের্ক্ষত্রে আপন মহিমায় ভাস্বর। তাই নারী আজ ঘরের কোণে সেকালের মতো বন্দি থেকে অন্ধ অনুকরণ ও বিশ্বাসকে অঁাকড়ে না ধরে শিক্ষা তাদের অন্তর-বাহিরকে জাগরিত করেছে। সব ক্ষেত্রে এগিয়ে চলছে দীপ্ত পদক্ষেপে। ঠিক তেমনি একজন সিলেটে প্রথম নারী সাজের্ন্ট হৈমন্তী সরকার। বাবা সাফল্য সরকার আর মা অনিতা সরকারের তিন মেয়ের মধ্যে হৈমন্তী মেজ। নেত্রকোনার দুগার্পুর থানার বিরিশিরিতে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই খুব ডানপিটে ছিলেন হৈমন্তী। তাদের কোনো ভাই নেই তাই বাবার সঙ্গে ঘরের সব তিনিই করতেন। নেত্রকোনা বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৫ এসএসসি ও দুগার্পুর মহিলা কলেজ থেকে ২০০৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকার বেগম বদরুননেছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টাসর্ শেষ করার পর পুলিশে ট্রাফিক সাজের্ন্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আগ্রহী হন। ট্রাফিক সাজের্ন্ট হয়ে হৈমন্তী সরকার প্রথম বারের মতো কাজ শুরু করেন সিলেট শহরে। দিনটি ছিল ২৩ এপ্রিল সিলেটে হৈমন্তীর প্রথম কাযির্দবস। নগরীর নাইওরপুল পয়েন্ট। সঙ্গে কয়েকজন নারী ট্রাফিক কনস্টেবল। মূল দায়িত্বে ছিলেন হৈমন্তী সরকার। গুরুত্বপূণর্ পয়েন্ট নাইওরপুল। সবসময় ঝামেলা লেগেই থাকে। পুরুষ ট্রাফিক সাজের্ন্টও হঁাপিয়ে ওঠে ওই এলাকায়। সেখানে দায়িত্ব পালন শুরু করেন হৈমন্তী। একেক করে গাড়ি যাচ্ছে আর দঁাড়িয়ে দেখছেন হৈমন্তী। হাত নেড়ে ইশারায় গাড়ি থামাচ্ছেন আর ছেড়ে দিচ্ছেন। দৃশ্য তো অবাক করার মতো। সিলেটের রাস্তায় এভাবে কোনো নারী সাজের্ন্টকে অতীতে দেখা যায়নি। এই শহর সিলেটে এতদিন যারাই দায়িত্ব পালন করছেন তারা পুরুষ। বেশ স্মাটর্ নারী হৈমন্তীকে দেখেই চমকে ওঠেন গাড়ির চালকরা। এ দৃশ্য তো সিলেটে অতীতে দেখা যায়নি। ট্রাফিক কন্ট্রোলও পরিচালিত হচ্ছে স্মাটর্ভাবে। বাংলাদেশ পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে ২০১৫ সালে ২৯ জন নারীকে সাজের্ন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়। রাজপথে প্রথম নারী পুলিশ সাজের্ন্ট বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ মনে করে পুলিশ বিভাগ ওই সব নারী সাজেের্ন্টর নিয়োগ প্রদান করে। এরপর প্রাথমিকভাবে নিয়োগকৃত ২৯ জনের মধ্যে ২২ জনকে ঢাকা মহানগরের রাজপথে দায়িত্ব পালনে নামায়। তারা বেশ দক্ষতার সঙ্গে ঢাকার রাজপথে দায়িত্ব পালন করেন। ওই ২২ জনের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল পাঠানো হয়। হৈমন্তীর স্বামী সিলেটের একজন ব্যাংকার। এ কারণে হৈমন্তী তার পছন্দের শহর সিলেটে এসেছেন। হৈমন্তী বলছিলেন ‘রাস্তায় দঁাড়িয়ে শুধু যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ নয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকলেও আমরা মোটরসাইকেল চালিয়ে সামনে এগিয়ে যাব, সবাই তাকিয়ে দেখবে, নারীরা আর পিছিয়ে নেই। এই ভাবনা আমাকে এই পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ করেছে।’ পুলিশ সাজের্ন্ট হৈমন্তী সরকার এভাবেই বললেন নিজের পেশা নিয়ে। হৈমন্তী বলেন, ছোটবেলা থেকেই চ্যালেঞ্জিং কাজ পছন্দ করতাম। আমার কোনো ভাই নেই তাই পরিবারে ছেলেরা যে কাজ করে সেগুলো বাবার সাথে আমি করতাম। তবে এই ডিপাটের্মন্টে কাজ করব তা কখনো ভাবিনি। পুলিশের সাজের্ন্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে খুব আগ্রহী হই। নিয়োগ দেখার পর মনে হয়েছে যে বাংলাদেশে কোনো নারী সাজের্ন্ট নেই। এই চাকরি হলে আমি প্রথম নারী সাজের্ন্ট হবো। এটা একটা ইতিহাস হবে এ বিষয়টি চিন্তা করেই রোমাঞ্চিত হই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<4659 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1