বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বইমেলা

লেখকদের মতামত

আশরাফ আহমেদ
  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
হাসনাত আবদুল হাই

কবিতার বই বেশি প্রকাশ পেয়েছে

হাসনাত আবদুল হাই, কথাসাহিত্যিক

এ বছর আমার দুটো উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। ‘একল’ এই উপন্যাসটি গত বছর প্রথম আলোর ঈদ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। আমার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘ফেসবুকে কয়েকদিন’ । ফেসবুকে ঢোকার প্রথম তিন মাসের যে অভিজ্ঞতা তা নিয়ে এই উপন্যাস। এই উপন্যাসটি গত বছর অন্যদিনের ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। দুটো উপন্যাসই প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। একটি গল্প সংকলন ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’। পুরাতন ও নতুন গল্প নিয়ে এই সংকলনটি, এটিও প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। ‘শিল্পকলার নন্দনতত্ত¡’ নিয়ে ৫৫০ পৃষ্ঠার একটি বই। যা কেবল শিল্পকলার ইতিহাস নয়, এটা বাস্তবতা আবেগ ও চিন্তার প্রকাশ। বাস্তবের প্রতিফলন। এই বইয়ের ২-৩টি প্রবন্ধ বেঙ্গলের ‘শিল্প ও শিল্পী’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। এই বইয়ে ১১০টির মতো ছবি রয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে শুরু করে ডিজিটাল আটর্ সব ধরনের ছবিই রয়েছে। এই বইটিও প্রকাশ করছে আগামী প্রকাশনী।

জাপানি হাইকুর আদলে লিখিত তিন পঙ্ক্তির হাইকু লিখেছি। বইয়ের নাম ‘ষড়ঋতুর হাইকু’। ইংরেজিতে ‘হাইকু অন সিক্স সিজন।’ একই পৃষ্ঠায় উপরে বাংলা নিচে ইংরেজি হাইকু স্থান পেয়েছে। এটি প্রকাশ করেছে পাঠক সমাবেশ।

এ ছাড়া গত ৫-৬ মাস ধরে ফেসবুকে কাব্যধমীর্ কিছু লিখেছি। এটা গদ্যও হতে পারে, হতে পারে পদ্যও। নাম দিয়েছি ‘পুলিশ এলে বলবো আইডি নেই, কবিতার বই দুটো ছাড়া’। এটিও প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। এর আগে আগামী প্রকাশনী আমার রচনাসমগ্র প্রথম ও দ্বিতীয় খÐ আগে প্রকাশ করেছে। এবার প্রকাশ করেছে তৃতীয় ও চতুথর্ খÐ।

মেলায় এখনো যাইনি। শুধু একদিন যাবো ‘শিল্পকলার নন্দনতত্ত¡’ বইটি যেদিন আসবে। শুনেছি এবার মেলার আয়োজন ভালো, আকার আরও বেড়েছে। অন্যান্য বইয়ের চেয়ে কবিতার বই বেশি এসেছে। তবে বাংলা একাডেমি প্রতিদিন যে আলোচনা সভার আয়োজন করে, সেখানে বেশির ভাগই একাডেমির সাবেক মহাপরিচালকরাই সভাপতিত্ব করছেন। প্রতিষ্ঠিত লেখক-সাহিত্যিক খুবই কম সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠছে। তা ছাড়া বইমেলাকে বাংলা একাডেমি ঠিকমতো প্রমোট করতে পারছে না। বাংলা একাডেমির উচিত প্রতিদিনের বইয়ের তালিকা পত্রিকা অফিসে পাঠানো।

বইমেলা ও বইমেলার মানুষ

রেজাউদ্দিন স্টালিন, কবি ও উপস্থাপক

একুশের কাযর্ক্রম এখন কি শুধু বইমেলা কেন্দ্রিক এমন একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে ইদানীং। মাতৃভাষার জন্য এক ধারাবাহিক সংগ্রামের শিল্পরূপ একুশে ফেব্রæয়ারি। যে সংগ্রাম থাকবে এখনো শেষ হয়নি। যতদিন বাংলাভাষা থাকবে বাঙালি থাকবে ততদিন সংগ্রাম। মাতৃভাষার মযার্দা ও সমৃদ্ধির জন্য বইমেলার পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের প্রতি মনোযোগ দেয়ার সময় এসেছে। মিডিয়া, সাইন বোডর্, প্রযুক্তি মাধ্যম, দাপ্তরিক নথিপত্র, অভ্যন্তরীণ পত্রযোগাযোগ, পাঠ্যপুস্তক সিলেবাস, দলিল দস্তাবেজ, গবেষণা, পরিসংখ্যান পুস্তক, বিদ্যাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব জায়গাতেই বাংলা ব্যবহার শুদ্ধ ও সঠিকভাবে করতে হবে। আমি প্রতিবছর বইমেলায় যাই এবং আমার বই বের হয়। কিন্তু অধিকাংশ বই ভুল বানানো ছাপা খারাপ বঁাধাই নি¤œমানের প্রচ্ছদচিত্র। অসংখ্য কবিতার বই কিন্তু সম্পাদিত। এখন প্রশ্ন বই কারা কিনছে। কেউ না এরকম কথা সচরাচর শুনি। তাহলে বই বেরুচ্ছে কেন? একটাই উত্তর লেখক কবি প্রকাশক তারা মাতৃভাষা ও তার স্বদেশকে ভালোবাসে। শত প্রতিক‚লতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এবারের বইমেলা নান্দনিক। লেখকদের প্রতি, কবিদের প্রতি আলাদা গুরুত্ব। অনেক আগে থেকেই মেলার জন্য কাজ করতে থাকে বাংলা একাডেমি ও প্রকাশক। প্রত্যাশা মেলা বড় হবে বইয়ের বিক্রি বাড়বে। এই আশা কবি ও লেখকদরও। আজ প্রায় চল্লিশ বছর বইমেলায় যাচ্ছি। বই প্রকাশ পাচ্ছে এ যেন একটা প্রথা, একটা রেওয়াজ। এবার মেলায় আমার ‘রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা সংগ্রহ-১ প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী প্রকাশনী। প্রচ্ছদ রাজিব দত্ত। মূল্য ২৭০ টাকা। কবি প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে কবিতার বই ‘সরলার সংক্ষিপ্ত জীবনী’। প্রচ্ছদ মুস্তাফিজ কারিগর। মূল্য ১৭০ টাকা। ‘ধূলোর অঙ্কুশ’ প্রচ্ছদ লেখা চারু পিন্টুু। প্রকাশক ‘কলম’ প্রকাশনী।

বইমেলায় প্রকাশিত বইগুলো মোটামুটি বিক্রির আশা করছি। ইদানীং অনেকে বইমেলার আগেই প্রকাশিত হয়ে যায় কিন্তু বইয়ের বিক্রি বাড়ে না। বাঙালি হঁাড়িকুড়ি কিনতে যত অভ্যস্ত বই কিনতে ততটা নয়। জাতির আবেগ মূল্যবোধ নৈতিকতা নিমাের্ণ বই এবং বইমেলার ভ‚মিকা গুরুত্বপূণর্। আমি প্রতিদিন বইমেলায় যাই। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্স মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলি। ভালোলাগে বইমেলার মানুষ। বইমেলার নান্দনিক জ্ঞানরাজ্য।

লেখকের দায়িত্ব শুধু মানসম্পন্ন লেখা

আনোয়ারা আজাদ, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক

বইমেলা সামনে এলে প্রথমেই আমার যে কথাটি মনে হয় তা হলো এই যে একটি মাস শুধু বইপত্তর নিয়েই একটি মেলা, এর চেয়ে চমৎকার বিষয় আর কী হতে পারে। যেদিকে তাকাও শুধু বই আর বই, যেন বিশাল একটা লাইব্রেরি। কিন্তু চমৎকার এই লাইব্রেরি গঠনের উদ্দেশ্য কতটুকু সফল হচ্ছে সেটাই আসল ভাবনা। হাজার হাজার বই ছাপুক তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই, লেখা-জোখা নিয়েই তো চচার্ করছে, ফালতু কোনো জিনিস নিয়ে চচার্ তো নয়, লিখতে লিখতে একদিন ঠিক একটা মাস্টারপিস বের হয়ে আসতে পারে। বড় বড় সাহিত্যিকদের সব উপন্যাস কিংবা গল্প কিংবা কবিতাই কী পাঠযোগ্য? মনে হয় না। অনেক বড় লেখকেরও কোনো বই চারপাতা পড়ে আর পড়া যায় না। এই যে বই লেখা বা বের করার উন্মাদনা, মন্দ কী? তবে হ্যঁা, যে বিষয়টা গুরুত্বপূণর্ সেটা হলো লেখককে নিজেই বুঝতে হবে তার লেখা কতটা পাঠযোগ্য হয়ে উঠছে। শুধু তেল মেরে কিংবা চালাকি করে প্রিন্টিং মিডিয়া কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মুখ দেখালেই সে রাতারাতি বিখ্যাত কেউ হয়ে উঠবে না, এটা অনুধাবন করতে হবে। লেখালেখির চচার্র পাশাপাশি আত্মসম্মানবোধেরও যেন চচার্ হয় সেই আশা রাখি। প্রতিবছর বইমেলার এক সমুদ্র ইতিবাচক দিকের মধ্যে একটাই নেতিবাচক দিক দৃশ্যমান হচ্ছে, চমক দিয়ে ঠেলাগুঁতো করে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা। সত্যিকারের মানসম্পন্ন হলে সেই চমক গ্রহণ করতে পাঠকের কোনোদ্বিধা থাকবে না কিন্তু ঠকালে হৃদয়ে বড় বেশি বাজবে। প্রকাশকদেরও বই প্রকাশ, বই বিক্রি আর বিশাল স্টল দেয়ার কমপিটিশনের পাশাপাশি আরও কিছু দায়িত্ব আছে সেদিকটায় মনোযোগী হতে অনুরোধ করব। পাঠকের সঙ্গে লেখকদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেয়ে তাদের নিজেকে পরিচিত ও প্রচারিত হতে দেখা যায় বেশি। লেখকের দায়িত্ব শুধু মানসম্পন্ন লেখা তৈরি করা। কিন্তু প্রচারিত হওয়ার চেষ্টায় লেখককে নিজেকেই মেহনত করতে দেখা যায়! এবার অন্বয় প্রকাশন থেকে আমার বারোটি ছোটগল্প নিয়ে একটি ইংরেজি অনুবাদ আসছে মেলায়। ২০১৭ সালে জয়তী প্রকাশন থেকে আমার উপন্যাস ‘বিহারিবৃত্তান্ত’ বের হলে বিষয়টি উপলব্ধি করি বেশি। প্রকাশকের একদিনও সময় হয়নি স্টলে বসে বই ও লেখক কারও সঙ্গেই পাঠকের পরিচয় করিয়ে দেয়ার। এই উপন্যাস তিন বছর ধরে একটু একটু করে নিমার্ণ করেছি। কলকাতা ও আসাম বইমেলাতেও কিছু বিক্রি হয়েছে বলে জানি। না, ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিজ্ঞাপন দেয়ার পক্ষপাতি নই আমি। বই নিয়ে কারও পেছন পেছন ঘোরারও রুচি নেই আমার। তাহলে এরকম লেখকের উপায় কী?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<36692 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1