বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিষিদ্ধ পলিথিনের অপ্রতিরোধ্য ব্যবহার

শুরুর দিকে বেশ কড়াকড়ি হলেও ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যায় আইনের প্রয়োগ। আর এখন বাংলাদেশে এটি যে নিষিদ্ধ তার বোঝারই কোনো উপায় নেই। পলিথিনের ব্যবহার রোধের বিষয়টি দেশব্যাপী যে গুরুত্ব হারিয়েছে সেটি বাজারে গেলে বা রাস্তায় সামান্য একটু হাঁটলেই বোঝা যায়। পলিথিন বা পস্নাস্টিকের বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলে দিলে তা নর্দমায় আটকে গিয়ে পানির প্রবাহে বাধা দেয়। বাড়ির দরজা থেকে শুরু করে নদী, নালা, ড্রেন সবখানেই মিশে গিয়ে যেন পৃথিবীর শ্বাসরোধ করে ফেলেছে পলিথিন ও পস্নাস্টিকসামগ্রী। এগুলো দ্বারা ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। পলিথিন থেকে সৃষ্ট এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ক্যান্সার ও ত্বকের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে
অ্যাডভোকেট মো. সাইফুদ্দীন খালেদ
  ০১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশে একটা সময় ছিল যখন বাজারে গেলে মানুষজন হাতে করে একটা চটের ব্যাগ নিয়ে যেতেন। কিন্তু আশির দশকে প্রথম বাজারে পলিথিনের ব্যবহার শুরু হয়। এর পর থেকে বাজারে যে ধরনের দোকানেই যান না কেন বিনে পয়সায় পলিথিনের ব্যাগ দেয়া শুরু হলো। পলিথাইলিন, যা জনপ্রিয়ভাবে পলিথিন নামে পরিচিত তা আসলে এক ধরনের পলিমার। অপচনশীল এ পদার্থ পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করেছে। সহজে সব দোকানে বিনে পয়সায় চাইলেই পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া যায়।

পশ্চিমা বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক পরের দিকে পলিথিন ব্যবহার শুরু করেছে। কিন্তু তা এতটাই বড় বিপর্যয় ডেকে আনে যে, ব্যবহার শুরুর ১৫ থেকে ২০ বছরের মাথায় ২০০২ সালের জানুয়ারি থেকে এর উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ ও ব্যবহারকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ সংশোধনের মাধ্যমে যে কোনো প্রকার পলিথিন ব্যাগ অর্থাৎ পলিথাইলিন, পলিপ্রপাইলিন বা তার কোনো যৌগ বা মিশ্রণের তৈরি কোনো ব্যাগ, ঠোঙা বা যে কোনো ধারক যা কোনো সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় বা কোনো কিছু রাখার কাজে বা বহনের কাজে ব্যবহার করা যায় তাদের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার সম্পূূর্ণভাবে বন্ধ করার বিষয়ে বলা হয়েছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে ৬ক ধারা সংযোজনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে। আইনের ১৫ ধারায় শাস্তির বিধান রয়েছে। কেউ যদি পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি বা বাজারজাত করে, তবে তার শাস্তি হবে অনধিক ১০ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ড। আর কোনো ব্যক্তি যদি নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিনসামগ্রী বিক্রি বা বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শন, গুদামজাত, বিতরণ ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে, তবে সে ক্ষেত্রে তার শাস্তি অনধিক এক বছর কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ডই প্রযোজ্য হতে পারে।

পরিবেশ সংরক্ষণ সংশোধিত ২০১০ সালের আইনের ৭(১) ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তির কারণে পরিবেশ বা প্রতিবেশের ক্ষতি হলে সেই ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণপূর্বক তা পরিশোধ করতে হবে এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বা উভয় প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

শুরুর দিকে বেশ কড়াকড়ি হলেও ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যায় আইনের প্রয়োগ। আর এখন বাংলাদেশে এটি যে নিষিদ্ধ তার বোঝারই কোনো উপায় নেই। পলিথিনের ব্যবহার রোধের বিষয়টি দেশব্যাপী যে গুরুত্ব হারিয়েছে সেটি বাজারে গেলে বা রাস্তায় সামান্য একটু হাঁটলেই বোঝা যায়। পলিথিন বা পস্নাস্টিকের বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলে দিলে তা নর্দমায় আটকে গিয়ে পানির প্রবাহে বাধা দেয়। বাড়ির দরজা থেকে শুরু করে নদী, নালা, ড্রেন সবখানেই মিশে গিয়ে যেন পৃথিবীর শ্বাসরোধ করে ফেলেছে পলিথিন ও পস্নাস্টিকসামগ্রী। এগুলো দ্বারা ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। পলিথিন থেকে সৃষ্ট এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ক্যান্সার ও ত্বকের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। তা ছাড়া ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগও ছড়াতে পারে। রঙিন পলিথিন জনস্বাস্থ্যের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। এতে ব্যবহৃত ক্যাডমিয়াম শিশুদের হাড়ের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। পলিথিনের কাপে চা পান করলে আলসার ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

পলিথিন ব্যবহারের কারণে জনজীবন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পাটের কদর কমে যাচ্ছে, কমছে পাট চাষ। বন্ধ হচ্ছে পাট দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের কারখানা। বেকার হচ্ছে কুটিরশিল্পের মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। সারা বিশ্বে পাটের চাহিদা বাড়লেও আমাদের অবহেলা ও সচেনতার অভাবে সোনালি আঁশ পাট আজ বিলুপ্তির পথে। আমাদের এ শিল্পকে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে করতে হবে।

ক্ষতিকর পলিথিন থেকে বাঁচতে হলে বিকল্প ব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এবং ব্যাপকভাবে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ ও ঠোঙ্গা সহজলভ্য করা ও ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি। পরিবেশ বাঁচাতে অবশ্যই পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাট, কাগজ বা কাপড়ের ব্যাগ উদ্ভাবনেরও বহুল ব্যবহারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ও বিভাগগুলোকে কার্যকরভাবে উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক- আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<69071 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1