শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ও নারীশ্রমিক

মৈত্রী ঘোষ
  ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

নারী সৃজনশীলতার প্রতীক। আমাদের দেশের দুই যুগ আগে গামের্ন্টশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পযার্য়ক্রমে ৮০% নারী এ শিল্পের প্রধান শ্রমশক্তি হয়ে উঠেছে। অভাব-অনটনে জজির্রত নারীরা গামের্ন্টশিল্পে নিয়োজিত হয় তার জীবনজীবিকা রক্ষার তাগিদে। এক সময় মালিকরা গ্রামগঞ্জ থেকে নারীদের সংগ্রহ করে এ গামের্ন্টশিল্পে যোগদানের চেষ্টা করে। ফলে গামের্ন্টশিল্প উত্তরোত্তর বিকশিত হয় এবং নারীরা উৎপাদনে বিশেষ ভ‚মিকা রাখে। কিন্তু তাদের জীবন চলে অতিশয় সংকটের মধ্যে। বাংলাদেশের গামের্ন্টশিল্পে শ্রমিকের যে মজুরি তা জীবনধারণের জন্য অপ্রতুল। তার ওপর নারী শ্রমিকদের বেতন পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় অনেকাংশে কম। যখন বাংলাদেশ কৃষিনিভর্র অথর্নীতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে পোশাকশিল্পে স্বনিভর্র অথর্নীতি গড়ে তুলছে, সাফল্যের এমন সময় পোশাকশিল্পের মূল চালিকাশক্তি যে শ্রমিক তাদের জীবনজীবিকার মান এখন কেমন? শিল্প বিকাশের নামে প্রতিনিয়ত চলছে শ্রমিক নিযার্তন। তারই জ্বলন্ত প্রমাণÑ তাজরিন ফ্যাশন, রানা প্লাজা, ফুজি নিটওয়্যারসহ শত শত নাম। আর তার সঙ্গে জড়িত সহস্র শ্রমিকের রক্ত ও জীবনের অগ্নিদগ্ধ চিত্র। মালিকের এ নিমর্মতা আরো নগ্ন হয় নারী শ্রমিকের বেলায়। শ্রমিকরা যে মজুরি পায় তাতে তাদের জীবনধারণ তথা পরিবারের অন্য সদস্যদের চালানো অত্যন্ত কঠিন ও পীড়াদায়ক হয়। তারপরও জীবনধারণের তীব্র প্রয়োজনে সব সংকট মোকাবেলা করেও তারা গামের্ন্টশিল্পে শ্রমদান করে। শ্রমিকদের এ সংকটময় জীবনের পরেও এই সামাজিক অবস্থানে তাদের ওপর সামাজিক, পারিবারিক বহুধা বিপত্তি চলে। দেশের প্রচলিত শ্রম আইনে শ্রমিকদের অধিকার সম্পকের্ যাই কিছু বলা হয়ে থাকুক না কেন, সেই সুযোগ লাভেরও পরিবেশ বাংলাদেশের গামের্ন্টশিল্পে বতর্মান নয়। সরকার আইন করে গভর্ধারিণী মায়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় চার মাস নিধার্রণ করলেও তা ভোগ করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হয়। কারণ যখনই কারখানা কতৃর্পক্ষ জানতে পারেন যে কোনো নারী শ্রমিক অন্তঃসত্ত¡া সুকৌশলে তাকে চাকরিচ্যুত করার দৃঢ় পন্থা অবলম্বন করা হয়। মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করার জন্য শ্রমিকদের দীঘির্দনের দাবি থাকলেও সরকার এ বিষয়ে কোনো আইন প্রণয়ন করেনি। শ্রমিকদের কোনো ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ না থাকায় তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির সুযোগ নেই। ফলে মালিকপক্ষ সম্পূণর্ভাবে শ্রমিকদের এ অসহায়ত্তের সুযোগ গ্রহণ করেন। শ্রম আইনে নারী শ্রমিকের জন্য ওভারটাইম করানোর নিদির্ষ্ট সময়সীমা নিধাির্রত থাকলেও নারী শ্রমিকদের নিবির্চারে ওভারটাইম করানো হয়। এ বিষয়ে আইনসিদ্ধ কোনো নিয়ম মানার বালাই গামের্ন্টশিল্পে নেই। বিশেষত ওভারটাইম করানোর পরেও শ্রমিকদের মজুরি দেয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে মালিকের পক্ষের ম্যানেজমেন্ট বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সততার পরিচয় দেয় না। ফলে একজন নারী শ্রমিক তার আইনানুগ অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়। এসব বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঊধ্বর্তন কমর্কতার্রা তাদের গালাগালসহ দৈহিক নিযার্তন পযর্ন্ত করে থাকেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাকরিও চলে যায়। এ ছাড়া কাজের স্বল্পতা দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিজ্ঞ শ্রমিকদের ছঁাটাইয়ের শুভঙ্করের ফঁাকি তো আছেই। এ হীন সামাজিক পরিস্থিতি নারী শ্রমিকদের জীবনে যে দুভোর্গ আনছে তা গামের্ন্টশিল্প ও বাংলাদেশের অথর্নীতির জন্য ক্ষতিকর। স্বল্প মজুরিতে নারী শ্রমিকদের যে অধিক পরিশ্রম করতে হয় এর সঙ্গে তুলনা করে তাদের খাদ্য মান কম হওয়ায় নারী শ্রমিকরা ক্রমে কাজের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এই সামাজিক অবস্থা দূর করায় আমাদের জাতিগত দায়িত্ব আছে। এ ছাড়া সরকার ও মালিকপক্ষকে দায়িত্ব নিয়ে সব শ্রমিক নিযার্তনসহ শ্রম আইনের উপযোগী উন্নয়ন ঘটিয়ে বাংলাদেশের শ্রমিক ও পোশাকশিল্পকে রক্ষার ক্ষেত্রে সচেষ্ট হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22045 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1