শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিজের জীবন বাজি রেখে

হোসাইন আবদুল হাই
  ০১ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

বৈবাহিক সূত্রে তিনি রোকেয়া শাহাবুদ্দীন হিসেবে পরিচিত। নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও এবং ফতুলস্না অঞ্চলে নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া সুলতানা। রাত ভোর, সাঁতরে প্রাণ রক্ষা করেছেন, যুদ্ধের সময় পাক সেনাদের চোখে ধুলো দিয়ে অস্ত্র পরিবহন করেছেন তিনি।

১৯৫৪ সালের ১৪ মার্চ, নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইলে জন্ম রোকেয়ার, বাবা সিরাজুদ্দীন মিয়া এবং মা গুলবদন বেগম। ১৯৬৬ সাল থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত রোকেয়া সুলতানা সেই থেকে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে রয়েছেন; ১৯৭১ সালে নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজের ছাত্রী ছিলেন তিনি। ৭ মার্চেও রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের সময় হাজির ছিলেন রোকেয়া এবং তার সহকর্মীরা।

\হরেসকোর্স ময়দান থেকে ফিরে নারায়ণগঞ্জে যুদ্ধের দাবানল জ্বালাতে থাকেন তারা; ২৩ মার্চ এর মধ্যেই নারায়ণগঞ্জের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। ২৩ মার্চ নারায়ণগঞ্জে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়, এর পরদিন ধানমন্ডির বাড়িতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নিয়ে আসেন রোকেয়া এবং তার দল। পাক সেনারা ২৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জে হামলা চালালে মাজদাইর কবরস্থানের কাছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। তবে পাক সেনাদের আধুনিক অস্ত্রের মুখে হার মানতে হয়েছিল মুক্তিসেনাদের।

তবুও দমে যাওয়ার পাত্র নন তারা, ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর নিজ নিজ অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের কাজ শুরু করেন। রোকেয়া সুলতানা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ফতুলস্না থানার আলীর টেকে, সেখানে নেতৃত্বে ছিলেন বীর প্রতীক গিয়াসউদ্দীন। ভারত গিয়ে অধিকতর প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিতে চাইলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রোকেয়াকে নারায়ণগঞ্জ থেকেই কাজ করার নির্দেশ দেন। তাই তিনি সোনারগাঁও, কাইটারটেক, ফতুলস্নার বক্তবলী, নারায়ণগঞ্জের তলস্না, দেওভোগ, গোদনগর, মধ্যনগর এসব অঞ্চলে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে অবস্থান করে কাজ করতেন গুপ্তচর হিসেবে। খবর সংগ্রহ, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তথ্য সরবরাহ, ওষুধ, কাপড়, অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দেয়ার কাজ করতেন রোকেয়া। এ ছাড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রূষা করতেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনাগুলোর একটি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ''গোদনগর থেকে তলস্না ক্যাম্পে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে বলা হয় আমাকে। একইসঙ্গে অস্ত্রশস্ত্রও বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলাম, প্রথমে নৌকা করে পার হতে হয়েছে, এরপর আমরা দুটি রিকশা করে যাচ্ছিলাম, আমি সামনের রিকশায় ছিলাম আর পরের রিকশায় ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধা। সেই রিকশার চালকও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। রিকশার নিচে বেঁধে রাখা ছিল অস্ত্র ও গোলাবারুদ। আমাদের কথা ছিল, কোথাও কেউ ধরা পড়লে একটু দূরে গিয়ে অবস্থান নিয়ে সঙ্গীর খবর নিয়ে তাকে উদ্ধারের ব্যাপারে চেষ্টা করব। নারায়ণগঞ্জের মেট্রো হলের কাছে পাক সেনাদের ঘাঁটি ছিল। সেখানে আমার রিকশা আটকে দিল পাক সেনারা; তবে সৌভাগ্যক্রমে দ্বিতীয়টাকে তারা আটকায়নি সেটা কুমুদিনীর কাছে এগিয়ে গিয়ে সেখানে অপেক্ষা করছিল। পাক সেনারা আমার পরিচয়পত্র দেখতে চাইল আমার রেশনের কার্ড দেখালে তারা জিজ্ঞেস করল, আমি মুসলমান কিনা; আমি নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিলে তারা আমার দেহ এবং রিকশা তলস্নাশি করার পর আমাকে ছেড়ে দিল। আমি সেই যাত্রা বেঁচে গেলাম। ছাড়া পেয়ে কুমুদিনীর কাছে সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে তলস্না ক্যাম্পে পৌঁছলাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<43460 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1