মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

জলে জ্বলে ওঠে আগুন

স্বপ্না রেজা
  ২৭ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

কাকও বোধহয় অত সকালে ঘুম থেকে ওঠে না, রানীকে যত সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠতে হয়। আকাশে সূযর্ চোখ মেলে না অত সকালে। দরকার নেই তার অত সকালে ঘুম ভাঙার। রানী চোখের পাতা টেনেটুনে খোলে। বাদ সাধে শরীর। ভঁাজ খুলতে চায় না সহজে। মূলত চাইলেও পারে না। স্বামী আরমানের লোমশ হাত ওজন হয়ে পড়ে থাকে শরীরের ওপর। একেবারেই আষ্টেপিষ্টে। সহজে নিজেকে ছারিয়ে নেবার উপায় নেই। মাঝেসাঝে আহ্লাদে নেতিয়ে থাকা পুরুষটার সকালবেলার এইরকম আচরণ মন্দ লাগে না রানীর। পুতুলের মতোন পড়ে থাকে। এই পড়ে থাকা বেশি সময়ের নয় যদিও। বিছানা ছাড়তে হয় সব ছেড়েছুড়ে। কাজে যেতে হবে সময়মতোন।

বস্তির কমন বাথরুমে লাইন ধরার বিষয় আছে। রানীর মতোন নারীদের গোসল সারতে হয় পুরুষদের জেগে উঠবার আগেই। কিছু পুরুষ জেগে ওঠে তার আগেই। তারা শরিক হন কলপাড় কিংবা বাথরুমে প্রবেশপথে নারীদের সঙ্গে। গায়ে গা লাগিয়ে দঁাড়িয়ে যাবার মতোন। সদ্য বিছানা ছেড়ে ওঠা ও গোসল সমাপ্ত নারীদের শরীর দেখবার বিষয় আছে। রসিকতায় পরিবেশ হয়ে ওঠে মুক্তিপ্রাপ্ত সস্তা চলচিত্রের মতোন। এরা নিয়মিত আসর জমায়। কোনো কোনো নারী শরিক হন। কেউবা বিরক্ত। রানী বিরক্তের দলে।

কল্যাণপুর বস্তির একটি ঘরের ভাড়া সাড়ে তিন হাজার টাকা। টিনশেড হওয়ায় অন্যান্য ঘরের ভাড়ার চাইতে একটু বেশি। বস্তিতেও স্ট্যাটাসের দৌড়ঝঁাপ আছে। ঘরের মালিকরা সেই ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আয়ের ওপর ভিত্তি করে ভাড়াটিয়া ভাড়া নিতে পারবেন। এসব ঘরের কোনো বৈধ মালিক নেই। দখলদারই মালিক। সরকারি খাস জমি এটা। স্থানীয় মাস্তান, প্রভাবশালী আর প্রশাসনের কিছু অসৎ লোক মালিক বনে আছেন বছরের পর বছর। ক্ষমতাসীন রাজনীতির ছায়াও পড়ে বিভিন্ন সময়ে।

স্বামী আরমান কাঠমিস্ত্রি। দেরি করে যায় কাজে। কটায় বের হয়, সেই সময় জানে না রানী। রানী তখন বাসাবাড়িতে কাজে ব্যস্ত থাকে। চার বাড়িতে ছুটার কাম। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পযর্ন্ত। দশ হাজার টাকা মাস শেষে হাতে আসে। দুই হাজার নিজের পানসুপারি খাবার জন্য রেখে বাকি টাকা আরমানের হাতে দেয়। স্বামীর হাতে টাকা তুলে দেবার এই অপেক্ষা মাসজুড়ে থাকে রানীর। আর আরমান অপেক্ষায় থাকে টাকাটা হাতে পাবার। ঘর ভাড়া আর খাবারের খরচ হয়ে যায় এই টাকায়। আরমান শোনায়, তার আয়ের টাকা ব্যাংকে জমায়। এই টাকা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে জায়গা কিনে ঘর তুলবে। এক সময় গ্রামে চলে যাবে তারা। পরিষ্কার আলো, বাতাসে জীবনযাপন করবে। ভালোবাসাবাসি হবে নিখাদ আর সতেজ। স্বপ্ন রানীর ভেতর ঠঁাই নেয়।

বস্তির মুরব্বি হিসেবে পরিচিত সুলতান মোল্লা রানীর প্রায় গায়েপড়ে বলেন,

প্রতিদিন সকালে বিছানা ছাড়ো ক্যারে! স্বামীর সোহাগ নাই? সোহাগ ফুরায় গেছে নাকি রে! চোখ নয়, সুলতান মোল্লার বত্রিশ দঁাত দেখছে।

রানীর শরীর রি রি করে ওঠে। মাথায় টুপি, পরনে পাঞ্জাবি, লুঙ্গি মুরব্বি গোচরের লোকটা অযু করতে এসেছেন। ফজরের আযান আরও সকালে হয়েছে। রানী ক্ষিপ্তস্বরে বলে, অযু শেষ? আপনার অযু নষ্ট হয় না? এমন কথা কইতে সাত সকালে কলপাড়ে মুখ থুবড়ায়ে থাকেন, না?

ওয়াস্তাক ফেরুল্লাহ্! কীয়ের সাথে কী কথা! মাইয়াগুলান জ্ঞানবৃদ্ধি নাই! বেসরম কোথানকার! উপস্থিত কেউ কেউ মজা পায় ব্যাপারটায়। কেউবা রানীর সাথে একমত পোষণ করেন। যারা রানীর সাথে একমত পোষণ করেন, তারা সকলে নারী। তবে একজন পুরুষ আছেন, সবুজ। সে প্রতিবাদী পুরুষ। তার প্রতিবাদ, একই বস্তির মাইয়াদের প্রতি সম্মান নিয়া কথা কওনের জ্ঞান নাই ক্যান চাচা? নামাজ কী এইখানেই পড়তেন নাকি? মনে হলো সুলতান মোল্লার শরীরে কেউ গরম পানি ঢেলে দিল।

উফ! ওই তোর কী হইলো! দল মারতাছোস, না! তোর লাগে ক্যারে? হের তো মরদ আছে!

সবুজ রানীর পাশে এসে দঁাড়ায়। রানীর হাত ধরে। রানী কিছুটা বিচলিত। এভাবে সবুজ সকলের সামনে হাত ধরবে, তা যেন কল্পনাতীত। সম্পকর্টা এমনও নয়। সহজে হাত ছারিয়ে নেয়া সহজ হলো না।

এমন অনেক রানীর পাশে আমার মতোন সবুজরা খাড়াইয়া আছে। থাকব। কোনো রকম জুলুম মাইয়াদের ওপর হইতে দিব না। বুঝলা? আকাশ চৌচির করে হেসে ওঠেন সুলতান মোল্লা।

ওরে বেসরম ছ্যাড়া! তোরে তো পাবলিক দেখলো, তুই কতটা খারাপ! তুই পরস্ত্রীর গায়ে হাত দিছোস!

অঐ মুক সামলাইয়া কথা কন! আমি হাত ধরছি। গায়ে হাত দেই নাই, সুলতান মোল্লা!

ঐডা কম কীসের রে ছ্যাড়া!

হ। অনেক কিছু। তয় দরদের। তোরে দেখাইলাম, রানীর পাশে রানীর ভাই আছে। ভালা কইরা দইখ্যা ল! আপনি থেকে তুই সম্বোধনে পেঁৗছে গেছে সবুজ। রানী আর কালবিলম্ব করে না। ফেরার সময় পেছন থকে গুঞ্জনও চলে তার সাথে কিছুটা পথ।

আরমান তখনো ঘুম। ওর জন্য বাসি খাবার রেখে নিজের কাজে পা বাড়ায়। এক বাসায় সকালের নাস্তা বানানো, ঘর ঝার দেয়া, মোছা, কাপড়-চোপড় ধোয়ার কাজ। তারপর অন্য তিন বাসার নিধাির্রত কাজ। একটুও ফুরসত হয় না বিশ্রামের। প্রথম বাসায় নাস্তা দেয়। দ্বিতীয় বাসায় দুপুরের খাবার জোটে। আর তৃতীয় ও চতুথর্ বাসায় যে খাবার দেয়, তা পোটলা করে বেঁধে আনে ঘরে। আরমান ও সে, দু’জনে মিলে খায়। এই খাবারের থেকে যাওয়া অবশিষ্ট অংশ সকালে আরমান খায়। ছুটির দিন ছাড়া বলতে গেলে এই ঘরের রান্নাবান্না নেই। চার বছরের সংসার। বাচ্চাকাচ্চার স্বপ্ন রানীর থাকলেও, ফুতির্র হিসাব কষে আপত্তি জানিয়েছে আরমান। চেয়েছে, আরও কটা দিন ফুতিের্ত যাক। যেতে দেয় দিন রানী।

প্রথম বাসার গৃহকত্রীর্ সালমা বেশ ভালোবাসেন রানীকে। রানীর প্রয়োজন, অপ্রয়োজনের গল্প শোনেন সুযোগ পেলে। সালমা চাকরিজীবী। বিশ্বাস অজর্ন করায় সালমা একসেট ঘরের চাবি রেখে যান রানীর কাছে। শুধু সালমা নন, এই বাসার সবাইকে রানীকে যথেষ্ট কদর করে। প্রথমবাসার কাজ শেষ করে দ্বিতীয় বাসায় যেতেই আরমানের ফোন।

কখন আইতি?

অহন তো কেবল দ্বিতীয় কামে পা ফালাইলাম। আইলাম মাত্র। কীয়ের এত্ত জরুরি? খেঁাজ করো ক্যান? কী হইছে?

কিছু ট্যাহা লাগতো।

ওমা! কই পাইতাম? তুমারে তো সব দিয়া ফালাই!

পান খাইতে যা রাখোস, তাতে নাই? জমাইলে কী হয়? কিছু রাখতো পারোস।

না। আমার বুঝি লাগবার পারে না।

আচ্ছা ফোন রাইখা দে। কাম কর। হঠাৎ করে আরমানের টাকা দরকারের কী আছে, মনে উঁকি দেয়। পুরুষ মানুষ, বেশি জানতে চাইলে রাগ করে। রানীর টাকার কী হয়, সেই খবরও নেবার উপায় নেই।

শেষ বাসার একমাত্র মেয়েকে আজ ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছে। সারা বাসাজুড়ে বিরিয়ানীর গন্ধ। ঘরদোড় বেশ সাজানো গোছানো। মেয়ে পালার্র থেকে সেজে এসেছে। সাথে একদল বান্ধবী। প্রেমের পছন্দ। তারপরও দেখতে আসা। সামাজিক রীতি। মেয়ের ব্যবসায়ী বাবার অঢেল সম্পত্তি। একমাত্র মেয়ের বিয়ের অনেক কটা পবর্ রেখেছে। আংটি পরানো অনুষ্ঠানটিও বেশ বড়। মেয়ে পক্ষের তালিকাভুক্ত আত্মীয়স্বজন চলে এসেছে। ছেলের পক্ষের দেখা নেই। মেয়ে বেশ ক’বার কথা বলেছে ছেলের সঙ্গে। বেশ রাগতস্বরে, ঝাড়ি মেরে কথা বলা। বাসার সবার কানে তা পেঁৗছেছে। রানীর মনে হয় আজকাল বেবাক মাইয়ারা এমনই। রাত হেলে পড়তে দেখে আরমানের কথা মনে হলো। ঘরের টান এভাবে বোধহয় প্রখর হয় একটা সময়ে। রানী বাসায় খাবার নিলে আরমান ভাত পায় খেতে। স্বামী খেতে পাবার মধ্যেই যেন তার সুখ। আরমানের মোবাইল বন্ধ। এই সময় বন্ধ থাকে না সাধারণত। রানী বাসায় ফিরলে আরমান মোবাইল সুইস অফ করে দেয়। বেশ বুঝায়, ঘরে ফিরে সে আর কারোর সঙ্গে কথা বলতে চায় না, শুধু রানী ছাড়া। মুকুট নেই রানীর মাথায়, আছে স্বামীর সোহাগ। হয়তো কোথাও আড্ডা দিচ্ছে মোবাইল সুইস অফ করে।

ছেলের পক্ষ বেশ রাত করল। যুক্তি একটাই, রাস্তায় জ্যাম। মানতে নারাজ কনে। সকলের সামনে কৈফিয়ত চেয়ে বসে। অপ্রস্তুত ছেলে। তারচাইতেও বেশি তার পক্ষ। পক্ষে আছেন ছেলের বাবা, মা, ভাই, বোন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব।

এ কেমন মেয়েরে, বাবা! একজন বয়স্ক আত্মীয়ের মুখ ফসকে বের হলো। সেকেলে স্বভাবের। রেহাই পেলেন না। খপ করে ধরে ফেলে মেয়ে।

বাবা নয়, আমার কাছে আমার খবর জানতে চান।

মেয়ের মা অশনি সংকেত পেলেন। মেয়েকে টানতে টানতে অন্যত্র সরিয়ে নেন। চাপা স্বরে বলেন, বয়স্করা প্রেমট্রেম বুঝে না।

ওমা! বুড়োকে আবার কে প্রেম শেখাতে গেল!

আহ্! চুপ!

সমস্যা কী তোমার, মা? রানী অনেকদিন ধরে এই বাসায় কাজ করে। মা ও মেয়ের বিবাদের গিট খুলতে এগিয়ে এলো।

আপুমনি, সম্বন্ধের সময় অনেক নিয়মকানুন মানতে হয়। আমাগো গেরাম দ্যাশে মাইয়ারা কথা কয় না। চুপ কইরা থাকোন লাগে। আপনে যান জায়গায় বইয়া থাকেন। একটু এদিক-ওদিক হইলে সম্বন্ধ ভাঙাইয়া যায়। রানীর কথায় কী বুঝলো কে জানে। তবে সে চুপ হয়ে নিজের জায়গায় গিয়ে বসে।

আংটি পরিয়ে ছেলেরা একটু বেশ রাত করে ফিরল। লাইটপোস্টের নিচে রাস্তার কুকুর কয়েটা শরীর বিছিয়ে দিয়েছে ততক্ষণে। প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার নেয় রানী, আজ তা থেকে তিনগুণ খাবার বেঁধে নিলো। বিবিসাহেব খুশি হয়ে দিয়েছেন।

বস্তির মানুষগুলো ঝিমুতে শুরু করেছে। অন্যদিন দেরি হলে আরমান হেঁটে গিয়ে নিয়ে আসে। আজ কোনোভাবেই মানুষটার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ঘরের দরজার কাছে এসে বুকটা ধক করে উঠল রানীর। ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা দেয়া। আরমান ফেরেনি। এত রাত সে করে না। রানীর আগে ফেরে। নিজের কাছে রাখা আরেক সেট চাবি দিয়ে দরজা খোলে। ঘরের ভেতর খাবারের বাটি রেখে বের হয়। ঘনবসতি হওয়ায় ঘরের ভেতর থেকে ফিসফাস কথা বাতির আলোর সাথে চিকন হয়ে বেরিয়ে আসে। কোথাও চাপা কান্না। কোথাও সুনসান নীরবতা। বস্তির প্রবেশমুখে লম্বা হয়ে দঁাড়িয়ে আছে বেশ কটা মুদিও দোকান। একটা ছাপড়ার হোটেল। রানী উকিঝুঁকি মেরে এলো। কোথাও আরমান নামের মানুষটার ছায়া পাওয়া গেল না। এত রাতে রানীকে এভাবে ঘুরাঘুরি করতে দেখে মুদির দোকানে আড্ডায় মাতা সবুজ জানতে চাইল, কী ব্যাপার রানী, কারে খেঁাজ?

লোকটা গেলো কই!

রানীর বিস্ময় উৎকণ্ঠামিশ্র। জীবনে এমন পরিস্থিতি অনেক অপরিচিত।

আরমানেরে খুঁজতাছো?

হ।

আইয়া পড়ব। ভাইবো না। গেছে হয়তো কুনোখানে। কাম ছাড়া তো তার অন্যকিছু নাই। ভালা মানুষ। তুমি ঘরে যাও। আমার লগে দেখা হইলে কমুনে ঘরে ফিরতে তাড়াতাড়ি। সবুজের কথায় ক্ষীণ আশা।

স্বল্প আয়ের পেশাজীবীদের নানান টানপোড়নের ক্লান্তির গল্পের ভেতরও থাকে সুখখেলা। খেলার হারজিত নিয়ে ঘুম ভাঙে পুরো বস্তির। শুধু নেশাগ্রস্তদের ঘোর কাটতে সময় নেয়। সারারাত দরজা খোলার শব্দের অপেক্ষায় কেটেছে রানীর। মোবাইলও বেজে ওঠেনি তার। তার কলও পেঁৗছেনি আরমানের মোবাইলে। আগের দিনের একটু বেশি খাটুনি শরীরের প্রতিভঁাজে বেশ ছিল। টনটনে ব্যথা দু’পায়ে। সব কষ্ট আরমানের পথ চেয়ে ফিকে হয়েছে। মনের কাছে শরীরের ওজন কমে যাবার সূত্রটা বেশ কাযর্কর হয়ে উঠেছে।

আজ ভোর আর কলপাড়ে নিলো না রানীকে। তাড়া নেই কাজে যাবার। আরমানের অনুপস্থিতি পায়ে বেড়ি পরিয়েছে। রানী এদিকওদিক হঁাটাহঁাটি করে, খেঁাজে আরমানকে। পরিচিতজনদের কাছে সন্ধান করে। নেই খবর। কোথায় উধাও হলো লোকটা, মনে প্রশ্নটা যতই জাগছে, ততই অজানা আশঙ্কার শত কাহিনী রচিত হচ্ছে। কিছু হয়নি তো মানুষটার। আজকাল কতকিছুই না ঘটে। সবুজ মনে রেখে সকালে ছুটে এসেছে।

আইছে?

না।

কও কী, কই গেলো!

হেইডা ভাবতাছি।

তোমার লগে ফোনে কোনো কথা হয় নাই?

শেষ কথা কইছিল টাকা লাগব।

কও কী! টাকার কী কাম, জিগাইছিলা? রানী উত্তর করতে পারে না। চোখ ভিজে ওঠে। আর একটু পর ঝরতে শুরু করবে। শরীর কেঁপে কেঁপে উঠবার মতোন প্রায়। সবুজ ভাবনার সাগরে ডুব দিল। তীরে উঠে বলল,

চলো। কোথায়, এমন প্রশ্ন করলো না। বরং আরমানকে খুঁজে পেতে রানী, সবুজকে অনুসরণ করে। বস্তি থেকে বের হয়ে সবুজ একটা রিকশায় চেপে বসে রানীকে আহŸান করে চড়ে বসতে। দ্বিধা, সংকোচ নেই রানীর। উপরন্তু বড় আপন মনে হয় সবুজকে।

নাস্তা খাইছো? কী করে খাবে এমন অবস্থায় রানী, এটা সবুজ নিশ্চয়ই বুঝে নেবে। সবুজ রিকশাচালককে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইমাজেির্ন্সর দিকে যেতে বলে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের গেট পযর্ন্ত একটা শব্দও ওদের মধ্যে বিনিময় হলো না। মেডিকেলে নেমে সবুজ ইমাজেির্ন্সর ভেতর হন্ন হয়ে ঢোকে। রানী বাইরে দঁাড়িয়ে থাকে। কতশত রোগী, দুঘর্টনায় আহত হয়ে ঢুকছে ভেতর। কারোর তীব্র শারীরিক অসুস্থতা। সুস্থ হবার, বঁাচবার আকুল কাকুতি, মিনতি ধ্বনি-প্রতিধ্বনি হয় অবিরত।

আসলেন? অপরিচিত এক মধ্যবয়স্ক লোক জানতে চাইলেন। রানী চিনতে পারে না। প্রশ্নের কারণও অজানা। লোকটি স্বাভাবিক। ভাব এমন, অনেক পরিচিত।

আসুন আমার সাথে। লোকটির দ্বিতীয় কথায় ভড়কে গেল। কোথায় যাবে রানী লোকটির সাথে। লোকটি কী রানীকে চেনে কিংবা আরমানের খেঁাজ দিতে চায় সে রানীকে। প্রশ্নের ঘুরপাকে পড়ে যায় রানী।

আপনে হের খবর জানেন?

সব মানুষের খবর জানি। কত টাকা আছে সাথে? টাকার উত্তর তৎক্ষণাৎ দেয়া সম্ভব হলো না। কারণ, টাকা নেই। রিকশা ভাড়া মিটিয়েছে সবুজ। লোকটি বেশ বুঝে নিলো।

সমস্যা নেই। টাকা কাজ শেষে দিলেই হবে। আসুন! মাথা স্থির থাকলেও, পা দুটো যেন লোকটিকে অনুসরণ করতে নড়ে উঠলো। কিন্তু এগুলো না। সবুজ বের হয়ে আসে মেডিকেলের ভেতর থেকে।

ভেতরে আছে আরমান? সবুজ মাথা নাড়ে।

মগের্র প্রতিটা লাশের চেহারা দেখলাম, নাই। নাই শুনতে ভালো লাগে রানীর। অন্তত এই মৃত্যুর সারিতে আরমান নাই। চিন্তিত সবুজ। রানীর মনে হলো অপরিচিত মানুষটির কথা। না, আশপাশ কোথাও নেই। গেলো কোথায়। রানীর অস্থিরতা সবুজ খেয়াল করে।

কাউরে খুঁজতাছো?

একজন লোক বলছিল...

কী?

সে সব খবর জানে।

কী কও! তারে চেনো?

না।

দু’জন মিলে খেঁাজে অপরিচিত সেই মানুষটাকে। চেঁচামেচি, আতির্চৎকার সব কোলাহলের ভেতর তন্ন তন্ন হয়ে খেঁাজে। নিমিষেই উধাও।

শালা হয়তো দালাল। লও যাই।

সবুজ রানীকে নিয়ে চাংখারপুলের একটি ছাপড়ার হোটেলে ঢোকে। সময়টা দুপুরের দুয়ারে কড়া নেড়েছে সবে। ভাত, ডাল আর সবজি অডার্র হয়। রানী ফোনে চারবাসার বিবিসাহেবদের জানিয়ে দেয়, তার স্বামী নিখেঁাজ। সকলেই আহত হন সংবাদে। গৃহকত্রীর্ সালমা বেশি মমার্হত। বললেন, থানায় একটা সাধারণ ডায়েরি করে রাখতে।

থানার সাব-ইন্সপেক্টর বেশ কৌত‚হল নিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি লিখলেন। রানী আর সবুজের মধ্যকার সম্পকর্ ওলটপালট করে কিছু খুঁজবার চেষ্টা করলেন। পেলেনও কিছু নিজের মতোন করে। কাহিনী বানানো এমন আর কী। বত্রিশ দঁাত বের করে কনেস্টেবলকে ডেকে বললেন, এই ব্যাটারে হাজতখানায় ভর। রানী, এই প্রথম সবুজের হাত চেপে ধরে। নাতিশীতোষ্ণ উষ্ণতা শরীর জুড়ে। সাব-ইন্সপেক্টরের এমন সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ রানী।

কী কন! হের কী দুষ!

বেশি কথা বললে আপনাকেও ভরে রাখব! তদন্ত না হওয়া পযর্ন্ত আটক থাকতে হবে। আমাদের দায়িত্ব নিখেঁাজ ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া। ককর্শ কণ্ঠস্বর সাব-ইন্সপেক্টরের। সবুজকে জেরার জন্য থানায় রেখে দেয়।

ঘরে ফেরে রানী। তুমুল ঝড় বয়ে গেছে ঘরে। জিনিসপত্র লÐভÐ। পাশের ঘরের ছোট্ট মেয়ে বলল, আরমান এসেছিল। সাথে বউয়ের মতোন দেখতে একজন মেয়ে। রানী হতভম্ব। নিশ্চল ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<5225 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1