শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম মুসলিম ঔপন্যাসিক নূরন্নেছা খাতুন

আব্দুর রাজ্জাক
  ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

‘মাথার ঘোমটা ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল ও শিকল! যে ঘোমটা তোমায়’ করিয়াছে ভীরু, ওড়াও সে আবরণ, দূর করে দাও দাসীর চিহ্ন ঐ যত আভরণ!’

নারীর প্রতি কবির এ উদাত্ত আহŸান আর সমাজের নানা কুসংস্কার, শিক্ষার স্বল্পতা থেকে অনুমান করা যায় যে, বাংলার মুসলিম সমাজে নারীর চলার পথ কতটা অমসৃণ ছিল। মুক্তবুদ্ধির চচার্, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নারীর জীবনে এক আতঙ্কের নাম। সেখানে নারীর সাহিত্যচচার্ ছিল কল্পনা ও স্বপ্নবিলাস মাত্র। বাংলার মুসলিম সমাজে উচ্চশিক্ষিত মানুষ ছিল না এমন কিন্তু নয়Ñ যারা ছিলেন তারা সাহিত্যচচার্ ও সাহিত্যের প্রতি অবজ্ঞা প্রদশর্ন করতেন। এমন কঠোর অবরোধ প্রথা ও নানা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও কোনো কোনো অভিজাত পরিবারের দুয়েকজন নারী অদম্য সাহস নিয়ে জ্ঞানের মশাল জ্বালিয়ে ছিলেন। সমাজকে আলোকিত করে গেছেন নিজ গুণে। বাংলা ভাষার প্রতি অপরিসীম মমত্ববোধ, বাংলা শেখার আগ্রহ ও সমাজব্যবস্থায় নারীর অবস্থান তৈরিতে ব্যাপক ভ‚মিকা পালন করেন। পরবতীর্ সময়ে তারা সাহিত্যক্ষেত্রে নিজ নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতেও সক্ষম হয়েছেন। এমন চরম বিদঘুটে অন্ধকার যুগে সাহিত্য জগতে বাংলার মুসলিম সমাজের নারীদের জন্য নূরন্নেছা খাতুনের আবিভার্ব এক বিস্ময়।

এই মহীয়সী নারী (১৮৯৪) সালে মুশির্দাবাদ জেলার এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নূরন্নেছা খাতুন যে সমাজব্যবস্থায় জন্মগ্রহ করেন সে সমাজে এসব পরিবারের মেয়েদের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা, এমন কি ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে থেকেও বাংলা ভাষাচচার্ ও শেখা ছিল নিষিদ্ধ। সেই অন্ধকার থেকে যারা আলো জ্বালিয়ে ছিল, অবরোধ প্রথা যারা ভেঙে নতুন সূযর্ এনেছে তাদের অধিকাংশ নারী অবরোধবাসের কাহিনী লেখায় বণর্না করেছেন। নূরন্নেছা খাতুন ছিলেন প্রসিদ্ধ ‘খোন্দকার’ বংশের মেয়ে। এ পরিবারে অবরোধ প্রথা কঠোরভাবে পালন করা হতো। নূরন্নেছা খাতুন তার বিভিন্ন প্রবন্ধে শৈশবের এ অবরোধ প্রথার কথা উল্লেখ করেছেন বিশদভাবে। নূরন্নেছা খাতুন ভাইয়ের বা অপরের সহায়তায় নিজে নিজেই বাংলা ভাষা শিখেছেন পরে বই পড়তে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। বাংলা ভাষার প্রতি ছিল তার অগাধ টান ও ভালোবাসা।

(১৩৩৬) সালের সওগাতের আষাঢ় সংখ্যায়, ‘নূরন্নেছা গ্রন্থাবলি’র বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। মোট ছয়টি উপন্যাস নিয়ে এ গ্রন্থাবলি: স্বপ্নদ্রষ্টা, জানাকী বাঈ (ভারতে মোসলেম বীরত্ব), আত্মদান, ভাগ্যচক্র, বিধিলিপি, নিয়তি। এ বিজ্ঞাপনের পর থেকেই সাহিত্য সংস্কৃতিমনা মানুষ বড় পরিসরে জানতে পেরে তার সম্পকের্ আগ্রহী হয়ে ওঠে। নূরন্নেছা খাতুনের সময় সাহিত্য চচার্ ও পুরুষ ঔপন্যাসিকের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কয়জন। সে ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বাংলার মুসলিম সমাজের নারী ঔপন্যাসিকের মধ্যে পরিচিত নাম। তার আগে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য মুসলিম নারী সাহিত্য চচার্য় এগিয়ে আসেনি। পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধ উল্লেখ করা হয়; এর পূবের্ বাঙালি মুসলমান মহিলাদের কোনো গ্রন্থাবলি প্রকাশিত হয়নি। যে যুগে মুসলমান সমাজে পুরুষ ঔপন্যাসিকের সংখ্যাই নগণ্য ছিল, সেই অরুণোদয় মুহ‚তের্ নূরন্নেছা খাতুনের যুগান্তকারী অবদান নিয়ে আসে। তৎকালীন সমাজ ও পরিবার-জীবনের চিত্র গভীর অনুভ‚তির সঙ্গে তার লেখায় বিধত হয় তখন যারা উপন্যাস রচনায় খ্যাতি লাভ করেছিল তাদের মধ্যে নূরন্নেছা খাতুন অন্যতম। তার লেখার শৈলী ও কল্পনাশক্তি আলাদা বৈশিষ্ট্যের দাবিদার। সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভঙ্গিতে সমাজের সমকালীন বিষয়াদি তার উপন্যাসের উপজীব্য করে তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে নূরন্নেছা খাতুন সম্পকের্ ১৩৩৩ সালে সওগাতের ভাদ্র সংখ্যায় প্রকাশিত, ‘বঙ্গ সাহিত্যে মুসলমান মহিলা’ শীষর্ক নিবন্ধে বলা হয়, যে কয়জন মুষ্টিমেয় মুসলমান লেখক উপন্যাস রচনা করিয়া প্রসিদ্ধ লাভ করিয়াছেন, নূরন্নেছা খাতুন তাহাদের মধ্যে একটা শ্রেষ্ঠ আসন পাইবার যোগ্য। তাহার উপন্যাগুলো পাঠ করিলে তাহার লিপিচাতুযর্ ও কল্পনাশক্তির সুন্দর পরিচয় পাওয়া যায়। তাহার লেখা বেশ সরল, প্রাঞ্জল ও উপন্যাসোচিত। আশা ও আনন্দের বিষয় এই যে, নূরন্নেছা খাতুনের লেখনি এখানেই বিশ্রাম লাভ করে নাই। তিনি আরও গ্রন্থ রচনায় আত্মনিয়োগ করিয়াছেন’ নূরন্নেছা খাতুনের উপন্যাস লেখার খবর ছড়িয়ে পড়লে ‘নিখিল ভারত সাহিত্য সঙ্ঘ’ তাকে ‘বিদ্যাবিনোদিনী’ ও ‘সাহিত্য সরস্বতী’ উপাধি প্রদান করে যথাযথ সম্মান প্রদান করেন। ১৯৩১ সালে মুন্সীগঞ্জে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের ষোড়শ অধিবেশন হয়, সে অধিবেশনে নূরন্নেছা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনীর ‘বঙ্গ সাহিত্য মুসলমান’ শীষর্ক প্রবন্ধটি নিবাির্চত প্রবন্ধগুলোর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে। সম্মেলনের সভাপতি নাটোরের মহারাজ জগদিন্দ্রনাথ রায় লেখিকার প্রবন্ধ পাঠ করে যে উক্তি করেছিলেন তার মূল বিষয় ছিল সাহিত্যের অগ্রগতি ও সাহিত্যসেবীর মধ্যে অসাম্প্রদায়িক মনোভাব তৈরি আর এ অগ্রযাত্রায় নারীদের এগিয়ে আসা। বাংলার মুসলিম বাঙালি হয়েও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি নারী-পুরুষের যে অবহেলা তাতে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, ‘যদি তারা মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় তবে এর চেয়ে সুখের আর কি থাকে। রাজা আরও বলেন, তিনি বলিয়াছেন, ‘আমাদের মুসলমান ভ্রাতৃত্ব বৃন্দের জননী-জায়া- দুহিতাগণের মনে বঙ্গবাণীর প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা- ভক্তি যদি উচ্ছ¡াসিত হইয়া উঠিতে থাকে, তবে তাহা অচিরেই কি কল্যাণকে যে আমাদের করায়ত্ত করিয়া দেবে, তাহা একমুখে বলিয়া শেষ করা যায় না’। নূরন্নেছা খাতুন সত্য প্রকাশে ও মুসলিম সমাজে মানুষের অজ্ঞতার বিচার বিশ্লেষণ করেছেন সঠিক মাপকাঠিতে।

(১৩৩৩) সালের সওগাতের মাঘ সংখ্যায় বঙ্গীয় মোসলেম মহিলা সঙ্ঘের বাষির্ক সম্মেলনের সভানেত্রীরূপে নূরন্নেছা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনীর অভিভাষণ ছাপা হয়। যে যুগে মুসলমান নারীদের স্বাধীনভাবে কিছু করার, কিছু বলার কোনো অধিকার ছিল না সে যুগেও একটি মোসলেম মহিলা সম্মেলনের সভানেত্রীরূপে সাহসিকতাপূণর্ অভিভাষণ দিয়েছিলেন তা নারীর সামাজিক অধিকার ও স্বাধীনতা অজের্নর প্রথম ধাপ। তার এ অভিভাষণে তখনকার সময়ের অবরোধ প্রথা, সাহিত্যচচার্র অপ্রতুলতা, সাহিত্যে পুরুষদের চেয়ে নারীদের পিছিয়ে থাকা এবং নানা সময়ে পরিবেশ ও পরিস্থিতি, কুসংস্কার, ধমার্ন্ধতা যা জীবনের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে সে বাধাগুলো সরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই প্রধান কাজ বলে তিনি গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘এজন্য মনোবল প্রয়োজন যা নিজের মধ্যে থাকতে হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো জ্বেলে নিজের ও সমাজের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে হবে। নূরন্নেছা খাতুন আরও বলেন, ‘আমরা হচ্ছি পদার্নশিন মোসলেম রমণী। সাহিত্যগত আমাদের পুরুষদেরই একটু দঁাড়াইবার স্থান মেলে না, তা আমরা ত’ কোন দূরে পড়ে আছি। দূর চিরদিনই দূর থাকে না সাধনায় তা নিকট হয়ে আসেই আসে। পঙ্গু হয়ে, শুধু বেঁচে থাকলে আমাদের আর চলবে না।’ সে সময় নারী শিক্ষার অভাবে সমাজের সামগ্রিক উন্নীত ব্যাহত হয়েছে যার প্রভাব পরিবার, সমাজ ও জাতীয়জীবনে চরমভাবে প্রভাবিত করেছে। এ জন্য বাংলার মুসলিম সমাজের নারী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। নারীর স্বাধীনতা ও নারীর অধিকার সম্পকের্ পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে সচেতন করার জন্য তার মতো এগিয়ে আসতে আহŸান জানান। সওগাতের সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন বলেন, ‘নূরন্নেছা খাতুনের পূবের্ বাংলার মুসলিম সমাজের আর কোনো লেখিকা মহিলাদের সম্মেলনে সভানেত্রীত্ব করেননি বা ভাষণ দেননি তাই নারীর স্বাধীনতাবিরোধী পত্রপত্রিকাগুলো এ অভিভাষণটি ছাপেনি কেবল সওগাতে নূরন্নেছা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনী নামে এই ভাষনটি ছাপা হলে তখকার সময়ের আমাদের শিক্ষিত প্রগতিবাদী দল এই মহিলা ও তার রচনা সম্পকের্ আলোচনা শুরু করেন’ তখনকার সময়ে মুসলিম মেয়েদের ছবি পত্রপত্রিকা ছাপা গুনাহের কাজ বলে প্রচার করা হতো। সওগাতে মেয়েদের ছবি ছাপা হলে সম্পাদকের বিরুদ্ধে নিদ্রা প্রচার করা হয়। এ বিষয় মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন বলেন, ‘সওগাতে মেয়েদের ছবি ছাপা হয় এ জন্য আমাদের গেঁাড়া রক্ষণশীল দল যখন আমার নিদ্রা প্রচার করছিলেন, সে সময় আমি সংকল্প গ্রহণ করলামÑ কেবল মুসলমান মহিলাদের লেখা ও ছবিসহ বিশেষ ‘মহিলা সওগাত’ প্রকাশ করব। ১৩৩৬ সালের ভাদ্র মাসে প্রথম ‘মহিলা সওগাত’ বের হয় কিন্তু তা প্রকাশ করতে গিয়ে আমি নানা অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। প্রথমত আমাদের মুসলমান লেখিকার সংখ্যা নগণ্য তার ওপর সমাজের ভয়ে অনেকেই ছবি দিতে দ্বিধাবোধ করছিলেন। ‘মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন নূরন্নেছা খাতুনের প্রতিভার পরিচয় আগেই পেয়েছিলেন। সে কারণে মহিলা সংখ্যায় তার লেখা পাবার আশায় কলকাতা থেকে শ্রীরামপুর গিয়ে তার বাড়িতে হাজির হলেন। সে কালে কোনো অপরিচিত অনাত্মীয় পুরুষের সামনে মেয়েরা আসতেন না। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ভেবেছিলেন, নূরন্নেছা খাতুন বাড়ির কোনো লোক মারফতে তার কথার জবাব দেবেন। কিন্তু তিনি সহজ-সরলভাবে তার সম্মুখে এসে বসলেন এবং তার আগমনকে অভিনন্দিত করলেন। নারী জাগরণ অভিযানের জন্য সওগাতের খুব প্রশংসা করলেন। মহিলা সওগাত বের করবো শুনে আনন্দে উল্লাসিত হয়ে উঠলেন এবং বলেন, আপনি তাহলে আমাদের নারী সমাজের এক মহা উপকার সাধন করবেন। আসন্ন সংখ্যার জন্য তার লেখা চাইলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ত উপন্যাস লিখি গল্প, প্রবন্ধ লিখি না। তবে আপনার এ শুভ প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করব। একটা প্রবন্ধ লিখে দুই একদিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দেব। আমার দুই মেয়ে বদরুন্নেসা আর কামরুন্নেসাও লিখতে আরম্ভ করেছে। তাদের লেখাও ওই সঙ্গে পাঠিয়ে দেব।’ এর পর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন নূরন্নেছার ছবি দেবার অনুরোধ জানালে তিনি প্রথমত ইতস্তত করলেন। নূরন্নেছা তার অনুরোধ রাখলেন। নিজের এবং দুই মেয়ের ছবি মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনকে দিয়ে দিলেন। একই পরিবারের তিনজনের ছবি পেয়ে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন আনন্দিত হলেন। নূরন্নেছা খাতুন তাকে যথেষ্ট সমাদর করলেন এবং না খাইয়ে ছাড়লেন না। মহিলা সওগাতের জন্য প্রতিশ্রæতি মতে তিনি তিনটি লেখাই পাঠিয়ে ছিলেন। তার নিজের লেখা প্রবন্ধ ‘আমাদের কাজ’, বদরুন্নের গল্প, ‘রেখা’, কামরুন্নেছার প্রবন্ধ ‘স্ত্রীর শিক্ষা’ এ কয়টি লেখা ও তাদের ছবি প্রথম মহিলা সংখ্যা সওগাতে ছাপা হয়েছিল।’

নূরন্নেছা খাতুনের উপন্যাস সম্পকের্ আলোচনা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ আব্দুল হাই সৈয়দ আলী আহসান রচিত ‘বাংলা সাহিত্যর ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে বলা হয়েছেÑ

‘সংসার ও সমাজজীবনে কিংবা পথ চলতে তিনি চোখ দিয়ে যা দেখেছেন, সাহিত্যর উপকরণ হিসেবে সে ছবি এবং সে অভিজ্ঞতা তার জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে তার মনে পুঞ্জীভ‚ত হয়ে রয়েছে। সাহিত্য রচনা কালে স্মৃতি বেশ আলোড়িত করে তার অভিজ্ঞতার জবাব আপনা থেকে তার সাহিত্যর মাধ্যমে আপনাকে বিকশিত করে তুলছে। অভিজ্ঞতালব্ধ গাহর্স্থ্য জীবনের ছবি, জ্ঞানলব্ধ তথ্য এবং ভ‚য়োদশর্নজাত অনুভ‚তির অভিব্যক্তই তার সাহিত্যকে রঞ্জিত করেছে।’

দেশ বিভাগের পর নূরন্নেছা খাতুন সহপরিবারের ঢাকায় এসে স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকেন। ১৯৬১ সালে তার স্বামী মৃতু্যুবরণ করেন। বাধের্ক্যর কারণে তিনি কাজকমের্ ও সাহিত্যে সক্রিয় ছিলেন না। বিদেশি সাহিত্যের অনুবাদ ও উপন্যাসে তার আগ্রহ ছিল। বাংলা একাডেমি তার সাহিত্য কমর্ ‘নূরন্নেছা গ্রন্থাবলি ‘হিসেবে প্রকাশ করেছে।

১৯৭০ সালের ৭ ফেব্রæয়ারি তারিখে বেগম ক্লাবে নূরন্নেছা খাতুনকে এক সংবধর্না জ্ঞাপন করা হয়। মানপত্রের জবাবে নূরন্নেছা খাতুন বলেছিলেন, ‘যে যুগে কলম ধরেছিলাম, সে যুগের মেয়েরা ছিলেন অন্তরালবতির্নী। সেই অবস্থার মধ্যেও যথাসম্ভব সাহিত্যচচার্ করেছি। পরবতীর্কালে সমাজের পটপরিবতর্ন ঘটেছে অনেক। মানুষের মূল্যবোধও সে সঙ্গে হয়েছে পরিবতির্ত। তখন বৃহত্তর পৃথিবীর সঙ্গে আমারও পরিচয় ঘটেছে। অনেক অদেখাকে দেখিছি, অজানাকে জেনেছি, কিন্তু সাহিত্যে তা ফুটিয়ে তোলার অবকাশ আর মেলেনি। আজকের সাহিত্য ভালো কি মন্দ তা নিয়ে তকর্ করতে চাই না। যুগ পরিবতির্ত হয়েছে সাহিত্যও নিশ্চয়ই আগের মতো নেই। তবে ভালো সাহিত্য বলতে একটা জিনিসই বুঝি যে তাতে জীবনের বিশ্বস্ত প্রতিফলন থাকবে।’

নূরন্নেছা খাতুন সারাজীবনই নারীদের সত্য, সুন্দর ও প্রগতির জন্য উদাত্তকণ্ঠে আহŸান জানিয়েছেন। তার সাহিত্যের লক্ষ্য ছিল উন্নতি ও সংস্কারমুখী।

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন বলেছেন, ‘১৯৭০ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে ৬৬নং লয়াল স্ট্রিট, ‘সওগাত’ অফিসে আমার সঙ্গে নূরন্নেছা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনীর শেষ দেখা। তাকে সেদিন খুবই উৎফুল্ল­ দেখাচ্ছিল। তিনি সেকালের কথা নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন।’

১৯৭৫ সালের ৬ এপ্রিল রোববার উপন্যাসিক নূরন্নেছা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনী এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান। এ মহান সাহিত্যিক আজ আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু এক অন্ধকার যুগে সাহিত্য সাধনায় বাংলার মুসলিম নারীদের সম্মুখে তিনি যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা চিরদিন রবে অ¤øান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<26918 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1