শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
তথ্যপ্রযুক্তি ও গণমাধ্যম

নেপথ্যের কারিগর

তথ্য ও প্রযুক্তির এই যুগে নারীরা এখন গণমাধ্যমে আরও প্রাঞ্জল। ভিডিও কনফারেন্স, ইন্টারনেটের বহুবিধ ব্যবহার সাংবাদিকতার পাশাপাশি সমাজের সবর্স্তরে নারীর অংশগ্রহণকে করেছে আরও সাবলীল। বতর্মানে ১৩১ মিলিয়ন মোবাইল ব্যবহারকারী ও ৫৬ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। এমনকি কৃষিক্ষেত্রেও নারীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে গণমাধ্যমের অংশীদার হচ্ছেন। সরকার দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে...
তাহমিনা সানি
  ২৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে শুরু করে মনুষ্য সমাজে তথ্য আদান-প্রদানের রূপান্তরিত রূপ এখন গণমাধ্যম। পরে আধুনিক বিজ্ঞানের কৃপায় সহায়ক হিসেবে আবিভ‚র্ত সংবাদপত্র, বেতার, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, অনলাইন, সিডি টেপরেকডার্র এনে দিয়েছে গণমাধ্যমের নতুন জয়যাত্রা। বাতার্ পরিবেশক ও জ্ঞান প্রদায়ক যৌথ ভ‚মিকায় অবতীণর্ গণমাধ্যমের প্রধান হাতিয়ার এর পরিবেশনা। আর এই অনন্য কাজটি করে থাকেন যারা, তারা হলেন গণমাধ্যম কমীর্। এক কথায় তাদের গণতন্ত্রের সদাজাগ্রত প্রহরীও বলা যায়। কলম তাদের একমাত্র অস্ত্র। তারা সাংবাদিক।

এটা সত্যি, সাংবাদিকতা নাম শুনলেই যে কেউ এক বাক্যে স্বীকার করে নেন এটি বেশ চ্যালেঞ্জিং আর ঝুঁকিপূণর্। তবে আশার কথা হলো এই, বতর্মানে নারীদের এই পেশায় বেশ স্বতন্ত্র অবস্থানে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

অবশ্য সাংবাদিকতায় নারীদের সরব পদচারণা পরিলক্ষিত হয় সেই ব্রিটিশ শাসনামলে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার একমাস আগে সম্পাদক নূর জাহান বেগমের হাত ধরে বেগম পত্রিকার প্রকাশনা শুরু। আর সেই সঙ্গে শুরু হলো সংবাদপত্র জগতে নারীদের প্রবেশ। ’৬০-এর দশকে হাসিনা আশরাফ, নিশাদ সাদানী, (শহীদ সাংবাদিক) সেলিনা পারভীনের হাত ধরে তাদের এগিয়ে চলা হলো আরও বহুদূর।

সেই প্রসারিত হাত ধরে আজকের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নারী অংশগ্রহণ বিশাল আকারে না হলেও তা চোখে পড়ার মতো। প্রযুক্তি খাতেও বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ। কেননা বাংলাদেশের উন্নয়নে একেবারে ভিন্ন গতিতে আলোড়ন তুলেছে প্রযুক্তি খাত। আর তাতে নারীরাও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই।

তথ্য ও প্রযুক্তির এই যুগে নারীরা এখন গণমাধ্যমে আরও প্রাঞ্জল। ভিডিও কনফারেন্স, ইন্টারনেটের বহুবিধ ব্যবহার সাংবাদিকতার পাশাপাশি সমাজের সবর্স্তরে নারীর অংশগ্রহণকে করেছে আরও সাবলীল। বতর্মানে ১৩১ মিলিয়ন মোবাইল ব্যবহারকারী ও ৫৬ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। ২৫ হাজারেরও অধিক আইটি ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন সফটওয়্যার ও আইটি প্রতিষ্ঠানে কমর্রত। সরকার দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। আইটি-আইটিইএস শিল্প দ্রæত প্রসার লাভ করছে। বতর্মানে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। প্রতি মাসে এই সংখ্যা ৩০ হাজার করে বাড়ছে। আমাদের ৩ লাখ গ্র্যাজুয়েট এবং ১০ হাজারের অধিক আইটি পেশাদার রয়েছেন, যা দিয়ে আমরা বাজিমাত করতে পারি। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় নারীরা বড় একটি সংখ্যার অংশ হতে পারে।

গণমাধ্যমে এই যে নারী জাগরণ আর প্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ, একে ধরে রাখতে হলে এবং একে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন পযার্প্ত কমর্বান্ধব পরিবেশ। এ ছাড়া নারীদের অভিভাবকদের জানানো অনেক প্রয়োজনীয় একটি কাজ। কম্পিউটার বিদ্যায় বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের প্রাকৃতিক ক্ষমতা বের করে আনতে এই উদ্যোগ বেশ কাযর্কর। এই ক্ষেত্রে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের প্রযুক্তি খাতে উৎপাদনমুখী ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে উৎসাহ দিতে পারেন।

বাংলাদেশি নারীদের সামথর্্য বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। তাদের প্রতিশ্রæতি ও সংকল্প সম্পকের্ সবার ধারণা আছে। তারা এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানায় কমর্রত রয়েছে। আরএমজি খাতে বাংলাদেশ এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু বণ্টনব্যবস্থার কারণে, তাই এর পেছনে রয়েছে বিশ্বজুড়ে ক্রেতাদের প্রয়োজনীয়তা।

এখন সামথের্্যর ওপর লক্ষ্য রেখে ডিজিটাল ক্লাসরুমের প্রতি বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যা সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শুরু করেছেন। এই ক্লাসরুমের মাধ্যমে দেশজুড়ে সমমানের শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষক এবং অভিভাবক অবশ্যই এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মেয়েদের তৈরি করবেন বিশ্ববাজারে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে।

গণমাধ্যমে প্রযুক্তির এই উন্নয়নে নারী সাংবাদিকরাও বেশ সুফল ভোগ করছেন। অনলাইন সাংবাদিকতায় আজকাল তাদের সফল উপস্থিতি।

১৯৭০ সালে টেলিটেক্সট নামক প্রযুক্তির সহায়তায় ব্রিটেনে ডিজিটাল সাংবাদিকতার সূচনা হয়। সভ্যতার ক্রমবিবতের্ন আমরা আজ ইন্টারনেট সভ্যতার প্রবেশ করেছি। আর এ ইন্টারন্টে মানেই হচ্ছে অনলাইন। সভ্যতার এ গতিধারাকেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনলাইন বা ডিজিটাল সাংবাদিকতার সংজ্ঞা নিয়ে পÐিতদের মধ্যে বিতকর্ থাকলেও অনলাইন সাংবাদিকতাকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলা হয়েছেÑ ‘ডিজিটাল সাংবাদিকতা যাকে আমরা অনলাইন সাংবাদিকতাও বলি সেটি হচ্ছে সাম্প্রতিক কালের সাংবাদিকতার ধরন যার সম্পাদকীয় বিষয়বস্তু কাগজ বা সম্প্রচার মাধ্যমের বদলে ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়।’ অপেক্ষাকৃত কম প্রতিবন্ধকতা, স্বল্পব্যয় ও বহুমুখী কম্পিউটার নেটওয়াকির্ং প্রযুক্তির বদৌলতে ডিজিটাল সাংবাদিকতার ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে অবাধ তথ্যপ্রবাহের গতিও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আর এ ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করেই ২০২১ সালের মধ্যে ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। আর এ লক্ষ্য অজের্নর জন্য অনলাইন নিউজ পোটার্ল বা অনলাইন গণমাধ্যমের ভ‚মিকা অনস্বীকাযর্। জনগণের নিকট দ্রæত ও সহজ উপায়ে তথ্য পৌঁছার ক্ষেত্রে অনলাইন গণমাধ্যমই একমাত্র উপায়। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বতর্মানে প্রিন্ট মিডিয়া থেকে অনলাইন মিডিয়া বেশি জনপ্রিয়। প্রিন্টমিডিয়া সেখানে পৌঁছাতে পারছে না অথবা পৌঁছতে দীঘর্ সময়ের প্রয়োজন সেখানে অনলাইনে বিশেষ করে মোবাইলে সে সংবাদ মুহ‚তের্ই পৌঁছে যাচ্ছে।

অনলাইন গণমাধ্যম-ডিজিটালপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রæতগতিতে সরকারের সেবামূলক কাযর্ক্রম জনগণের মধ্যে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। ফলে জনগণ মুহ‚তের্র মধ্যেই বিভিন্ন কাযর্ক্রম সম্পকের্ অবহিত হতে পারছে আর অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের মতামতও প্রকাশ করতে পারছে। ফলে জনগণের কাছে সরকারের অঙ্গীকার ও জবাবদিহিতা দুই-ই বাস্তবায়িত হচ্ছে। মোবাইল ফোন অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রæত তথ্য বিনিময় সম্ভব। এই ব্যবস্থায় পরিবহন ব্যয়ের প্রয়োজন হয় না এবং সময়েরও সাশ্রয় হয়।

এই যে প্রযুক্তি, এই যে ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির ছেঁায়ায় নারীর অগ্রযাত্রা এসব কিছুর নেপথ্যে যার আলোক ছেঁায়া তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নারীর ক্ষমতায়ন আজ দৃশ্যমান। পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কাজও সমাপ্তির পথে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে আজ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব, ইউনিয়ন সেবা কেন্দ্র, আইটি পাকর্ স্থাপন করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইটি সেক্টরে এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে অতি শিগগিরই নতুন নতুন আরও নারী উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং তথ্যপ্রযুক্তিনিভর্র অথর্নীতিও মজবুত হবে।

সরকারের সহযোগিতাই অনলাইন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা, স্পষ্টতা, প্রাঞ্জল্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভ‚মিকা পালন করতে পারে। সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তার মাধ্যমে এ গণমাধ্যমটি একটি প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমে রূপান্তরিত হলে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে সবাির্ঙ্গন সহযোগিতা প্রদান করে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের সারথী হতে পারবে অনলাইন গণমাধ্যমে প্রত্যাশা রইল। আর এই উন্নয়নের ছেঁায়া লাগুক লাখো নারীর জীবিকা অন্বেষণে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে চলুক তারা। প্রযুক্তি ও আইটি সেক্টরে তাদের অবদান আরও প্রাণবন্ত হোক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<24036 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1