শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবি জসীমউদ্দীনের কমর্ময় জীবন

শাহজাহান আবদালী
  ০৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

কবি জসীমউদ্দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আনসার উদ্দীন মোল্লা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। জসীমউদ্দীন পিতার কমর্স্থল স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯২১ সালে তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯২৪ সালে জেলা শহরের রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯২৯ সালে বিএ পাস করেন। বিএ অধ্যয়নকালে তার লেখা কবর কবিতাটি নবম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে অন্তভুর্ক্ত হয়। ১৯২৯ সালে তিনি কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ক্লাসে ভতির্ হয়ে ১৯৩১ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৩২ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুপারিশে কলকাতা বিশ^বিদ্যালয় রামতনু লাহিড়ী গবেষক পদে কমর্রত ছিলেন। সেখান থেকে চাকরি ইস্তফা দিয়ে তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে লেকচারার পদে যোগদান করেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ৬ বছর অধ্যাপনা করার পর তিনি তথ্য ও প্রচার বিভাগে সরকারি ঊধ্বর্তন কমর্কতার্ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে উপ-পরিচালক পদে কমর্রত থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

১৯২৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ রাখালি প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থেই অন্তভুর্ক্ত হয় তার কবর কবিতাটি। ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয় নকশীকঁাথার মাঠ। এটি বিশে^র বিভিন্ন দেশে ৩৩টি ভাষায় অনূদিত হয়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখালি আর নকশীকঁাথার মাঠ পড়ে ভ‚য়সী প্রশংসা করেন। ১৯৩৩ সালে ধান ক্ষেত, ১৯৪৬ সালে রূপবতী, ১৯৫১ সালে মাটির কান্না, ১৯৬৯ সালে জলের লেখন, ১৯৭২ সালে লেখেন ভয়াবহ সেই দিনগুলোতে, ১৯৭৬ সালে মাগো জ¦ালিয়ে রাখিস আলো। বোবা কাহিনী নামে তিনি একটি উপন্যাসও লেখেন। তার লেখা নাটকগুলো হচ্ছে, বেদের মেয়ে, মধুমালা, পল্লীবধূ, গ্রামের মায়া। ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হয় গানের সংকলন রঙিলা নায়ের মাঝি। স্মৃতিকথা লিখেছেন, যাদের দেখেছি, ঠাকুরবাড়ির অঙিনায়। তিনি ছোটদের জন্য লিখেছেন বাঙালির হাসির গল্প এবং জারি গানও তিনি লিখেছেন।

১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী জাতীয় পরিষদে এক প্রস্তাবে বলেন, দেশের আদশের্র সঙ্গে অসঙ্গতিপূণর্ হওয়ার কারণে বেতার ও টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধ করা অতিশয় প্রয়োজন। এ খবর প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূবর্পাকিস্তানে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কবি জসীমউদ্দীন তাতে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন সরকারের ইঙ্গিতে বাংলা বণর্মালা ও বানান সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করলে অনেকের মতো কবি জসীমউদ্দীনও তীব্র প্রতিবাদ জানান। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহŸানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে দেশের শিল্পী-সাহিত্যিকদের সঙ্গে তিনিও রাজপথে নামেন।

তার কবিতায় বাংলাদেশের পল্লী-প্রকৃতি ও মানুষের সহজ স্বাভাবিক রূপটি ফুটে উঠেছে। পল্লীমাটি ও মানুষের জীবনচিত্র তার লেখনিতে নতুনমাত্রা স্থান পেয়েছে। পল্লী মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, বেদনা-বিরহ ও মিলন সম্পকের্ আর কোনো কবির কাব্যে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে তাকে এ দেশের মানুষ পল্লীকবি নামে আখ্যায়িত করে। স্ত্রী, ৪ পুত্র ও দুই কন্যাসহ অনেক ভক্ত রেখে ১৯৭৬ সালের ১৪ মাচর্ তিনি পরপারে চলে যান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<30343 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1