বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বই

নতুনধারা
  ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

সমকালীন ইরানের কবি ও কবিতা

প্রায় ৮০০ বছর আগে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বঙ্গ বিজয়ের পর ধীরে ধীরে এ দেশের শিক্ষিত শ্রেণির জনজীবনে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে। পারস্যের শেখ সাদি, হাফিজ, খৈয়াম, রুমি, আত্তার প্রমুখ কবিরা রচিত কবিতা এ দেশের মানুষের মন ও আত্মাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এ মুগ্ধতা চলে প্রায় ৬০০ বছর। ফারসি হয়ে ওঠে এ অঞ্চলের রাষ্ট্রীয় ভাষা। ইংরেজদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পরও প্রায় ৮০ বছর রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে ফারসি অফিস-আদালতে প্রচলিত ছিল। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা অফিস-আদালতে ইংরেজরা ফারসির পরিবর্তে ইংরেজি ভাষার প্রচলন শুরু করে। ফারসি ভাষার ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেলেও ফারসি সাহিত্যের চর্চা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়নি। পারস্য কবিদের অসামান্য, অতুলনীয় কবিত্বশক্তিই এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ফারসি সাহিত্যের পঠনপাঠন অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়। এ চর্চা আজও অব্যাহত আছে। তবে অনুবাদকর্মের অভাবে আমরা এতদিন সমকালীন ফারসি সাহিত্যের কবিতা, গল্প, উপন্যাস সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা লাভ করতে পারতাম না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগের অধ্যাপক এবং নব্বই দশকের কথাশিল্পী শাকির সবুর ফারসি সাহিত্যের এ তিনটি শাখায় নিবিষ্টচিত্তে কাজ করছেন। তার দায়িত্বশীলচেতনা ও শ্রমনিষ্ঠতার কারণেই আমরা এ তিনটি শাখায় সমকালীন ফারসি সাহিত্যের স্রষ্টা এবং তাদের কর্ম সম্পর্কে আশাতীত ধারণা লাভ করতে পারছি। এ বছর বইমেলায় শোভা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার 'সমকালীন ইরানের কবি ও কবিতা'। ইরানের ৫০ জন বিখ্যাত কবি, যাদের জন্ম ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তাদের প্রত্যেকের জীবন ও কর্মের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি এতে সুনিপুণভাবে বিন্যাসিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়- তাদের প্রত্যেকের একটি করে কবিতা মূল ফারসি থেকে বাংলায় অনুবাদ করে এ বইটিতে সংকলিত হয়েছে। ফলে পাঠকরা সমকালীন ইরানের কবিদের সৃজন-ক্ষমতা সম্পর্কে যেমন জানতে পারবেন, তেমনি তাদের কবিতা পাঠেরও অভূতপূর্ব আনন্দ পাবেন। ৩৩৬ পৃষ্ঠার এ বইটি পাঠকের তৃষ্ণা অনেকাংশেই মেটাতে সক্ষম হবে।

সমকালীন ইরানের কবি ও কবিতা

শাকির সবুর

শোভা প্রকাশ

প্রচ্ছদ : সোহেল হোসেন

মূল্য : ৫০০ টাকা।

\হ

বস্ন্যাক বাট বিউটিফুল

নব্বই দশক থেকেই গল্প-উপন্যাস লিখছেন আরীফ খান স্বাধীন। তিনি জনপ্রিয় রোমান্টিক ঘরানার লেখক। নব্বই দশকের শেষদিকে তার দুটি উপন্যাস পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। তারপর পেশাগত চাপে গল্প-উপন্যাস লেখায় ভাটা পড়ে। এনজিওর পেশা ছেড়ে দিয়ে নিজ গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সমাজে শিক্ষার আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। মাঝখানে গল্প-উপন্যাস রচনায় ছেদ পড়লেও টিভি নাট্য রচনায় তিনি থেমে থাকেননি। তার নাটক বাংলাদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়। এবার বইমেলায়, অনেকদিন পর, জোনাকী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার আরেকটি রোমান্টিক উপন্যাস : বস্ন্যাক বাট বিউটিফুল। কলেজছাত্রী ও শিক্ষকের নিটোল প্রেম কাহিনি। মূলত টিনএজদের জন্য লেখা হলেও এর কাহিনি শুধু প্রেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র কাজল নামের একটি কালো মেয়ে। সে কলেজের শিক্ষক সিয়ামের প্রেমে পড়ে। তার গায়ের রং কালো হলেও জ্ঞানালোক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় শিক্ষক। অত্যন্ত বুদ্ধিমতি, চটপটে, সদালাপী কাজলকে তার ভালো লাগে। তাকে বিয়ে করার প্রস্তাবও দেয় সে। কিন্তু কাজল আমাদের সমাজ ও সমাজের মানুষ সম্পর্কে বেশ সচেতন। সে জানে সমাজে জ্ঞানের কোনো মূল্য নেই। কালো মেয়েরা সব জায়গায় নিগৃহীত। বিয়ের পর যদি সে সিয়ামের ঘরেও নির্যাতিত হয়! এই মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় সিয়ামকে সে যেমন গ্রহণ করতে পারে না, তেমনি ফিরিয়েও দিতে পারে না। ফলে এই প্রেম গড়ায় এক বিয়োগাত্মক বেদনার দিকে। বইটি টিনএজ পাঠকদের মনে নাড়া দেবে বৈকি।

বস্ন্যাক বাট বিউটিফুল

আরীফ খান স্বাধীন

জোনাকী প্রকাশনী

প্রচ্ছদ : চারু পিন্টু

মূল্য ১৮০ টাকা।

বাসনাকাতর মন

'বাসনাকাতর মন' এ সময়ের ব্যতিক্রমধর্মী ও আলোচিক কবি মিতা সালেহ উদদীনের প্রথম উপন্যাস। নারীর জীবন সংগ্রামকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এই উপন্যাসে। পাশাপাশি এসেছে লেখকের ব্যক্তিগত জীবনাভিজ্ঞতা। নায়িকা হাসির স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ এই উপন্যাসের প্রধান অনুষঙ্গ। লেখক হাসির নিঃসঙ্গতাকে বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, 'এক বসন্ত পেরিয়ে নতুন আরেক বসন্ত আসে কিন্তু আগেকার বসন্তের সঙ্গে বর্তমান বসন্তের কোনো মিল খুঁজে পায় না হাসি। কেমন যেন বুকের ভেতর ফাঁপা মনে হয়। মধ্যরাত থেকে ঝমঝম করে আজ অনবরত বৃষ্টি পড়ছে। হাসির মনে হলো এ বৃষ্টি আর থামবে না। গুড়ুম-গুড়ুম মেঘের ডাক, অন্ধকার একাকিত্ব টেনে নিয়ে যাচ্ছে বস্ন্যাক হোলের দিকে।'

হাসি ভালোবেসে বিয়ে করে মনসুরকে। বিয়ে টেকে না। এরপর শুরু হয় হাসির জীবনসংগ্রাম ও টানাপড়েন।

লেখক নিজের কথাও বলেছেন সুন্দরভাবে- 'সময় ও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন ইচ্ছা যোগ হতে থাকে। এই যেমন- গ্রামে সবুজ ছায়াঘেরা একখানা বাড়ি থাকবে, বাগান থাকবে, নদী থাকবে, ফুল থাকবে, মৌমাছি ঘুরবে, পাখিরা উড়বে, পাখির ডাকে প্রভাতে ঘুম ভাঙবে এসব পাখির খুনসুটি দেখব, আঙিনায় স্বাধীন ঘুরবো, হাসনাহেনা, শেফালী ঝরা পাপড়ি ভাসা পানিতে পুকুরে সাঁতরাবো। উত্তরের ধানক্ষেত পাশে নদীর জোয়ারে কচুরিপানা ভেসে যাওয়া। সেই কচুরিপানার ভেতর ডাহুক লুকিয়ে আমার দৃষ্টির সীমানা ছাড়িয়ে যাবে আর সেই সবুজ-সুখ নিয়ে আমি ঘরে ফিরব।' অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন, 'রিং রোডের মধ্যখান দিয়ে রিকশায় যেতে যেতে সারি সারি নতুন পাতা গজানো বাতাসে দোলায়িত গাছের নাচন দেখি। বসন্তের তাজা আমেজ চারদিকে।'

উপন্যাসটি শুরু ও শেষ হয়েছে ভালোবাসা দিবস দিয়ে, মেলায় প্রকাশিত হয়েছে ভালোবাসা দিবসেই। উপন্যাসটি লেখক শেষ করেছেন চমৎকার বর্ণনার মাধ্যমে যেখানে হাসির বেদনা নিঃসঙ্গতা অপ্রাপ্তি ফুঠে উঠেছে- 'বিধ্বস্ত হাসির কানে ছেলের আবদারগুলো কলিংবেলের শব্দের মতো বেজে চলে, ড্রয়িং পেন্সিল হাত থেকে পড়ে যায়, ছেলের দৃষ্টির আড়ালে বারবার হাসি তার ঝাপসা ভেজা চোখ মুছতে থাকে।' লেখকের ভাষাদক্ষতা মুগ্ধ হওয়ার মতো, তার দেখার চোখও ভিন্ন। উপন্যাসটির বহুল প্রচার কামনা করছি।

উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে ছায়াবীথি, প্রচ্ছদশিল্পী- আহমেদ নিলয়, মূল্য-২০০ টাকা। বইমেলায় স্টল নং: ২৮০-৮২

\হ

\হসমীর আহমেদ

অসুখপাখি

জীবনের কোনো সংজ্ঞা আমার জানা নেই। হয়তো জীবনের সংজ্ঞা হয় না। জীবন বিচিত্র বলে তার সংজ্ঞা থাকতেও নেই। প্রতিটি মানুষের কাছে জীবন যেন এক বিস্ময়কর অধ্যায়! কোথাও যেন পড়ছিলাম, পৃথিবীতে সব গল্প লেখা হয়ে গেছে। নতুন যারা গল্প লিখতে আসে তারা ওই সব গল্প ঘষামাজা করে নেয়। জীবনের গভীরে হাতড়ে তারা গল্পে নতুনত্ব নিয়ে আসে। জীবনমুখী গল্পের আরেকটি সংযোজন সোহেল নওরোজের উপন্যাস 'অসুখপাখি'। জীবনের ছোট ছোট ঘটনা-অনুঘটনা নিয়ে লেখক এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে। পরে প্রত্যেক গল্প মিলিত হয়ে উপন্যাসে রূপ নেয়। নব্বইয়ের দশকের গ্রামীণ সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে গল্পের শুরু। নানা বাঁক নিয়ে গল্পের এগিয়ে যাওয়া। গল্পগুলো আমাদের পরিচিত। গল্পগুলো নিত্যদিনের। শাফায়েতের পিতা শামসুদ্দীন গুরুগম্ভীর ব্যক্তি। ভারী কঠিন প্রকৃতির। যার ভয়ে শাফায়েতের মা তটস্থ হয়ে থাকত জীবনভর। এ কঠিন মানুষটার মনেও ভালোবাসার বাস ছিল। তা তিনি বুঝতে দিতেন না চারপাশের মানুষকে। শাফায়েত গল্পের প্রধান চরিত্র। কিশোর থেকে বেড়ে ওঠা যুবক। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়েছে আশপাশের দু-চার গ্রামে যার নামডাক। আয়েশা নামের এক তরুণীর সঙ্গে তার ভাব জমে উঠেছিল। সবকিছু ঠিকঠাক এগোচ্ছিল। কিন্তু অমাবস্যা রাতের মতো তাদের জীবনে একটি দিন এলো। যে দিনে সব স্বপ্ন আর সম্ভাবনারা একসঙ্গে মাটিতে চাপা পড়েছিল। গল্পের অন্য একটি চরিত্রের নাম শহীদ। শ্যামবর্ণের এ মানুষটি দুই-এক গ্রামের মধ্যে স্মার্ট হিসেবে পরিচয় পায়। বাজারে তার ক্যাসেটের দোকান। নতুন ক্যাসেট বের হলে সবার আগে তার দোকানে পাওয়া যায়। এলাকার তরুণীরা দোকানের আশপাশে চক্কর দিয়ে তাকে এক নজর দেখে যায়। এক সময় শহীদ মন্ডলবাড়ির মেয়ে আমেনার জামাই হয়ে আসে। আমেনা এবং শহীদের জীবনে অণুপ্রবেশ ঘটে চুমকি নামের আরেক মেয়ের। বিষণ্নতার গল্প এখান থেকে শুরু হয়। এভাবে কাহিনী এগিয়ে যায়। গল্পের শেষের দিকে এসে দুচোখ আর্দ্র হয়ে ওঠে। সময়ের আকস্মিকতায় জীবন-নাটকের মঞ্চায়নকে হার মানায়। বরং জীবন হয়ে ওঠে নাটকের চেয়ে নাটকীয়।

উপন্যাস : অসুখপাখি

লেখক : সোহেল নওরোজ

প্রচ্ছদ : হিমেল হক

প্রকাশনা : কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড

বইমেলায় স্টল : ৪০৫-৪০৬

আরাফাত হোসেন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<90311 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1