শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
রায় পর্যালোচনা

নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের অনন্য রায়

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকে নদ-নদী দখল সংক্রান্ত বিষয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করে। দেশের সব নদীকে লিগ্যাল পারসন ঘোষণা করে গত ৩ ফেব্রম্নয়ারি এক রিটের রায়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ কয়েক দফা নির্দেশনাসহ বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ দেন। সম্প্রতি রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। নানা কারণে হাইকোর্ট বিভাগের রায়টি তাৎপর্যপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক। প্রকৃতি বিশেষত নদী সুরক্ষায় এই রায় একটি বড় মাইলফলক। লিখেছেন আদনান ওয়াসিম
নতুনধারা
  ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
তুরাগের এমন প্রশান্ত প্রাকৃতিক রূপ সবাই দেখতে চায়। তুরাগের ছবিটি তুলেছেন জহিরুল ইসলাম মুসা

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে হাইকোর্ট বিভাগ বিভিন্ন মতবাদ, ভিনদেশি নজির, আইন ও আদালতের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। রায়টির মূল লেখক (অথর জাজ) হলেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। রায়টিতে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে পাবলিক ট্রাস্ট ডকট্রিন বা মতবাদ নিয়ে। এ মতবাদের মূল কথা হলো, জনসাধারণের উপকারার্থে রাষ্ট্রের কাছে গচ্ছিত সম্পত্তিকে পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তি বলা হয়। পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, সব উন্মুক্ত জলাভূমি, সমুদ্র, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, ঝিল, সৈকত, নদীর তীর, টিলা, বন এবং বাতাস- এসব পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত। এসব সম্পত্তি সব নাগরিকের, কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়। ভবিষ্যতে আরও অনেক নতুন নতুন বিষয় পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তির আওতাভুক্ত হবে বিধায় এর পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা দেয়া সম্ভব নয়। পৃথিবীর অনেক দেশে প্রতিনিয়ত এমনটা হয়ে আসছে।

পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তিতে সাধারণ জনগণের মুক্ত এবং বাধাহীন ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ বা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র হচ্ছে এখানে ট্রাস্টি। রোমান, ইংলিশসহ পৃথিবীর বহু দেশের আইনব্যবস্থায় এই মতবাদ গৃহীত। স্বীকৃত হয়েছে অনেক দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় দ্বারা- যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকা, কানাডা, ভারতসহ আরও দেশ।

বাংলাদেশ তার সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে পাবলিক ট্রাস্ট মতবাদকে সাংবিধানিকভাবে গ্রহণ করেছে। এছাড়া প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় বাংলাদেশে প্রচলিত রয়েছে আরও নানান আইন-কানুন। রায়ে প্রাসঙ্গিকভাবে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। রায়ে উলেস্নখ করা হয়েছে, পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তি হলো রাষ্ট্রের কাছে গচ্ছিত রাখা জনগণের আমানত, যার দেখভাল ও সংরক্ষণ করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এবং এই অর্পিত দায়িত্বের একটা দিক হচ্ছে, এই সম্পত্তি যেন কোনোভাবেই ব্যক্তি মালিকানায় প্রদান বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত না হয়।

আদালতের রায়ে অনুমিতভাবেই আলোচিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইনি দলিল ও চুক্তি। আদালত বিশ্লেষণ করেছেন বাংলাদেশের সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ক, ২১, ৩১ এবং ৩২ একত্রে পাঠ করে আদালত স্পষ্ট করে বলেছেন, পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, সব উন্মুক্ত জলাভূমি, সমুদ্র, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, ঝিল, সমুদ্র সৈকত, নদীর পাড়, পাহাড়-পর্বত, টিলা, বন এবং বাতাস পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তিসমূহ বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সব নাগরিকের জন্য সংরক্ষিত। এসব সম্পত্তির ওপর জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত। আর এসব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সংবিধানের ৩১ ও ৩২নং অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। কোনো নাগরিককে এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলে অনুচ্ছেদ ৩১ অনুযায়ী তিনি আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। এসব মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য সংবিধানের ১০২নং অনুচ্ছেদ অর্থাৎ রিট মামলা করার পথ সর্বদা খোলা।

নদ-নদীকে 'জীবন্ত সত্তা' হিসেবে আইনি বৈধতা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। এই ধারা শুরু হয়েছিল নিউজিল্যান্ডে। সেখানকার মাউরি আদিবাসীদের লোকায়ত বিশ্বাসমতে, তাদের জন্ম হোয়াঙ্গানুই নদী থেকে। সেই হিসেবে দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম এই নদী তাদের পূর্বপুরুষ বা নারী। ফলে নদীটির ব্যক্তিসত্তার দাবি তুলে আসছিল কয়েক শতাব্দী ধরে। অন্তত ১৪০ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৭ সালের মার্চে তাদের দাবি পূরণ হয়। আদিবাসী ওই গোষ্ঠী এবং নিউজিল্যান্ড সরকারের মধ্যে সম্পাদিত এসংক্রান্ত একটি চুক্তি দেশটির আইনসভায় বিল হিসেবে পাস হয়।

এরপর ভারতের উত্তরাখন্ড হাইকোর্ট গঙ্গা ও যমুনা নদীকে 'আইনি সত্তা' ঘোষণা করে। ওই রায়ে ভারতের 'নমামি গঙ্গা' প্রকল্পের পরিচালক, উত্তরাখন্ড রাজ্য প্রশাসনের মুখ্য সচিব এবং রাজ্যের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে নদী দুটির 'মানব মুখ' নির্ধারণ করে দিয়ে বলা হয়- দুই নদী রক্ষায় এই তিনজন হবেন 'মাতা-পিতা'। নদী ও সেগুলোর উপনদীগুলোর অসুখ-বিসুখে তাদেরই জবাবদিহি করতে হবে।

নিউজিল্যান্ড ও ভারতে নদীকে মানব-মর্যাদা দেয়া নিয়ে হৈচৈয়ের মধ্যেই জানা যায়, কলাম্বিয়ার সাংবিধানিক আদালত আরও আগেই সেখানকার আত্রাতো নদীকে 'সুরক্ষা, সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনরুদ্ধার'-এর অধিকার দিয়েছে। ২০১৫ সালের গোড়ায় একটি নাগরিক সংগঠনের দায়ের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের নভেম্বর এই রায় এসেছিল।

আলোচ্য রায়ে আদালত বলেছে, নদীকে হত্যা করার অর্থ হলো বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হত্যা করা। নদীদূষণ এবং দখলকারী মানবজাতির হত্যাকারী। নদীদূষণ এবং দখলকারী সভ্যতা হত্যাকারী। আদালত স্পষ্ট করে বলেছে, তুরাগ নদীসহ বাংলাদেশের ৪০৫ নদীই মূল্যবান এবং সংবিধান, বিধিবদ্ধ আইন এবং পাবলিক ট্রাস্ট মতবাদ দ্বারা সংরক্ষিত। আদালত তুরাগকে বাঁচানোর শেষ উপায় হিসেবে লিগ্যাল পারসন বা আইনি ব্যক্তি ঘোষণা করে আরও ১৬ দফা আদেশ ও নির্দেশনা প্রদান করেছে, যার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো:

অত্র রায়ে যে পাবলিক ট্রাস্ট মতবাদের বিশদ ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ এবং বর্ণনা করা হয়েছে তাকে আমাদের দেশের আইনের অংশ ঘোষণা করা হয়েছে।

তুরাগ নদীকে আইনি ব্যক্তি (লিগ্যাল পারসন)/আইনি সত্তা (লিগ্যাল এনটিটি)/জীবন্ত সত্তা (লিভিং এনটিটি) ঘোষণা করা হয়েছে। একই মর্যাদা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে প্রবাহমান সব নদ-নদীকে। নদী রক্ষা কমিশনকে তুরাগ নদীসহ দেশের সব নদ-নদী দূষণ ও দখলমুক্ত করে সুরক্ষা, সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের নিমিত্তে আইনগত অভিভাবক ঘোষণা করা হয়েছে। নদ-নদী সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা, অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায়, বাংলাদেশের সব নদ-নদীর দূষণ ও দখলমুক্ত করে স্বাভাবিক নৌ চলাচলের উপযোগী করে সুরক্ষা, সংরক্ষণ, উন্নয়ন, শ্রীবৃদ্ধিসহ যাবতীয় উন্নয়নে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বাধ্য থাকবে। নদ-নদী সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা, অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নদী কমিশনকে সঠিক এবং যথাযথ সাহায্য ও সহযোগিতা দিতে বাধ্য থাকবে।

তুরাগ নদীসহ দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়ের ক্ষেত্রে নতুন প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশন, এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডাবিস্নউটিএ, বিএডিসিসহ সব সংস্থা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে অবহিত করবেন এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের অনাপত্তিপত্র গ্রহণ করবেন।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, ২০১৩ এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনের উদ্যোগ অবহিত করার জন্য ছয় মাসের সময় দেয়া হয়েছে। যেখানে নদী দখল ও নদী দূষণকে ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করতে হবে এবং কঠিন সাজা ও বড় আকারের জরিমানা নির্ধারণ করতে হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে একটি কার্যকরী স্বাধীর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিতে এবং বিভাগে প্রতি দুই মাস অন্তর একদিন এক ঘণ্টার একটি নদীর প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা, রক্ষা, দূষণ, সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতামূলক ক্লাস পরিচালনা এবং প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্ব-স্ব এলাকার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত নদী নিয়মিতভাবে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করবে। ছোট-বড়-মাঝারি-বৃহদাকার সব দেশি-বিদেশি, সরকারি-বেসরকারি শিল্প কারখানাগুলোকে তাদের সব শ্রমিকদের অংশগ্রহণে প্রতি দুইমাস অন্তর একদিন এক ঘণ্টার একটি নদীবিষয়ক 'বৈঠক' অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদারকির নির্দেশ দেয়া হয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়কে।

পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তি দখল এবং দূষণের অভিযোগ কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে থাকলে উক্ত ব্যক্তি বা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান সব প্রকার ব্যাংক ঋণের অযোগ্য মর্মে বাংলাদেশের তফসিলি সব ব্যাংককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে সার্কুলার ইসু্য করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে অগ্রগতি জানাতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তি দখল এবং দূষণের অভিযোগ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে থাকলে ওই ব্যক্তিকে বাংলাদেশের সব ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অযোগ্যতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। ছয় মাসের মধ্যে অগ্রগতি জানাতে বলা হয়েছে। নদ-নদী সংরক্ষণ এবং দূষণকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। নদ-নদী, প্রকৃতি-পরিবেশের ওপর নির্মিত এক ঘণ্টার ডকুমেন্টারি ফিল্ম সপ্তাহে অন্তত একদিন টেলিভিশনে প্রচারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রায় ও আদেশের অনুলিপি প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবরে, অধস্তন আদালতের সব বিচারকের কাছে, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, আইন কমিশন বরাবরে। এছাড় সংশ্লিষ্ট সবার কাছে। হাইকোর্ট বিভাগ এই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশও দিয়েছেন। শেষে হাইকোর্ট বিভাগ প্রত্যাশা করেছেন, নদীগুলো চলুক নীরবধি।

বাংলাদেশের নদী রক্ষায় এই রায়, আদেশ ও নির্দেশনা নিঃসন্দেহে গুরুত্ববহ। কিন্তু দেশের সামগ্রিক বাস্তবতায় এবং অনেক অনেক সংস্থা-দপ্তর-প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এই রায় বাস্তবায়নে কতটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ আছে তা নিয়ে তর্ক চলে। তবুও আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও সময়। ততদিনে বেঁচে থাকুন নদী, বেঁচে থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<66144 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1