শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

একই গ্রামের তিনজন

বাসার তাসাউফ
  ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনন্তপুর গ্রামে তিনজন লোক বাস করে।

শুধু কি তিনজন লোক বাস করে গ্রামটিতে? সংখ্যাটা তিনশো থেকে তিন হাজারও হতে পারে। এখানে যে তিনজন লোকের কথা উল্লেখ করেছিÑ তাদের মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে এবং সেগুলো দোষ নাকি গুণ তা বোঝা না গেলেওÑ তারা যে গঁায়ের অন্য লোকজন থেকে একটু আলাদা, অন্যরকম এটা সহজেই বোঝা যায়। কাকতালীয়ভাবে তিনজনেরই নাম রাজা। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, তাদের চরিত্রে অ™ু¢ত মিল আছে। তিনজনেরই কেঁাকড়া কেঁাকড়া বাবরি চুল। তিনজনেরই গেঁাফ আছে। কিন্তু দাড়ি নেই কারও মুখেই। তিনজনেই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে চেষ্টা করে। তিনজনই কোনো মেয়েকে বিয়ে না করার পণ করে রেখেছে। তিনজনই প্রাণেমন বন্ধু। তিনজনই ভীষণ অলস ও অকমর্ণ্য এবং তিনজনই কোনো গুপ্তধন কুড়িয়ে পেয়ে হঠাৎ বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে দিনযাপন করছে।

তিনজনই স্কুলের গÐি পেরিয়ে জ্ঞানাজের্নর অদৃশ্য রথ নিয়ে গিয়েছিল কলেজ পযর্ন্ত। কিন্তু সামনে আর এগোতে পারেনি, থেমেছেও একসঙ্গে। হয়তো জ্ঞানাজের্নর চেয়ে ধনাজর্ন বেশি লক্ষ্য হয়ে দঁাড়িয়েছিল। তারা শুনেছে, ঝিনুকের ভেতরে মুক্তো, সাপের মাথায় মণি এবং ব্যাঙের মুখে এক ধরনের দামি পাথর থাকে। সেগুলো খুঁজে পেলে বিক্রি করে সাত রাজার ধন-দৌলত পরিমাণ টাকা-পয়সা পাওয়া যাবে। তারা এমন কথাও শুনেছে, যে সাপের মাথায় ওই মণিটা থাকেÑ সেটি নাকি মানুষের আড়ালে চলে যায়। বন-বাদাড়ে, মাটির গতের্ কিংবা গাছের খেঁাড়লে লুকিয়ে থাকে। ব্যাঙের মুখে সেই দামি পাথরটা থাকলে ব্যাঙ সেটা মুখ থেকে বের করে মাটিতে রেখে রাতের অঁাধারের আলোয় খাবার খুঁজে ফেরে। আর ঝিনুকের ভেতরের মুক্তো হলে সে মুখ বন্ধ করে চলে যায় জলের গভীরে।

কোথায় পাওয়া যাবে সেই মুক্তো, মণি কিংবা দামি পাথর? এসব অমূল্য ধন খঁুজে পেতে হলে অহনিির্শ জল-জঙ্গলে খঁুজতে হবে। তাই তারা তিনজন ঘর থেকে বেরিয়েছে। মনেপ্রাণে দৃঢ় পণ করেছে, যতদিন এই গুপ্তধন খঁুজে না পাবে ততদিন তারা বাড়ি ফিরবে না।

আমার গল্প এই তিন রাজাকে নিয়ে। গল্পের প্রয়োজনে আমার তাদের ভিন্ন তিনটি নামে সম্বোধন করবÑ রাজু, রাজিব ও রাজন।

অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা জঙ্গলে বসে আছে তারা তিনজন। সারা জঙ্গলে শিয়াল আর ঝিঁঝি পোকার হল্লা। তাদের মুখে কোনো কথা নেই। চুপচাপ বসে সিগারেট ফুঁকছে। জঙ্গলের ভেতরে নীরবতা ভেঙে একটা গাছের ডালে শব্দ ফুটে ওঠেÑ রাতজাগা পাখির ডানা ঝঁাপটানির শব্দ বোধ হয়। জঙ্গলের গহীন থেকে একটা শিয়াল দৌড়ে এসে তাদের দেখে থমকে দঁাড়ায়। অন্ধকারে তিনজন মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে যেদিক থেকে এসেছিল পিঠটান দিয়ে সেদিকেই দৌড় দেয়। জঙ্গলের ভেতরে বসে কয়েকটা সিগারেট শেষ করে ফেলেছে তারা। অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ একচিলতে আগুনের ফুলকির মতো কিছু একটা তাদের চোখে পড়ে। তিনজনই চমকে ওঠে দৌড়ে যায় সেখানে। কুড়াতে গিয়ে হাতে পায় একটা জোনাকি পোকা। এতে তারা হতাশ হয় এবং এই হতাশা তাদের ক্ষতবিক্ষত করে। কিন্তু তারা বাড়ি ফিরে আসে না। জঙ্গলের ভেতরেই বসে থাকে। একচিলতে আগুনের ফুলকির অস্পষ্ট ঝিলিক যেন তাদের আরও উস্কে দিয়েছে। জঙ্গলের ভেতরের অন্ধকার কিংবা শিয়ালের কোলাহল তাদের ছঁুতে পারে না।

এ মুহূতের্ ঝোপের আড়ালে বসে নিজেদের মনে হচ্ছে পুরনো অশত্থ কিংবা প্রাচীন বটবৃক্ষ। সেই কবে থেকে আশার শিকড় মেলে, ডালপালা ছড়িয়ে বসে আছে তো, আছেই। যেখানে আগুনের ফুলকির মতো দেখেছিল সেখানে আবার তাকায় তারা। না, তাদের সেই আকাক্সিক্ষত বস্তুটার দেখা পায় নাÑ যার জন্য এত অপেক্ষা, এত আকাক্সক্ষা না জানি বস্তুটা দেখতে কী রকম?

তিনজনই অবিচল বসে থাকে। তাদের স্থির চোখের দৃষ্টি দেখে বোঝা যায় না তারা জোনাকি না-কি জঙ্গলের অন্ধকার দেখে। গভীর অন্ধকারে তারা চুপচাপ বসেই থাকে, যেন বসে থাকা ছাড়া তাদের আর কিছু করার নেই। দীঘর্ দিবস দীঘর্ রজনী তারা আশায় আশায় অঁাধারে বসে থেকে একসময় আশাহত হয়ে পড়ে। একসময় বিরক্ত হয়ে রাজন বলে ওঠে, ‘আর কত দিন এভাবে জঙ্গলে বসে থাকলে গুপ্তধন খঁুজে পাব?’

রাজু বলে, ‘ধৈযর্ হারালে চলবে না।’

রাজিব বলে, ‘ধৈযর্ ধারণ করার ধৈযর্ও তো হারিয়ে ফেলেছি, আর কত দিন?’

রাজন বলে, ‘এভাবে বসে থেকে কী হবে?’

সত্যিই তো! এভাবে অন্ধকারে বসে থেকে কী হবে? এবার তাদের টনক নড়ে। তিনজন একসঙ্গে গা ঝাড়া দিয়ে বসা থেকে উঠে দঁাড়ায়। জঙ্গলের ভেতরটা আর তাদের কাছে ভালো লাগে না। তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। তখনও সাপের মাথার মণি, ব্যাঙের মুখের দামি পাথর কিংবা ঝিনুকের ভেতরে অসংখ্য মুক্তো তাদের চোখের সামনে থেকে সরে যায়নি, বেলুনের মতো ভাসতে থাকে। আর সেটাই তাদের বুকের ভেতরে যন্ত্রণাকে দাহ করে। কিন্তু তাদের আশাহত করতে পারে না।

তারা জঙ্গলের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে ক্রমেই আলোর মধ্যে আসতে থাকে। আশপাশে তখন কোনো জনমানবের কোলাহল চোখে পড়ে না। শুধু তারা তিনজন। তারা একে অপরের মুখের দিকে তাকায়। তাদের হয়ে পড়ে বিষাদকাতর ও উ™£ান্ত। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে বলে তারা আরও বিষাদগ্রস্ত, আরও উ™£ান্ত হয়ে পড়ে। গুপ্তধন পাওয়ার তাদের যে আশা তা যেন গঁুড়ো হয়ে, ধুলো হয়ে শূন্যে উড়ে যায়। তারা যেন অচঞ্চল, স্থির হয়ে পাতাশূন্য বৃক্ষের মতো ডালপালা মেলে দঁাড়িয়ে থাকে। সত্যিই তো, এভাবে আর কত দিন! তাদের গুপ্তধন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে সময় তো থেমে থাকে না। রাত বাড়তে থাকে। রাত বাড়তে থাকে বলেই বাড়ি ফেরার তাগাদা দিয়ে রাজন আবার বলে, ‘চল, বাড়ি চলে যাই এভাবে আর কতদিন?’

রাজিব বলে, ‘আচ্ছা, আমরা যে জিনিসের আশায় রাতদিন এভাবে জল-জঙ্গলে ঘুরে মরছি, আসলে কি আদৌ তা আছে?’

রাজিবের কথায় সায় দিয়ে রাজনও বলে, ‘আসলেই কি গুপ্তধন বলে কিছু আছে?’

দুজনের জিজ্ঞাসাই রাজুর উদ্দেশ্যে।

রাজু জবাব দেয়, ‘হ্যঁা, আছে।’

রাজনও রাজিব একসঙ্গে বলে, ‘কোথায় আছে?’

রাজু বলে, ‘ভাজির্র্নিয়া পাহাড়ে।’

রাজিব বলে ‘সেটা কোথায়?’

রাজু বলে, ‘মন্টভেল শহরে। জিরাফের মতো মাথা উঁচু করে দঁাড়িয়ে আছে এবড়ো-খেবড়ো পাথুরে এক পাহাড়। সেই পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে গেছে এঁকে-বেঁকে চোরাগোপ্তা পথ আর এই পথে গেলেই সন্ধান মিলবে থোমাস জেফারসন বিলের গুপ্তধন।’

রাজিব বলে, ‘থোমাস জেফারসনের বিলের গুপ্তধন মানে?’

রাজু বলে, ‘থোমাস জেফারসন বিল নামে এক ব্যক্তি ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে সোনা-রুপা শিকারে এক দুঃসাহসিক অভিযানে রোয়ানোক ছেড়ে পশ্চিমের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। কোলোরাডো নামক এক জায়গায় বিশাল সোনা আর রুপার গুপ্তধন পেয়ে সেগুলো নিয়ে ভাজিির্নয়ায় ফিরে আসে। বুফোতর্ নামক এক শহরের মাটির নিচে সব সোনা ও রুপা পুঁতে রাখে। কাকপক্ষীও জানতে পারে না।’

রাজিব বলে, ‘তারপর কী হলো?’

রাজু বলে, ‘তারপর আবার অভিযানে যায়। দু’বছর পর আবার সোনা ও রুপা নিয়ে ফিরে এসে সেই শহরেই মাটির নিচে পঁুতে রাখে।’

রাজন বলে, ‘এবারও কি কেউ জানতে পারেনি?’

রাজু বলে, ‘না। তবে রবাটর্ মরিস নামে বিলের একজন বন্ধু ছিল। থাকত লিঞ্চবাগর্ নামক শহরে। বিল একটি লোহার ছোট বাক্স সঙ্গে নিয়ে সেই বন্ধুর কাছে যায়। বাক্সটি রবাটর্ মরিসের কাছে দশ বছরের জন্য আমানত রেখে ফিরে আসে। আসার আগে বন্ধুটিকে অনুরোধ করে আসে যেন বাক্সটি খোলা না হয়। বাক্সটি খুলতে নিষেধ করার কারণেই রবাটর্ মরিসের মনে কৌত‚হল তৈরি হয়। কী আছে বাক্সের ভেতরে? কেন বাক্সটি খুলতে নিষেধ করে গেল বিল?’

রাজিব বলে, ‘রবাটর্ মরিস কি বাক্সটি খুলেছিল?’

রাজু বলে, ‘না, খোলেনি। লুকিয়ে রেখেছিল বন্ধুর আমানত। কিন্তু এই বাক্সের ভেতরেই গুপ্তধনের সকল রহস্য লুকানো ছিল। এর পরের বছর বিল একটি চিঠি লিখে রবাটর্ মরিসকে মনে করিয়ে দেয়, সে যেন বাক্সটি লুকিয়ে রাখে। কেউ যেন জানতে না পারে বাক্সটির কথা। তারপর দীঘর্ তেইশ বছর কেটে যায়। বিলের কোনো খবর পায় না মরিস। তারপর বন্ধুটি আর বেঁচে নেই ভেবে বাক্সটি খুলে ফেলে।’

রাজন বলে, ‘কী পেল বাক্সটি খুলে?’

রাজু বলে, ‘বাক্সে তিনটি কাগজ ছাড়া আর কিছুই ছিল না।’

রাজিব বলে, ‘কাগজে কী লেখা ছিল?’

রাজু বলে, ‘গাণিতিক সংকেতের মাধ্যমে গুপ্তধনের কথা লেখা ছিল। প্রথম পাতায় গাণিতিক সংকেতের মাধ্যমে নিদের্শ করা হয়েছে গুপ্তধনের সঠিক রহস্যের কথা। দ্বিতীয় পাতায় গুপ্তধনের বিভিন্ন জিনিসের নাম এবং পরিমাণ। তৃতীয় পাতায় লেখা ছিল বিলের সঙ্গী ও আত্মীয়-স্বজনের নাম ঠিকানা। বিল তাদের মধ্যে গুপ্তধন ভাগ করে দেয়ার কথাও উল্লেখ করেছে।’

রাজিব বলে, ‘রবাটর্ মরিস কি সংকেতগুলোর মানে বুঝতে পেরেছিল?’

রাজু বলে, ‘না। সংকেতগুলোর মানে বুঝতে ছুটে গিয়েছিল তার বন্ধু জেম্স ওয়াডের্র কাছে। জেম্স ওয়াডর্ ছিল বিশিষ্ট গণিত বিশারদ। সে সব মেধা ব্যয় করে শুধু রহস্য কোডের অথর্ উদ্ধার করতে পেরেছিল, আর কিছু না।’

রাজিব বলে ‘তারপর কী হয়েছিল?’

রাজু বলে, ‘বিলের তিনটি কাগজের রহস্য উদ্ধার করতে ব্যথর্ হয়ে জেম্স ওয়াডর্ ‘দ্য বিল পেপারস’ নামে একটি বই প্রকাশ করে। এই বই প্রকাশের পর বিশ্বজুড়ে গুপ্তধন শিকারিদের মধ্যে নেশার ঝড় ওঠে। চোরাগোপ্তা পথে একে অন্যের চোখ ফঁাকি দিয়ে ক্রমাগত মাটি খুঁড়তে থাকে। ১৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিকারিরা গুপ্তধনের আশায় পাহাড় খুঁড়েছে। কিন্তু বরাবরই সবাই হয়েছে ব্যথর্। বিলের মিস্টেরি কোড বা গাণিতিক সংকেতের অথর্ উদ্ধার করতে পারেনি কেউই। সারা বিশ্বে এখনো গুপ্তধন শিকারিদের মাথার ঘাম ঝরছে এ তিন পাতা গাণিতিক সংকেতের অথর্ উদ্ধার করতে গিয়ে। কারণ এই তিন পাতার মধ্যেই রয়েছে বিলের গুপ্তধনের সঠিক অবস্থান আর এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারলেই মিলে যাবে বিলের বিশ মিলিয়ন ডলারের গুপ্তধন।’

রাজন বলে, ‘বিলের গুপ্তধনের মধ্যে কী কী আছে?’

রাজু বলে, ‘দুই হাজার নয়শো একুশ পাউন্ড সোনা আর পঁাচ হাজার একশো পাউন্ড রুপা।’

রাজিব বলে, ‘এগুলোর দাম বাংলাদেশি টাকায় কত হবে?’

রাজু বলে, ‘একশো বিশ কোটি টাকার মতো।’

রাজন বলে, তুমি এসব কথা জানলে কী করে?’

রাজু বলে, ‘আমার বাবার কাছ থেকে জেনেছি। বাবা জেনেছিল দাদুর কাছ থেকে, হয়তো দাদু জেনেছিল তার বাবার কাছ থেকেÑ এভাবে বংশ পরম্পরায় শুধু জেনেই আসা হচ্ছে। কিন্তু সন্ধানে কেউ বের হয় না। তাই তোমাদের নিয়ে আমার এ অভিযান।’

রাজন বলে, ‘অভিযান না ছাই! গুপ্তধন তো থাকে মন্টভেল শহরে, এভাবে রাতদিন শুধু এখানে এ জল-জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করে কি সেগুলোর সন্ধান মিলবে?’

রাজু বলে, ‘সেই গুপ্তধনের কিছু অংশ বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। কিছু অংশ সাপের মাথায় মণি হয়ে, কিছু অংশ ব্যাঙের মুখে দামি পাথররূপে আর কিছু অংশ ঝিনুকের ভেতরে মুক্তো হয়ে আছে। এখন আমাদের সেগুলো খঁুজে বের করতে হবে।’

রাজিব বলে, ‘কিন্তু কোথায় খঁুজব?’

রাজু বলে, ‘এক কাজ করি, তিনজন একই জায়গায় না থেকে আলাদা আলাদা জায়গায় খেঁাজ করা যাক।’

তার এই কথাটা রাজন ও রাজিবের মনে ধরে। একই জায়গায় তিনজন অযথা সময় নষ্ট করে কিছু হবে না। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয়, রাজু জঙ্গলের ভেতরে সাপের মণি খঁুজবে, রাজন খুঁজবে ব্যাঙের মুখের সেই দামি পাথরটা আর রাজিব চলে যাবে নদীর ধারেÑ সেখানে যত ঝিনুক আছে সব ক’টার খোলস খুলে খুলে মুক্তো খঁুজবে। বলা তো যায় না কোথায় কি আছেÑ হয়তো কেউ একজন পেয়েও যেতে পারে।

এরপর চোখের সামনে যত বন-জঙ্গল, ঝোপঝাড় পেয়েছে, পেয়েছে যত সাগর-নদী, খাল-বিল, পুকুর-নালা, সরোবর কিংবা উপত্যকা সবখানে হন্যে হয়ে তন্ন তন্ন করে গুপ্তধন খেঁাজে। খঁুজে খঁুজে ক্লান্ত-শ্রান্ত, ত্যাক্ত-বিরক্ত এবং হতাশ হয়ে যখন তারা বাড়ি ফিরে আসতে উদ্যত হয়, তখনই একটা বাজারের সামনের ছোট একটা জঙ্গলের ভেতরে দেখতে পায় একটা গোলাকার বস্তুÑ যা বরফখÐের মতো সাদা। রোদে চকচক করে, অন্ধকারে দেয় আলোর ঝিলিক। তারা ধরে নেয় এটাই সেই গুপ্তধনের অংশ কিংবা ব্যাঙের মুখের সেই পাথরটা অথবা সাপের মাথার মণিটা। তাদের আনন্দের সীমা থাকে না। বস্তুটি হাতে নিয়ে তারা একেকজন একেকবার লোফালুফি করে। একজন শূন্যে ছুড়ে আরেকজন ক্রিকেট খেলায় ক্যাচ ধরার মতো সেটা ধরে উল্লাসে চিৎকার দেয়। লোকজন তাদের এই ক্ষুদ্র বস্তুটি নিয়ে এতটা আনন্দিত হওয়ার মমার্থর্ বুঝতে পারে না। সবাই তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি মেলে তাকায়। কেউ কেউ অনুচ্চৈঃস্বরে বলেও ফেলে, ‘লোকগুলো কি পাগল!’

তিনজনের মধ্যে কোনো হুশ নেই। কে কী বলে কিংবা কে কী ভাবে তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। তারা তো এখন আর গ্রামের অন্যদের মতো না। তাদের হাতের মুঠোয় আছে অমূল্যধন! যার জন্য কয়েক বছর ধরে জল-জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছে। তারা আত্মভোলা হয়ে আনন্দে নাচতে থাকে। তাদের ঘিরে মানুষের ভিড় ও কোলাহল বেড়ে যায়। এই ভিড়ের মধ্য থেকে একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি তাদের সামনে এগিয়ে এসে ছঁু মেরে বস্তুটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখে কিছুক্ষণ। তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, ‘এ তো দেখছি একখÐ পাথর!’

‘এ্যঁা!’ তিনজনেই হাহাকার করে ওঠে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<24667 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1