শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বায়ন ও নারী শ্রমিক

নতুনধারা
  ০৯ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
কাঠামোগত সমন্বয় কমর্সূচির নেতিবাচক প্রভাব পুরুষের চেয়ে নারীর ওপর বেশি মাত্রায় পড়েছে

নন্দিনী ডেস্ক

পরিবারে ও সমাজে নারীর বহুমুখী ভ‚মিকার আলোকেই নারীর ওপর অথৈর্নতিক বিশ্বায়নের প্রভাব মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। পরিবারে নারীর শ্রম উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন বহুমাত্রিক ভ‚মিকা রাখে। সামাজিক ও গোষ্ঠী সংহতি সুদৃঢ়করণের পেছনেও নারীর ভ‚মিকা অপরিসীম। সমাজে নারী-পুরুষের ভ‚মিকার ভিন্নতা রয়েছে, একই সঙ্গে রয়েছে এ সম্পকির্ত সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রত্যাশারও বিভিন্নতা। এটা গভীরভাবে প্রোথিত রয়েছে আমাদের সমাজদেহে। আর এ কারণেই নারী ও পুরুষের ওপর অথৈর্নতিক বিশ্বায়নের প্রভাব ভিন্ন ভিন্নভাবে অনুভ‚ত হয়। যদিও অথৈর্নতিক শ্রেণি, গোত্র, সংস্কৃতিÑ এগুলো প্রভাব নিরূপণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূণর্ উপাদান, তথাপি একই ধরনের নীতিমালা নারী ও পুরুষের ওপর ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় প্রভাব ফেলে।

বতর্মান বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া কতগুলো অথৈর্নতিক নীতিমালার সঙ্গে সম্পকির্ত, মোটা দাগে যা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ প্রদশির্ত কাঠামোগত সমন্বয় কমর্সূচি নামে বহুল পরিচিত।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কাঠামোগত সমন্বয় কমর্সূচির নেতিবাচক প্রভাব পুরুষের চেয়ে নারীর ওপর বেশি মাত্রায় পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কাঠামোগত সমন্বয় কমর্সূচির আওতায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক কল্যাণমূলক কাজ থেকে রাষ্ট্রকে হাত গুটিয়ে নিতে হচ্ছে যার ফলাফল হিসেবে এ দায়িত্বগুলো পরিবারের কঁাধে এসে চাপছে। আরো স্পষ্ট করে বললে, এ দায়িত্ব বতাের্চ্ছ পরিবারের নারীর ওপর। এ বাস্তবতা লক্ষণীয় মাত্রায় ফুটে উঠছে, সরকার যতই জনকল্যাণ খাতে ব্যয় সংকোচন করছে কিংবা এ কাজ থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে ততই সমাজের শিশু, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ ব্যক্তিদের সেবা-শুশ্রƒশার দায়ভার এসে পড়ছে পরিবারের ওপর এবং নারীই যেহেতু সমাজে ঐতিহ্যগতভাবে সেবাদানকারী হিসেবে বিবেচিত, তাই পুরুষের চেয়ে নারীকেই এ দায় বেশি বহন করতে হচ্ছে।

শ্রমের নারীকরণ

বতর্মান খোলাবাজার অথর্নীতির বৈশ্বিক পরিবেশে বিশেষ করে প্রতিযোগিতাপূণর্ রপ্তানি শিল্প ও নয়া বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার অধীনে বৈশ্বিক পুঁজি সঞ্চয়ন প্রক্রিয়া মূলত নারীর ওপর নিভর্রশীল। মজুরি কিংবা মজুরিবহিভ‚র্ত উভয় ধরনের নারী শ্রমের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। শ্রমবাজারে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণকে কখনো কখনো ‘শ্রমের নারীকরণ’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। যদিও নারীরা অধিক সংখ্যায় এখন শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে, তবে এটা লক্ষণীয় যে, তাদের কাজ কেন্দ্রীভ‚ত হচ্ছে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে, যেখানে পারিতোষিক ও পারিশ্রমিক উভয়ই কম (আইএলও : ১৯৯৫)। গ্যা স্ট্যানডিং (১৯৮৯) মনে করেন, উৎপাদনের ক্রমপ্রসারমান বিশ্বায়ন এবং ক্রমবধর্মান প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় নমনীয় শ্রমকাঠামো এবং একই সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাকরি কাঠামোর পরিবতর্নÑ মূলত এ বিষয়গুলোই শ্রমের নারীকরণের পেছনে অন্যতম কারণ। এটা উভয় দিক দিয়েই বিবেচ্যÑ অধিকতর সংখ্যায় শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ ও কমর্পরিবেশের অধঃগমন (শ্রমমান, আয়, কমর্মযার্দা ইত্যাদি)।

অনেক নারীবাদী সমালোচক (অরিজপে এবং আরাডা, ১৯৮১) ব্যাপারটিকে ব্যাখ্যা করেন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। তারা শ্রমবাজারে নারীর এ অংশগ্রহণের ব্যাপারটিকে সূত্রবদ্ধ করেন ‘নারীর দুদর্শাগ্রস্ত অবস্থার তুলনামূলক সুবিধার আলোকে। তাদের এ সূত্রায়ন থেকে এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, কেন পোশাকশিল্পের মতো শ্রমঘন শিল্পে নারী শ্রমের চাহিদা অপেক্ষাকৃত বেশি। এটা হলো দুদর্শাগ্রস্ত প্রেক্ষাপটে নারী শ্রমের সাংস্কৃতিক বিনিমার্ণ, যা সুনিদির্ষ্ট কতগুলো কাজের ক্ষেত্রে নারী শ্রমের আবশ্যিকতাকে প্রতিপন্ন করে। তারা মনে করেন কিশোরী-তরুণীদের ‘চপল অঙ্গুলি’ (হরসনষব ভরহমবৎং) আর ধৈযর্শীল কঠিন কাজ করার ক্ষমতাই নারীকে এ শিল্পে কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। আধাদক্ষ বা অদক্ষ এ নারী শ্রমিকরা কম পারিশ্রমিকে এখানে কাজ করছেন।

বাংলাদেশে শ্রমক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ

বাংলাদেশে অথর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় বরাবরই কম। প্রথাগত অথর্নীতিতে পুরুষের চেয়ে নারীর অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে নারী শ্রম ও শ্রমিক সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য রয়েছে, যা মূলত সংগৃহীত হয় আদমশুমারি ও শ্রমশক্তি জরিপ থেকে।

১৯৯৯-২০০০ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী অথৈর্নতিক কমর্কাÐে নিয়োজিত জনসমষ্টির মধ্যে উচ্চহারে লিঙ্গীয় ভেদ দৃশ্যমান (টেবিল-১.১)। প্রচলিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, অথৈর্নতিকভাবে কমর্ক্ষম মোট ৪০.৭ মিলিয়নের (১৫ বছর ও তার উপরে) মধ্যে মাত্র ৮.৬ মিলিয়ন (২১%) নারী। সম্প্রসারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী এ সংখ্যা বেড়ে দঁাড়ায় ২০.১ মিলিয়নে, যা মোট সংখ্যার শতকরা ৩৭ ভাগ। কমের্ নিয়োজিত মোট শ্রমশক্তির নিরিখে নিয়োজিত নারী শ্রমের অংশ প্রচলিত ও সম্প্রসারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী যথাক্রমে শতকরা ২০ ও ৩৭ ভাগ। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রচলিত সংজ্ঞা অনুযায়ী ৩৩.৫ মিলিয়নের মধ্যে ২৭.৩ মিলিয়ন (শতকরা ৮২ ভাগ) যারা শ্রমশক্তিতে অন্তভুর্ক্ত নয় তারা সবাই নারী। সম্প্রসারিত সংজ্ঞায় ওই হার কিছুটা নেমে দঁাড়ায় শতকরা ৭৬ ভাগে। পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে, খাতওয়ারি নারীর কমর্সংস্থান চিত্র কিছুটা বৈচিত্র্যপূণর্। প্রচলিত সংজ্ঞার আওতায় শতকরা ৪৬ ভাগ নারী শ্রমিক কৃষি খাতে কমর্রত, যেখানে পুরুষ শ্রমিক শতকরা ৫২ ভাগ। সম্প্রসারিত সংজ্ঞা অনুসারে নারীর ক্ষেত্রে এ হার বেড়ে দঁাড়ায় ৭৭%-এ এবং এ ক্ষেত্রে পুরুষের ভাগ দঁাড়ায় ৫৩%-এ। শ্রমশক্তিতে নারীর এ ব্যাপক উপস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে, তারা গৃহস্থালি ও পারিবারিক উৎপাদনশীল কাজে অধিকহারে নিয়োজিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<2602 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1