সাবিনা ইয়াসমীনের ইচ্ছা ছিল কপিরাইটার হওয়ার। সেই বাসনা থেকেই বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থায় একটু-আধটু ঘোরাঘুরি। এরপর পড়াশোনার পাঠ চুকাতে না চুকাতে নিজেই খুলে বসলেন প্রচিত আইএমসি নামের একটি বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান। সেই থেকে দীঘর্ ২৯ বছর ধরে সফলতার সঙ্গে করছেন বিজ্ঞাপন সংস্থার ব্যবসা। এরই মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। স্ক্রিপ্ট রাইটিং অ্যান্ড ডিরেকশন বিষয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ম্যাস কমিউনিকেশন (নিমকো) ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন। ব্যবসার শুরুটা শাহবাগের আজিজ সুপার মাকেের্টর ছোট্ট দুই রুম থেকে। এরপর সেই ছোট্ট উদ্যোগ এখন মহীরুহ আকার নিয়েছে। এখন তার প্রতিষ্ঠানেই কাজ করছেন শ’খানেক স্বপ্নবান মানুষ। শুধু দেশে নয়, অফিস খুলে বসেছেন দেশের বাইরে সুদূরের দেশ থাইল্যান্ডে। বিশ্বের আরও বেশ কয়েকটি দেশে তার অফিস স্থাপন প্রক্রিয়াধীন।
সাবিনা ইয়াসমীন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। প্রচিত আইএমসি লিমিটেড থেকে ব্যবসা বিস্তৃত হয়েছে প্রচিত আইটিএস, প্রচিত হলিডেজ এবং রোদসীতে। এখন তিনি ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রচিত আইটিএসের বাই প্রডাক্ট আমুজামু (ধসঁলধসঁ.পড়স) নিয়ে। এটি একটি ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম প্লাটফমর্। ভ্রমণপিপাসু মানুষ এই প্লাটফমর্ থেকে তাদের পছন্দের ট্যুর কিনতে পারবেন। আবার ট্যুরিজম ব্যবসায়ীরা তাদের সুবিধামতো ট্যুর প্যাকেজ বিক্রি করতে পারবেন এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে। বলা যায়, এটি ট্যুর বিজনেসের একটি ডিজিটাল সংস্করণ। বাংলাদেশে এ ধারণাটি একেবারেই নতুন। গত দুই বছর ধরে প্রজেক্টটি চালু আছে। এটির মূল অফিস থাইল্যান্ডে। সেখানে সাবিনা ইয়াসমীনের ছেলে, বিন্দু জামাল এটির তত্ত¡াবধানে আছেন। বাংলাদেশেও আমুজামুর একটি অফিস রয়েছে। সাবিনা ইয়াসমীন আমুজামুর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন।
সাবিনা ইয়াসমীনের অন্য ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান প্রচিত আইএমসি লিমিটেড বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনী সংস্থার জগতে একটি পরিচিত নাম। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি সুদীঘর্ ২৯ বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। পরে ৩৬০* ইন্ট্রিগেটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব কটি জাতীয় এবং আঞ্চলিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, রেডিও এবং টেলিভিশনের সঙ্গে করার অভিজ্ঞতা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এবং এখনো সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি করছে বিভিন্ন কোম্পানির ইভেন্টের কাজ। এ প্রতিষ্ঠানটির ক্লাইন্টের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের বেশ কিছু নামিদামি ব্র্যান্ড এবং গ্রæপ অব কোম্পানিজ। সাবিনা ইয়াসমীন সম্পাদনা করছেন নারী প্রাধান্য পারিবারিক ম্যাগাজিন ‘রোদসী’। নারী জীবনের সমস্যা-সম্ভাবনা এবং সাফল্য গাথা তুলে আনাই এ পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য। মোটকথা, নারী জীবনের প্রতিটি অনুষঙ্গের পূণর্তার ছবি এঁকে দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে রোদসীর যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের জুন মাসে। পত্রিকাটি তার অগ্রযাত্রার চার বছরে পা দিয়েছে।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সাবিনা ইয়াসমীন যুক্ত আছেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে। ছাত্র থাকাবস্থায় সম্পাদনা করেছেন ‘আমরা বাউল’ নামে একটি লিটলম্যাগ। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সে সময়। এখনো মানব সেবাকে নিজের নৈতিক দায় মনে করে কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্নভাবে। সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছেন অনলাইন হ্যারাসমেন্ট নিয়ে কাজ করার। অনলাইনে নারীদের হ্যারাসমেন্টের বিভিন্ন ঘটনা তাকে পীড়িত করেছে। তাই চান সমাজের নারীদের এ ব্যাপারে সচেতন করে তুলবেন। পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবেন এসব ঘটনার বিরুদ্ধে। এ কাযর্ক্রমের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলা সফর করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা-সেমিনার করে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার কথা ভাবছেন তিনি। তার বিশ্বাস, সবাই সচেতন হলে অনলাইন হ্যারাসমেন্ট শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব। শুধু তাই নয়, নারীকে প্রযুক্তিগতভাবে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে বিশেষ প্রশিক্ষণের কথাও ভাবছেন তিনি।
সাবিনা ইয়াসমীন যুক্ত আছেন ‘লাল-সবুজ উন্নয়ন সংঘে’র সঙ্গে। এ সংগঠনটি শিক্ষাথীের্দর টিফিনে টাকা বঁাচিয়ে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কমর্কাÐ পরিচালনা করে আসছে সারা দেশে। তারা সবুজ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রচুর বৃক্ষরোপণ করেছেন। বাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারীশিক্ষাসহ সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে সংগঠনটির জোরালো ভ‚মিকা রয়েছে। সাবিনা ইয়াসমীন এ সামাজিক সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।
শিল্পকে, সংস্কৃতিকে তিনি ভালোবাসেন। লালন করেন আপন মনে। শুধু তাই নয় সাবিনা ইয়াসমীন একজন কবি মানুষ। মনের কথাকে ছন্দে ছন্দে গেঁথে, ভাবকে ভাষায় প্রকাশ করেন। লেখার ক্ষেত্রে তিনি ‘কাজী সাবিনা শ্রাবন্তী’-এই নামটিকেই বেছে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তার প্রথম কবিতার বই। ২০১৬ সালের বইমেলায় পাঠক সমাবেশ থেকে ‘একগুচ্ছ অনুভ‚তি’ নামে বইটি প্রকাশ পায়। বইটি প্রকাশের পরপরই সুধীজনের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। আরও দুটি বইয়ের পাÐলিপি তৈরি করে রেখেছেন তিনি। পাশাপাশি লিখছেন ছোটগল্প, ভ্রমণ এবং শিশুসাহিত্য। আগামী বইমেলায় তার অন্তত একটি ছোটগল্প, একটি ভ্রমণ এবং একটি কবিতার বই প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। শিল্পের সঙ্গে এই সংসার তিনি গেঁথে যেতে চান আজীবন।