সেকেন্ড ওয়াল্ডর্ ওয়ার কাম ফেমিনের মূতর্মানতা নিয়ে সংগ্রামী এক নারী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সোফিয়া লোরেন। আলবাতোর্ মোরাভিয়ার বিখ্যাত টু উইমেন-এর আদলে ইউরোপীয় নারীরা কিংবা অরুন্ধতী বা মীরা নায়ারের ভারতীয় ঘরানার নারীরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যের পাশাপাশি অনেক পরের স্তরে এসে ব্যক্তিস্বাধীনতার বাণী উচ্চারণ করেছে। আমাদের রোকেয়ানিগড়ে বসবাস করা অবরোধবাসিনী নারীর অবগুণ্ঠন হয়তো ঘুচেছে, ব্যক্তিক মুক্তি কি মিলেছে? সেলিনা হোসেন, নাসরীন জাহান বা তসলিমা নাসরীনের নারীকেও যদি পাশাপাশি দঁাড় করাই- সীমাবদ্ধতার সমীকরণ একই বৃত্তে ঘূণার্য়মান। ব্যক্তি নারীই যেখানে হয়ে উঠতে পারে না, সেখানে সামাজিক মযার্দা প্রাথর্না করে নারী তা প্রাপ্য হবেÑ এ সমাজ বা দেশ হয়তো এখনো সে পযাের্য় পৌঁছেনি। গত দুই শতাব্দীর নারীপুরাণ তাই যা কিছু রচনা করেছে, তা নারীর বঞ্চনা-লাঞ্ছনা-পরাজয়-পরাভব-মৃত্যুর ইতিহাস।
নাসরিন নাহারের অনুভব উপন্যাসের মৃত্তিকার যুদ্ধটা অন্ধকারের পদার্ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার অন্তলীর্ন প্রয়াস। আলোক প্রত্যাশী এ নারী জীবনযাপনের প্রতি পলে টু উইমেনের চেজিরার কথাই মনে করিয়ে দেয়। আশৈশব স্বপ্ন বুনে কৈশোরে তারুণ্যে বারংবার সেসবের অপমৃত্যু দেখে দেখেও যে নারী জীবনগন্ধী একেকটা মানবিক সম্পকের্র বিকশমান রূপ দেখবার জন্য প্রতীক্ষায় থাকে- তার নামই মৃত্তিকা। মৃত্তিকার স্বপ্নপ্লাবন ¯েøাতের সারথী- কাজল, অরুণ, কোয়েল, জজর্ - এত এত চরিত্র, অথচ কী আশ্চযর্, একটাও আরোপিত মনে হয় না। জীবনের প্রয়োজনে জীবনেরই অনুষঙ্গে এরা। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নানান টানাপড়েনের চালচিত্র। ছাত্ররাজনীতি, মাস্তানী, ক্ষমতার দম্ভ, ইভটিজিং, ভালোলাগা, খুনসুটি, প্রেম-পরিণয়-বিচ্ছেদ, আবারও প্রেম, প্রত্যাখ্যান, হতাশা, উচ্চাভিলাষ, কামনা-বাসনা, আচারনিষ্ঠা-সংস্কার-ধমের্বাধ- সবই আছে নাসরিন নাহার-এর অনুভব উপন্যাসে।
স্থানিক প্রেক্ষাপারম্পযর্ বণর্নাগুণে চমৎকারভাবে উঠে এলেও, উপন্যাসে কালিক পারম্পযর্ যথাযথভাবে রক্ষিত হয়নি। এটা উপন্যাসের গতিকে প্রাগ্রসর করেছে যদিও, ব্যাহত করেনি। তবু আগামীতে ঔপন্যাসিক নাসরিন নাহার এই বিভ্রম এড়াবেনÑ এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। ১৭৬ পৃষ্ঠার সুখপাঠ্য এ গ্রন্থের উৎসগর্পত্রটিও সুলিখিত-
‘যাকে ভেবে আমি মহৎ উদার/বিলিয়ে দিতে পারি শেষ কপদর্ক।/ আমার সদ্য প্রয়াত বাবা।/¯েœহময়ী মা, দুঃখ সুখের সারথী/ অধ্যাপক মোঃ নূরনবী,/আমার প্রাণপ্রিয় সন্তান/ জুলিয়ান রাফাহ্ দিগন্ত ও/ আফরিদা লাবণ্যকে।
প্রকাশক বলছেন- উপন্যাসের কাহিনিতে মূল ভূমিকায় আছে মৃত্তিকা। মৃত্তিকার অনুভবে জেগে ওঠে দেশপ্রেম, দেশের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, কতর্ব্যবোধ, সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা, আত্মসম্মানবোধ, পরিবারের প্রতি সম্মান- সবকিছু মিলেই মৃত্তিকার জীবন। আর এ জীবনের অনুষঙ্গের পারিপাশ্বির্ক মানুষগুলো, প্রকৃতি ওর বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত কেন মৃত্তিকাকে প্রথার বিরুদ্ধে কাজ করতে হলো? কেনই বা তাকে দেশত্যাগ করতে হলো? ... এ প্রশ্ন রেখেই শুভকামনা রাখছি ঔপন্যাসিক নাসরিন নাহারের জন্য। সাথে সাথে ৩৮০ টাকা মূল্যের অনুভব গ্রন্থটির বহুল প্রচার ও প্রসার প্রাথর্না করছি।
অনুভব (উপন্যাস)। নাসরিন নাহার। প্রকাশকাল : ফেব্রæয়ারি, ২০১৮। প্রকাশক : মোহাম্মদ জুম্মা, আলীগড় লাইব্রেরি, ১৫৮ ঢাকা নিউমাকের্ট, ঢাকা-১২০৫। প্রচ্ছদ : আফসানা পারভীন। সম্পাদনা : এবিএম সিদ্দিক।
Ñআকমল হোসেন খোকন