শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মফিজের মোমবাতি জিসান আল যুবাইর

নতুনধারা
  ২৩ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

পাড়ার সবজিওয়ালা মফিজ একদিন একটি মোমবাতি নিয়ে এলো। এসে সবাইকে ডেকে বলল ওটা নাকি তার আলাদিনের চেরাগ। সে ওটা কল্যাণপুরের খালের পাড়ে কুড়িয়ে পেয়েছে। তার কথায় পড়শিরা হাসে। মন্তব্য করে যে মফিজ আসলে একটা গরু। মোমবাতি আবার কী করে আলাদিনের চেরাগ হয়?

মফিজ বলে- কীভাবে হয় সেটা সময় হলেই দেখবেন আপনারা। মফিজ এসবের আর কোনো ব্যাখ্যা দেয় না। মুচকি হেসে চলে যায়। তারপর মফিজকে পাড়ায় খুব একটা দেখা যায় না। তার তরকারির ভ্যানটিও অবহেলায় পড়ে থাকে রাস্তার একপাশে।

ছয় মাস পর মফিজ ফিরে আসে পাড়ায়। সাদা রঙের জিপে করে। চোখে কালো রঙের রোদচশমা। সে তার ভাঙা-চোরা ঘরটিকে চোখের পলকেই ৬ তলা বাড়ি বানিয়ে ফেলে। কিন্তু মফিজ কীভাবে এসব করল? পড়শিদের প্রশ্ন। ফিসফিসানি।

আসলেই মফিজের ভাগ্যে মোমবাতির কেরামতি রয়েছে কিনা তা তারা জানতে পারে না। এখন সবজি মফিজ মিস্টার মফিজ। তার কাছে কেউ ঘেঁষতেই পারে না। তার বাড়ির মূল দরজা সবার জন্যই বন্ধ থাকে। এরপর সবাই সবকিছু ভুলে গেছে। মফিজের কেরামতি নিয়ে সবাই মনে মনে অনেক কথা ভাবলেও এ নিয়ে আর কেউ আলাপজুড়ে দেয় না। নিজেদের ভাগ্যকে মন্দভাগ্যের তকমা দিয়ে চুপ হয়ে যায়। দু'একজন কল্যাণপুরের সেই খাল পাড়ে গিয়ে মোমবাতি খোঁজে। যদি পেয়ে যায় ভাগ্য চাবিটা। খালটাও এখন নর্দমাপূর্ণ হয়ে গেছে। পুরনো কোনো চেরাগ বা মোমবাতি মিললেও মিলতে পারে। সম্ভাবনা আগের চেয়ে বেশি।

এভাবে চলে যায় দুই মাস। এক রাতে পাড়ার সব মানুষের ঘুম ভেঙে যায়। কুকুরের তীব্র চিৎকার পাড়াটা অতিষ্ঠ করে তোলে। সারারাত একটি কুকুর চিৎকার করেই চলে- ঘেঁউ ঘেঁউ.. ঘেঁ..উ...। সবাই ঘরের ভেতর থেকে গালাগাল করে কুকুরটিকে। কিন্তু কেউই বিছানা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে না। ঘুমাতে না পারার জন্য তাদের মনে অনেক বিরক্তি। কিন্তু সকাল যখন হলো তারা রাতের সব কিছু ভুলে গেল।

পরের রাতে একই ঘটনা। আবারও কুকুর বিলাপ করে ওঠে ঘেঁউ.... ঘেঁউ...। এবার পাড়ার লোকদের সহ্যের বাঁধ ভেঙে যায়। আর ছাড় নয়। এবার তারা বিছানা ছেড়ে উঠে আসে। কিন্তু রাস্তায় কোনো কুকুর দেখতে পায় না। তবে তারা যা দেখে তাতে তাদের চোখ চড়কগাছ হয়ে যায়।

মফিজের বাড়ির গেটের ভেতর একটি কুকুর এই সব চিৎকারকান্ড করছে রোজ। কুকুরটি স্টিলের গেট ভেঙে বেরিয়ে আসতে চায়, কিন্তু পারে না। চিৎকার করে। পাড়ার লোক মফিজকে ডাকে। কিন্তু মফিজ বাইরে আসে না। আসবে কী করে। মফিজের শোবার ঘর শব্দনিরোধক কম্বল দিয়ে ঢাকা। ভেতরটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সে কিছুই শুনতে পায় না। তার ঘর বেহেশতের মতো সুরক্ষিত। পাড়ার মানুষ ফিরে যায়।

পরেরদিনও একই ঘটনা। মফিজের এসব কান্ডে সবাই অতিষ্ঠ। কিন্তু কারও কিছু করার নেই। তখন পাড়ার দুষ্ট ছেলে রাঞ্জিব ও হাবিল মফিজের বাড়ির দেয়াল টপকে ভেতরে যায়। তার জানালা ভেঙে ভেতরে শব্দ পাঠায়। বেরিয়ে আসে মফিজ। লোকদের অভিযোগ শোনার পর চোখ ডলতে ডলতে আর হাই তুলতে তুলতে সে যা বলে তা শুনে সবাই হতাশ হয়। তার কথা 'আমার বাড়ির কুকুর আমার বাড়িতে ডাকে। তাতে কার কি। এ কুকুর আমি দেড় লাখে কিনেছি। আমি কাউরে পরোয়া করি না। আমি এখন মফিজ না। মিস্টার মফিজ'। সে ভেতরে ঢুকে পড়ে।

এরপর বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে যায়। মফিজ তার জানালা মেরামত করে নেয়। আবার নাক ডেকে ঘুমায়। থানা পুলিশ হয়। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। পুলিশও মফিজের যুক্তির পক্ষে মাথা নাড়ে। কারণ মফিজের কাছে একটি মোমবাতি আছে। যা তার আলাদিনের চেরাগ। এটি দিয়ে সে এহেন কাজ নেই করতে পারে না।

মফিজের বাড়ি নিয়ে রাঞ্জিব দুষ্টু পরিকল্পনা করে। সে এবং তার বন্ধু মফিজের বাড়ির চারপাশ খুঁড়ে বাড়িটিকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করে। যেমন করে গাছ স্থানান্তর করা হয়। এ কাজ অত সোজাও নয়। তারা সুদূরচীন দেশ থেকে কারিগর আনে। খরচ জোগান দিতে আন্তর্জাতিকভাবে 'ফান্ড রেইজিং ফর ডগ' নামে ক্যাম্পেইন চালায়। বেশ টাকাপয়সা ওঠে। যথারীতি বাড়ি খুঁড়ে ফেলা হয় এবং বাড়িটি মিরপুরের এক জঙ্গলে রেখে আসা হয়।

পরদিন সকালে মফিজ ঘুম থেকে জেগে ওঠে। প্রথমেই মোমবাতি দর্শন করে। তারপর পুজো করে তার। তারও পর জানালার পর্দাখুলে দেখে বাইরে বেশ রোদ। গাছের ডাল বেয়ে আসছে রোদ। সে জানালা খোলে। হাতির ডাক শোনে। পাখির ডাক শোনে। কুকুরের ডাক শোনে। আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় দিন মফিজ ঘুম থেকে যখন জাগে। তখন তার পিঠ ভেজা। চোখ খুলে দেখে সে এবং তার কুকুরটি পানিতে ভাসছে। কুকুরটির মুখে আলাদিনের চেরাগখ্যাত মোমবাতি। তারা তখন তুরাগ নদীর বুকে একটি বাঁশের ভেলায়। একপাশে লোকেরা হাসছে।

এভাবে দিন পেরিয়ে যায়। শত মফিজের আনাগোনা চলে। শত কুকুর সড়কে হাটে। সড়কে ঘুমায়। কিন্তু মফিজের কথা কেউ জিজ্ঞেস করে না।

মফিজের শেষমেশ কী হলো তা কেউ জানে না। মফিজের কুকুরটিকে মাঝেমাঝে আশুলিয়ার ময়লার স্তূপে খাবার খুঁজতে দেখা যায়। সম্ভবত তার মুখ থেকে সেই জাদুর চেরাগখ্যাত মোমবাতিটি কোথাও পড়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63437 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1