শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আপন আলোয় আলোকিত নারী

একজন নারীকে সমানতালে দুটোই সামলাতে হয়। যেমন ঘর তেমন বাহির। লৌকিকতা সামাজিকতা তো আছেই। এগুলো রক্ষা করে না চললেও হাজারো কথা আত্মীয় পরিচিত মহলে। তাই শত অসুবিধা থাকা সত্তে¡¡ও সামাজিক পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতে হাজির থাকতে হয় নিজের দায়িত্ববোধ এবং সামাজিকতার খাতিরে। পুরুষদের যে ঝামেলাটা পোহাতে হয় না, সেটা একজন কমর্জীবী নারীকে পোহাতে হয় হরহামেশা। চাকুরে স্বামীটি চাকরি নিয়েই দিশেহারা। ঘর সামলানো হয় না আর। সংসার, সন্তানের দেখভাল সবই বউটির...
রুমানা নাওয়ার
  ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

একজন মেয়ে যখন কমর্জীবী। তখন তাকে ঘর বাহির দুটোই সমান তালে সামলাতে হয়। সমান দক্ষতায় পা চালাতে হয়। এর ব্যতিক্রম ঘটলে পিছলে যাওয়ার ভয় থেকেই যায়। সংসার সন্তান স্বামী পরিবারের অপরাপর সদসদের দায়িত্ব পালন করার পর অফিসমুখী হওয়া অনেক কষ্টকর বটে। তবুও সকালে আলো ফোটার আগে বিছানা ছেড়ে দু’পায়ে দৌড়ায় মেয়েটি। কার কি লাগবে কি খাবে না খাবে কার আগে কে ডাকবে এসব মুখস্ত থাকে গৃহকত্রীর। গৃহকতার্ তখনও ঘুমে। আরো এক প্রস্থ ঘুম যে বাকী তার। এত সকাল সকাল উঠলে শরীর খারাপ করবে। অফিস যাওয়ার আগ মুহূতের্ উঠলেই সারে তার। ব্রেকফাস্ট টেবিলে সাজানো দুপুরেরটাও হট ক্যারিয়ারে ভরে তবেই ছুট লাগায় মেয়েটি নিজের অফিস টাতে। বাচ্চাদের নিভর্রযোগ্য জায়গায় নিভর্রশীল মানুষের কাছে রাখা। সব দায়ভার তার। আর এক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়ায় তার বাবার বাড়ির লোকেরা। হয় মা না হয় বোন অথবা ভাই। কতাির্ট এক্ষেত্রেও নিভার্র থাকে। কোনো দায়ভার নিজের কাউকে দেয় না। কি উৎকণ্ঠা নিয়ে অফিস সামলায় তা মেয়েটিই জানে শুধু। অনেক মেয়েকে দেখি ভালো পজিশনকে পায়ে ঠেলে ঘরকন্নার কাজে ব্যস্ত হতে। সন্তানকে মানুষ করতে চাকরিটা পযর্ন্ত ছেড়ে দেয়। ঘর বাহির সামলানো কষ্টকর হয়ে পড়লে ক্ষান্ত দেয় অবশেষে। নিজের ক্যারিয়ারকে জলাঞ্জলী দেয় সংসারের কারণে। দশদিক সামলানো কত কষ্টের। তা কমর্জীবী মেয়েটিই জানে। কমের্ক্ষত্রেও পুরুষ সহকমীের্দর তুলনায় দক্ষতার সহিত কাজ সামলায়। যা অনেক পুরুষ সহকমীর্ও পারে না।

একজন নারী কাজ করে আন্তরিকতা প্রজ্ঞা মেধার সমন্বয়ে। ধীর স্থিরতার সহিত প্রতিটি কাজে যতেœর ছাপ থাকে। দায়সারা গোছের কাজ একটা নারী সহকমীর্ থেকে আশা করা যায় না। সংসারটা যেমন নিপুণ হাতে সামলায় কমের্ক্ষত্রে ও তদ্রƒপ। নিজের মনে করে অফিস, কমের্ক্ষত্রটাকেও।

আর একটা কথা না বললেই নয় একজন পুরুষ সহকমীর্ গোছানো হয় খুবই হাতেগোনা। সেক্ষেত্রে নারী সহকমীর্ নিজের দায়িত্বের পাশাপাশি অফিসটাকেও সাজায় আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। দিনের বেশিরভাগ সময় যেখানে কাটানো হয়। সে জায়গাটা সুন্দর নিপাট না হলে চলে। নিজের ঘরের মতো কমের্ক্ষত্রটাকে সাজিয় রাখে।

এতে কাজের প্রতি আগ্রহ একাগ্রতা বাড়ে। মন বসে যে কোনো কঠিন কাজেও। পরিবেশ একটা বড় ব্যাপার। যা নারীরা বুঝে। সেভাবেই গড়ে তুলে তার আশপাশের পরিবেশ।

একজন নারীকে সমানতালে দুটোই সামলাতে হয়। যেমন ঘর তেমন বাহির। লৌকিকতা সামাজিকতা তো আছেই। এগুলো রক্ষা করে না চললেও হাজারো কথা আত্মীয় পরিচিত মহলে। তাই শত অসুবিধে থাকা সত্তে¡¡ও সামাজিক পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতে হাজির থাকতে হয়। নিজের দায়িত্ববোধ এবং সামাজিকতার খাতিরে। পুরুষদের যে ঝামেলাটা পোহাতে হয় না। সেটা একজন কমর্জীবী নারীকে পোহাতে হয় হরহামেশা। চাকুরে স্বামীটি চাকরি নিয়েই দিশেহারা। ঘর সামলানো হয় না আর। সংসার সন্তানের দেখভাল সবই বউটির। পুরুষ রা এক্ষেত্রে অনেক সৌভাগ্যবান। একটা সামলালে তাদের চলে। যা চাকুরে মেয়েটি পারে না। তাকে সংসার অফিস দুটোই সমান গুরুত্ব দিয়ে সামলাতে হয়। কাজ করে যেতে হয়। এর একটু হেরফের হলে সংসারটা অচল। কমের্ক্ষত্রেও নারীর প্রয়োজন বুঝে তখন।

প্রায় ক্ষেত্রে শোনা যায় মহিলা সহকমীর্ রা একটু দেরিতে অফিসে আসে। এটা স্বাভাবিক নয় কি?

দেরিতে আসার একটা যুক্তিযুক্ত কারণ অবশ্যই আছে। তাই দেরি হয় মাঝে-মধ্যে। এটা পুরুষ সহকমীের্দর উদার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা উচিত। একজন নারী সকালের হাজারো হুজ্জোত রান্নাবান্না বাচ্চার স্কুল স্বামীর অফিস, অন্য সদস্যদের খাবারের যোগান দিয়েই অফিসে আসতে হয়। যা পুরুষ সহকমীের্দর করতে হয় না। তারা সব রেডি পায়। দুপুরের লাঞ্চটাসহ হাতে তুলে দিলেই তবে অফিসমুখো হয়। অথচ বউটিও চাকুরে। তার লাঞ্চ বক্স বা ব্যাগটি কখনো গুছিয়ে এগিয়ে দিয়েছেন কি? এ প্রশ্নের অবতারণা অবান্তর। কেউ করে বলে আমার মনে হয় না। যদি করে তাহলে শ্রদ্ধা ঐসব মানুষের প্রতি। সংসারের দায়গুলো কঁাধে নেন আপনিও। আপনার নারীটিকে একাই আর কত দায়ভার চাপাবেন হে পুরুষ। কিছুকিছু ভাগ বসান তার সঙ্গে। তার হাতে হাত রাখুন। সমানতালে এগিয়ে নেন সংসার সমাজ কাজের ক্ষেত্রটায়ও। তাহলে দেখবেন তরতর করে আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।

নারীকে একার পক্ষে সব সামলানো খুবই কষ্টের। ছোট বাচ্চাটাকে রেখে অফিস যাওয়া কত ভোগান্তির তা কেবল ভুক্তভোগীই জানে। ফিডিং করানোর সময়টায় কি যন্ত্রণায় পাড় হয় মা সন্তানের তা তারাই বুঝে। মাতৃত্বকালীন ছুটিটা খুবই কম হওয়াতে এর দায়ভার পোহাতে হয় নবজাতকসহ মাকে। কমের্ক্ষত্রে ও বাচ্চা রাখার সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি হয়নি এখনো আমাদের দেশে। তাই খুবই করুণ সময় পাড় করে কমর্জীবী নারীরা। মাতৃত্বকালীন ছুটি উন্নত বিশ্বের মতো করলে কাজে আরও এগিয়ে আসত এসব নারীরা। আর নবজাতক সন্তানটাকে সাথে রাখার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে লাভ বৈ ক্ষতি হতো না আমি মনে করি।

অফিস শেষ করে ও অবসর মিলে না মেয়েটির। ঘরে ফিরে বাচ্চার আবদার মেটানো। সারাদিন যা পায়নি তারা, তা পুষিয়ে তুলে আসার পর থেকে। অনেক রাত পযর্ন্ত চলে পুষিয়ে দেয়ার দেনদরবার। সবাই ঘুমোলে তারপর অবসর মিলে তার। দুচোখে শরীরে রাজ্যের ক্লান্তি অবসাদ। পাখি ডাকা ভোরে আবার জেগে উঠতে হবে। আবার দশ আঙুল ব্যস্ততা নিয়ে ছুটবে ঘরে বাইরে। ক্লান্তিহীন অবিরাম এ ছুটে চলা। বাচ্চাদের স্কুলের প্রস্তুতি নিজের প্রস্তুতি স্বামীর প্রস্তুতিতে তার অবদান। তাকে ছাড়া কিছুই চলে না। রসুই ঘরটাও তার জন্য হা করে থাকে। হঁাড়ি পাতিলের টোকাটুকিটা তার হাতের ঈশারায় চলে। থালা-বাটির ঝনঝন আওয়াজ আসবাব পত্রের ধুলোগুলো তার ছেঁায়ার অপেক্ষায় যেন। বসার ঘর শোবার ঘর একচিলতে বারান্দাটাও তার পরশে আলোকিত হয়। সকালে দখিনা জানালায় যে রোদটুকুর মাখামাখি দেখে বের হবার সময়। ফিরতে ফিরতে সেটা উধাও হয়ে যায় দিবসের ক্লান্তি মেখে। কমর্জীবী নারীটির মতো। সেও তার আলোর দোকানপাট বন্ধ করে অন্ধকারকে বুকে ধরে। পাবলিক বাসের নিত্যকার হয়রানি ঠেলে ঠেলে ঘরে ফিরে নারীটি। সমস্ত দিনের ক্লেদ জরাজীণর্ তাকে নিয়ে। আলোর বিচ্ছুরণ হাতে নিয়ে দৌড়ায় আবার আপন আলয়ের প্রতিটি কোণে কোণে। মাতৃস্নেহে স্বামীর ভালোবাসায় আরো হরেক দায়িত্বে কতের্ব্য। ফুরসত মিলে না একটু ও গা টা এলিয়ে দেওয়ার। বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়ার। গোধূলির আলোটাকে দেখার। চুপেচুপে নিভৃতে এসব কাজ করে যাওয়া নারীরা আমাদের সমাজের আলোকবতির্কা। সমাজ পরিবতের্ন দেশের উন্নয়নে তাদের অবদান কোনো অংশেই কম নয়। আপন আলোয় আলোকিত করে পরিবারসহ সমাজ রাষ্ট্রকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<17500 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1