বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরের রণাঙ্গনে নারী

সখিনা খাতুন
  ১৮ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

'কোনকালে এক হয়নিকো জয়ী, পুরুষের তরবারী, প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয়ালক্ষ্ণী নারী।'

জাতীয় কবির এই উক্তি ঘুরে-ফিরে বারবার এসেছে বাংলার মাটিতে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের নারীরাও রেখেছে গুরুত্বপূর্র্ণ অবদান। নারী তার সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করেছিল স্বাধীনতার মতো বড় অর্জনে। তারা জীবন বাজি রেখে রণাঙ্গনে অস্ত্র ধরেছে। কখনো তারা সক্রিয় ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে কখনো বা যুদ্ধক্ষেত্রের আড়ালে। পাকিস্তানি হানাদারের অত্যাচারে জর্জরিত বাংলা মাকে রক্ষা করতে পুরুষরা যেমনি ঘর ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে তেমনি নারীরাও ছেড়েছিল তাদের ঘর। তাদের বিশ্বাস ছিল অবিচল, বুকে ছিল দেশের জন্য ভালোবাসা। মনে ছিল দৃঢ়প্রত্যয় তার অন্তরে ছিল সাহস। অসংখ্য নারী সরাসরি যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কেন না তারা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছেন, তাদের খাবার দিয়েছেন, আশ্রয় দিয়েছেন, তাদের বুকে সাহস জুগিয়েছেন। তারামন বিবি, কাঁকন বিবি, সেতারা বেগম, শিরিন বানু, রওশন আরাদের মতো সাহসী নারীরা সরাসরি রণাঙ্গনে অস্ত্রহাতে শত্রম্নর মোকাবেলা করেছেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন অনেক নারী।

নারী কবি, লেখক, শিল্পীরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন এ দেশের মুক্তিযুদ্ধে। তাদের লেখা ও গাওয়া গান মুক্তিযোদ্ধাদের মনে শক্তির সঞ্চয় করেছিল। শুধু তাই নয়- মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতে অলিতে-গলিতে গান গেয়ে টাকা সংগ্রহ পর্যন্ত করেছেন তারা। বিভিন্ন ছদ্মবেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর ও অস্ত্র পৌঁছে দিতেন তারা।

বাংলার এসব মহান নারী মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস আজও সর্বসাধারণের কাছে অনেকটাই অজানা। স্বাধীনতা যুদ্ধে এত অবদান থাকার পরও তারা অবহেলিত। আরও কতশত নারী মুক্তিযোদ্ধা রয়ে গেছে নিভৃতে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ নয় মাস বাগেরহাটে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অবস্থান করে কাজ করেছেন নারী মুক্তিযোদ্ধা মেহেরুন্নেসা মীরা। অথচ আজ সে সবজি বিক্রি করে। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁইটু্‌কুও।

মিনারা বেগম, আগরতলায় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী গঠন করেছিলেন। পাক-সেনাদের টহল ব্যহৃত করতে গাছে উঠে, পানিতে নেমে ছুুড়েছেন গ্রেনেড।

৫নং সেক্টরের মহিলা মুক্তিফৌজের সম্পাদিকা ছিলেন নিবেদিতা দাস। অস্ত্র হাতে যুদ্ধে না গেলেও মুক্তিযোদ্ধদের সহযোগী হিসেবে অনেক দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণপত্র থাকার পরও সরকারি ভাতা থেকে বঞ্চিত দুই বোন আলো রানী ও মধুমিতা বৈদ্য।

'মির্জা হেলেন করিম' এক বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা। ৩ মাসের শিশুকে রেখে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন তিনি।

'ড. ফৌজিয়া মুসলেম' মাত্র ১ মাসের সন্তানকে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করেন আগরতলার একটি ক্যাম্পে।

নারীদের এত অবদান মুক্তিযুদ্ধে থাকার পরও দেশীয় আলোচনায় বেশির ভাগ সময়ই এই মহান মুক্তিযোদ্ধা নারীদের নাম উঠে আসে না। প্রকাশ করা হয় না তাদের অবদানের কথা। নতুন প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাদের জানাতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। সাহসী বীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের দিতে হবে তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি। নিজের জীবন বিপন্ন করে নারী মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশ স্বাধীন করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ কখনো ভুলে যাবে না স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের অবদানের কথা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<41406 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1